২০২২ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেলেন বেলারুশের মানবাধিকার কর্মী আলিয়্যেস বিয়ালিয়াৎস্কি, রাশিয়ার মানবাধিকার সংস্থা মেমোরিয়াল এবং ইউক্রেনের মানবাধিকার সংস্থা সেন্টার ফর সিভিল লিবার্টিজ৷
বিজ্ঞাপন
শুক্রবার নোবেল কমিটি শান্তিতে নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্তদের নাম ঘোষণা করে৷ ঘোষণায় বলা হয়েছে, পুরস্কারপ্রাপ্তরা তাদের নিজ নিজ দেশের নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি৷ ক্ষমতাসীনদের সমালোচনা এবং নাগরিকদের মৌলিক অধিকার রক্ষায় তারা বছরের পর বছর কাজ করে চলেছেন৷ যুদ্ধাপরাধ, মানবাধিকার লঙ্ঘন ও ক্ষমতার অপব্যাবহারের দলিল তৈরিতে অসামান্য অবদান রেখে চলেছেন তারা৷ শান্তি ও গণতন্ত্রের জন্য নাগরিক সমাজ কতটা গুরুত্ব বহন করে তা এই ব্যক্তি ও দুই প্রতিষ্ঠান তাদের কাজের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন বলেও জানায় নরওয়ের নোবেল কমিটি৷
কমিটির সংবাদ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ১৯৮০-র দশকে বেলারুশে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অন্যতম সূচনাকারী আলিয়্যেস বিয়ালিয়াৎস্কি৷ গণতন্ত্রের প্রসার ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় তিনি জীবন উৎসর্গ করেছেন৷ ১৯৯৬ সাল থেকে তার প্রতিষ্ঠিত সংগঠন ভিয়াসনা সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের কারণে আটক ও তাদের পরিবারের সহায়তা দিয়ে আসছে৷ ২০১১ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত তিনি নিজেও কারারুদ্ধ ছিলেন৷ নানা নিপীড়ন সত্ত্বেও গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই থেকে আলিয়্যেস বিয়ালিয়াৎস্কি ‘এক ইঞ্চিও’ সরে আসেননি বলে জানিয়েছে নোবেল কমিটি৷
অন্যদিকে ১৯৮৭ সালে মানবাধিকার সংস্থা মেমোরিয়াল প্রতিষ্ঠা করেন তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের মানবাধিকারকর্মীরা৷ মেমোরিয়াল বর্তমানে রাশিয়ার বৃহত্তম মানবাধিকার সংস্থায় পরিণত হয়েছে৷ রাশিয়ায় রাজনৈতিক নিপীড়নের শিকারদের বিষয়ে তথ্য সংকলন ও প্রমাণাদি সংগ্রহ করে চলেছে তারা৷
ইউক্রেনে মানবাধিকার ও গণতন্ত্রকে এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে ২০০৭ সালে কিয়েভে প্রতিষ্ঠিত হয় সেন্টার ফর সিভিল লিবার্টিজ৷ ইউক্রেনে নাগরিক সমাজ এবং পূর্ণ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় তারা শক্তিশালী অবস্থান নেয়৷ চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার হামলার পর ইউক্রেনের বেসামরিক নাগরিকদের উপর রুশ বাহিনীর যুদ্ধাপরাধের তথ্য, প্রমাণ সংগ্রহের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি৷
এফএস/এসিবি
২০২১: নোবেল কারা, কেন পেলেন
