আজ থেকে ঠিক এক বছর আগে একটি সংবাদ অনেককে মুহূর্তের জন্য থমকে দিয়েছিল, করেছিল হতবাক৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পড়ে থাকা অভিজিৎ রায়ের রক্তাক্ত মরদেহ দেখে আৎকে উঠেছিলেন অনেকে৷
ছবি: DW
বিজ্ঞাপন
যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী লেখক, ব্লগার অভিজিৎ রায় তখন যে ঢাকা ছিলেন সেই খবরটা জানতো গুটিকয়েক মানুষ৷ ফেসবুকে প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে তিনি দেশে যাননি৷ কারণ তাঁকে হত্যার হুমকি দেয়া হচ্ছিল৷ অতি আপনজনদের কেউ কেউ তাঁকে যেতে নিষেধও করেছিলেন৷ তবুও অমর একুশে গ্রন্থমেলার টানে সস্ত্রীক দেশে যান অভিজিৎ রায়৷
অভিজিৎ সম্ভবত বিশ্বাস করতেন, যতদিন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে, ততদিন দেশটা মুক্তমনাদের জন্য নিরাপদ৷ মোটের উপর, তাঁর বাবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা বিভাগের সাবেক অধ্যাপক অজয় রায়ের সঙ্গে হাসিনা পরিবারের একটা সম্পর্ক ছিল৷ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রয়াত স্বামী ড. ওয়াজেদ মিয়া ছিলেন অজয় রায়ের সরাসরি ছাত্র৷ পাশাপাশি পুলিশের তরফ থেকেও অভিজিতের বাবাকে আশ্বস্ত করা হয়েছিল যে তাঁর নিরাপত্তার বিষয়টি দেখা হবে৷
তবে অভিজিতের বিশ্বাস, অবিশ্বাসে পরিণত হতে সময় লেগেছে মাত্র কয়েক সেকেন্ড৷ বইমেলা থেকে ফেরার পথে মূল গেট পেরিয়ে মাত্র কয়েক মিটার এগোতে পেরেছিলেন তিনি৷ তারপরই ঘটে যায় বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম বর্বর সেই হত্যাকাণ্ড৷ দুই খুনির চাপাতির একের পর এক কোপে ধরাশায়ী হন অভিজিৎ রায়৷ গুরুতর আহত হন তাঁর স্ত্রী, ব্লগার রাফিদা আহমেদ বন্যা৷ ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতের ঘটনা সেটা৷ খুনের ধরন দেখে পরিষ্কার যে, খুনিরা অভিজিতের দেশে ফেরা থেকে শুরু করে তাঁর অবস্থান, গতিবিধি সব কিছু নিঁখুতভাবে জানতো৷ প্রশ্ন হচ্ছে, কিভাবে জানতো?
অভিজিতের মৃত্যু মুক্তমনাদের অনেক হিসেব বদলে দিয়েছে৷ ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেই যে মুক্তমনারা নিরাপদ নন, সেটা প্রমাণ হয়ে গেছে মুহূর্তের মধ্যে৷ হত্যাকাণ্ডের পর শেখ হাসিনা গভীর রাতে কথা বলেছেন অধ্যাপক অজয় রায়ের সঙ্গে, তবে সেটা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নয়৷ সেই কথোপকথন নিয়ে মুখ খোলা ছিল কার্যত বারণ৷ গণমাধ্যমে সে খবর প্রকাশ হয়নি, অতিকথনে বিশ্বাসী আওয়ামী লীগ নেতারা এই নিয়ে কোনো কথা বলেননি৷ কেন?
