1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

শাসক এত অসহিষ্ণু কেন?‌

১৭ মে ২০১৯

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির মুখ বসানো একটি ব্যঙ্গছবি ছড়িয়ে পড়েছিল সোশাল মিডিয়ায়৷ সেটাও শাসকের রোষের কারণ হয়ে দাঁড়াল৷

মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে নিয়ে ‘‌মিম’‌ বা ব্যঙ্গচিত্র বানানোয় এক বিজেপি কর্মীকে আটক করা হয়েছিলছবি: Ians

হিন্দি সিনেমা, হলিউডের ইংরেজি সিরিয়ালের অভিনেত্রী প্রিয়াঙ্কা চোপড়া সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন অদ্ভুত কায়দায় কেশবিন্যাস করে৷ প্রায় কাকের বাসার মতো দেখতে সেই কেশসজ্জা বহু লোকের আমোদের কারণ হয়ে সোশাল মিডিয়ায় ঘোরাঘুরি করেছিল বেশ কিছুদিন৷ প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার সেই ছবিটিতেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির মুখ বসিয়ে একটি ‘‌মিম’ বা ব্যঙ্গচিত্র তৈরি করেন কলকাতার এক যুবতী৷ তাঁর নামও প্রিয়াঙ্কা এবং তিনি বিজেপির যুব মোর্চা শাখার একজন সদস্য৷ এই মিমটিও লোকের হাসির খোরাক হয়, কিন্তু ক্ষিপ্ত হয় রাজ্য প্রশাসন৷ পুলিশ তৎপর হয়, প্রিয়াঙ্কা শর্মা নামে ২৫ বছরের ওই যুবতীকে গ্রেপ্তার করে আদালতে হাজির করে এবং তাঁকে ১৪ দিনের জন্য বিচারবিভাগীয় হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেয় আদালত৷ এর বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেন প্রিয়াঙ্কা শর্মা এবং শেষ পর্যন্ত জামিন পান৷

পুলিশ হেফাজত থেকে ছাড়া পাওয়ার পর বিজেপির দপ্তরে রীতিমতো সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে প্রিয়াঙ্কা বলেছেন, তিনি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে ক্ষমা চাইবেন না, কারণ, তিনি মনে করেন তিনি কোনো অন্যায় করেননি৷ কাজেই এই মামলা তিনি লড়বেন৷ বলা বাহুল্য যে, এই আইনি লড়াইয়ে তাঁকে সব রকমের সহায়তা দেবে বিজেপি৷ বিষয়টি এর মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নির্বাচনি প্রচারে জায়গা পেয়ে গেছে৷ শেষ দফার নির্বাচনি প্রচারে গ্রেপ্তারির ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে মোদী কটাক্ষ করেছেন, কেউ যদি তাঁর মিম বানান, তিনি সেটি উপহার পেলে খুশিই হবেন৷ এবং সাধারণের মধ্যেও পুলিশের এই অতি সক্রিয়তা এবং আইনি ধারার অপব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন উঠে গেছে৷ সাইবার ক্রাইমের ধারায় মানহানির অভিযোগ আনা হয়েছে প্রিয়াঙ্কা শর্মার বিরুদ্ধে৷ কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট প্রিয়াঙ্কার জামিন মঞ্জুরের সিদ্ধান্ত নিয়ে পরিষ্কার বুঝিয়ে দিয়েছে, লঘু পাপে গুরুদণ্ড দেওয়ার এই প্রশাসনিক বাড়াবাড়িতে অন্তত আইনের সায় নেই৷ ফলে দাবি উঠেছে, স্বাধীন মত প্রকাশের ক্ষেত্র প্রসারিত করার সময় এসেছে এবং দেশের সর্বোচ্চ আদালত সেই ব্যাপারে যথাযথ সিদ্ধান্ত নিক৷ নতুন করে সীমানা নির্ধারণ করে দিক নাগরিকের বাকস্বাধীনতার৷

সরকার মানুষকে ভীত-সন্ত্রস্ত করতে চায়, যাতে অন্য কেউ এর বিরুদ্ধে কথা না বলে: অম্বিকেশ মহাপাত্র

This browser does not support the audio element.

