ফিলিস্তিনের সঙ্গে শান্তি আলোচনা স্থগিত রাখার ঘোষণা দিয়েছে ইসরায়েল৷ বৃহস্পতিবার এক বিবৃতির মাধ্যমে ইসরায়েলের প্রধামন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু এ সিদ্ধান্তের কথা জানান৷
বিজ্ঞাপন
এর আগে ফিলিস্তিনে ঐক্য ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের নেতৃত্বাধীন ফাতাহ এবং যুক্তরাষ্ট্র প্রণীত সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের তালিকাভুক্ত হামাস আগামী পাঁচ সপ্তাহের মধ্যে একটি অন্তর্বর্তীকালীন ঐক্যমত্যের সরকার গঠনে সম্মত হয়৷ বিবদমান দুটি সংগঠন আগামী ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়েও ঐকমত্যে পৌঁছায়৷ এর পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবেই শান্তি আলোচনা স্থগিত রাখার ঘোষণা দেয় ইসরায়েল৷
বৃহস্পতিবার জরুরি মন্ত্রীপরিষদ বৈঠক শেষে বেনইয়ামিন নেতানিয়াহুর দপ্তর থেকে প্রকাশ করা এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘‘আজ সন্ধ্যায় ফিলিস্তিন সরকারের সঙ্গে আর আলোচনা না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রী পরিষদ৷ হামাসের মতো সন্ত্রাসবাদী সংগঠন, যে কিনা ইসরায়েলের ধ্বংস চায়, তার দিকে ঝুঁকে পড়া সরকারের সঙ্গে কোনো আলোচনা হতে পারে না৷''
আরাফাতের মৃত্যুর কারণ নিয়ে বিতর্ক
বিষ প্রয়োগে নয়, স্বাভাবিক কারণেই ফিলিস্তিনের সাবেক নেতা ইয়াসির আরাফাতের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে ফ্রান্সের তদন্ত সংস্থা৷
ছবি: DW/Y.Teyze
ফরাসি তদন্ত
ফ্রান্সের একটি তদন্ত সংস্থার বরাত দিয়ে দেশটির একটি বেতার জানিয়েছে, ‘বার্ধক্য ও সংক্রমণজনিত’ কারণে মৃত্যু হয়েছে ইয়াসির আরাফাতের৷
ছবি: AP
সুইস তদন্ত থেকে ভিন্ন
ফরাসি এই প্রতিবেদন সুইস বিশেষজ্ঞদের তদন্ত প্রতিবেদন থেকে একেবারে ভিন্ন৷ সুই বিশেষজ্ঞরা গত মাসে জানিয়েছিল, আরাফাতের দেহাবশেষ পরীক্ষায় উচ্চমাত্রার তেজস্ক্রিয় পলোনিয়াম পাওয়া গেছে৷ বিষ প্রয়োগে আরাফাতকে হত্যার অভিযোগে স্ত্রী সুহা আরাফাত আদালতে মামলা করার পর ফ্রান্স ২০১২ সালের আগস্টে তদন্ত শুরু করে৷ সুইজারল্যান্ডের বিজ্ঞানীরা আরাফাতের কাপড়ে এই বিষাক্ত পদার্থের খোঁজ পান৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আরাফাতের মৃত্যু
২০০৪ সালের নভেম্বরে ৭৫ বছর বয়সে ফ্রান্সের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ফিলিস্তিনের এই কিংবদন্তি নেতা৷ হাসপাতালের মেডিক্যাল রিপোর্টে বলা হয়েছিল, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কারণে মৃত্যু হয়েছে তাঁর৷ কিন্তু কি কারণে দ্রুত তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছিল তার ব্যাখ্যা দিতে পারেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ৷ এরপর থেকেই তাঁর মৃত্যুকে ঘিরে নানা জল্পনা কল্পনা চলতে থাকে৷
ছবি: Reuters
পলোনিয়াম নিয়ে আলোচনার শুরু
লন্ডনে এক সাবেক কেজিবি গোয়েন্দাকে হত্যা করতে ব্যবহৃত হওয়ায় ২০০৬ সালে পলোনিয়াম নিয়ে সর্বপ্রথম আলোচনার ঝড় ওঠে৷ কেজিবি গোয়েন্দা লিটভিনেঙ্কো লন্ডনের একটি বিলাসবহুল হোটেলে বৈঠক করার সময় পলোনিয়াম মেশানো চা পান করেছিলেন বলে ধারণা করা হয়৷
ছবি: AP
পলোনিয়াম কী?
