অনেক সময় জঙ্গলে যারা বাস করেন, তাদের পেশা বদলালেই জঙ্গল ও জঙ্গলের জীবজন্তুদের বাঁচানো যায়৷ যেমন শিকারির পরিবর্তে ফলচাষি বা স্কুটারট্যাক্সি চালক – যা ঘটেছে আফ্রিকার ক্যামেরুনের একটি গ্রামে৷
বিজ্ঞাপন
বহু শতাব্দী ধরে মানুষ এই জঙ্গলে বাস করছে, জীবজন্তু শিকার করছে৷ কিন্তু ইতিমধ্যে বহু প্রজাতি বিপন্ন হয়ে পড়ায় প্রকৃতি সংরক্ষণের দাবি জোরালো হয়েছে৷
ন্যাশনাল পার্কের ফরেস্ট রেঞ্জারদের সঙ্গে আজকাল একটি এনজিও-র কর্মীরাও থাকেন৷ বিভিন্ন প্রজাতির সংখ্যা কীভাবে কমছে, সেটা তারা ক্যামেরা ট্র্যাপ বসিয়ে যাচাই করতে চান৷
বিশেষ করে শিম্পাঞ্জি ও ড্রিল বা ম্যান্ড্রিল বানর প্রজাতি দু'টি বিপন্ন৷ শিম্পাঞ্জি আর ড্রিল বানরদের শিকার করা হয় তাদের মাংসের জন্য৷ তাদের জীবন্তও বিক্রি করা হয়ে থাকে৷
স্বাস্থ্য রক্ষায় প্রকৃতির প্রভাব
বন-জঙ্গল বা প্রকৃতির মাঝে হাঁটাচলা করা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো৷ কিন্তু কতটা ভালো তা হয়ত অনেকে জানেন না৷ সবুজের মাঝে কিছুক্ষণ সময় কাটালে হার্ট, হাড়, গলা ও মস্তিস্কের মতো অঙ্গের কতটা উপকার হয়, তা জেনে নিন এই ছবিঘর থেকে৷
ছবি: picture-alliance/Arco Images
সবুজের বুকে হাঁটলে মনের শান্তি, দেহের উপকার
বন কিংবা কোনো সবুজ বাগানে ঘণ্টাখানেক হাঁটা বা সাইকেল চালানোর পর শরীর আর মন সত্যিকার অর্থেই শান্ত হয়ে যায়৷ প্রকৃতি আর মানুষের মধ্যে যে এক গভীর সম্পর্ক রয়েছে এবং মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর প্রকৃতি যে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে তা গবেষণায়ও প্রমাণ হয়েছে৷ গবেষকরা মানুষের দেহ-মনে প্রকৃতির প্রভাবকে বলেন ‘বায়ো-এফেক্ট’৷
ছবি: Brianne Fischer
প্রকৃতি থেকে অক্সিজেন
প্রতি পাঁচ জনের মধ্যে একজন জার্মান বনের বড় বড় গাছের সাড়ির ভেতর দিয়ে ঘুরতে বা বেড়াতে পছন্দ করেন৷ কেউ একা যান আবার কেউবা পরিবারের সকলকে নিয়ে হাঁটেন, সাইকেল চালান৷ বনের সবুজ গাছ-পাতার অক্সিজেন মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা রাখে৷ বিশেষজ্ঞদের মতে মানুষের শরীর ও মনের ওপর গাছের রয়েছে এক সার্বজনীন প্রভাব৷
ছবি: Deutsche Umwelthilfe (DUH)/S. Suntken
সুস্থ হৃদপিণ্ড