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর ব্যঙ্গচিত্রে আপত্তি, বিরক্তি অবশ্য নতুন নয়৷ এর আগেও একটি নির্দোষ মিম ই-মেল মারফত নিজের বন্ধুদের পাঠানোর ‘‌অপরাধে'‌ শারীরিক নিগ্রহ, সামাজিক হেনস্থা, গ্রেপ্তারি, কারাবাস, সবই হয়েছিল রাজ্যের এক অধ্যাপক অম্বিকেশ মহাপাত্রর৷ সাত বছর হয়ে গেল, এখনও চলছে তাঁর বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলা৷ সেই সম্পর্কে তিনি ডয়চে ভেলেকে বললেন, ‘‌‘‌এই ঘটনা প্রমাণ করে যে, সরকার কোনো সমালোচনা, বা ব্যঙ্গচিত্র, সরকারের কর্তাব্যক্তিদের নিয়ে— সেটা সহ্য করবে না৷ এজন্য পুলিশকে ব্যবহার করে, বিচার ব্যবস্থাকে ব্যবহার করে মুখ বন্ধ করতে চায়৷ স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকারকে আক্রমণ করতে চায়৷ মানুষকে ভীত-সন্ত্রস্ত করতে চায়, যাতে অন্য কেউ এর বিরুদ্ধে কথা না বলে৷’’

তবে সাম্প্রতিক ঘটনা এবং প্রিয়াঙ্কা শর্মার গ্রেপ্তারি প্রসঙ্গে অম্বিকেশ মহাপাত্রর বক্তব্য খুব পরিষ্কার৷ তিনি বললেন, ‘‌‘‌যে মিমটি ব্যবহার করেছিল, আমি সেটা দেখেছি৷ আমার কাছে মনে হয়েছে ওটা অশ্লীল মিম৷ আমি এ ধরনের মিম ফেসবুকে পোস্ট করতাম না, বা শেয়ার করতাম না৷ তবে রাজ্য সরকারের পুলিশ যেভাবে তড়িঘড়ি তাঁকে গ্রেপ্তার করে, তাঁকে ১৪ দিন জেল হেফাজতে পাঠিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিল, সেটার আমি কিন্তু বিরোধিতা করছি৷’’

মানুষের সহিষ্ণুতার মাত্রাও অনেক কমে গেছে: শুভেন্দু সরকার

This browser does not support the audio element.

সাধারণভাবে প্রশাসকের সহিষ্ণুতাই কি ক্রমশ কমে যাচ্ছে?‌ জনপ্রিয় ব্যঙ্গচিত্রী, যিনি ঘোষিতভাবেই নরেন্দ্র মোদী এবং বিজেপির হিন্দুত্ববাদী নীতির বিরোধী এবং প্রায় রোজই সোশাল মিডিয়ায় ব্যঙ্গচিত্রের মাধ্যমে তাঁর প্রতিবাদ করে যাচ্ছেন, সেই শুভেন্দু সরকার এ প্রসঙ্গে ডয়চে ভেলেকে খুব বাস্তবিক একটা কথা বললেন, ‘‘‌চারিদিকে যে এই ডামাডোল চলছে ভারতবর্ষ জুড়েই, আমাদের রাজনৈতিক চেতনা, বা আমাদের সামাজিক এই অবস্থান, সব অদ্ভুতভাবে ঘেঁটে গেছে৷ নানান রকম ভাবে৷ সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে আমাদের নীতি, আদর্শ জলাঞ্জলিও গেছে বলব৷ এ অবস্থায় মানুষের সহিষ্ণুতার মাত্রাও অনেক কমে গেছে৷’’ শুভেন্দু জানাচ্ছেন, রাজনৈতিক ব্যঙ্গচিত্র আঁকার অপরাধে তিনিও অনেক হুমকি পেয়েছেন৷ কখনো হিন্দিভাষী কেউ ফোন করে গালিগালাজ করেছে, কখনো সোজাসাপ্টা বাংলাতেই দেখে নেওয়ার হুমকি৷ কিন্তু পেশার সূত্রেই শুভেন্দু প্রকাশ্য অনুষ্ঠানে ওয়ার্কশপ করাতে যান, কোথাও কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়নি৷ কারণ, সাধারণ মানুষ এটা পছন্দ করেন৷ এই রঙ্গ, ব্যঙ্গ, রসিকতা এখনো সাধারণ জীবন থেকে হারিয়ে যায়নি, এটাই শুভেন্দু সরকারের উপলব্ধি৷

কেবল রাজনৈতিক নেতা-নেত্রী এবং প্রশাসকরা যদি আরেকটু রসবোধের পরিচয় দিতেন!‌

৬ মে’র ছবিঘরটি দেখুন...

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