বাংলাদেশে জঙ্গি হামলার শিকার যারা
চলতি বছর ইসলামপন্থিরা একের পর এক হামলা চালিয়ে বাংলাদেশকে কাঁপিয়ে দিয়েছে৷ এতে প্রাণ হারিয়েছেন বেশ কয়েকজন৷ চলুন জানা যাক ২০১৫ সালের কবে, কারা হামলার শিকার হয়েছেন...৷
ছবি: Getty Images/AFP/Uz Zaman
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ব্লগার খুন
একুশে বইমেলা থেকে ফেরার পথে ২৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে খুন হন ব্লগার এবং লেখক অভিজিৎ রায়৷ কমপক্ষে দুই দুর্বৃত্ত তাঁকে কুপিয়ে হত্যা করে৷ এসময় তাঁর স্ত্রী বন্যা আহমেদও গুরুতর আহত হন৷ বাংলাদেশি মার্কিন এই দুই নাগরিককে হত্যার দায় স্বীকার করেছে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি গোষ্ঠী ‘আনসারুল্লাহ বাংলা টিম’৷ পুলিশ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে একাধিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman
বাড়ির সামনে খুন
ব্লগার ওয়াশিকুর রহমান বাবুকে হত্যা করা হয় ঢাকায়, গত ৩০ মার্চ৷ তিন দুর্বৃত্ত মাংস কাটার চাপাতি দিতে তাঁকে কোপায়৷ সেসেময় কয়েকজন হিজরে সন্দেহভাজন দুই খুনিকে ধরে ফেলে, তৃতীয়জন পালিয়ে যায়৷ আটকরা জানায়, তারা মাদ্রাসার ছাত্র ছিল এবং বাবুকে হত্যার নির্দেশ পেয়েছিল৷ কে বা কারা এই হত্যার নির্দেশ দিয়েছে জানা যায়নি৷ বাবু ফেসবুকে ধর্মীয় উগ্রপন্থিদের বিরুদ্ধে লিখতেন৷
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP/Getty Images
সিলেটে আক্রান্ত মুক্তমনা ব্লগার
শুধু ঢাকায় নয়, ঢাকার বাইরে ব্লগার হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে৷ গত ১২ মে সিলেটে নিজের বাসার কাছে খুন হন নাস্তিক অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট এবং ব্লগার অনন্ত বিজয় দাস৷ ভারত উপমহাদেশের আল-কায়েদা, যাদের সঙ্গে ‘আনসারুল্লাহ বাংলা টিম’-এর সম্পর্ক আছে ধারণা করা হয়, এই হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে৷ দাস ডয়চে ভেলের দ্য বব্স জয়ী মুক্তমনা ব্লগের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/EPA/Str
বাড়ির মধ্যে জবাই
ব্লগার নিলয় চট্টোপাধ্যায়কে, যিনি নিলয় নীল নামেই বেশি পরিচিত ছিলেন, হত্যা করা হয় ঢাকায় তাঁর বাড়ির মধ্যে৷ একদল যুবক বাড়ি ভাড়ার আগ্রহ প্রকাশ করে ৮ আগস্ট তাঁর বাড়িতে প্রবেশ করে এবং তাঁকে কুপিয়ে হত্যা করে৷ নিজের উপর হামলা হতে পারে, এমন আশঙ্কায় পুলিশের সহায়তা চেয়েছিলেন নিলয়৷ কিন্তু পুলিশ তাঁকে সহায়তা করেনি৷ ‘আনসারুল্লাহ বাংলা টিম’ এই হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে, তবে তার সত্যতা যাচাই করা যায়নি৷
ছবি: Getty Images/AFP/Uz Zaman
জগিংয়ের সময় গুলিতে খুন বিদেশি
গত ২৮ সেপ্টেম্বর রাতে জগিং করার সময় ঢাকার কূটনৈতিক এলাকায় খুন হন ইটালীয় এনজিও কর্মী সিজার তাবেলা৷ তাঁকে পেছন থেকে পরপর তিনবার গুলি করে দুর্বৃত্তরা৷ জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট বা আইএস এই হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে বলে দাবি করেছে জিহাদিদের অনলাইন কর্মকাণ্ডের দিকে নজর রাখা একটি সংস্থা৷ তবে বাংলাদেশে সরকার এই দাবি অস্বীকার করে বলেছে ‘এক বড় ভাইয়ের’ তাঁকে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/ A.M. Ahad)
