শান্তিতে নোবেল পাচ্ছেন ইরাকের নাদিয়া মুরাদ ও কঙ্গোর ডাঃ ডেনি মুকওয়েগে৷ আইএস এর হাতে ধর্ষণসহ যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছিলেন মুরাদ৷ আর গণধর্ষণের শিকার নারীদের চিকিৎসা দিয়ে হুমকির মুখে দেশ ছাড়তে হয়েছিল মুকওয়েগেকে৷
বিজ্ঞাপন
শুক্রবার নরওয়ের নোবেল ইনস্টিটিউটে কঙ্গোর চিকিৎসক ডেনি মুকওয়েগে ও কুর্দি মানবাধিকারকর্মী নাদিয়া মুরাদকে ২০১৮ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কারের বিজয়ী ঘোষণা করা হয়৷ যুদ্ধকালীন সময়ে যৌন সহিংসতা প্রতিরোধে স্মরণীয় অবদানের জন্য তাঁদের এই পুরস্কার দেওয়া হয়েছে৷
নোবেল শান্তি পুরস্কারের বিতর্কিত বিজয়ীরা
ইয়াসির আরাফাত থেকে জাতিসংঘ– কেন তারা শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন? প্রায় প্রতি বছর অসলোতে ঘুরেফিরে এই প্রশ্ন ওঠে৷ এমন কয়েকজন শান্তিতে নোবেলজয়ীকে নিয়েই এই ছবিঘর..
ছবি: Getty Images
দীর্ঘদিনের আলোচনা
১৯০১ সালে যখন প্রথম সুইজারল্যান্ডের হেনরি ডুনান্ট (বামে) এবং ফ্রান্সের ফ্রেডেরিক প্যাসিকে (ডান দিকে) নোবেল শান্তি পুরস্কার দেয়া হয়, তখনই এ নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত ছিল নোবেল কমিশন৷ ডুনান্ট আন্তর্জাতিক রেড ক্রস প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং প্যাসির সঙ্গে একযোগে জেনেভা কনভেনশনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন৷ নোবেল কমিশনের আশঙ্কা ছিল, যুদ্ধকে মানবিক করার কথা বলে জেনেভা কনভেনশন হয়ত যুদ্ধের গ্রহণযোগ্যতাই বাড়িয়ে দেবে৷
ছবি: public domain
যুদ্ধবাজ এবং শান্তিকামী
মার্কিন প্রেসিডেন্ট থিওডর রুজভেল্টকে কখনোই খুব শান্তিকামী হিসেবে দেখা যায়নি৷ তিনি স্পেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ আহ্বান করেছিলেন৷ এরপর উপনিবেশবাদ থেকে কিউবাবাসীদের মুক্ত হতে সাহায্য করেন৷ তবে মার্কিন সেনাবাহিনী গিয়েই প্রথমে নিশ্চিত করেন যে, ওই ভূখণ্ডটি যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে থাকবে৷তবে রুশ-জাপান যুদ্ধের সময় শান্তির উদ্যোগের জন্য রুজভেল্ট শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান৷
ছবি: Getty Images
বর্ণবাদী শান্তিকামী
‘প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি এবং লীগ অব নেশনস প্রতিষ্ঠা’য় অবদানের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ২8 তম প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসনকে শান্তি পুরস্কার দেয়া হয়৷ তবে তিনি সব সময়ই সাদা চামড়ার মানুষদেরই সেরা মনে করতেন৷ সেকারণেই যুক্তরাষ্ট্রকে ‘সাদাদের স্বর্গরাজ্য’ বানাতে চেয়েছিল ‘কু ক্লুক্স ক্ল্যান’ নামের যে প্রতিষ্ঠানটি, তাদের পক্ষে ছিলেন উইলসন৷
ছবি: Getty Images
শান্তি ছাড়াই শান্তি পুরস্কার