‘পলোনিয়াম ২১০’ বিশ্বের বিরলতম পদার্থগুলোর একটি৷ ১৮৯৮ সালে বিজ্ঞানী দম্পতি মেরি ও পিয়েরে কুরি এই পদার্থটি আবিষ্কার করেন৷ এই বিজ্ঞানীদ্বয়ের দেশ পোল্যান্ডের নাম অনুসারে সেই পদার্থের নাম রাখা হয় পলোনিয়াম৷ ভূপৃষ্ঠের শক্ত আবরণে খুব নিম্ন ঘনত্বে প্রাকৃতিকভাবেই এই পদার্থের সৃষ্টি হতে পারে৷ তবে পারমাণবিক চুল্লিতেও কৃত্রিমভাবে এটির উৎপাদন সম্ভব৷
ছবি: dpa
বিপদজনক
পলোনিয়াম অত্যন্ত বিপদজনক৷ খুব সামান্য পরিমাণেও যদি মানুষের দেহে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়, তাহলেও মৃত্যু ডেকে আনতে পারে৷ কারণ এটির আলফা তেজস্ক্রিয় উপাদান যকৃত, বৃক্ক এবং অস্থিমজ্জার উপর বিষক্রিয়া ঘটিয়ে একাধিক অঙ্গ বিকল করে দেয়৷ ২০০৬ সালে পলোনিয়ামের বিষক্রিয়ায় নিহত লিটভিনেঙ্কোর ক্ষেত্রে বমিবমি ভাব, চুল উঠে যাওয়া, গলা ফোলা এবং বিবর্ণ হয়ে যাওয়ার লক্ষণগুলো ধরা পড়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa
হন্তাদের কাছে লোভনীয়
পলোনিয়াম দিয়ে ভালো অস্ত্র বানানো যায়৷ এর আলফা তেজস্ক্রিয় উপাদান ত্বক ভেদ করে না এবং তেজস্ক্রিয় নির্ণয়কারী যন্ত্রেও ধরা পড়ে না৷ ফলে আন্তর্জাতিক সীমান্ত পাড়ি দিয়ে এটি অন্য দেশে পাচার করা সহজ৷ নিশ্বাসের সাথে অথবা ক্ষতস্থান দিয়ে কারো দেহে পলোনিয়াম ঢুকিয়ে দেওয়া যায়৷ তবে সবচেয়ে নিশ্চিত উপায় হলো খাবার কিংবা পানির সাথে মিশিয়ে দেওয়া৷
ছবি: picture-alliance/dpa
কুরি দম্পতির মেয়ে’র মৃত্যু
কুরি দম্পতির মেয়ে ইরিন লিউকেমিয়ায় মারা গিয়েছিল বলেই বিশ্ব জানে৷ তবে অনেকে সন্দেহ করেন যে, তাদের পরীক্ষাগার থেকে দুর্ঘটনাবশত কোনোভাবে পলোনিয়াম ইরিনের দেহে প্রবেশ করে থাকতে পারে৷
ছবি: DW/Y.Teyze
8 ছবি1 | 8
এ সিদ্ধান্ত ঘোষণার পাশাপাশি ফিলিস্তিনকে সতর্কও করে দিয়েছে ইসরায়েল৷ বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ‘‘ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপের পরিপ্রেক্ষিতে ইসরায়েল কিছু পাল্টা ব্যবস্থাও নেবে৷''
ইসরায়েলের এ ঘোষণার ফলে মধ্যপ্রাচ্য শান্তি আলোচনা সফল হওয়ার সম্ভাবনা খুব বড় প্রশ্নের মুখে পড়লো৷ নয় মাস আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির উদ্যোগে এই শান্তি আলোচনা শুরু হয়৷ কেরি অবশ্য এখনই সব আশা ছেড়ে না দেয়ার পক্ষে৷ তাংর কথায়, ‘‘আমরা কখনোই সব আশা ছেড়ে দেবো না, কিংবা শান্তি প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার থেকে সরে আসবো না৷ আমরা মনে করি, এটাই একমাত্র পথ৷ তবে এ মুহূর্তে পুরো বিষয়টি যে খুব কঠিন একটা পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে, তা ঠিক৷''
এদিকে নেতানিয়াহুও শান্তি আলোচনা জারি রাখার একটি উপায়ের কথা উল্লেখ করেছেন৷ এক সাক্ষাৎকারে তিনি ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের প্রতি হামাসের সঙ্গে সমঝোতার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘‘ফেরার সুযোগ এখনো আছে৷ (হামাসের সঙ্গে) চুক্তিটা বাতিল করলেই তা সম্ভব৷ আশা করি তা করা হবে৷ কারণ, আমরা তেমন একটি ফিলিস্তিন সরকারের সঙ্গেই আলোচনায় বসতে পারি যে সত্যি সত্যিই শান্তি চায়৷''