রংপুরে নিহত এক জাপানি
গত ৩ অক্টোবর রংপুরে খুন হন জাপানি নাগরিক হোশি কুনিও৷ মুখোশধারী খুনিরা তাঁকে গুলি করার পর মোটরসাইকেলে করে পালিয়ে যায়৷ ইসলামিক স্টেট এই হত্যাকাণ্ডেরও দায় স্বীকার করেছে, তবে সরকার তা অস্বীকার করেছে৷ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বাস করেন না যে তাঁর দেশে আন্তর্জাতিক জঙ্গি গোষ্ঠীটির উপস্থিতি রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
হোসনি দালানে বিস্ফোরণ, নিহত ১
গত ২৪ অক্টোবর ঢাকার ঐতিহ্যবাহী হোসনি দালানে শিয়া মুসলমানদের আশুরার প্রস্তুতির সময় বিস্ফোরণে এক কিশোর নিহত এবং শতাধিক ব্যক্তি আহত হন৷ বাংলাদেশে এর আগে কখনো শিয়াদের উপর এরকম হামলায় হয়নি৷ এই হামলারও দায় স্বীকার করেছে ইসলামিক স্টেট, তবে সরকার সে দাবি নাকোচ করে দিয়ে হামলাকারীরা সম্ভবত নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি গোষ্ঠী জেএমবি-র সদস্য৷ সন্দেহভাজনদের একজন ইতোমধ্যে ক্রসফায়ারে মারা গেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Zaman
ঢাকায় প্রকাশক খুন
গত ৩১ অক্টোবর ঢাকায় দু’টি স্থানে কাছাকাছি সময়ে দুর্বৃত্তরা হামলা চালায়৷ এতে খুন হন এক ‘সেক্যুলার’ প্রকাশক এবং গুরুতর আহত হন আরেক প্রকাশক ও দুই ব্লগার৷ নিহত প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপনের সঙ্গে ঢাকায় খুন হওয়া ব্লগার অভিজিৎ রায়ের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল৷ জঙ্গি গোষ্ঠী ‘আনসার-আল-ইসলাম’ হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman
প্রার্থনারত শিয়াদের গুলি, নিহত ১
গত ২৭ নভেম্বর বাংলাদেশের বগুড়ায় অবস্থিত একটি শিয়া মসজিদের ভেতরে ঢুকে প্রার্থনারতদের উপর গুলি চালায় কমপক্ষে পাঁচ দুর্বৃত্ত৷ এতে মসজিদের মুয়াজ্জিন নিহত হন এবং অপর তিন ব্যক্তি আহত হন৷ তথকথিত ইসলামিক স্টেট-এর সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ততা দাবি করা স্থানীয় একটি গোষ্ঠী হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
9 ছবি1 | 9
অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানাননি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ বরং জানিয়েছেন, তাঁর দল ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী হলেও ধর্মহীনতায় বিশ্বাসী নয়৷ বলেছেন, ইসলাম নিয়ে কেউ নেতিবাচক কিছু বললে তাঁর অনুভূতিতেও আঘাত লাগে৷ অথচ ২০০৪ সালে শেখ হাসিনাই কিন্তু বেশ খানিকটা পথ পায়ে হেঁটে মৌলবাদীদের হামলায় গুরুতর আহত অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদকে হাসপাতালে দেখতে গিয়েছিলেন৷ তখন তিনি ছিলেন বিরোধী দলের নেত্রী৷ আর আজ ক্ষমতায় থাকার পরও তিনি একইরকম হামলার শিকার মানুষদের পরিবারের পাশে দাঁড়ান না, খুনিদের বিচারের আশ্বাস দেন না৷ প্রধানমন্ত্রীর ভয়টা কোথায়?
