সরাসরি এই অভিযোগ করেছেন ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী লোরঁ ফাবিউস৷ ওয়াশিংটনেরও তাই মত৷ রাশিয়ার সাহায্য নিয়ে বিদ্রোহীদের উপর বিমান হানা চালিয়ে গেছে সিরীয় প্রশাসন, যে কারণে বিরোধীরা আলাপ-আলোচনায় বসতে নারাজ৷
বিজ্ঞাপন
বুধবার জাতিসংঘের বিশেষ মধ্যস্থ স্তাফান দে মিস্তুরা জেনেভার শান্তি আলাপ-আলোচনা তিন সপ্তাহের জন্য পিছিয়ে দেন৷ অবশ্য দে মিস্তুরা বলেন যে, এটা ‘‘আলাপ-আলোচনার অন্ত বা ব্যর্থতার'' আভাস নয়, বৈঠক যথারীতি ২৫শে ফেব্রুয়ারি শুরু হবে৷ ব্যঙ্গচিত্রশিল্পীদের দৃষ্টিতে ঘোষণাটা স্বভাবতই অন্যরকম দেখায়৷
যুদ্ধের ধ্বংসলীলার মধ্যে শান্তির পারাবত চিন্তিত মুখে ঘড়ি দেখে চলেছেন৷ প্রায় পাঁচ বছর সংঘাতের পর যুদ্ধবিরতির প্রথম ক্ষীণ আশা, অথচ বিদ্রোহীদের সামগ্রিক প্রতিনিধিত্বমূলক ‘দ্য হাই নেগোশিয়েশনস কমিটি' বা এইচএনসি জানিয়েছে যে, আলেপ্পো অভিমুখে বিদ্রোহীদের একটি সরবরাহ পথের উপর আসাদ প্রশাসনের বোমাবর্ষণ বন্ধ না হলে, তারা আলাপ-আলোচনায় বসবে না৷
সর্বশেষ খবর হলো যে, সিরীয় সরকারের সৈন্যদল আর হেজবোল্লাহ গোষ্ঠীর যোদ্ধারা আলেপ্পোর কাছে নুবল আর জাহরা নামের দু'টি শিয়াপন্থি গ্রামে ঢুকতে সমর্থ হয়েছে৷ বিদ্রোহীরা ২০১২ সাল যাবৎ এই গ্রাম দু'টি ঘিরে রেখেছে৷ সিরিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর আলেপ্পো ২০১২ সালের যুদ্ধ যাবৎ পশ্চিমে সরকারি সেনা আর পুবে বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে৷ এক সপ্তাহ আগে সরকারি তরফ থেকে যে অভিযান শুরু হয় – ব্যাপক রুশ বিমানহানার ছত্রছায়ায় – সেই অভিযানে আলেপ্পো থেকে তুর্কি সীমান্ত অবধি বিদ্রোহীদের সরবরাহের শেষ পথটিও বিচ্ছিন্ন হয়েছে৷ এই অবস্থায় শান্তি আলাপ-আলোচনা?
