শহীদ মিনারে আবদুল মুহিতকে সর্বস্তরের শ্রদ্ধা
৩০ এপ্রিল ২০২২শনিবার দুপুরের তার মরদেহ শহীদ মিনারের সামনে নিয়ে গেলে সেখানে রাজনীতিবাদ, আইনজীবী, সমাজকর্মী ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের গুণিজনেরা তাকে শ্রদ্ধা জানান৷
সেসময় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রথমে রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদের পক্ষে তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এস এম সালাহউদ্দিন ইসলাম এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে তার সামরিক সচিব ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কবীর আহাম্মদ ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন৷ তাছাড়া শ্রদ্ধা জানান জাতীয় সংসদের স্পিকারের পক্ষে সার্জেন্ট এট আর্মস কমোডর এম এম নাঈম রহমান৷
শহীদ মিনারে অন্যান্যদের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পদক ওবায়দুল কাদের, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী, আবদুল মুহিতের ছোট ভাই ও বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে এ মোমেন, জাসদের সাবেক সভাপতি হাসানুল হক ইনু এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান৷ তাছাড়া ভারতীয় হাইকমিশন, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ, বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন, নানা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা বরেণ্য এই রাজনীতিবিদকে শেষ শ্রদ্ধা প্রদান করেন৷
শিক্ষা ও কর্মজীবনে মুহিতের কৃতিত্বপূর্ণ ভূমিকা তুলে ধরে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘‘আমি এরকম কাজ পাগল মানুষ কমই দেখেছি৷ কাজে আর পড়াশোনায় ডুবে থাকতেন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত৷ ছুটির দিনেও দেখা যেত আবুল মাল আবদুল মুহিতের অফিসে আলো জ্বলছে৷ তিনি এ রকম মানুষ ছিলেন৷’’
এর আগে সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের প্রথম জানাজা রাজধানীর গুলশান আজাদ মসজিদে সম্পন্ন হয়েছে৷ আর দ্বিতীয় জানাজা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয়েছে৷
আওয়ামী লীগ নেতা আবুল মাল আবদুল মুহিতের দাফন রোববার সিলেট নগরের রায়নগর এলাকায় তাদের পারিবারিক কবরস্থানে হবে৷ এর আগে বেলা দুইটায় নগরের আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে৷
সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত শুক্রবার বাংলাদেশ সময় দিবাগত রাত ১২টা ৫৬ মিনিটে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন৷ তার বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর৷
গতবছর করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে নানা ধরনের শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন তিনি৷
১৯৩৪ সালের ২৫ জানুয়ারি সিলেটে জন্ম নেয়া আবদুল মুহিত বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবনে টানা দশ বছর অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন৷ আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অর্থ মন্ত্রণালয়ের ভার দিয়েছিলেন মুহিতের ওপর৷
সংসদে সর্বোচ্চ ১২ বার বাজেট দেওয়া সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ছিলেন সিলেট-১ আসনের সাংসদ৷
বাবা অ্যাডভোকেট আবু আহমদ আবদুল হাফিজ ছিলেন তৎকালীন সিলেট জেলা মুসলিম লীগের নেতা৷ মা সৈয়দ সাহার বানু চৌধুরী ছিলেন সিলেট মহিলা মুসলিম লীগের সহ-সভানেত্রী৷
পঞ্চাশের দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর করে যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর ডিগ্রি নেন মুহিত৷
১৯৫৬ সালে মুহিত যোগ দেন পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে (সিএসপি)৷ প্রায় তের বছর পূর্বপাকিস্তান এবং কেন্দ্রীয় পাকিস্তান সরকারের চাকরি করে ১৯৬৯ সালে তিনি ওয়াশিংটনে পাকিস্তান দূতাবাসে কূটনৈতিক দায়িত্ব পান৷
একাত্তরের জুন মাসে তিনি পাকিস্তানের পক্ষত্যাগ করে বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করেন৷ যুক্তরাষ্ট্রের সামাজিক-রাজনৈতিক মহলে বাংলাদেশের পক্ষে জনমত সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখেন৷
দেশ স্বাধীন হলে ১৯৭২ সালে পরিকল্পনা সচিবের দায়িত্ব পান মুহিত৷ ১৯৭৭ সালে অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বহিঃসম্পদ বিভাগের সচিব করা হয় তাকে৷
২৫ বছরের সরকারি চাকরিজীবনে বিভিন্ন ভূমিকায় দায়িত্ব পালন শেষে ১৯৮১ সালে চাকরি থেকে স্বেচ্ছায় অবসরে যান মুহিত৷
১৯৮২-৮৩ সালে তখনকার এইচ এম এরশাদ সরকারের সময়ে প্রথমবারের মত অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রীর দায়িত্বে আসেন এ রাজনীতিবিদ৷ এরপর আবার বিদেশে চলে যান তিনি৷
দীর্ঘদিন বিশ্ব ব্যাংক ও জাতিসংঘের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পরামর্শক হিসেবে কাজ করার পর দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হন এবং উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হন৷
২০০৮ সালের নির্বাচনে সিলেট ১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর আওয়ামী লীগের সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের হাল ধরেন মুহিত৷
টানা দশ বছর সেই দায়িত্ব সামলে ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি অর্থ মন্ত্রণালয়ে নিজের শেষ কর্মদিবসে এক বিদায়ী অনুষ্ঠানে হাসতে হাসতে তিনি বলেছিলেন, ‘‘এটি আমার খুব আনন্দের বিষয়, আমাকে বিদায়-টিদায় করতে হয়নি, আমি নিজে নিজেই বিদায়টা নিয়ে নিয়েছি৷’’
আরআর/এআই (বিডিনিউজ টোয়েন্টি ফোর ডট কম)