1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‌শান্তিনিকেতনে অশান্তি

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা
৯ অক্টোবর ২০১৮

সম্প্রতি এক বৃদ্ধা আবাসিকের বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা আরেকবার প্রমাণ করল, শান্তিনিকেতন ক্রমশই কত অ-নিরাপদ হয়ে উঠছে৷ রীতিমতো উদ্বেগে এখানকার বাসিন্দারা৷

Indien Kalkutta Home of Rabindranath Tagore
ছবি: DW/P. Samanta

বীরভূম জেলা পুলিশ ফের তৎপর হয়ে উঠেছে বোলপুর-শান্তিনিকেতন অঞ্চলের স্থায়ী আবাসিকের নিরাপত্তা নিয়ে৷ তার কারণ, সদ্য ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা, যেখানে এক বয়স্কা মহিলাকে ছুরির মুখে আটকে রেখে তাঁর বাড়িতে ডাকাতি করা হয়েছে৷ শান্তিনিকেতনে এমন ঘটনা এই প্রথম নয়৷ সেখানেও চুরি-ছিনতাইয়ের মতো অপরাধ ক্রমশ বেড়ে চলেছে৷ কিন্তু প্রবীণ নাগরিকরা, যাঁরা বয়সোচিত কারণেই বাধা দিতে অক্ষম, তাঁদের টার্গেট করার ঘটনাও ইদানীং বাড়ছে৷ মূলত দুটো কারণে৷ এক, শান্তিনিকেতনের গাছপালা ঘেরা নির্জন পরিবেশে বাড়িগুলি একটা অন্যটার থেকে একটু দূরে দূরে এবং বেশিরভাগ বাড়িই বাগান দিয়ে ঘেরা, চারদিক খোলামেলা৷ আর দ্বিতীয় কারণ, শান্তিনিকেতনের যাঁরা স্থায়ী বাসিন্দা, তাঁরা অধিকাংশই বয়স্ক৷ অনেক বৃদ্ধ-বৃদ্ধাই একা থাকেন৷ অথবা ফাঁকা বাড়ি পড়ে থাকে স্থানীয় কেয়ারটেকারের ভরসায়৷ এই দুটি বিষয়ই নিরাপত্তার নজর থেকে অত্যন্ত বিপদজনক৷ ফলে এর আগে কলকাতায় বা সল্ট লেক অঞ্চলে একলা বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের ওপর যেভাবে একের পর এক হামলা এবং ডাকাতির ঘটনা ঘটছিল, সেই একই উপদ্রব শুরু হয়েছে শান্তিনিকেতনে৷

‘সামাজিক বিচ্ছিন্নতারই সুযোগ নিচ্ছে দুষ্কৃতিরা’

This browser does not support the audio element.

বীরভূম জেলা পুলিশ এ কারণে বাড়তি সতর্কতা নিতে শুরু করেছে৷ পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বোলপুর, শ্রীনিকেতন, শান্তিনিকেতন, প্রান্তিক এলাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন, এমন প্রবীণ নাগরিকদের একটি ডেটাবেস তৈরি করার৷ নিয়ম করে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই প্রবীণ মানুষদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার, খোঁজখবর নেওয়ার, যাতে দুষ্কৃতিরা কোনো ফাঁকা বাড়িতে ঢুকে কোনো একলা মানুষের ওপর হামলা করার আগে দুবার ভাবে৷ কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, এর আগেও শান্তিনিকেতন এলাকায় ‘‌আশ্বাস'‌ বলে একটি প্রকল্প চালু হয়েছিল, যার একই উদ্দেশ্য ছিল৷ কিন্তু নানা কারণে সেটি সফল হয়নি৷ তার অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে লোকাভাব৷ পুলিশে যথেষ্ট সংখ্যক কর্মী নেই, যাঁদের নিয়মিত এই কাজে নিযুক্ত রাখা যায়৷ শান্তিনিকেতনের বাসিন্দারাও কিন্তু মনে করছেন, এই দায়িত্ব একা পুলিশ বা জেলা প্রশাসনের হতে পারে না৷ এ এক সমবেত দায়িত্ব, যাতে নাগরিকদেরও শামিল হতে হবে৷ শান্তিনিকেতনের বাগানপাড়া অঞ্চলের দীর্ঘদিনের বাসিন্দা, বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রধান গ্রন্থাগারিক স্বপন কুমার ঘোষ যেমন ডয়চে ভেলেকে স্পষ্টই জানালেন, ‘‘‌এ ব্যাপারে পুলিশ প্রশাসন যে খুব নিষ্ক্রিয়, তা আমি বলব না৷ তাঁরাও তাঁদের সাধ্যমতো চেষ্টা করেন৷''‌ স্বপনবাবুই জানালেন, প্রায় এক বছর হতে চলল, বোলপুর শহরে প্রবীণ নাগরিক যাঁরা আছেন, শ্রীনিকেতনে, শান্তিনিকেতনে, তাঁদের সঙ্গে সংযোগ রাখার জন্য একটা কেন্দ্র খোলা হয়েছে৷ রাঙামাটি হেল্প লাইন৷ কিন্তু এর আগে পুলিশেরই ‘‌আশ্বাস'‌ কর্মসূচি সেভাবে সফল হয়নি৷ স্বপনবাবুর সোজা উত্তর, ‘‘‌আমরা যারা নাগরিক আছি, তাঁদেরকেও এটা একটু ভাবতে হবে৷ শুধু প্রশাসন, পঞ্চায়েত, পুলিশ করে দেবে, সেটা নয়, আমাদেরও তাদের সঙ্গে শামিল হতে হবে৷''‌

স্বপন কুমার ঘোষ নানা সম্ভাব্য ব্যবস্থার কথা বলেছেন৷ যেমন, আবাসিক অঞ্চলগুলিতে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করা৷ যদি প্রত্যেকটি বাড়ির চত্বরে একটি করে জোরালো আলো লাগানো যায়, তা হলেও অনেকটা বিপদ কমবে বলে তাঁর বিশ্বাস৷ এছাড়া এলাকাবাসীর ব্যক্তিগত উদ্যোগে রাতপাহারার ব্যবস্থা করার কথাও তিনি জানিয়েছেন৷ তাঁর যেখানে বাড়ি, সেই বাগানপাড়া এলাকাতে একজন রক্ষী তাঁরা নিয়োগ করেছেন৷ এছাড়া বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব যে পাহারা ব্যবস্থা আছে, সেটিকেও আরো সক্রিয় করে তোলা, শ্রীনিকেতন, প্রান্তিকের মতো জায়গায় একটি করে ফটক বসানো, এ রমক নানা কিছুর প্রস্তাব তাঁর আছে৷ এর সঙ্গে পুলিশের টহলদারি, আবাসিকদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে চলা, এগুলি তো আছেই৷

কথাপ্রসঙ্গে আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন আজন্ম শান্তিনিকেতনের বাসিন্দা স্বপন কুমার ঘোষ৷ মানুষে মানুষে যোগাযোগটা আগের মতো থাকলে এই ধরনের ঘটনা এড়ানো যায়, এড়ানো যেত বলে মনে করেন তিনি৷ এক সময় একজন গিয়ে আরেকজনের বাড়ি খোঁজ নিতেন৷ এখন বয়সের কারণে অনেকেই বাড়ির বাইরে বেরোতে পারেন না৷ নিয়মিত খোঁজ-খবর রাখা হয় না সবার৷ সেই সামাজিক বিচ্ছিন্নতারই সুযোগ নিচ্ছে দুষ্কৃতিরা৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