ব্লগার হত্যা নিয়ে সরকার প্রধানের দুর্বল অবস্থান মৌলবাদীদের উৎসাহ জুগিয়েছে কিনা বলা মুশকিল৷ কেউ কেউ অবশ্য তেমনটাই দাবি করেন৷ যেটা দেখা গেছে, সেটা হলো, অভিজিৎ হত্যাই শেষ হত্যায় পরিণত হয়নি৷ বরং নিয়মিত বিরতিতে একই বছর খুন হয়েছেন ব্লগার ওয়াশিকুর রহমান বাবু, অনন্ত বিজয় দাস, নিলয় নীল এবং প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপন৷ গুরুতর আহত প্রকাশক আহমেদুর রশীদ টুটুল জানে বেঁচে গেছেন৷ এছাড়া অন্তত ২০ জন ব্লগার, লেখক হত্যার হুমকি পেয়ে নির্বাসনে চলে গেছেন৷
মুক্তমনা, মানবতাবাদী ব্লগারদের পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে৷ প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের পর খুনিরা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে খুনের কারণ ব্যাখা করে ‘পোস্ট’ দিয়েছে৷ পরবর্তী হত্যাকাণ্ডের শিকার কে বা কারা হতে পারেন, সে ইঙ্গিতও দিয়েছে৷ গোয়েন্দারা কখনো নামে, কখনো বেনামে জানিয়েছেন, যারা খুন করছে তারা নীচুস্তরের উগ্রপন্থি হলেও যারা খুনের পরিকল্পনা করছে, তথ্য সরবরাহ করছে তারা উচ্চশিক্ষিত, সমাজে প্রতিষ্ঠিত৷ প্রশ্ন হচ্ছে, গোয়েন্দারা এ সব জানার পরও কেন পরিকল্পনাকারীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না? কারণটা কি রাজনৈতিক?
আরাফাতুল ইসলাম, ডয়চে ভেলেছবি: DW/Matthias Müller
অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ, বিচারের দাবি
বইমেলা থেকে ২৬শে ফেব্রুয়ারি রাতে ফেরার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় সন্ত্রাসীদের হামলায় নিহত হন ব্লগার অভিজিৎ রায়৷ মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা অভিজিতকে হত্যার প্রতিবাদে উত্তাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়৷
ছবি: DW
যেখানে হামলার শিকার অভিজিৎ, বন্যা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকার ফুটপাথ৷ লেখক, ব্লগার অভিজিৎ রায়ের নিহত হবার এই জায়গাটা নিরাপত্তা বেষ্টনী দিয়ে ঘিরে রেখেছে বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী৷ হামলায় তাঁর স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যাও গুরুতর আহত হন৷
ছবি: DW
বেঁচে গেছেন বন্যা
হামলার পর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অভিজিৎ রায়ের স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যা৷ দুষ্কৃতিকারীরা তাঁকে কুপিয়ে জখম করলেও প্রাণে বেঁচে যান অ্যামেরিকায় বসবাসকারী এই ব্লগার৷ বর্তমানে স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন তিনি৷
ছবি: DW
নির্বাক অজয় রায়
ছেলের মৃত্যুর খবরে নির্বাক নিহত অভিজিৎ রায়ের বাবা অজয় রায়৷ আজয় রায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞানের শিক্ষক ছিলেন৷
এ কথা অস্বীকারের উপায় নেই যে, চার ব্লগার, এক প্রকাশককে খুন করে বাংলাদেশে চরম আতঙ্ক তৈরি করতে সফল হয়েছে ধর্মীয় মৌলবাদীরা৷ মুক্তবুদ্ধির চর্চার উপর এক চরম আঘাত এটা৷ অবস্থা এমন যে, এখন বইমেলা চালাতে হচ্ছে মৌলবাদীদের সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে, কোনো বই নিয়ে কোনো মহল থেকে আপত্তি উঠলেই তা বাতিল করতে হচ্ছে, যে প্রকাশনী ছাপাচ্ছে তার স্টল বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে৷ পাছে উগ্রপন্থিরা খেপে গিয়ে কিছু করে বসে সেই ভয়ে৷