রসায়ন, পদার্থবিদ্যা, শান্তি ও সাহিত্য, এই ছবিঘরে এক নজরে এবছরের নোবেল বিজয়ীদের ছবি দেখে নিতে পারেন৷
গণতন্ত্রের জন্য শান্তি পুরস্কার
ফিলিপাইন্সের মারিয়া রেসা ও রাশিয়ার ডিমিট্রি মুরাটভকে ‘স্বাধীনতা রক্ষার জন্য লড়ে গণতন্ত্র ও দীর্ঘমেয়াদী শান্তি নিশ্চিত করায়’ শান্তি পুরস্কারের জন্য বেছে নিয়েছে নোবেল কমিটি৷ বিশ্বের যে সাংবাদিকরা প্রতিকুল পরিস্থিতিতেও নৈতিক সাংবাদিকতার চর্চা করছেন, তাদের প্রতিনিধি হিসাবে রেসা ও মুরাটভের এই স্বীকৃতি বলে জানাচ্ছে নোবেল কমিটি৷
সাংবাদিকতার লড়াই
২০১২ সালে র্যাপলার নামের একটি ডিজিটাল মিডিয়া সংস্থা চালু করেন মারিয়া রেসা, যার উদ্দেশ্যই ছিল ফিলিপাইন্সে ক্ষমতার অপব্যবহার, সহিংসতা ও রাষ্ট্রের অত্যাচারের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান সাংবাদিকতা চালানো৷ গণমাধ্যমে ভুয়া তথ্য ছড়ানো ও বিরোধী শক্তি দমনের বিরুদ্ধে সক্রিয় মারিয়া রেসার সংগঠনটি৷
ছবি: ProjectSpeaker
রাশিয়ায় বাক স্বাধীনতার লড়াই
কয়েক দশক ধরে রাশিয়ায় মুক্ত চিন্তা চর্চার জন্য লড়ছেন ডিমিট্রি মুরাটভ৷ ১৯৯৩ সালে নোভায়া গ্যাজেটা পত্রিকাটি চালু করেন তিনি৷ দেশের অভ্যন্তরে ও বিদেশে রাশিয়া যেভাবে সামরিক তৎপরতা বজায় রাখে, সেই বিষয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন করে সরকারের রোষের শিকার হন তিনি৷ এছাড়া দুর্নীতি, ভোট চুরি ও আইন বহির্ভূত গ্রেপ্তারের বিষয়েও সোচ্চার মুরাটভের পত্রিকাটি৷
ছবি: Alexander Zemlianichenko/AP Photo/picture alliance
সাহিত্যের শরণ
‘‘যেভাবে এক শরণার্থী এক মহাদেশ থেকে আরেক মহাদেশে বিভিন্ন সংস্কৃতির সাথে লড়ে, সেই লড়াইয়ের কথা প্রবলভাবে বলে ও সমাজকে উপনিবেশবাদের প্রভাবকে গভীরভাবে বোঝানোর জন্য’ সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার জিতলেন তাঞ্জানিয়া থেকে যুক্তরাজ্যে শরণার্থী হয়ে আসা লেখক আবদুলরাজাক গুরনাহ৷
গুরনাহের জন্ম ১৯৪৮ সালে টানজানিয়ার জানজিবারে৷ ষাটের দশকে যুক্তরাজ্যে আসেন শরণার্থী হয়ে৷ ৭৩ বছর বয়সি এই লেখকের ঝুলিতে রয়েছে ১০টি উপন্যাস৷ জয়ের খবর শুনে তিনি বলেন, ‘‘আমি অবাক কারণ আমি নিজের কানে না শুনে এটা বিশ্বাস করতে পারছিলাম না৷’’ ১৯৮৬ সালের পর তিনিই এই বিভাগে প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ বিজয়ী৷
ছবি: Ger Harley/StockPix/picture alliance
রসায়নে নোবেল
ডেভিড ম্যাকমিলানের সাথে রসায়নে নোবেলের যুগ্ম বিজয়ী হলেন জার্মান বিজ্ঞানী বেনজামিন লিস্ট৷ এসিমেট্রিক অর্গানো ক্যাটালাইসিস বিষয়ে তাদের কাজের জন্য পুরস্কার পেলেন তারা৷ দুজনের কর্মস্থল জার্মানির ম্যুলহাইম আন ডেয়ার রুর শহরের মাক্স প্লাংক ইন্সটিটিউটে৷
ছবি: Wolfgang Rattay/Reuters
উদযাপনের মরসুম
