তাইওয়ান নিয়ে মার্কিন বক্তব্যকে সম্পূর্ণ নস্যাৎ করে দিয়েছে চীন। এর ফলে তাইওয়ান সংকট আরো বাড়লো বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিজ্ঞাপন
সিঙ্গাপুরে বসেছিল শাংরি-লা বৈঠক। সেখানে শনিবার বক্তৃতা করেছেন মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন। রোববার বক্তৃতা দিতে উঠে তার বক্তব্যকে উড়িয়ে দিলেন চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওয়েই ফেনঘি। রোববার ওয়েই বলেছেন, তাইওয়ান চীনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। যারা তাইওয়ানকে চীনের হাত থেকে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে, বিচ্ছিন্নতাবাদে মদত দিচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে সমস্তরকম ব্যবস্থা নেয়ার জন্য তৈরি চীন। বস্তুত, তাইওয়ানকে ধরে রাখার জন্য শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে চীন লড়াই করবে বলে এদিন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী।
ইউক্রেনের অবস্থা দেখে তাইওয়ানে বন্দুক চালানো শেখার হিড়িক
বড় প্রতিবেশী দেশ রাশিয়া ইউক্রেনের সঙ্গে যা করেছে, তাইওয়ানের সঙ্গেও তো তেমন হতে পারে! বড় প্রতিবেশী দেশ চীন এমন আশঙ্কায় ফেলেছে তাইওয়ানবাসীদের৷ সেখানে তাই অনেকেই নিচ্ছেন বন্দুক চালানোর প্রশিক্ষণ৷ ছবিঘরে বিস্তারিত...
ছবি: Ann Wang/REUTERS
তাইওয়ানেও যুদ্ধের আশঙ্কা
বড় প্রতিবেশী দেশ যখন-তখন তার ছোট প্রতিবেশীর ওপর হামলা চালাতে পারে- এই বিষয়ে এখন আর কোনো সংশয় নেই অনেক তাইওয়ানবাসীর মনে৷ তাদের অনেকেই মনে করেন, চীনও যে কোনো সময় তাইওয়ানে হামলা চালাতে পারে এবং সেরকম হলে অস্তিত্ব রক্ষার জন্য যেহেতু লড়তে হবে, তার প্রস্তুতি এখনই শুরু করা ভালো৷ সেই ভাবনায় ইতিমধ্যে বন্দুক চালানোর প্রশিক্ষণে নাম লিখিয়েছেন অনেকে৷
ছবি: Ann Wang/REUTERS
আগের তুলনায় তিন-চারগুণ!
গত ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে হামলা শুরু করে রাশিয়া৷ তারপর থেকে তাইওয়ানবাসীদের মাঝে বন্দুক প্রশিক্ষণে আগ্রহ যে হারে বাড়ছে এমন আগে কখনো দেখা যায়নি৷ রাজধানী তাইপের অদূরের পোলার লাইট প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের প্রধান নির্বাহী মাক্স-চিয়াং জানালেন, জীবনে কোনোদিন বন্দুক হাতে নেননি, এমন অনেকেই আসছেন বন্দুক চালানো শিখতে৷ সংখ্যাটা নাকি আগের তুলনায় তিন থেকে চারগুণ!
ছবি: Ann Wang/REUTERS
সর্বস্তরে আগ্রহ
গত তিন মাসে তাইওয়ানের প্রায় সব বয়স আর পেশার মানুষের মাঝেই বন্দুক চালানোর প্রশিক্ষণে আগ্রহ বেড়েছে৷ বলা হচ্ছে, ট্যুর গাইড থেকে ট্যাটু আর্টিস্ট পর্যন্ত মোটামুটি সবাই বিশেষ পরিস্থিতির জন্য তৈরি থাকতে গুলি চালানোয় দক্ষ হতে চাইছেন৷
ছবি: Ann Wang/REUTERS
রাজনীতিবিদরাও শঙ্কিত
ইউক্রেন পরিস্থিতি তাইওয়ানের রাজনীতিবিদদের বড় একটা অংশকেও দুশ্চিন্তায় ফেলেছে৷ তাদের কেউ কেউ যু্দ্ধপরিস্থিতির জন্য প্রস্তুতিও শুরু করেছেন৷ ক্ষমতাসীন ডেমোক্র্যাটিক প্রোগ্রেসিভ পার্টির নেতা লিন পিং-ইউ জানিয়েছেন, যুদ্ধ শুরু হলে যাতে কিছুদিন ঘরে নিরাপদে দু-মুঠো খেয়ে বাঁচতে পারেন তা নিশ্চিত করতে শুকনো খাবার এবং ব্যাটারির মতো কিছু জিনিস জমিয়ে রেখেছেন৷ জনগণকেও এমন প্রস্তুতি রাখতে বলেছেন তিনি৷
ছবি: Ann Wang/REUTERS
যুদ্ধে অনিহা, তবু হাতে বন্দুক...
