শান্তিনিকেতনে বাংলাদেশ ভবনের উদ্বোধনে আসছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ একই মঞ্চে তাঁর সঙ্গে থাকবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি৷
বিজ্ঞাপন
পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার শান্তিনিকেতনে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রতিষ্ঠিত বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের এলাকাতেই গড়ে তোলা হয়েছে বাংলাদেশ ভবন৷ দুই বাংলার নিবিড় সাংস্কৃতিক যোগসূত্র এবং নিত্য চিন্তা-বিনিময়ের কেন্দ্র হিসেবে গঠিত এই ভবনের উদ্বোধন করতে শুক্রবার শান্তিনিকেতনে আসছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ ওই দিনেই বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়ের ছাত্র-ছাত্রীদের সমাবর্তন, যে অনুষ্ঠানে যোগ দিতে প্রথমবার শান্তিনিকেতনে আসছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, যিনি প্রথামাফিক বিশ্বভারতীর আচার্যও বটে৷ কাজেই একই মঞ্চে থাকবেন দুই প্রধানমন্ত্রী, একসঙ্গে দুপুরের খাবারও খাবেন৷ এবং থাকবেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি৷ শনিবার প্রধানমন্ত্রী হাসিনা যাবেন আসানসোল৷ সেখানে কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁকে সাম্মানিক ডক্টরেট দেওয়া হবে৷
বাংলাদেশ সরকার ২৫ কোটি টাকা দিয়েছে বাড়িটি তৈরি করতে: নীলাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শান্তিনিকেতনে বাংলাদেশ ভবনটি তৈরি হয়েছে বাংলাদেশ সরকারের আর্থিক সহযোগিতায়৷ এ সম্পর্কে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্পেশাল অফিসার নীলাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় ডয়চে ভেলেকে জানালেন, বাংলাদেশ সরকার ২৫ কোটি টাকা দিয়েছে বাড়িটি তৈরি করতে এবং নির্বাহ খরচ হিসেবে দিয়েছে আরও ১০ লক্ষ টাকা৷ এই বাড়িটিতে থাকছে ৪৫০ আসনের একটি প্রেক্ষাগৃহ৷ এত বড় প্রেক্ষাগৃহ বিশ্বভারতীতে নেই৷ থাকছে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ইতিহাসভিত্তিক একটি সংগ্রহশালা৷ সেটিও বাংলাদেশ সরকারই সাজিয়ে দিয়েছে৷ এছাড়া বাংলাদেশ বিষয়ক বইপত্রের সংগ্রহ নিয়ে একটি পাঠাগারও তৈরি করে দিয়েছে শেখ হাসিনার সরকার৷ রবীন্দ্রনাথের সার্ধ-শতবর্ষে ঢাকায় যখন অনুষ্ঠান হচ্ছিল, তখনই শান্তিনিকেতনে এই ভবন গড়ার পরিকল্পনা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ গত এপ্রিলের মাঝামাঝি বাংলাদেশের সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর শান্তিনিকেতনে এসে বাড়িটির চূড়ান্ত পর্যায়ের কাজ তদারকি করে যান৷ তখনই তিনি বলেছিলেন, এই বাড়ি শান্তিনিকেতনের অন্যতম পর্যটক আকর্ষণও হয়ে উঠবে৷ সম্ভবত সাধারণের ব্যবহার্য করার কথা ভেবেই বাড়িটিতে একটি ক্যাফেটোরিয়াও রাখা হয়েছে৷
তবে একই মঞ্চে মোদী, হাসিনা, মমতা, অথচ তিস্তার জলবণ্টন সমস্যা বা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সমস্যা নিয়ে কোনও কথা হবে না, এতটা মেনে নিতে পারছে না ভারতের কূটনৈতিক মহল৷ বরং শোনা যাচ্ছে, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিয়ে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর কথা হতে পারে৷ কারণ, কিছুদিন আগেই এই বিষয়ে কথা বলতে বাংলাদেশের এক উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল দিল্লি সফর করেছে৷ আর বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচনের বছরে শেখ হাসিনার এই পশ্চিমবঙ্গ সফরও বাড়তি তাৎপর্য পাচ্ছে, কারণ, মৌলবাদী এবং সাম্প্রদায়িক শক্তিকে রুখে দিয়ে বাংলাদেশে ক্ষমতা ধরে রাখতে শেখ হাসিনা ভারতেরও সহযোগিতা চেয়েছেন বলে খবর৷
জোড়াসাঁকোর অন্দরমহলে
কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি এখন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণ হিসেবে ব্যবহৃত৷ এই বাড়িতেই জন্মগ্রহণ করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর৷ আধুনিক বাংলা সাহিত্যে এই বাড়ির অবদান অনস্বীকার্য৷
ছবি: DW/P. Samanta
যাবার দিনের কথা
বারান্দায় কবির মূর্তির সামনে রয়েছে একটি ট্রেনের অনুকৃতি। শান্তিনিকেতন থেকে যে ট্রেনে কবিকে শেষবারের মতো কলকাতায় আনা হয়, এটি তারই অনুকৃতি। ভারতীয় রেল ঠাকুরবাড়িকে এই উপহার দিয়েছে।
ছবি: DW/P. Samanta
দিনুর ঘর
রবীন্দ্রসঙ্গীতের ‘সকল গানের ভাণ্ডারী’ দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর অধিকাংশ রবি গানের স্বরলিপিকার ছিলেন। কবি নতুন কোনও গান রচনা করার পরপরই দিনেন্দ্রনাথ স্বেচ্ছায় বা কবির নির্দেশে সে গান কণ্ঠে তুলে নিতেন।
ছবি: DW/P. Samanta
নিরাকারের জন্য প্রার্থনাস্থল
বাড়ির পুরনো অংশের কেন্দ্রস্থলে রয়েছে দালানটি। ব্রাহ্ম ধর্মে দীক্ষিত হওয়ার আগে এটি ছিল ঠাকুরদালান। তখন এখানে দুর্গাপুজো হত। ব্রাহ্ম ধর্মে দীক্ষার পর এই দালান নিরাকার ব্রহ্মকে উৎসর্গ করা হয়।
ছবি: DW/P. Samanta
প্রাচীন ঠাকুরবাড়ি
১৭৮৪ সালে এই দালান অংশের নির্মাণকাজ শুরু হয়। এর বিপরীতে রয়েছে একটি স্থায়ী মঞ্চ। এখানেই বাল্মিকী প্রতিভা নাটক নিয়ে কবির আত্মপ্রকাশ।
ছবি: DW/P. Samanta
শয়নকক্ষ
কবি ও কবিপত্মী মৃণালিনী দেবীর ব্যবহৃত এই ঘরটিতে রয়েছে অনুচ্চ গদিযুক্ত লম্বা পালঙ্ক, বই রাখার তাক ও বেতের চেয়ার। রয়েছে বেশ কয়েকটি ছবি। তার মধ্যে একটি গুরুদেবের শান্তিনিকেতনে ক্লাস নেওয়ার ছবি।
ছবি: DW/P. Samanta
এসো বস আহারে
দোতলায় সিঁড়ি দিয়ে উঠেই প্রথমে পড়ে ঠাকুরবাড়ির ভোজন কক্ষ। টেবিল ও হেলান দেওয়া চেয়ারে প্রতিফলিত ঠাকুর পরিবারের আভিজাত্য।
ছবি: DW/P. Samanta
রাজা সাজার ঘর
কবির ব্যবহৃত পোশাক-পরিচ্ছদের ঠাঁই ছিল এখানেই। বিচিত্রা ভবনে যতবার পারিবারিক নাটকের আয়োজন হয়েছে, কবি এই আয়নায় নাটকের সাজ করেছেন। ঘরটিতে সাজানো রয়েছে কবির নানা বয়সের ছবি।
ছবি: DW/P. Samanta
দক্ষিণের বারান্দা
জীবনস্মৃতিতে উল্লিখিত সেই দক্ষিণের বারান্দা এটাই। এখানে কবির জীবনের অনেক স্মৃতি জড়িয়ে। এই বারান্দা পেরিয়েই যে ঘর, সেখানে রয়েছে বংশ তালিকা। বারান্দার আবরণীর ওপাশে দেখা যাচ্ছে বাড়ির পুরোনো অংশ।
ছবি: DW/P. Samanta
সঙ্গিনীর শেষের দিনে
জীবনের শেষের দিকে কবি-পত্নী এই ঘরেই কাটিয়েছেন। এমনকী তাঁর শেষশয্যাও এখানেই পাতা হয়েছে। সারা রাত মৃত্যুশয্যায় স্ত্রীকে পাহারা দেওয়ার পর কবি চলে গিয়েছিলেন ছাদে। আজও কাঁচের আলমারিতে তাঁর ব্যবহৃত শাড়িটি পরম যত্নে রাখা।
ছবি: DW/P. Samanta
ওই দেখা যায় হেঁশেল
দোতলার রান্নাঘরটি বেশ ছিমছাম এবং আলোবাতাস পূর্ণ। এখানেই জাপানি অতিথিদের জন্য নাকি প্রথমবার চা খাওয়ার বন্দোবস্ত করা হয়েছিল। আমদানি করা হয়েছিল চায়ের সরঞ্জাম সমূহ। হেঁশেলের আলমারিতে রাখা আছে দেড়শো বছরের পুরনো চিনামাটির পাত্র ও পাথরের বাসনপত্র।
ছবি: DW/P. Samanta
ভোজের উৎসস্থল
ঠাকুরবাড়ির যাবতীয় সৃজনশীল রান্নার উৎসস্থল দোতলার এই মাটির উনুন। প্রজ্ঞাসুন্দরী দেবী বা মৃণালিনী দেবীর নানা রকম অভিনব আয়োজনের শরিক এই উনুনই। চা করার জন্য কয়লার চুল্লিরও ব্যবস্থা করা হয়েছিল।
ছবি: DW/P. Samanta
যাত্রী নেই
কবিগুরুর ব্যবহৃত কালো রঙের এই গাড়ি আজ সম্পূর্ণ বিশ্রামে। অনেক আলোকবর্ষ দূরে চলে গিয়েছেন এই গাড়ির যাত্রী। তাঁর স্মৃতি নিয়ে দাঁড়িয়ে জোড়াসাঁকোয়।
ছবি: DW/P. Samanta
ছবির ঘর
প্রবীণ কবির কাছে ক্যানভাসই হয়ে উঠেছিল কবিতা। কবিগুরুর নানা ছবির সম্ভার রয়েছে এই ঘরে।
ছবি: DW/P. Samanta
আছে দুঃখ, আছে মৃত্যু
দেওয়ালে টাঙানো ছবিগুলো দেখলে বোঝা যায় এ তাঁর রোগশয্যার চিহ্ন। এই প্রয়াণকক্ষেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। এর পিছনের ঘরে পর্দা টেনে তাঁর অস্ত্রোপচার করেন চিকিৎসকেরা।