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার ও ভিয়েতনামের পলিটব্যুরোর সদস্য লি ডুক থো ১৯৭৩ সালে প্যারিস শান্তি চুক্তিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন৷যুদ্ধ বন্ধের জন্যই এ চুক্তি করা হলেও ডুক থো পুরস্কার নিতে অস্বীকৃতি জানান, কেননা চুক্তি হলেও যুদ্ধ তখনো থামেনি৷চুক্তি সম্পাদনের দু’ বছর পরেও ভিয়েতনাম, লাওস ও কম্বোডিয়াতে সংঘাত চলেছে৷
ছবি: picture-alliance
অভ্যুত্থানকারীর ভাগ্যেও শান্তি পুরস্কার
মিশর-ইসরায়েলের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় একমত হয়ে ক্যাম্প ডেভিড চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিলেন মিশরের প্রেসিডেন্ট আনোয়ার আল সাদাত (বামে) ও ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী মেনাচেম বেগিন (ডানে)৷ ১৯৭৮ সালে এ কারণে শান্তি পুরস্কার দেয়া হয় তাঁদের৷ সাদাতের এই পুরস্কার সে সময় বেশ আলোড়ন তোলে৷ কারণ, ১৯৫২ সালে বাদশাহ ফারুককে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বিদায় করেই ক্ষমতায় এসেছিলেন আনোয়ার সাদাত৷
ছবি: AFP/Getty Images
শান্তিরক্ষা এবং নোংরামি
‘দ্য ব্লু হেলমেট’ জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী৷ ১৯৮৮ সালে নোবেল পুরস্কার দেয়া হয় তাঁদের৷ তবে নোবেল জয়ের পরই তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন জায়গায় নারী ও শিশুদের যৌন নির্যাতন ও তাদের পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করার অভিযোগ ওঠে৷ রুয়ান্ডায় গণহত্যা এবং স্রেব্রেনিকায় ব্যাপক হত্যাকান্ডের সময় নির্লিপ্ত থাকার অভিযোগও আছে তাদের বিরুদ্ধে৷
ছবি: Getty Images/A.G.Farran
দুই মুখো মানুষ
দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে এফ.ডব্লিউ ডি ক্লার্ক এক সময় সে দেশে সরাসরি বর্ণবাদের পক্ষে কাজ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে৷ পরে বর্ণবিদ্বেষ রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন৷নেলসন ম্যান্ডেলাসহ ন্যাশনাল কংগ্রেসের অনেক নেতাকে মুক্তি দেন তিনি৷ তা সত্ত্বেও ১৯৯৩ সালে ম্যান্ডেলার সঙ্গে তাঁকেও শান্তি পুরস্কারে ভূষিত করায় বিস্মিত হয়েছেন অনেকে৷
ছবি: Getty Images/R.Bosch
‘সন্ত্রাসী’ পেলেন নোবেল শান্তি পুরস্কার!
১৯৯৪ সালের পুরস্কার নিয়ে ব্যাপক শোরগোল পড়ে যায়৷ সে বছর মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রচেষ্টার জন্য ফিলিস্তিন লিবারেশন অর্গানাইজেশন প্রধান ইয়াসির আরাফাত এবং ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী আইজাক রবিন ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী শিমন পেরেসকে যৌথভাবে শান্তি পুরস্কার দেয়া হয়৷ আরাফাতকে ‘অযোগ্য বিজয়ী’ আখ্যায়িত করে এর প্রতিবাদে নোবেল কমিটি থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন নরওয়ের এক রাজনীতিবিদ৷
ছবি: Getty Images
জাতিসংঘও পেয়েছে শান্তি পুরস্কার
‘আরো ভালো এবং শান্তিপূর্ণ বিশ্ব’ প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখার জন্য ২০০১ সালে জাতিসংঘ ও এর মহাসচিব কোফি আনানকে নোবেল শান্তি পুরস্কার দেয়া হয৷ তবে অনেকগুলো চুক্তি সম্পাদন ও বাস্তবায়নে ব্যর্থতার কারণে তাদের ব্যাপক সমালোচনা তাতে থামেনি৷
