আলোচনার মাধ্যমেই শান্তি ফিরবে বলে আশা প্রকাশ করলেন জার্মান চ্যান্সেলর। এর আগে ফরাসি প্রেসিডেন্ট একথা বলেছিলেন।
বিজ্ঞাপন
সম্প্রতি ওয়াশিংটন থেকে ঘুরে এসেছেন জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস। ইউক্রেন সংকট নিয়ে বাইডেনের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করেছেন। দেশে ফিরে আলোচনা করেছেন ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে। তারপরেই তিনি জানিয়েছেন, যুদ্ধের যে আবহ তৈরি হয়েছিল, তা খানিকটা কেটেছে বলেই তিনি মনে করছেন। আলোচনার মাধ্যমেই ইউক্রেন সংকটের সমাধানসূত্রে পৌঁছানো যাবে বলে তিনি আশাবাদী।
যদিও একইসঙ্গে শলৎস জানিয়েছেন, এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর সময় এখনো আসেনি। পরিস্থিতি এখনো যথেষ্ট উত্তপ্ত হয়ে আছে। প্রশমনে আরো অনেক সময় লাগবে। তবে শান্তিপ্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে আশাবাদী তিনি।
সত্যিই কি যুদ্ধপরিস্থিতিতে অস্ত্র পাঠায় না জার্মানি?
সংকটকালে জার্মানির কাছে অস্ত্র চেয়েছিল ইউক্রেন। কিন্তু জার্মানি জানিয়েছে তারা যুদ্ধপরিস্থিতিতে অস্ত্র পাঠায় না। সত্যি কি তাই?
ইউক্রেন সংকট শুরু হওয়ার পর জার্মানি সে দেশের সেনার জন্য বেশ কিছু যুদ্ধের হেলমেট পাটিয়েছিল। এরপর ইউক্রেন জার্মানির কাছে একাধিক প্রতিরক্ষার অস্ত্র চায়। কিন্তু জার্মানি জানিয়েছে, সংকটকালে, যুদ্ধপরিস্থিতিতে তারা অস্ত্র পাঠায় না। এটা জার্মানির নীতি।
ছবি: Getty Images
জার্মানির বক্তব্য
জার্মান চ্যান্সেলর ওলফ শোলৎস এবং জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী বেয়ারবক জানিয়েছেন, জার্মানি যুদ্ধপরিস্থিতিতে অস্ত্র পাঠায় না। তাতে যুদ্ধের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেওয়া হয়। অস্ত্র পাঠাতে হলে সকলে মিলে ঘটনার মূল্যায়ন করতে হয়। ইউক্রেন সংকটের ক্ষেত্রে জোট সরকারের কেউই অস্ত্র পাঠানোর পক্ষে নয়।
ছবি: Pavlo Palamarchuk/AP/dpa/picture alliance
ইউক্রেনের প্রতিক্রিয়া
জার্মানির এই পদক্ষেপ মোটেই ভালো চোখে দেখছে না ইউক্রেন। বেয়ারবকের সঙ্গে বৈঠক করেননি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট।
ছবি: LEILA GORCHEV/AFP/Getty Images
সমাজমাধ্যমে প্রতিক্রিয়া
সমাজমাধ্যমে বহু মানুষ বলছেন, অতীতে যুদ্ধপরিস্থিতিতে অস্ত্র পাঠিয়েছে জার্মানি। তখন কোথায় ছিল তাদের নীতি? সৌদি আরব, তুরস্ক, মিশর, আরব আমিরাত সর্বত্র যুদ্ধে জার্মান অস্ত্র ব্যবহার হয়েছে বলে অভিযোগ।
ছবি: Carsten Rehder/dpa/picture alliance
ফ্যাক্ট চেক: মিশর
জার্মানির অর্থ এবং পরিবেশ সংক্রান্ত মন্ত্রণালয়ের রিপোর্ট বলছে বহুদিন ধরে মিশরকে নিয়মিত অস্ত্র পাঠাচ্ছে জার্মানি। যে অস্ত্র মিশর ইয়েমেন এবং লিবিয়ার যুদ্ধে ব্যবহার করছে। সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, শুধুমাত্র গত এক বছরে জার্মানি মিশরকে চার দশমিক তিন চার বিলিয়ন ইউরোর অস্ত্র বিক্রি করেছে।
ছবি: U.S. Navy/AP Photo/picture alliance
ফ্যাক্ট চেক: আরব
পরিসংখ্যান বলছে, ২০০২ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে জার্মানি সৌদি আরবের কাছে কয়েকশো কোটি ইউরোর অস্ত্র বিক্রি করেছে। এর মধ্যে শুধু প্রতিরক্ষার অস্ত্র নয়, আক্রমণের অস্ত্রও আছে। ২০১৮ সালে সৌদি আরবকে ৪১ কোটি ৬০ লাখ ইউরোর অস্ত্র পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু জামাল খাশগজি খুনের পর অস্ত্র পাঠানোয় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে জার্মানি। তারপরেও ২০২০ সালে সৌদি আরব তিন কোটি ৮০ লাখ ইউরোর জার্মান অস্ত্র পেয়েছে।