ক্রীড়া বিশেষজ্ঞরা জানান, ঘাস এবং পাতার ওপর দিয়ে হাঁটার সময় পায়ের পেশি, পা, হাড়, হাঁটু , নিতম্বসহ সারা দেহে রক্ত সঞ্চালন দ্রুত হয়৷ তাঁরা জানান যে, বনের ভেতর বা গাছের নীচ দিয়ে সপ্তাহে অন্তত তিন দিন ৩০০০ পা হাঁটলে হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে যেতে পারে৷ তাছাড়া বুক ভরে নিঃশ্বাস নিলে ফুসফুস ভালো থাকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/I. Wagner
শ্রবণমান শাণিত করে
গাছের পাতার শব্দ শ্রবণমানকে খানিকটা শাণিত করে৷ তাই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ, বনে গিয়ে চোখ বন্ধ করে এবং খুব মনোযোগ দিয়ে প্রকৃতির শব্দ শুনুন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/CTK Photo/P. Mayer
অপারেশনের রোগীরও উপকার
সবুজ গাছ-গাছালির শক্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের এক সমীক্ষা থেকে জানা গেছে যে, অপারেশনের পর যেসব রোগী ঘরের জানালা দিয়ে সবুজ গাছপালা দেখেছেন, তাঁদের ব্যথার ঔষধ কম নিতে হয়েছে এবং তাঁরা তাড়াতাড়ি বাড়িতে যাওয়ার অনুমতি পেয়েছেন৷ বলা বাহুল্য, ক্লিনিকটি ছিল শহরের কোলাহল থেকে অনেক দূরে, সম্পূর্ণ সবুজে ঘেরা একটি জায়গায়৷ গবেষকরা জানান, প্রতিটি ঋতুর ভিন্ন ভিন্ন রূপ উপভোগ করলে শরীর ও মনকে সুস্থ রাখা অনেক সহজ৷
ছবি: picture-alliance/Arco Images
প্রকৃতির আরো অবদান
নানা অসুখের চিকিৎসায় হাজার বছর আগে থেকেই ঔষধি গাছ ব্যবহার করা হয়৷ বন-জঙ্গলে হাঁটতে গেলে সেরকম নানা গাছের সন্ধান পাওয়া যায়, যেগুলো মাথাব্যথা, পেটব্যথা, কাশি, ত্বকের ইনফেকশন, ফুলে যাওয়া, স্বাসকষ্টসহ অনেক রোগের মহৌষধ৷ প্রকৃতি থেকে উপকার পাওয়ার জন্য প্রকৃতিকে রক্ষা করাও মানুষের দায়িত্ব৷
ছবি: Colorbox
মস্তিষ্কের বিশ্রাম হয়
পাখির কলকাকলি গাছের শুকনো পাতার মর্মরধ্বনি মস্তিষ্ককে বিশ্রাম দেয়৷ বিশেষজ্ঞরা জানান, তখন নাকি মানুষের মগজে অনেকটা ছুটি কাটানোর মতো অনুভূতি হয়, মানসিক চাপ কমে৷ বড় কোনো বাগান বা বনের ভেতর মাত্র ১০০ মিটার হাঁটার পর মানসিক অস্থিরতা অর্ধেক কমে যায়৷
ছবি: Bill Holsten
7 ছবি1 | 7
