বাংলা নিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম’এর বার্তা বিভাগের প্রধান মাহমুদ মেনন মনে করেন, গণজাগরণ ঠিকই বজায় আছে, কিন্তু এখন তা একটা নতুন পর্যায়ে প্রবেশ করছে৷ এবং সে উত্তরণ ঝুঁকিবিহীন নয়৷
বিজ্ঞাপন
‘‘আমরা বরাবরই দেখেছি জামায়াত শিবির এ'জায়গায় পথ একটাই প্রয়োগ করে, সেটা হল শক্তি,'' বলছিলেন মাহমুদ মেনন৷ ‘‘এবং সেই শক্তি প্রয়োগের সুযোগটা তারা খুঁজবে৷'' কাজেই বৃহস্পতিবার রাত থেকেই তাঁরা তাঁদের রিপোর্টারকে সচেতন রেখেছিলেন যে, ‘‘যে কোনো কিছু হতে পারে''৷ এমনকি নাশকতার কথা বলে তারা রাতেই একটা রিপোর্ট করেন৷ সেই সঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় সাংবাদিকদের টার্গেট করা হয়েছে, ঢাকা, চট্টগ্রাম, ঝিনাইদহে৷ পরিস্থিতি যে অগ্নিগর্ভ, সে বিষয়ে তিনি একমত৷ ‘‘কোনো কিছুই স্বাভাবিক হতে যাচ্ছে না,'' বলে তাঁর ধারণা৷ এবং রবিবার ‘‘জামাত নিয়ন্ত্রিত বারোদলীয় গ্রুপ''-এর ডাকা রবিবারের হরতালের প্রেক্ষিতে: ‘‘সব মিলিয়ে আগামী দু'তিনটা দিন কিন্তু সহিংসতার কথাই ভাবা হচ্ছে৷''
‘নাস্তিক ব্লগার’ ইস্যুতে ইসলামি দলের তাণ্ডব
কয়েকজন ব্লগারের বিরুদ্ধে কথিত ‘ধর্মনিন্দার’ অভিযোগে তাদের মৃত্যুদণ্ডের দাবিতে ২২ ফেব্রুয়ারি ঢাকাসহ বাংলাদেশের কয়েক এলাকায় তাণ্ডব চালিয়েছে বিভিন্ন ইসলামি দল৷ এতে প্রাণহানিসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে৷
ছবি: Reuters
বায়তুল মোকাররম এলাকা রণক্ষেত্র
শুক্রবার (২২.০২.১৩) দুপুর বারোটার দিকে বায়তুল মোকাররম এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়৷ ১২টি ইসলামি ও সমমনা দল আগেই ঘোষণা দিয়েছিল, তাদের ভাষায় যেসব ব্লগার ইন্টারনেটে ‘ধর্মনিন্দা’ করে বিভিন্ন নিবন্ধ লিখছে, তাদের ফাঁসির দাবিতে শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর আন্দোলন করা হবে৷ কিন্তু সেই আন্দোলন অল্প সময়ের মধ্যেই তাণ্ডবে রূপ নেয়৷ এতে বেশ কয়েকজন সাংবাদিকও আহত হন৷
ছবি: AFP/Getty Images
‘পরিকল্পিত অ্যাকশন’
ঢাকা থেকে আমাদের প্রতিনিধি হারুন উর রশীদ স্বপন জানিয়েছেন, ‘শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবেই সহিংস অ্যাকশনে গেল জামায়াত-শিবির ও তাদের সহযোগীরা৷ ব্লগে ইসলামের বিরুদ্ধে কথিত কটূক্তির কথা বলে তাদের ভাষায় ‘মুরতাদ-নাস্তিকদের’ ফাঁসির দাবিতে আগেই শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর কর্মসূচি দেয়৷ আর আজ (২২.০২.১৩) জুম্মার নামাজের আগেই তারা তাণ্ডব শুরু করে৷’
ছবি: Reuters
শাহবাগে হামলার চেষ্টা
শুক্রবার (২২.০২.১৩) পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে ইসলামি দলের সদস্যরা শাহবাগ গণজাগরণ মঞ্চের দিকে এগোতে চাইলে সংঘর্ষ পল্টন হয়ে প্রেসক্লাব পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে৷ ককটেল, গুলি আর টিয়ার গ্যাসের সেলে পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়৷ প্রায় একই সময়ে ঢাকার কাঁটাবনে শাহবাগ বিরোধীরা রাস্তায় নামে৷ তারাও শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের দিকে এগোনোর চেষ্টা করে৷ সেখানেও পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়৷
ছবি: AFP/Getty Images
ঢাকার বাইরে তাণ্ডব, প্রাণহানি
ঢাকার বাইরে চট্টগামের প্রেসক্লাবে হামলা হয়েছে৷ তাদের হামলায় পুলিশ এবং সাংবদিকসহ ২০ জন আহত হয়েছেন৷ বগুড়া, রাজশাহী, সিলেট, চাঁদপুরে গণজাগরণ মঞ্চে হামলা চালায় তারা৷ হামলা চালায় সিলেট শহীদ মিনারে৷ সেখানে একজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে৷ শুক্রবার বিকেল অবধি পাওয়া খবর অনুযায়ী, গাইবন্ধায় ২ জন এবং ঝিনাইদহে জাগরণ মঞ্চ বিরোধীদের সঙ্গে জনতার সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন৷