দে মিস্তুরার কাজই হলো আসাদ প্রশাসন এবং এইচএনসি-কে ছ'মাসের ‘প্রক্সিমিটি টকস'-এ বসতে রাজি করানো৷ এক্ষেত্রে প্রক্সিমিটি বলতে আপোশ নয়, বোঝায় নিকটত্ব – দু'পক্ষের দৃষ্টিভঙ্গি ও অবস্থানের মধ্যে ব্যবধান কমানো৷ দৃশ্যত তা-তেও ব্যর্থ হতে বসেছেন দে মিস্তুরা৷ যে কারণে জানিন দি জোভানির ক্ষেদযুক্ত টুইট: ‘‘বাঃ, এটা প্রত্যাশিতই ছিল , তা সত্ত্বেও ট্র্যাজিক৷''
ওদিকে আজ বৃহস্পতিবার লন্ডনে শুরু হচ্ছে অন্য এক ধরনের সিরিয়া সম্মেলন৷ ৭০টি দেশের নেতা ও কূটনীতিকরা সিরিয়ার প্রতিবেশী দেশগুলিতে পলাতক সিরীয় উদ্বাস্তু বা শরণার্থীদের সাহায্য করার জন্য একটি আন্তর্জাতিক দাতা সম্মেলনে মিলিত হচ্ছেন – যদিও তার অপর উদ্দেশ্য হলো, ইউরোপ অভিমুখে উদ্বাস্তুর স্রোত কিছুটা স্তিমিত করার প্রচেষ্টা৷
সমস্যার মূল কিন্তু যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ায়, যে দেশের অর্ধেক মানুষ আজ ঘরছাড়া বা দেশছাড়া৷ বিবিসি চ্যানেল ফোর ও অন্যান্য চ্যানেলের টুইটে একটি এক মিনিটের ভিডিও আজ সেই পরিস্থিতি চোখের সামনে তুলে ধরতে সমর্থ৷
সিরিয়া থেকে জার্মানি: শরণার্থীদের বিপৎসংকুল যাত্রা
যুদ্ধের ভয়াবহতা, মৃত্যু এড়াতে মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়েই সিরিয়া ছাড়ছে অসংখ্য মানুষ৷ সব বাধা পেরিয়ে সবাই চাইছেন জার্মানি আসতে৷ জানেন কি, কত কঠিন তাঁদের জীবন? কতটা বন্ধুর মৃত্যুর বিভীষিকা ছেড়ে জীবনের পথ ধরা? দেখুন ছবিঘরে৷
ছবি: Getty Images/A. Beier
নিজের দেশ যখন ‘দোজখ’
২০১১ সাল থেকে যুদ্ধ চলছে সিরিয়ায়৷ এ পর্যন্ত কমপক্ষে ২ লক্ষ ৪০ হাজার মানুষ মারা গেছে৷ সিরিয়া না ছাড়লে মৃতদের কাতারে কখন যে নাম লেখাতে হবে কে জানে! দেশ ছেড়ে কোথায় যাওয়া যায়? কোন জায়গাটা জীবন-জীবিকার জন্য সবচেয়ে বেশি নিরাপদ? ইউরোপ৷ তাই অনেকেই আসছেন ইউরোপে৷ ছবিতে দামেস্কের এক আবাসিক এলাকায় প্রেসিডেন্ট বাশারের অনুগত বাহিনীর হামলার পর ধ্বংসস্তূপের মাঝে এখনো কেউ বেঁচে আছেন কিনা দেখছেন সিরীয়রা৷
ছবি: picture-alliance/A.A./M. Rashed
প্রথম গন্তব্য তুরস্ক
ইউরোপে যাওয়ার উদ্দেশ্যে প্রথমে তুরস্কে যায় সিরীয়রা৷ ইজমিরের কোনো হোটেলে উঠেই তাঁরা শুরু করেন মানবপাচারকারীদের মাধ্যমে সমুদ্রপথে ইউরোপে যাওয়ার চেষ্টা৷ যাঁদের হোটেলে ওঠার সাধ্য নেই তাঁরা রাস্তার পাশে কিংবা পার্কে তাঁবু তৈরি করে দু-এক রাত কাটিয়ে নেন৷ ছবির এই মেয়েটির মতো ইউরোপে আসার আগে অনেক সিরীয়কেই ঘুমাতে হয় তুরস্কের রাস্তায়৷
ছবি: picture-alliance/AA/E. Atalay
গ্রিসের দিকে যাত্রা
তুরস্ক থেকে প্রায় সবাই ছোটেন গ্রিসের দিকে৷ অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত এই দেশটিতে শুধু ইউরোপে প্রবেশের জন্যই আসা৷ আসল লক্ষ্য পশ্চিম ইউরোপের উন্নত দেশগুলো৷ ছবিতে ডিঙ্গি নৌকায় তুরস্ক থেকে গ্রিসের কস দ্বীপের দিকে যাত্রা শুরু করা কয়েকজন সিরীয়৷
ছবি: Reuters/A. Konstantinidis
মানুষের নীচে মানুষ
