প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেয়ার পর শাহবাজ শরীফ প্রস্তাব দিয়েছিলেন, মার্কিন হুমকি নিয়ে তদন্ত হোক।
বিজ্ঞাপন
নতুন প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফের প্রস্তাবে সম্মত হয়নি সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল পিটিআই। মার্কিন অ্যাসিস্টেন্ট সেক্রেটারি অফ স্টেট ডোলান্ড লু-র বার্তা নিয়ে ইমরান খান অভিযোগ করেছিলেন। ইমরান বলেছিলেন, তাকে সরাবার জন্য বিদেশি চক্রান্ত হচ্ছে। যেহেতু তিনি রাশিয়ার সমর্থনে কথা বলেছিলেন, তাই তাকে সরাবার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে বিদেশি শক্তি। ওয়াশিংটনের পাকিস্তানি দূতকে এই হুমকি দেয়া হয়েছে। তিনি পাকিস্তানের সার্বভৌমত্বের জন্য লড়ছেন বলে দাবি করেছিলেন ইমরান। অ্যামেরিকা অবশ্য জানিয়েছে, তারা কোনো হুমকি দেয়নি।
ক্ষমতায় এসে শাহবাজ ঘোষণা করেন, পাকিস্তান পার্লামেন্টের জাতীয় সুরক্ষা কমিটি এটা খতিয়ে দেখবে। যে বার্তার কথা বলা হচ্ছে, তা ঠিক, না কি জাল সেটা দেখাই হবে কমিটির কাজ। সেখানে সামরিক ও আইএসআই কর্তারা থাকবেন। আর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ও রাষ্ট্রদূত, যিনি এই চিঠি পাঠিয়েছিলেন বলা হচ্ছে, তিনিও থাকবেন।
শাহবাজ শরীফ: ব্যবসায়ী থেকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী
পাকিস্তানের ২৩তম প্রধানমন্ত্রী হলেন পিএমএল-এন নেতা শাহবাজ শরীফ৷ ব্যবসা সংগঠনের নেতৃত্ব, পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব, বিরোধী দলীয় নেতার ভূমিকার পর কঠিন এক সময়ে সরকার প্রধান হলেন তিনি৷ ছবিঘরে জানুন তার বিস্তারিত৷
ছবি: picture alliance/dpaEPA/PMLN
ব্যবসায়ী পরিবার
মিয়া মোহাম্মদ শাহবাজ শরীফের জন্ম ১৯৫১ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর পাঞ্জাবের লাহোরে৷ তার বাবা ছিলেন শিল্পপতি মিয়া মোহাম্মদ শরীফ৷ স্নাতক শেষ করে শাহবাজ শরীফ নিজেও পারিবারিক প্রতিষ্ঠান ‘ইত্তেফাক’-এর হাল ধরেন৷ ১৯৮৫ সালে তিনি লাহোর চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন৷
ছবি: DW/T. Shahzad
রাজনীতির ময়দানে
১৯৮৮ সালে পাঞ্জাব অ্যাসেম্বলির সদস্য হওয়ার মধ্য দিয়ে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন ব্যবসায়ী শাহবাজ৷ ১৯৯০ সালে এমএনএ নির্বাচিত হওয়ার পর ১৯৯৩ সালে পাঞ্জাব অ্যাসেম্বলির বিরোধী দলের নেতা হয়ে ওঠেন তিনি৷
ছবি: Reuters/A. Soomro
লিডার অব দ্য হাউজ
পাঞ্জাব অ্যাসেম্বলির বিরোধী দলের নেতা হিসেবে সাফল্যের পথ ধরে ১৯৯৭ সালে তিনি লিডার অব দ্য হাউজ নির্বাচিত হন৷ তখন তিনি কঠোর প্রশাসক হিসেবেও নাম কুড়ান৷ পাঞ্জাব প্রদেশের স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও পরিবেশ উন্নয়নে ভূমিকা রাখেন তিনি৷
ছবি: DGPR Pakistan
গ্রেপ্তার ও নির্বাসন
১৯৯৯ সালের অক্টোবরে পাকিস্তানের তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল পারভেজ মোশাররফ পিএমএল-এন সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে৷ সেই সময় গ্রেপ্তার এবং পরবর্তীতে ২০০০ সালের ডিসেম্বরে পরিবারসহ নির্বাসিত হন সৌদি আরবে৷