ছবি: Reuters
শাহবাগে জনতা
দেশব্যাপী ইসলামি দলগুলোর এই তাণ্ডবের পর শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে আবারো ভিড় বাড়তে শুরু করেছে৷ ব্লগারদের ডাকে গত পাঁচ ফেব্রুয়ারি থেকে এই চত্বরে অবস্থান করছেন অগুনতি মানুষ৷ তাদের মূল দাবি হচ্ছে, ‘‘মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার, জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ, তাদের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বয়কট৷’’
ছবি: Reuters
তাণ্ডবের পর নতুন কর্মসূচি
শাহবাগের তরুণ প্রজন্মের এই আন্দোলনের অন্যতম উদ্যোক্তা ইমরান এইচ সরকার শুক্রবার সন্ধ্যায় জাগরণ মঞ্চ থেকে দাবি করেন, ‘‘আজকের (২২.০২.১৩) হামলায় উস্কানি দিয়েছে জামায়াত শিবিরের পত্রিকা আমার দেশ৷ আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এর সম্পাদক মাহামুদুর রহমানকে গ্রেপ্তার করতে হবে৷ তা না হলে বৃহত্তর কর্মসূচি দেয়া হবে৷’’ বাংলাদেশে ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম জানিয়েছে এই তথ্য৷
ছবি: Reuters
ইন্টারনেটে সতর্ক দৃষ্টি
‘ধর্মীয় ভাবমূর্তিতে আঘাত হানছে’ এরকম ইন্টারনেট ওয়েবসাইট খুঁজে খুঁজে বন্ধ করে দিচ্ছে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ৷ ইতোমধ্যে কমপক্ষে দুটি ওয়েবসাইট বন্ধ এবং দশটি ব্লগ পোস্ট মুছে দেওয়া হয়েছে৷ বার্তাসংস্থা এএফপিকে এই তথ্য জানিয়েছেন টেলিকমিউনিকেশন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি'র ভাইস-চেয়ারম্যান গিয়াসউদ্দিন আহমেদ৷
ছবি: picture-alliance/ dpa
রোববার হরতাল
শুক্রবার ঢাকাসহ সারা দেশে ব্যাপক তাণ্ডব চালানোর পর রোববার সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে ‘জামায়াত নিয়ন্ত্রিত’ ১২টি ইসলামি দল৷
ছবি: Reuters
8 ছবি1 | 8
শাহবাগের তরফ থেকেও অনেকেই আন্দোলনটাকে অহিংস রাখার পক্ষপাতী: ‘‘কেউ কেউ কিন্তু আছে যারা চায় যে, যে কোনো কিছুর একটা হেনস্তা হওয়া দরকার৷'' সেই সুবাদেই মাহমুদুর রহমান'কে গ্রেপ্তার করার ২৪ ঘণ্টার চরমপত্র দেওয়া হয়েছে বলে মনে করেন মাহমুদ মেনন৷ ‘‘যদি মাহমুদুর রহমান'কে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার করা না হয়, তাহলে তারা কী করবে? সেটাও হয়তো তারা ভেবেছে৷ আমি জানি না যে, কী হবে৷ কিন্তু দু'পক্ষকে মুখোমুখি করে দিয়েছে আজকের ঘটনাটি৷''
ধর্মকে জড়িয়ে সাধারণ মানুষের মনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা যায় কিনা, এই প্রসঙ্গে মাহমুদ মেনন বললেন, ‘‘যখনই তারা প্রথম সুযোগটি পেল, তখনই তারা ধর্মকে টেনে নিয়ে আসল৷'' রাজীব হত্যার পর পুরো আন্দোলনটিকে ধর্মের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা শুরু হয়৷ রাজীবের কথিত ব্লগ অথবা পোস্ট আগে তেমন গুরুত্ব পায়নি৷ পরে সেটিকেই পুঁজি করে ‘‘আন্দোলনের মধ্যে এক ধরনের প্রভাব ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে৷''
রাজীব হত্যার পরেও চার-পাঁচদিন আন্দোলন জোরালো ভাবেই চলে, স্মরণ করিয়ে দিলেন মাহমুদ মেনন৷ তার পরে এ'টিকে ‘‘নেক্সট ফেজ'' বা পরবর্তী পর্যায়ে দেওয়া হয়৷ কিন্তু ‘‘ধর্মকে যারা পুঁজি করে, তাদেরও এটা বোঝা উচিত যে, দেশের মানুষ কিন্তু ঠিক আগের মতো অতটা কুসংস্কারাচ্ছন্ন নয়, তাদেরও কিন্তু কিছু ভাবনা তৈরি হয়েছে... বিভিন্ন মিডিয়ার কারণে তার কাছে অনেক ধরনের মেসেজ আছে৷ আমার কাছে মনে হয় যে, ধর্মের কথা বলে আগের মতো করা যাবে না বাংলাদেশে, এটা নিশ্চিত৷''