শার্লি এব্দোর দপ্তরে আক্রমণের ঘটনায় ১৪ জনকে অভিযুক্ত করল ফরাসি আদালত।
বিজ্ঞাপন
শার্লি এব্দোর দপ্তরে আক্রমণ এবং পাশেই একটি সুপারমার্কেটে গুলি চালানোর ঘটনায় ১৪ জনকে দোষী সাব্যস্ত করল প্যারিসের আদালত। এর মধ্যে তিনজন পলাতক। বাকি সকলেই এ দিন হাজির ছিলেন আদালতে। আদালত চত্বর ভরে ছিল সাংবাদিক এবং সাধারণ মানুষের ভিড়ে।
২০১৫ সালে দুইজন বন্দুকধারী আক্রমণ চালায় ফরাসি ম্যাগাজিন শার্লি এব্দোর দপ্তরে। তারা জানিয়েছিল, ওই ম্যাগাজিনে মহানবীর (সা:) অপমানজনক কার্টুন ছাপা হয়েছিল। তার বদলা নিতেই আক্রমণ চালানো হয়েছে। দপ্তরে ঢুকে এলোপাথারি গুলি চালাতে থাকে দুই বন্দুকধারী। নিহত হন দপ্তরে উপস্থিত সাংবাদিক এবং কার্টুনিস্টরা। এই ঘটনা চলাকালীনই কাছের একটি ইহুদি বাজারে ঢুকে গুলি চালানোর চেষ্টা করে আরেক বন্দুকধারী। তার গুলিতে মৃত্যু হয় এক পুলিশ অফিসারের।
ব্যাঙ্গাত্মক ফরাসি পত্রিকা শার্লি এব্দো-র ওপর হামলায় নিন্দার ঝড় উঠেছে গোটা বিশ্বে৷ বিভিন্ন দেশের মানুষ ‘আই অ্যাম শার্লি’ ব্যানার প্রদর্শন করে, মোমবাতি জ্বালিয়ে সমবেদনা জানিয়েছে৷ এ সব নিয়েই ছবিঘর৷
ছবি: DW/M. Müller
মোমবাতি প্রজ্বলন
নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটনে এভাবেই মোমবাতি জ্বালিয়ে প্যারিসে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন অসংখ্য মানুষ৷ বুধবার শার্লি এব্দো-র কার্যালয়ে হামলায় প্রাণ হারাণ সাংবাদিক, পুলিশসহ কমপক্ষে ১২ ব্যক্তি৷
ছবি: Reuters/C. Allegri
ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা
ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের ফরাসি দূতাবাসের সামনে এভাবেই ফুল দিয়ে প্যারিস হত্যাকাণ্ডে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ৷ শার্লি এব্দো-র কার্যালয়ে এর আগেও হামলা হয়েছিল৷ ইসলাম এবং হজরত মোহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে ব্যঙ্গাত্মক কার্টুন আকাঁয় ২০১১ সালে পত্রিকাটি ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে৷
ছবি: Getty Images/Vasily Maximov
কলম হাতে কান্না
প্যারিসের নোত্রদাম বা নটরডাম ক্যাথিড্রালের সামনে এভাবেই কলম উঁচিয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন এই নারী৷ শার্লি এব্দো-তে নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালনের সময় বৃহস্পতিবার তোলা হয় ছবিটি৷
ছবি: Reuters/J. Naegelen
অস্থায়ী স্মরণ স্তম্ভ
ক্যালিফোর্নিয়ার সান ফ্রান্সিসকোতে ফরাসি কনসুলেটের সামনে স্থাপিত অস্থায়ী স্মরণ স্তম্ভে একটি আঁকা ছবি এবং কলম রাখছেন এক নারী৷ শার্লি এব্দো-র নিহতদের মধ্যে পাঁচজন ছিলেন কার্টুনিস্ট৷
ছবি: Reuters/S. Lam
অস্ট্রেলিয়ার শোক
প্যারিস হত্যাকাণ্ডে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানতে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে ফেডারেশন স্কয়ারে সমবেত হন অনেকে৷ এরপর সেখানে মোমবাতি প্রজ্বলনের মাধ্যমে নিহতের স্মরণ করা হয়৷ জার্মান আইনজীবী এবং সাংবাদিক ডানিয়েল মার্টিনসন মনে করেন, ‘‘বাকস্বাধীনতা, স্যাটায়ার এবং মুক্ত সমাজের জন্য এ ছিল একটা কালো দিন৷’’