জাতীয় উদ্যানের প্রধান এসেছেন এরাট গ্রামে৷ দু'বছর আগেও তাঁকে এভাবে স্বাগত জানানো হতো না৷ কিন্তু গ্রামবাসী আর রেঞ্জাররা এখন একসঙ্গে কাজ করেন৷ গ্রামবাসীরা পার্কের নিয়ম মেনে চলেন; পরিবর্তে তারা সৌরশক্তির মতো বাস্তব সুযোগ-সুবিধা পান৷
গ্রামের মোড়লের ভাই ডানিয়েল আগুনস বললেন, ‘‘এবার সংরক্ষণ প্রচেষ্টার কেন্দ্রে রয়েছে স্থানীয় মানুষ৷ এই প্রথম প্রতিটি পর্যায়ে আমাদের সঙ্গে পরামর্শ করা হয়েছে৷ আমরা বুঝতে পেরেছি যে, জাতীয় উদ্যানের বাইরে আমাদের জীবিকা অর্জনের পন্থা আছে৷''
শিকারের বিকল্প
রেঞ্জার আর গ্রামবাসীরা মিলে স্থায়ী এলাকা নির্দেশ করে সেখানে সাইনবোর্ড লাগিয়ে দিয়েছেন৷ সংরক্ষিত অরণ্য কোথায় শেষ হচ্ছে, তা স্পষ্ট বলে দেওয়া হচ্ছে৷ কোথা থেকে গ্রামবাসীদের জঙ্গল শুরু হচ্ছে, যেখানে তারা কাঠ কাটতে পারেন, কোথায় তারা চাষ করতে পারেন, সবই বলে দেওয়া হয়েছে৷
সাবেক শিকারি জন একপো যেমনটা করেছেন৷ বয়স ষাট ছুঁই ছুঁই, শিকার করাটা ক্রমেই আরো শক্ত হয়ে উঠছিল৷ এখন তিনি কোকো, কলা আর আমের চাষ করেন৷ প্রকৃতি সংরক্ষণকারীরা জানতে চান, তারা কিভাবে অন্য শিকারিদেরও জন একপোর পন্থা অনুসরণ করতে অনুপ্রাণিত করতে পারেন৷ একপোর পরিবার এখন আগের চেয়ে ভালো আছে৷ একপো জানালেন, ‘‘আমি কোকো চাষ থেকে বছরে এক লাখ ফ্রঁ রোজগার করি, কিন্তু চাইলে তার বেশিও রোজগার করতে পারি – কেননা, কাজটা খুব সোজা৷ ফসল তোলাও বেশ সোজা৷ কোকো বিনগুলোকে ভেঙে কোকোর বিচিগুলোকে রোদ্দুরে শুকিয়ে বিক্রি করলেই হলো৷ আগে শিকার করতে এর চেয়ে অনেক বেশি পরিশ্রম করতে হতো৷''
২০১৭ সালের জীবজন্তু
প্রতিবছর বিভিন্ন পরিবেশ ও অন্যান্য বিজ্ঞানভিত্তিক সংগঠন বিশেষভাবে বিপন্ন প্রজাতির প্রাণীর নাম ঘোষণা করে৷ ২০১৭ সালের প্রাণীরা হলো...
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Haid
চোরকুঠুরির ভক্ত
এই ফোর-স্পটেড ইখনয়মন ওয়াস্প বা ভিমরুলটি শীত কাটায় গুহা, খনি কিংবা মাটির তলার ভাঁড়ারে৷ বরফ মুক্ত পরিবেশ ছাড়া এরা বাঁচে না৷ জার্মানির স্পেলিওলজিস্ট বা গুহাবিজ্ঞানীরা এই ভিমরুলটিকে ২০১৭ সালের ‘গুহা প্রাণী’ আখ্যা দিয়েছেন৷
ছবি: Klaus Bogon
সর্বঘটে
জার্মানির অ্যারাখনোলজিস্ট অর্থাৎ মাকড়শা বিজ্ঞানীরা এই ওয়ালনাট অর্ব-উইভারটির দিকে মনোযোগ আকর্ষণ করার চেষ্টা করেছেন৷ এখানে প্রায় সব বাড়ি কি বাগানে এদের দেখতে পাওয়া যায়৷ এরা পুরনো কড়িকাঠ, গাছের ছাল কিংবা মরা গাছের কাঠে থাকতে ভালোবাসে৷ এদের বোনা জালগুলো হয় সুন্দর আর ব্যাসে ৫০ ইঞ্চি অবধি বড়৷