ট্যাটু আর্টিস্ট সু চুন বললেন, ‘‘বেশির ভাগ মানুষই যুদ্ধে যেতে চায় না৷ যুদ্ধ আমিও চাই না৷ কিন্তু এখন যা যা ঘটতে দেখছি, তাতে যুদ্ধের মানসিক প্রস্তুতি আমি নিয়ে রাখবো৷’’ তিনি আরো জানান, সবার মতো আপাতত এয়ারগান চালানো তো শিখবেনই, সঙ্গে সম্ভব হলে সম্মুখযুদ্ধের কায়দা-কানুন এবং যে কোনো পরিস্থিতিতে নিজেকে রক্ষা করার যাবতীয় কৌশলও রপ্ত করবেন৷
ছবি: Ann Wang/REUTERS
5 ছবি1 | 5
গত একবছরেরও বেশি সময় ধরে তাইওয়ান নিয়ে উত্তেজনা চলছে। আইন পরিবর্তন করে হংকং এবং তাইওয়ানের উপর নিজেদের আধিপত্য আরো বাড়িয়েছে চীন। বস্তুত, ১৯৪৯ সালে গৃহযুদ্ধের মধ্য দিয়ে চীন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছিল তাইওয়ান। কিন্তু তা কোনোদিনই স্বীকার করেনি। যদিও এতদিন চীনের মূলভূখণ্ড থেকে আলাদাই ছিল তাইওয়ান। সেখানে কিছু বিশেষ সুযোগসুবিধা দিয়েছিল চীন। গত কয়েকবছরে ক্রমশ সেই সুযোগগুলো তুলে নেওয়ার চেষ্টা করছে চীন। তাইওয়ানের অভিযোগ, চীন তাদের আগ্রাসন দেখাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে অ্যামেরিকা জানিয়েছে, তারা তাইওয়ানকে সবরকমভাবে সাহায্য করবে। ইউরোপীয় ইউনিয়নও তাইওয়ানকে সমর্থন জানিয়েছে। চীন পুরো বিষয়টি ভালো চোখে দেখেনি। রোববার সে বিষয়টি চীন আরো স্পষ্ট করে দিয়েছে। জানিয়ে দিয়েছে, তাইওয়ান চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয়। অন্য কারো এবিষয়ে কথা বলার অধিকার নেই।
শনিবার মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী অভিযোগ করেছিলেন, চীন তাইওয়ানের আকাশ সীমান্তে একের পর এক যুদ্ধবিমান পাঠাচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই একাজ করা হচ্ছে। অ্যামেরিকা একাজ মনে নেবে না। তাইওয়ানকে সাহায্য করবে। চীন বলেছে, তাইওয়ান নিয়ে একথা বলার কোনো অধিকার অ্যামেরিকার নেই।
শুধু তা-ই নয়, চীনের অভিযোগ, এশিয়া প্যাসিফিকে চীনকে বাদ রেখে একাধিক দেশের সঙ্গে জোট তৈরি করছে অ্যামেরিকা। চীন এই পদক্ষেপ ভালো চোখে দেখছে না। এর ফলে এশিয়া প্যাসিফিকে অশান্তির আবহাওয়া তৈরি হচ্ছে বলে চীনের অভিযোগ। এদিনের বক্তৃতার একেবারে শেষ পর্বে চীন বলেছে, আন্তর্জাতিক শক্তিসাম্য বজায় রাখতে এবং শান্তির পরিবেশ রক্ষা করতে চীন এবং রাশিয়ার কূটনৈতিক বন্ধুত্ব জরুরি। এবং সে কারণেই চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কথা বলা বন্ধ করতে হবে অ্যামেরিকাকে।