মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের রক্ষায় আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষা বাহিনী মোতায়েনের আহ্বান জানিয়েছে ‘আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি’ বা এআরএসএ৷ আন্তর্জাতিক কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সঙ্গে তারা যুক্ত নয় বলেও দাবি করেছে তারা৷
বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে এসব তথ্য জানায় এআরএসএ৷ মিয়ানমারের বাইরে বসবাসকারী রোহিঙ্গা অ্যাক্টিভিস্টরা বিবৃতিটি শেয়ার করেছেন৷ অবশ্য বার্তা সংস্থা এএফপি বিবৃতির উৎস সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারেনি৷ বিবৃতিতে সই করেছেন কমান্ডার-ইন-চিফ আতা উল্লাহ৷ রোহিঙ্গাদের রাজনৈতিক অধিকার দেয়ার দাবি জানিয়ে নির্মিত কয়েকটি ভিডিওতে তাঁকে দেখা গেছে৷
বিবৃতিতে এআরএসএ বলেছে, ‘‘আরাকানের রোহিঙ্গাদের রক্ষায় আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করি, কারণ, আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী আমাদের নিজেদের রক্ষার চেষ্টা করার আইনগত অধিকার আছে৷’’ উল্লেখ্য, আরাকান হচ্ছে রাখাইন রাজ্যের আরেক নাম, যেখানে রোহিঙ্গারা বাস করেন৷
বাংলাদেশে জন্ম নেয়া রোহিঙ্গা শিশুরা
মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর নির্যাতন থেকে মুক্তি পেতে হাজার হাজার রোহিঙ্গা মুসলিম বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন৷ অনেক গর্ভবতী মা বাংলাদেশে এসে সন্তানের জন্ম দিয়েছেন৷
ছবি: Reuters/M. P. Hossain
স্বামীর খবর জানেন না তিনি
রামিদা বেগমের স্বামীকে ধরে নিয়ে গেছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী৷ এরপর তাঁদের বাড়িঘরও পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে৷ তার সপ্তাহখানেক পর পালিয়ে বাংলাদেশে চলে যান তিনি৷ ফলে স্বামীর খবর এখন জানেন না রামিদা৷ ফেব্রুয়ারির ১০ তারিখে যখন ছবিটি তোলা হয় তখন তাঁর কন্যার বয়স ছিল ১০ দিন৷ তখনও মেয়ের কোনো নাম দেয়া হয়নি রামিদার৷
ছবি: Reuters/M. P. Hossain
এই শিশুর বাবাকে হত্যা করা হয়েছে
স্বামীকে মিয়ানমারের সেনারা হত্যা করায় বাবামা-র সঙ্গে বাংলাদেশে চলে যান ১৮ বছরের নূর কায়েস৷ কোলে তাঁর ২৬ দিনের সন্তান, যার এখনও কোনো নাম দেননি তিনি৷ ছবিটি ৯ ফেব্রুয়ারি তোলা৷
ছবি: Reuters/M. P. Hossain
সাত দিনের মেয়ে
ফেব্রুয়ারির ৮ তারিখে যখন ছবিটি তোলা হয় তখন আসমত আরার মেয়ের বয়স ছিল মাত্র সাত দিন৷ মাসখানেক আগে তিনি প্রতিবেশীদের সঙ্গে পালিয়ে বাংলাদেশে চলে যান৷ বাড়ি পুড়িয়ে দেয়ার আগে তাঁর শ্বশুরকেও হত্যা করা হয়৷
ছবি: Reuters/M. P. Hossain
সন্তানদের বাঁচাতে বাংলাদেশে
একমাস বয়সি ছেলে সন্তানের সঙ্গে রাজুমা বেগম৷ যখন বাংলাদেশে আসছিলেন তখন গর্ভবতী ছিলেন তিনি৷ সঙ্গে ১১ মাসের আরেকটি সন্তানও ছিল৷ ‘‘আমি বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছি কারণ মিয়ানমারের ভয়ের মধ্যে ছিলাম৷ আমার সন্তানদের বাঁচাতে চেয়েছি আমি’’, রয়টার্সকে বলেন বেগম৷ ছবিটি ১২ ফেব্রুয়ারি তোলা৷
ছবি: Reuters/M. P. Hossain
দেশে ফিরতে আগ্রহী সানোয়ারা