ছবি: Wayne Taylor/Getty Images
গণমাধ্যমে শিরোনাম প্যারিস
ইউরোপ, অ্যামেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পত্রিকায় মঙ্গলবার মূল খবর ছিল প্যারিস হত্যাকাণ্ড৷ তবে বাংলাদেশের গণমাধ্যমে খবরটি সেভাবে গুরুত্ব সহকারে প্রকাশ হয়নি৷ ছবিতে জার্মান দৈনিকগুলোর কয়েকটির শিরোনাম দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/K. Nietfeld
প্যারিসে সমাবেশ
শার্লি এব্দো পত্রিকায় হামলার খবর পাওয়া পর এভাবেই রাজপথে নেমে এসে শোক প্রকাশ করেন প্যারিসবাসী৷ লক্ষাধিক লোক বুধবার রাতে এভাবে রাজপথে হাজির ছিলেন৷
ছবি: DW/A. Mohtadi
গরম টুইটার
ব্যঙ্গাত্মক পত্রিকা শার্লি এব্দো-তে হামলার পর থেকে টুইটারে এ সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য, কার্টুন, ছবি প্রকাশ হচ্ছে৷ জার্মান সময় বৃহস্পতিবার দুপুর তিনটা পর্যন্ত ইংরেজিতে #শার্লিএব্দো হ্যাশট্যাগটি ব্যবহার হয়েছে সাড়ে তিন মিলিয়নের বেশি বার৷
শার্লি এব্দো-র পাশে ডয়চে ভেলে
বুধবার হামলার শিকার শার্লি এব্দোর পাশে দাঁড়িয়েছে ডয়চে ভেলেতে কর্মরত সাংবাদিক এবং অন্যান্য কর্মীরা৷ বৃহস্পতিবার ডয়চে ভেলের বন কার্যালয়ের সামনে এভাবেই সংহতি প্রকাশ করেন তাঁরা৷
ছবি: DW/M. Müller
9 ছবি1 | 9
তিনজন বন্দুকধারীই শেষ পর্যন্ত পুলিশের গুলিতে নিহত হয়। ঘটনাটি নিয়ে গোটা বিশ্বে আলোড়ন পড়ে যায়। তদন্তে নেমে একাধিক ব্যক্তিকে আটক করে ফরাসি পুলিশ। অভিযোগ, প্রত্যেকেই কোনো না কোনো ভাবে এই হামলার সঙ্গে যুক্ত। তেমনই ১৪ জনের বিচার পর্ব শেষ হলো বুধবার। এর মধ্যে তিন জন ফেরার। সকলেই সিরিয়ায় পালিয়ে গিয়ে ইসলামিক স্টেট জঙ্গি সংগঠনে যোগ দিয়েছে বলে আদালতে জানিয়েছে পুলিশ। তার মধ্যে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে বলেও সন্দেহ প্রকাশ করেছে পুলিশ।
বাকি ১১ জনই এ দিন আদালতে উপস্থিত ছিল। আদালতকে অভিযুক্তরা জানিয়েছে, এত বড় ঘটনা ঘটবে তারা বুঝতে পারেনি। তারা পেটি বা ছোট অপরাধমূলক কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত। সেই সূত্রেই বন্দুকধারীদের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল তাদের। হামলাকারীদের বন্দুক এবং কার্তুজ সরবরাহ করেছিল এই ব্যক্তিরা। বন্দুকধারীদের ছোটবেলার বন্ধুও আছে অভিযুক্তের তালিকায়। আক্রমণের ব্লুপ্রিন্ট তৈরিতে সহায়তা করেছিল সে। কেউ গাড়ি দিয়ে, কেউ রাস্তা দেখিয়ে দিয়ে বন্দুকধারীদের সাহায্য করেছিল।
এ দিন আদালত চত্বর ছিল ভিড়ে ঠাসা। গোটা বিশ্বের সংবাদমাধ্যম উপস্থিত ছিল রায় শোনার জন্য। ভিড় জমিয়েছিলেন সাধারণ মানুষও। সম্প্রতি শার্লি এব্দোর কার্টুন বিতর্ক নতুন করে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। ওই কার্টুন স্কুলে দেখানোর অপরাধে খুন হতে হয়েছে শিক্ষক স্যামুয়েল প্যাটিকে। বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন স্বয়ং ফরাসি প্রেসিডেন্ট। যা নিয়ে বিশ্ব জুড়ে বিতর্ক হয়েছে। তারই মধ্যে এই ১৪ জনের বিচার নিয়ে আগ্রহ তৈরি হয়েছিল সাধারণ মানুষের মধ্যে।