পুরস্কার ঘোষণা হবার পর লিস্ট ও তার স্কটিশ বংশোদ্ভূত সহকর্মী ম্যাকমিলান মাক্স প্লাংক ইন্সটিটিউটের সহকর্মীদের সাথে তা উদযাপন করেন৷ ছবিতে সেই দৃশ্য৷ নতুন ওষুধ তৈরির প্রক্রিয়া আরো সহজ ও পরিবেশবান্ধব করতে কাজে লাগবে তাদের গবেষণা৷
ছবি: Wolfgang Rattay/Reuters
চমকে দেওয়া খবর
সাধারণত ‘সুইডেন থেকে ফোন আসা’ নিয়ে বন্ধুদের সাথে ঠাট্টা করতেন বেনজামিন৷ কিন্তু আমস্টারডামে ছুটি কাটানোর সময়েই যে নোবেল জয়ের ফোন সত্যি সত্যি আসবে সুইডেন থেকে, তা আশা করেননি বলে জানান তিনি৷
ছবি: Wolfgang Rattay/Reuters
পদার্থবিদ্যায় নোবেল
হামবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী ক্লাউস হাসেলমান এবছরের নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন পদার্থবিদ্যায়৷ ছবিতে স্ত্রী ও কন্যার সাথে আনন্দঘন মুহূর্তে দেখা যাচ্ছে তাকে৷
ছবি: Fabian Bimmer/Reuters
সহকর্মীদের সাথে জয়
জাপানি বংশোদ্ভূত মার্কিন বিজ্ঞানী সিউকুরো মানাবে ও ইটালিয়ান বিজ্ঞানী জর্জিও পারিসির সাথে মিলে নোবেল জিতলেন হাসেলমান৷ পৃথিবীর পরিবর্তনশীল আবহাওয়াকে বোঝার ক্ষেত্রে তাদের গবেষণা গুরুত্বপূর্ণ৷
ছবি: Remo Casilli/Reuters
যা বললেন মানাবে
অ্যামেরিকার প্রিন্সটন থেকে মানাবে বলেন যে তাদের জয় আসলে নোবেল একাডেমির পরিবেশ সচেতনতার প্রতিফলন৷ কীভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলা করতে চান মানাবে, এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘‘আমরা যতটুকু জানি তার চেয়ে কয়েক লাখ গুণ বেশি জটিল জলবায়ু পরিবর্তন৷ আমার কাছে এখনও এটা একটা ধাঁধা৷’’
ছবি: Mike Segar/Reuters
স্বপ্নের মতো
হামবুর্গের মাক্স প্লাংক ইন্সটিটিউট ফর মিটিওরোলজিতে কর্মরত হাসেলমান বলেন যে এই খবর তার কাছে এক সুন্দর স্বপ্নের মতো৷ ‘‘আমি তো অবসর নিয়েছি৷ আজকাল অলস বোধ করি৷ তার মধ্যেই গবেষণা চালিয়ে চাই৷ এই সম্মান অনেক অনেক বড়৷’’
ছবি: Fabian Bimmer/Reuters
যা বললেন পারিসি
ইটালিয়ান বিজ্ঞানী জর্জিও পারিসি সংবাদমাধ্যমের সাথে কথা বলার সময় তুলে ধরেন স্কটল্যান্ডে অনুষ্ঠিত হতে চলা আসন্ন পরিবেশ সম্মেলনের কথা৷ বিশ্ব নেতৃত্বকে মনে করিয়ে দেন পরিবেশের কথা ভাবার বিষয়টি৷
স্যান ফ্রান্সিসকোর ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ডেভিড জুলিয়াস এবছর নোবেল জিতেছেন চিকিৎসা বিদ্যায় তার অবদানের জন্য৷ আডেম পাটাপুতিয়ানের সাথে মিলে এই পুরস্কার তারা পেয়েছেন তাপমাত্রার নতুন রিসেপ্টার আবিষ্কারের জন্য, যা ব্যাথা কমানোর ওষুধ আবিষ্কারের জন্য যুগান্তকারী হতে পারে৷
ছবি: Noah Berger/UCSF/Reuters
আডেম পাটাপুতিয়ান
ক্যালিফোর্নিয়ার স্ক্রিপস রিসার্চ সেন্টারের প্রফেসর আডেম পাটাপুতিয়ান এর আগে স্যান ফ্রান্সিসকোর ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করতেন৷ জুলিয়াস ও তার কাজের মাধ্যমে শরীরে ব্যথার নতুন কারণ খুঁজে বার করা সম্ভব হবে৷