৯ ফেব্রুয়ারি তোলা এই ছবিতে ২৫ দিনের কন্যা কোলে ২০ বছর বয়সি মা সানোয়ারা বেগমকে দেখা যাচ্ছে৷ প্রায় আড়াই মাস আগে স্বামীর সঙ্গে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসেছেন তিনি৷ এখন আছেন কক্সবাজারের কুতুপালাং আশ্রয়কেন্দ্রে৷ মিয়ানমারের পরিস্থিতি ভাল হলে নিজ ঘরে আবারও ফিরে যেতে চান সানোয়ারা৷
ছবি: Reuters/M. P. Hossain
বাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে
ফেব্রুয়ারির ৯ তারিখে তোলা এই ছবিতে মারিজানকে তাঁর ২৫ দিন বয়সি কন্যা সন্তান সহ দেখা যাচ্ছে৷ পাশে তাঁর ছেলে৷ মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ঘর পুড়িয়ে দেয়ায় মাসখানেক আগে তাঁরা নাফ নদী পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে পৌঁছান৷
ছবি: Reuters/M. P. Hossain
কন্যার জ্বর
দু’মাস বয়সি মেয়ের জ্বর কিন্তু মা আরাফা বেগম জানেন না ক্লিনিক কোথায়৷ আড়াই মাস আগে স্বামী ও পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে বাংলাদেশে আসেনি তিনি৷
ছবি: Reuters/M. P. Hossain
বাচ্চা পর্যাপ্ত বুকের দুধ পাচ্ছে না
মিনারা বেগমের এক মাস বয়সি সন্তান পর্যাপ্ত বুকের দুধ পাচ্ছে না, কারণ তার মা পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার খেতে পান না৷ ফলে স্বাস্থ্যকর না হলেও স্থানীয় বাজার থেকে গুঁড়া দুধ কিনে খাওয়াতে হচ্ছে তাকে৷ ছবিটি ১০ ফেব্রুয়ারি তোলা৷
ছবি: Reuters/M. P. Hossain
এলোপাথাড়ি গুলি
১৬ দিনের সন্তান কোলে মা আমিনা৷ ‘‘মাস দেড়েক আগে মিয়ামারের সেনাবাহিনী আমাদের গ্রামে ঢুকে এলোপাথাড়ি গুলি চালাতে শুরু করে৷ আমি কোনোরকমে প্রতিবেশীদের সঙ্গে পালিয়ে বেঁচেছি৷ তারা আমার চাচা আর ছোটভাইকে ধরে নিয়ে গেছে৷ তারা বেঁচে আছে কিনা জানিনা’’, ৮ ফেব্রুয়ারি রয়টার্সকে কথাগুলো বলেন তিনি৷
ছবি: Reuters/M. P. Hossain
বয়স মাত্র একদিন
ফাতেমার সন্তানের বয়স মাত্র একদিন৷ ছবিটি ফেব্রুয়ারির ৯ তারিখে তোলা৷ মিয়ানমারে তাদের ঘর পুড়িয়ে দেয়ায় মাস দুয়েক আগে স্বামীর সঙ্গে বাংলাদেশে চলে আসেন৷ এখন তাঁর স্বামী দিনমজুর হিসেবে কাজ করছেন৷
ছবি: Reuters/M. P. Hossain
10 ছবি1 | 10
তবে তারা কোনো ধরনের সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত নয় বলে জানিয়েছে৷ আন্তর্জাতিক কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ নেই বলেও দাবি করেছে এআরএসএ৷ অতীতে ‘ফেইথ মুভমেন্ট’, ‘হারাকা আল-ইয়াকিন’ – এই দুই নামে পরিচিত ছিল জঙ্গি গোষ্ঠীটি৷
মিয়ানমারের নাগরিকত্বসহ রোহিঙ্গাদের অন্যান্য অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে তারা কাজ করে বলে জানিয়েছে এআরএসএ৷ বিবৃতির মাধ্যমে সরকারের কাছে ২০ দফা দাবিও উত্থাপন করেছে তারা৷
এদিকে, এআরএসএ গত অক্টোবরে মিয়ানমারের সীমান্ত রক্ষাকারী বাহিনীর উপর হামলা চালিয়ে ন’জনকে হত্যার দায় স্বীকার করেছে বলে জানিয়েছে ব্রাসেলসভিত্তিক সংস্থা ‘ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ’৷
ঐ হামলার পর রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী৷ এই সময় নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে বেশ কয়েকজনকে হত্যাসহ নারীদের ধর্ষণ ও ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ ওঠে৷ মিয়ানমার অবশ্য এ সব অভিযোগ অস্বীকার করেছে৷
নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা পেতে কয়েক হাজার রোহিঙ্গা ইতিমধ্যে বাংলাদেশে পালিয়ে গেছে৷