ছবি: Viktor Tolochko/Sputnik/dpa/picture alliance
আরব কী করে
বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, আরবও ওই অস্ত্র ইয়েমেনের বিরুদ্ধে ব্যবহার করে। একাধিক মানবাধিকার রিপোর্ট বলছে, জার্মানির ওই অস্ত্র ব্যবহার করে আরব মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। কিন্তু জার্মানি অস্ত্র বিক্রি বন্ধ করেনি।
ছবি: Viktor Tolochko/Sputnik/dpa/picture alliance
ফ্যাক্ট চেক: তুরস্ক
সাম্প্রতিককালে জার্মানির সঙ্গে তুরস্কের একাধিক বিষয়ে মতবিরোধ হয়েছে। কিন্তু তার জন্য তুরস্কের কাছে অস্ত্র বিক্রি বন্ধ হয়নি। ওই অস্ত্র তুরস্ক লিবিয়া বিরুদ্ধে ব্যবহার করে। কুর্দ বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে দিনের পর দিন ধরে ওই অস্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে। যা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে নানা কথা হয়েছে।
জার্মানির সরকারি রিপোর্ট বলছে, কাতারকেও নিয়মিত অস্ত্র বিক্রি করা হয়। কাতারও সেই অস্ত্র একাধিক যুদ্ধে ব্যবহার করেছে।
ছবি: Vadim Yakubyonok/BelTA/REUTERS
জার্মান অস্ত্র এবং আইএস
জার্মান গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, উত্তর ইরানের খোলা বাজারেও জার্মান অস্ত্র বিক্রি হচ্ছে। আইএস জঙ্গিদের হাতেও জার্মান অস্ত্র দেখা গেছে।
ছবি: Dabiq/Planet Pix via ZUMA Wire/ZUMAPRESS/picture alliance
10 ছবি1 | 10
কীভাবে সম্ভব হলো
শলৎসের বক্তব্য, পশ্চিমা দেশগুলি একসঙ্গে এই সংকটের মোকাবিলা করেছে। এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যেভাবে সকলে মিলে রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরোধিতা করেছে, তা মস্কোকে খানিকটা ব্যাকফুটে নিয়ে গেছে বলে তিনি মনে করেন। নিষেধাজ্ঞার হুমকি এখনো আছে। এরপরেও যদি রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করে, তাহলে তাদের কড়া নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হতে হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
শলৎসেরমতে, সকলে একসঙ্গে এই সংকট কাটানোর চেষ্টা করেছে। এবং তাতেই খানিকটা লাভ হয়েছে। বস্তুত এর আগে ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ একই কথা বলেছিলেন। মাক্রোঁ রাশিয়া এবং ইউক্রেন সফর করেন। ফরাসি প্রেসিডেন্ট এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে লম্বা বৈঠক করেন তিনি। সেখান থেকে ফিরে এসে মাক্রোঁ জানান, আলোচনার রাস্তা তৈরি হয়েছে।
পূর্ব ইউক্রেনের বিভাজন রেখায় বাড়ছে উত্তেজনা
রাশিয়ার সঙ্গে চরমে উঠেছে ইউক্রেনের সংঘাত৷ রাশিয়া সীমান্তে ন্যাটোর সেনা মোতায়েন উত্তেজনা বাড়িয়েছে৷ ইউক্রেন সীমান্তে সামরিক তত্পরতা বাড়িয়েছে মস্কো৷ অন্যদিকে ইউক্রেনও পিছিয়ে নেই৷ প্রস্তুত রুশপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদীরাও৷
ছবি: AP Photo/picture alliance
রুশ-ইউক্রেন উত্তেজনা
ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর একজন সেনাকে দেখা যাচ্ছে৷ দনেত্স্ক এলাকার হরলিভকাতে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত তিনি৷ রুশপন্থী বিদ্রোহী গোষ্ঠীর বিভাজন রেখার কাছে বন্দুকধারী সেনার ছবি ক্যামেরাবন্দি করেছেন একজন আলোকচিত্রী৷
ছবি: Anna Kudriavtseva/REUTERS
সেনার প্রস্তুতি
রাশিয়ার গুপ্তচররা ইউক্রেনের ভিতরে ঢুকে যুদ্ধের বাতাবরণ তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে বলেও অভিযোগ৷ যদিও রাশিয়া এই সব অভিযোগ অস্বীকার করেছে৷ দনেত্স্ক এলাকায় রাশিয়াকে রুখতে প্রস্তুত রয়েছে ইউক্রেনের সেনাবাহিনী৷
প্রত্যেক ইউক্রেনীয় সেনাই যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত৷ যে কোনো মুহূর্তে যুদ্ধ শুরু হতে পারে, মানসিকভাবে এমন প্রস্তুতি রয়েছে তাদের৷
ছবি: Anna Kudriavtseva/REUTERS
প্রস্তুত ‘নোঁ দ্য গ্যার ইয়াকুট’
লুহানস্ক এলাকায় পোপাসনা শহরে ইউক্রেনীয় সশস্ত্র বাহিনী ভোলোদিয়ার সেনারাও প্রস্তুত৷ এরা ‘নোঁ দ্য গ্যার ইয়াকুট’ নামে পরিচিত৷
ছবি: Maksim Levin/REUTERS
সামরিক অবস্থান শনাক্ত
দনেত্স্ক পিপলস রিপাবলিকের (ডিএনআর) এক অস্ত্রধারী জঙ্গির (মস্কোপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদী) ছবিও ধরা পড়েছে চিত্রসাংবাদিকের ক্যামেরায়৷ সামরিক অবস্থান খতিয়ে দেখে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে তারাও৷
ছবি: Alexander Ermochenko/REUTERS
প্রতিপক্ষের মোকাবিলায়
লুহানস্ক এলাকায় পোপাসনায় রয়েছেন ইউক্রেনীয় সশস্ত্র বাহিনীর সেনা আন্দ্রে৷ নোঁ দ্য গ্যার দ্রুইদ হিসেবে পরিচিত আন্দ্রেও মানসিকভাবে প্রতিপক্ষের মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছেন৷
ছবি: Maksim Levin/REUTERS
ইউক্রেনীয় সশস্ত্র বাহিনীর সেনা
লুহানস্কে বরফ ঢাকা পথে হেঁটে চলেছেন ইউক্রেনীয় সশস্ত্র বাহিনীর সেনারা৷ সামরিক বিন্যাস নিয়ে তৈরি তারা৷ একদিকে জারি হাই অ্যালার্ট, অন্যদিকে সেনা মোতায়েন৷ যুদ্ধের দামামা কি বেজে গেল? রাশিয়ার পরবর্তী পদক্ষেপ কী? উঠে আসছে এই প্রশ্নগুলি৷
ছবি: Maksim Levin/REUTERS
8 ছবি1 | 8
শলৎস জানিয়েছেন, আগামী সপ্তাহে তিনিও রাশিয়া এবং ইউক্রেনে সফর করবেন। বৈঠক করবেন দুই দেশের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে। শলৎস বলেছেন, এখনো অনেক আলোচনা বাকি আছে।
রাশিয়া এবং ইউক্রেনের বক্তব্য
রাশিয়া এবং ইউক্রেন কোনো দেশই এখনো একে অপরকে বিশ্বাস করতে পারছে না। ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্পষ্টই জানিয়েছেন, পশ্চিমা দেশগুলির কূটনৈতিক পদক্ষেপ আলোচনার রাস্তা কিছুটা হলেও তৈরি করেছে। কিন্তু এখনো রাশিয়ার এক লাখ সেনা ইউক্রেনের সীমান্তে দাঁড়িয়ে। ফলে উত্তেজনা কমে গেছে, বা আলোচনার রাস্তা তৈরি হয়ে গেছে, এমন ভাবার কারণ নেই। তবে সাম্প্রতিক কূটনৈতিক আলোচনায় লাভ হয়েছে বলেই মনে করছে ইউক্রেন।
রাশিয়া প্রথম থেকেই বলছে, তারা যুদ্ধের জন্য ইউক্রেনের সীমান্তে সেনা পাঠায়নি। আত্মরক্ষার জন্য পাঠিয়েছে। কিন্তু পশ্চিমা দেশগুলি তাদের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করেছে বলে অভিযোগ রাশিয়ার। সাম্প্রতিক আলোচনার পর রাশিয়াও জানিয়েছে, আলোচনার মাধ্যমেই তারা সমস্যার সমাধানসূত্র খুঁজতে চায়। তবে সেখানে রাশিয়ার স্বার্থও দেখতে হবে বলে জানিয়েছে তারা। সমাধানসূত্রে পৌঁছানো খুব সহজ হবে না বলেও জানিয়েছে ক্রেমলিন।