এই ভয় ভবিষ্যতে কতটা ভয়াবহ আকার ধারণ করবে তা এক্ষুণি ধারণা করা কঠিন৷ তবে এতটুকু নিরাপদেই বলা যায়, এমন ভীতিকর পরিস্থিতি চলতে থাকলে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ ক্রমশ বাড়বে৷ আজকে যারা ব্লগার হত্যা করছে, কালকে হয়ত ওয়াহাবী মতবাদে রাষ্ট্র পরিচালনার আশায় আরো বড় কাউকে হত্যা করবে৷ আর এভাবে শান্তিপ্রিয়, ‘মডারেট’ মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ পরিচিতি পাবে ধর্মীয় মৌলবাদীদের দখলে চলে যাওয়া এক জঙ্গি রাষ্ট্র হিসেবে৷ আর সেটা কারো জন্যেই মঙ্গলজনক হবে না৷
বন্ধু, আপনি কি আরাফাতুল ইসলামের সঙ্গে একমত? জানান নীচের মন্তব্যের ঘরে৷
‘‘আল্লাহ’র নামে আর কোনো হত্যাকাণ্ড নয়’’
বাংলাদেশে মুক্তমনাদের উপর হামলা নিয়ে বার্লিনে মানববন্ধনে প্রদর্শন করা প্ল্যাকার্ডের ছিল বিশেষ কিছু বার্তা৷ চলুন সেগুলো দেখে নেয়া যাক৷
ছবি: DW/A. Islam
‘‘জাতিগত ও ধর্মীয় সহিংসতাকে ‘না’ বলুন’’
বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জাতিগত ও ধর্মীয় সহিংসতার কারণে প্রাণ হারাচ্ছে অসংখ্য মানুষ৷ তাই এই বার্তা বেশ তাৎপর্যপূর্ণ৷ আরেকটি প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, ‘‘ধর্মীয় সন্ত্রাসকে আপনার মুখ বন্ধ করতে দেবেন না৷’’
ছবি: DW/A. Islam
‘‘আল্লাহ’র নামে কোনো হত্যাকাণ্ড নয়’’
এই বার্তাটাও পরিষ্কার৷ ডয়চে ভেলেকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ধর্মীয় মৌলবাদীদের হামলার শিকার আহমেদুর রশীদ চৌধুরী (টুটুল) বলেছিলেন, ‘‘আল্লাহু আকবর’’ বলে তাঁকে কোপানো হয়েছিল৷ বার্লিনে মানববন্ধনে আরেকটি প্ল্যাকার্ডে আল্লাহ’র জায়গায় সৃষ্টিকর্তার কথা উল্লেখ করা হয়৷
ছবি: DW/A. Islam
‘‘ধর্মভিত্তিক সহিংসতা বন্ধ কর’’
ধর্মভিত্তিক সহিংসতা বন্ধের দাবি জানান মানববন্ধনে অংশ নেয়া এক প্রবাসী বাঙালি৷ ধর্মভিত্তিক রাজনীতিরও বিপক্ষে অবস্থান তাঁর৷
ছবি: DW/A. Islam
‘‘ধর্মীয় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সরব হোন’’
ধর্মের নামে যারা সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালাচ্ছেন তাদের বিরুদ্দে সরব হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে এই প্ল্যাকার্ডের মাধ্যমে৷ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইসলামি জঙ্গি গোষ্ঠীগুলো সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালাচ্ছে৷
ছবি: DW/A. Islam
বাংলা প্ল্যাকার্ড
বাংলা ভাষায় লেখা প্ল্যাকার্ডও প্রদর্শন করা হয়েছে মানববন্ধনে৷
ছবি: DW/A. Islam
‘‘নাস্তিকতার জন্য মৃত্যু নয়’’
নাস্তিকতা কারো মৃত্যু বা কারাভোগের কারণ হতে পারে না, এমন প্ল্যাকার্ড নিয়ে দাঁড়িয়েছেন একাধিক ব্যক্তি৷ মানবন্ধনে অংশ নেয়াদের সবাই নাস্তিক নন, তবে তাঁরা বাকস্বাধীনতায় বিশ্বাসী৷
ছবি: DW/A. Islam
‘‘শব্দ হত্যা করে না, মানুষ করে’’
গত ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় খুন হওয়া ব্লগার, লেখক অভিজিৎ রায়ের ছবির সঙ্গে এই বাক্যটি লেখা প্ল্যাকার্ডও ছিল বার্লিনের ব্রান্ডেনবুর্গ গেটের সামনে আয়োজিত মানববন্ধনে৷ চলতি বছর বাংলাদেশে খুন হয়েছেন চারজন ব্লগার এবং একজন প্রকাশক৷