রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে শান্তি আলোচনা শুরু হওয়ার পথে এখনো বিস্তর বাধা।
বিজ্ঞাপন
ইউক্রেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মস্কো যদি সদিচ্ছা নিয়ে আলোচনায় বসতে চায়, তাহলে তারাও শান্তি বৈঠক করতে প্রস্তুত। কিন্তু ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কুলেবা জানিয়েছেন, ''রাশিয়ার মধ্যে সেরকম কোনো সদিচ্ছা তারা দেখতে পাচ্ছেন না।''
আলোচনা শুরুর জন্য ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির শর্ত হলো, রাশিয়ার সেনাকে তার দেশ থেকে চলে যেতে হবে। তারা পুরোপুরি চলে গেলেই শান্তি আলোচনা করা সম্ভব হবে।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুটিন বলেছেন, ইউক্রেনকে খেরসন, ঝাপোরিজ্ঝিয়া, লুহানস্ক, দনেৎস্কের দাবি ছাড়তে হবে। এই এলাকার একটা বড় অংশ এখনো ইউক্রেনের অধিকারে আছে। তা সত্ত্বেও পুটিন এই দাবি করেছেন।
বেয়ারবকের আবেদন
জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী বেয়ারবক ইউক্রেনে শান্তি ফেরানোর জন্য চীনকে আরো সক্রিয় হতে বলেছেন।
বেয়ারবক বলেছেন, ''জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হিসাবে চীনের শুধু যে ভেটো দেয়ার অধিকার আছে তাই নয়, শান্তি ফেরানোর জন্য তাদের যাবতীয় ক্ষমতা প্রয়োগের দায়িত্বও আছে। তার মতে, এর প্রথম ও প্রধান কথা হলো, আগ্রাসনকারীদের কোনো সমর্থন নয়। রাশিয়াকে কোনো সমর্থন নয়।''
রাশিয়ার মিসাইলে বিধ্বস্ত ইউক্রেনের শিশু হাসপাতাল
ইউক্রেনের পাঁচটি শহরে আবার মিসাইল হামলা চালিয়েছে রাশিয়া৷ হামলায় বিধ্বস্ত হয়েছে কিয়েভের একটি শিশু হাসপাতাল৷ ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের চিফ অব স্টাফ আন্দ্রেই ইয়েরমাক জানান, হামলায় মোট ৩৬ জন নিহত হয়েছেন৷ আহত হয়েছেন ১৪০ জন৷
ছবি: Thomas Peter/REUTERS
বিধ্বস্ত শিশু হাসপাতাল
রাশিয়ার ছোঁড়া মিসাইলের আঘাতে বিধ্বস্ত হয়েছে কিয়েভের অকমাডিট শিশু হাসপাতাল৷ এটিই ইউক্রেনের সবচেয়ে বড় শিশু হাসপাতাল৷ মিসাইলের আঘাতে হাসপাতাল ভবনটির ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ সেখানে কর্মরত চিকিৎসক লেসিয়া লিজিটসিয়া ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে এ কথা জানিয়েছেন৷
ছবি: Oleksandr Ratushniak/REUTERS
ভীতিকর পরিস্থিতি
ভীতিকর পরিস্থিতি
হামলার সময়কার ভীতিকর অবস্থান বর্ণনা করেছেন চিকিৎসক লেসিয়া লিজিটসিয়া৷ তিনি বলেন, যখন মিসাইল এসে হাসপাতালে আঘাত হানে তখন পুরো বিষয়টি ‘সিনেমার দৃশ্যের’ মতো মনে হচ্ছিল৷ তিনি ‘ভয়ঙ্কর তীব্র আলো’ দেখতে পেয়েছিলেন জানিয়ে আরো বলেন, ‘‘এর পরপরই বিকট এবং ভীতিকর শব্দ শুনতে পাই৷’’ হামলায় হাসপাতালের একটি অংশ গুঁড়িয়ে গেছে, অন্য অংশে আগুন ধরে যায় বলেও জানান তিনি৷
ছবি: Oleksandr Ratushniak/REUTERS
মোট নিহত ৩৬, হাসপাতালে ২
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদোমির জেলেনস্কির চিফ অব স্টাফ আন্দ্রেই ইয়েরমাক জানিয়েছেন, কয়েকটি শহরের এ হামলায় মোট ৩৬ জন নিহত হয়েছেন৷ আহত হয়েছেন আরো ১৪০ জন৷ কিয়েভের মেয়র ভিতালি ক্লিৎসকো জানিয়েছেন, মিসাইল হামলায় হাসপাতালের এক চিকিৎসকসহ দুই ব্যক্তি মারা গেছেন৷ উদ্ধারকর্মীদের বরাত দিয়ে তিনি আরো জানিয়েছেন, আশঙ্কা করা হচ্ছে ধ্বংসস্তূপের নিচে আরো কেউ আটকা থাকতে পারেন৷