ছবি: picture alliance/dpa/blickwinkel
সাপ নয়, কেঁচো
জার্মানিতে ২০১৭ সালের সরীসৃপ হলো এই ব্লাইন্ডওয়র্ম নামের কেঁচো৷ এদের সাপ ভেবে অনেকেই মারতে বসেন! নাম ব্লাইন্ডওয়র্ম বা কানা কেঁচো হলেও, এরা কানা নয় - তবে নিরীহ ও নির্বিষ৷ তাদের নামের মধ্যে ব্লাইন্ড বা (জার্মানে) ‘ব্লিন্ড’ কথাটি এসেছে সাবেক আমলের জার্মান থেকে, যখন এর মানে ছিল মাছের আঁশের মতো ছোট ছোট লোহার পাত দিয়ে তৈরি যুদ্ধের পোশাক৷
ছবি: picture alliance/Arco Images
‘টনি’ বা তামাটে পেঁচা
২০১৭ সালের পাখি হলো ‘টনি আউল’ বা তামাটে পেঁচা৷ এরা সাধারণত গাছ কিংবা বাড়ির গায়ের ফুটোফাটাতে বাসা বাঁধে৷ আসলে এরা জঙ্গলে পুরনো গাছের ফোকরে থাকতে ভালোবাসে৷ সেই কারণে জার্মানির পরিবেশ সুরক্ষা সমিতি ‘নাবু’ পুরনো পার্ক আর বনজঙ্গলের সুরক্ষার দিকে মনোযোগ আকর্ষণ করার উদ্দেশ্যে এই পাখিটিকে বেছে নিয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Haid
ইঁদুর, কিন্তু নেংটি নয়...
জার্মানির ২০১৭ সালের ‘বন্যজন্তু’ হলো এই খুদে ‘হ্যাজেল ডরমাউস’ নামের প্রাণীটি৷ শীতকালটা এরা ঘুমিয়ে কাটায়, কিন্তু গরম পড়লেই এদের লাফঝাঁপ শুরু হয়৷ বিশ্বাস করা শক্ত, এই একরত্তি প্রাণীটি আজ বিপন্ন৷ তাই জার্মান বন্যপ্রাণী নিধি ঠিক এই প্রাণীটিকেই নির্বাচন করেছে৷
ছবি: picture alliance/dpa/blickwinkel
চাঁদামাছের মতো...
জার্মান মৎস্যশিকারী সমিতি এই ‘ফ্লাউন্ডার’ মাছকে ‘২০১৭ সালের মাছ’ নির্বাচন করেছেন৷ এই মাছ প্রধানত বালটিক আর উত্তর সাগরের সমুদ্রগর্ভে দেখতে পাওয়া যায়৷ সৌখিন মাছ-ধরিয়েরা সাগরের দূষণ ও সাগরে নির্মাণকার্যের বিপদ সম্পর্কে সচেতন করে দিতে চান৷
ছবি: picture alliance/Arco Images
লাল প্যান্ট পরা মৌমাছি
জার্মানির বুনো মৌমাছির তালিকা সংগঠন এই ‘মাইনিং বি’-কে ২০১৭ সালের মৌমাছি নির্বাচিত করেছে৷ ‘লাল প্যান্ট’ পরা মৌমাছিটি যে পরাগের প্যাক বহন করে, তার রঙও লাল! মাত্র তিন ধরনের ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে এই অপরূপ প্রাণীটি৷
ছবি: picture alliance/dpa/blickwinkel
পতঙ্গ, নাকি শাঁকচুন্নি?