কস দ্বীপ থেকে গ্রিসের মূল ভূখণ্ডের দিকে যাচ্ছে একটি ফেরি৷ ১০ ঘণ্টার যাত্রাপথ৷ কোনো জায়গা না পেয়ে যাত্রীদের আসনের নিচেই ঘুমিয়ে নিচ্ছে এক সিরীয় কিশোরী৷
ছবি: Getty Images//W. McNamee
রুদ্ধ সীমান্ত
কস দ্বীপ থেকে মেসিডোনিয়া হয়ে ইডোমেনি শহরে যান অনেকে৷ ‘বলকান রুট’ ব্যবহার করে অনেকে বাধ্য হয়ে সার্বিয়ার দিকেও যান৷ গত মাসে ‘জরুরি অবস্থা’ জারি করে শরণার্থীদের ঠেকাতে সেনাবাহিনীকে কাজে লাগানোরও ঘোষণা দেয় মেসিডোনিয়া৷ সহজে সীমান্ত পার হওয়া যাবে ভেবে শুরু হয় সার্বিয়ার দিকে যাত্রা৷ ছবির এই ট্রেনের মতো অনেক ট্রেনই গিয়েছে এমন মানুষবোঝাই হয়ে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/G. Licovski
বেলগ্রেডে বিশ্রাম
ইউরোপে অভিবাসন প্রত্যাশীদের জন্য সার্বিয়ার রাজধানী বেলগ্রেড যেন শুধুই বিশ্রামাগার৷ এ শহরে বিশ্রাম নিয়েই সবাই পা বাড়ান প্রকৃত গন্তব্যের দিকে৷ আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা আইওএম-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ সালের প্রথম ৬ মাসে সিরিয়া থেকে অন্তত ১ লাখ ৬০ হাজার মানুষ গিয়েছেন বেলগ্রেডে৷ এখানে বেলগ্রেডের এক পার্কে বিশ্রাম নিচ্ছেন কয়েকজন সিরীয় শরণার্থী৷
ছবি: picture alliance/dpa/T. Brey
হাঙ্গেরিতে মানুষের ঢল
সার্বিয়া থেকে শরণার্থীরা যাচ্ছেন হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্টে৷ বুদাপেস্টও ‘বিশ্রামালয়’৷ তবে হাঙ্গেরি অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম রোধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে৷হাঙ্গেরি সরকার চায় যাঁরা এসেছেন তাঁরা সেখানেই নাম নথিভূক্ত করাক৷ তা করলে হাঙ্গেরিতেই থাকতে হবে৷ কিন্তু অভিবাসন প্রত্যাশীরা চান জার্মানি যেতে৷ ছবিতে এক কিশোরীর হাতে জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের ছবি৷
ছবি: Reuters/B. Szabo
উষ্ণ অভ্যর্থনা
হাঙ্গেরি থেকে কয়েক হাজার অভিবাসন প্রত্যাশী চলে এসেছেন অস্ট্রিয়া এবং জার্মানিতে৷ নতুন ঠিকানায় এসে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন অনেকেই৷ অভিবাসনবিরোধী ডানপন্থি দলের শাসনাধীন দেশ হাঙ্গেরি থেকে বেরিয়ে আসতে পারাই তাঁদের জন্য সবচেয়ে বড় স্বস্তি৷ জার্মানিতে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ অন্যরকম৷ মিউনিখে শরণার্থীদের উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়ে বরণ করে নিয়েছেন জার্মানরা!
ছবি: picture-alliance/dpa/N. Armer
তারপর.....?
মিউনিখের কেন্দ্রীয় রেল স্টেশনে এক সিরীয় নারী অভিবাসনপ্রত্যাশীর কোলে সন্তানকে তুলে দিচ্ছেন এক জার্মান পুলিশ৷ সাধারণ জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবেই অভিবাসনপ্রত্যাশীদের বরণ করে নিয়েছে৷ কিন্তু রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরু হয়ে গেছে অভিবাসন ইস্যু নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা৷ এত বেশি অভিবাসনপ্রত্যাশীর আগমন অনেক ধরণের সমস্যা তৈরি করতে পারে বলে অনেকের আশঙ্কা৷