ছবি: Thomas Peter/REUTERS
থমকে গেছে চিকিৎসাসেবা
রাশিয়ার হামলায় থমকে গেছে হাসপাতালটির চিকিৎসাসেবা৷ চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, চিকিৎসাধীন রোগীদের দ্রুত কাছের হাসপাতালগুলোতে সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে৷ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ইউক্রেনীয় একটি টিভি চ্যানেলকে জানিয়েছে, যে ওয়ার্ডটিতে মিসাইল আঘাত হেনেছে সেখানে অন্তত ২০ জন চিকিৎসাধীন রয়েছে৷
ছবি: Thomas Peter/REUTERS
দায় অস্বীকার রাশিয়ার
বিবিসি জানিয়েছে, হাসপাতালে হামলার বিষয়টি অস্বীকার করেছে রাশিয়া৷ উল্টো ইউক্রেনের ঘাড়ে দায় চাপিয়েছে তারা৷ রাশিয়া দাবি করছে, হাসপাতালটি ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষা মিসাইলের একটি অংশের আঘাতে বিধ্বস্ত হয়েছে৷ কিন্তু ইউক্রেন জানিয়েছে, তারা রাশিয়ার ছোঁড়া মিসাইলের ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পেয়েছে৷
ছবি: Evgeniy Maloletka/AP Photo/picture alliance
গণহত্যার অভিযোগ
রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনে গণহত্যার চালানোর অভিযোগ এনেছেন কিয়েভের মেয়র ভিতালি ক্লিৎসকো৷ তিনি বলেন, ‘‘এ ঘটনার মধ্য দিয়ে পুরো বিশ্ব দেখতে পাচ্ছে রাশিয়ার মিসাইল ও ড্রোন কিভাবে আমাদের শান্তিপূর্ণ শহরকে তছনছ করে দিয়েছে এবং নাগরিকদের হত্যা করেছে৷’’ রাশিয়ার হামলায় একটি মাতৃ ও প্রসূতি হাসপাতালও আংশিক ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি৷ বলেছেন, সেখানে অন্তত সাত জন মারা গেছেন৷
ছবি: STATE EMERGENCY SERVICE OF UKRAINE/REUTERS
পশ্চিমা বিশ্বের প্রতি জেলেনস্কির আহ্বান
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেয়া এক বার্তায় ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি লিখেছেন, রাশিয়ার ছোঁড়া বিভিন্ন ধরনের ৪০টিরও বেশি মিসাইল কিয়েভ, দিনিপ্রো, ক্রিভিই রি, স্লোভিয়ানস্ক ও ক্রামাতোরস্ক শহরে আঘাত করেছে৷ ইউক্রেনের জনগণ, ভূমি ও শিশুদের উপর রাশিয়ার এই হামলার পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমা বিশ্বকে শক্তিশালী পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানান তিনি৷
ছবি: EPA/MICHAEL BUHOLZER
7 ছবি1 | 7
জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মতে, ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কুলেবা চীন সফর করছেন। শান্তি ফেরানোর লক্ষ্যে চীনের সঙ্গে তার আলোচনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
বেয়ারবক বলেছেন, ''যদি আমরা শান্তির পথে এগোতে পারি এবং চীন যদি নিরাপত্তা পরিষদে তার দায়িত্ব পালন করে, তাহলে খুবই ভালো হবে।''
রুশ-চীন যৌথ মহড়া
বুধবার আলাস্কার কাছে রাশিয়া ও চীনের বিমান বাহিনী যৌথ মহড়ায় অংশ নিয়েছে।
রাশিয়া জানিয়েছে, তাদের মিসাইল ক্যারিয়ার টু-৯৫এমএস এবং চিনের শিয়ান এইচ-৬ বোমারু বিমান মহড়ায় অংশ নেয়।
রাশিয়া ও চীন জানিয়েছে, তৃতীয় কোনো দেশকে টার্গেট করতে তারা এই মহড়া করছে না।