ছবি: Reuters
বারাক ওবামার আগাম জয়ের মালা
‘আন্তর্জাতিক কূটনীতি এবং জনগণের মধ্যে সহযোগিতা জোরদারে অসাধারণ ভূমিকার জন্য’ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার নয় মাসের মাথায় পুরস্কার পান ওবামা৷ সমালোচকরা মনে করেন, বড্ড তড়িঘড়িই এসেছিল পুরস্কারটি৷ পরে তিনি আল-কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেনকে হত্যা করতে সামরিক হস্তক্ষেপ অনুমোদন করেছিলেন, যা আন্তর্জাতিক আইনবিরোধী হওয়ায় ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দেয়৷
ছবি: Reuters/C. Barria
যুদ্ধাপরাধে সহায়তাকারী থেকে নারী অধিকার কর্মী
হত্যাকাণ্ড, ধর্ষণ ও নির্যাতনের হাজার হাজার মামলাসহ যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন লাইবেরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট চার্লস টেইলর৷ তার সরকারের অর্থমন্ত্রী এবং পরবর্তীতে প্রেসিডেন্ট হওয়া এলেন জনসন সিরলেফের বিরুদ্ধেও টেইলরকে ওইসব কর্মকাণ্ডের সহায়তা করার অভিযোগ রয়েছে৷২০১১ সালে ‘নারীদের নিরাপত্তার জন্য অহিংস সংগ্রাম’ এর কারণে সিরলেফকেও দেয়া হয় শান্তি পুরস্কার৷
ছবি: T. Charlier/AFP/Getty Images
ইউরোপীয় ইউনিয়নের পুরস্কারও বিতর্কের ঊর্ধে নয়
শরণার্থী ক্যাম্পে বেশ অমানবিক অবস্থার জন্য বহু বছর ধরেই ইউরোপীয় ইউনিয়নের উদ্বাস্তু নীতির সমালোচনা করে আসছেন মানবাধিকার কর্মীরা৷ তারপরও ‘শান্তি, মীমাংসা ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় বিশেষ ভূমিকার জন্য’ ২০১২ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নকেও দেয়া হয় নোবেল শান্তি পুরস্কার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/K. Nietfeld
12 ছবি1 | 12
পেশায় মুকওয়েগে একজন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ৷ যিনি যুদ্ধে ধর্ষিত মহিলাদের চিকিৎসার জন্য বুকাভু শহরে একটি হাসপাতাল গড়ে তোলেন৷
২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে নাদিয়াকে মানবপাচারের শিকারদের মর্যাদা আদায়ের জন্য গড়া সংস্থার বিশেষ দূত ঘোষণা করে জাতিসংঘ৷ ২৫ বছর বয়সি ইয়াজিদি তরুণী নাদিয়া মুরাদ আইএস এর হাতে ধর্ষণসহ যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছিলেন৷ শান্তিতে নোবেল পাওয়া দ্বিতীয় সর্বকনিষ্ঠ ব্যক্তি তিনি৷ এর আগে, পাকিস্তানি মানবাধিকারকর্মী মালালা ইউসুফজাই ১৭ বয়সে শান্তিতে নোবেল পান৷
১৮৬৯ সালে সুইডিশ শিল্পপতি ও অস্ত্রনির্মাতা আলফ্রেড নোবেলের ইচ্ছায় দেয়া শুরু হয় এই পুরস্কার৷ নয় মিলিয়ন সুইডিশ ক্রোনার মূল্যের শান্তি পুরস্কারের জন্য এবার মোট ২১৬ জন ব্যক্তি ও ১১৫টি প্রতিষ্ঠান মনোনীত হয়েছিল৷
জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল এই ‘মহৎ বিজয়ীদ্বয়’ কে অভিনন্দন জানান এবং জার্মান সরকারের পক্ষ থেকে বিজয়ীদের সম্মান জানিয়ে তাঁর মুখপাত্র, স্টেফেন সাইবার্ট বলেন, যে মুকওয়েজি এবং নাদিয়া ‘ক্রন্দনরত মানবতার প্রতীক'৷