ছবি: Anjum Naveed/AP/picture alliance
রাজনীতিতে প্রত্যাবর্তন
জেদ্দাহ ও লন্ডনে থাকাকালে বেশ কয়েক বছর রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় ছিলেন শাহবাজ৷ ২০০৭ সাালের ২৫ নভেম্বর ভাই নওয়াজ শরীফের সঙ্গে পাকিস্তানে প্রত্যাবর্তন করেন৷ এরপর থেকে রাজনীতির ময়দানে সক্রিয় তিনি৷ ২০০৯ সালে পাঞ্জাবের ২১তম মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হন৷ প্রদেশের উন্নয়নে এসময় বেশ কিছু অবকাঠামো প্রকল্প নেন৷ তার সামাজিক প্রকল্প ‘সস্তা তন্দুর’ এবং ‘আশিয়ানা ঘর’ প্রশংসা কুড়ায়৷ দুর্নীতি দমনে কঠোর অবস্থানও নেন তিনি৷
ছবি: Reuters/M. Raza
বিরোধী দলীয় নেতা
২০১৩ সালে তৃতীয় দফা পাঞ্জাব মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পান শাহবাজ৷ ২০১৮ সালে পিএমএল-এন পরাজিত হলে এই অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটে৷ এসময় তিনি জাতীয় পরিষদের বিরোধী দলীয় নেতা নির্বাচিত হন৷ ২০১৯ সালে অর্থ পাচারের অভিযোগে পাকিস্তানের ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টেবিলিটি ব্যুরো তার ও তার সন্তানের নামে থাকা ২৩ সম্পত্তি জব্দ করলে বিপাকে পড়েন শাহবাজ৷ ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে গ্রেপ্তার হওয়ার পর ২০২১ সালের এপ্রিলে জামিন পান শাহবাজ৷
ছবি: Anjum Naveed/AP/picture alliance
প্রধানমন্ত্রীর দুয়ার
চলতি বছরের মার্চে জাতীয় পরিষদে ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনে বিরোধী দলগুলো৷ নানা নাটকীয়তার পর ইমরান খান সেই অনাস্থা ভোটে ক্ষমতাচ্যুত হন৷ প্রধানমন্ত্রীত্বের দুয়ার খোলে শাহবাজের জন্য৷ বিদেশ নীতির ব্যর্থতা, অর্থনৈতিক সংকটসহ যেসব কারণে ইমরান ক্ষমতা হারিয়েছেন, সেগুলো সামাল দেয়াই এখন পাকিস্তানের ২৩তম প্রধানমন্ত্রীর জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ৷
ছবি: picture alliance/dpaEPA/PMLN
এক পরিবারের দুই প্রধানমন্ত্রী
দ্বিতীয়বারের মতো এক পরিবার থেকে দুই প্রধানমন্ত্রী পেলো পাকিস্তান৷ ১৯৯০ সালে এবং ১৯৯৭ সালে দুই দফা প্রধানমন্ত্রীত্বের দায়িত্ব পেয়েছিলেন শাহবাজ শরীফের ভাই নওয়াজ শরীফ৷ এর আগে ১৯৭৩ সালে জুলফিকার আলী ভুট্টো এবং তারপর ১৯৮৮ সালে পাকিস্তানের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন তার মেয়ে বেনজির ভুট্টো৷ ১৯৯৩ সালে দ্বিতীয়বারের জন্যেও নির্বাচিত হয়েছিলেন আতাতায়ীর হামলায় নিহত বেনজির৷
ছবি: picture alliance/AP Photo
8 ছবি1 | 8
কিন্তু ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক ই-ইনসাফ (পিটিআই) এই তদন্তে রাজি হয়নি। তারা জানিয়েছে, নতুন প্রধানমন্ত্রী যেভাবে এগোতে চাইছেন, তাতে পিটিআইয়ের সায় নেই। তারা এই প্রস্তাব খারিজ করে দিচ্ছে। তাদের দাবি, সুপ্রিম কোর্ট একটা স্বাধীন কমিশন গঠন করুক। তারা বিষয়টির তদন্ত করুক। আর তদন্তকারী কমিশনের প্রধান হবেন এমন একজন, যাকে সকলে মেনে নেবে।