এই হলো সেই প্রেয়িং ম্যান্টিস, যাকে দেখলে মনে হবে যেন সে প্রার্থনা করছে৷ আসলে রয়েছে শিকার ধরার অপেক্ষায়৷ মুশকিল এই যে, সেই শিকারের মধ্যে নিজের স্বামীটিও পড়েন৷ যৌনমিলন সম্পন্ন হবার পরেই স্ত্রী ম্যান্টিস পুরুষ ম্যান্টিসটিকে খেয়ে ফেলে! এই কারণে তাদের ‘নাম খারাপ’ বলেই এবার প্যানেল এই অদ্ভুত জীবটিকে ২০১৭ সালের পতঙ্গের ‘সম্মান’ দিয়েছেন৷
ছবি: Imago/Agencia EFE
সুন্দরী ফড়িং
জার্মানির ওডোনাটোলজিস্ট বা ফড়িং বিশেষজ্ঞরা এই সাধারণ ‘ক্লাবটেইল’ ফড়িংটিকে ২০১৭ সালের ফড়িং হিসেবে নির্বাচন করেছেন৷ বহু কীটপতঙ্গ নদী-খাল-ঝর্ণার কাছে ছাড়া বাঁচতে পারে না৷ বিশ বছর আগেও এরা জার্মানিতে বিপন্ন বলে গণ্য হতো৷ ছোট ছোট ঝর্ণা ও নদী সুরক্ষার ব্যবস্থা নেওয়া পরে তাদের অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে৷
ছবি: Leviathan1983-sa
‘ফিকে মেঘাচ্ছন্ন হলুদ’
এই হলো এই প্রজাপতিটির নাম, যদিও ফিকেই বা কেন আর মেঘই বা এলো কোথা থেকে, তা বোঝা দায়৷ যা-ই হোক, এরা হলো ২০১৭ সালের প্রজাপতি৷ এরা ফুলে ভরা মাঠপ্রান্তর ভালোবাসে৷ বিশেষ করে আলফালফা আর ক্লোভার ঘাসের ফুল পছন্দ করে এরা৷ আধুনিক কৃষিকাজই এদের যম হয়ে দাঁড়িয়েছে৷
ছবি: picture alliance /Nothegger, A./WILDLIFE
10 ছবি1 | 10
শিকারিদের দিনের পর দিন, রাতের পর রাত জঙ্গলে কাটাতে হয় – সেটাও বিপজ্জনক৷ তাহলে সকলে কৃষিকাজে আসেন না কেন?
দক্ষিণ-পশ্চিম ক্যামেরুন এলাকার ‘প্রাকৃতিক সম্পদের টেকসই ব্যবস্থাপনা' প্রকল্পের উপদেষ্টা ফ্রাংক স্টেনমান্স বললেন, ‘‘টাকার জরুরি প্রয়োজন থাকলে, লোকে শিকারে যায়, কেননা, কোকো চাষে সময় লাগে৷ গাছ পুঁততে হয়৷ কোকো গাছের সঙ্গে অন্যান্য ফলের গাছ লাগানো যায়৷ তা থেকে রোজগার হতে চার বছর লেগে যায়....সে অনেকটা সময়৷''
বন্দুকের বদলে মোটর সাইকেল
পৌরভবনে গুরুগম্ভীর আবহাওয়া: গাঁয়ের মোড়ল শিকার নিষিদ্ধ করছেন৷ বিভিন্ন পরিবারের কর্তাব্যক্তিদের তাতে আপত্তি নেই৷ দশজন শিকারি প্রকৃতি সংরক্ষণকারীদের কাছে তাদের বন্দুক জমা দিলেন – এটা শুধু প্রতীকী নয় বলে আশা করছেন পার্কের রেঞ্জাররা৷
পরিবর্তে গ্রামকে দশটি মোটর সাইকেল দেওয়া হচ্ছে৷ প্রথম কয়েকজনকে মোটর সাইকেল চালানো শেখানো হচ্ছে৷ এরা ছিলেন শিকারি, এখন তারা ট্যাক্সি চালক অথবা কুরিয়ার হিসেবে পয়সা রোজগার করতে পারবেন৷
সেটা সম্ভব, কেননা, বছর খানেক হলো জঙ্গলের ভিতর দিয়ে একটি ছোট রাস্তা তৈরি হয়েছে৷ এর ফলে এরাট গ্রাম আজ বহির্জগতের সঙ্গে যুক্ত৷ রাস্তা তৈরি হবার আগে পায়ে হেঁটে পরের গ্রামে পৌঁছাতে ছয় ঘণ্টা সময় লেগে যেতো৷ বর্ষার সময় নদী ভরা থাকলে পৌঁছানোই যেত না৷ কাজেই আগামী এপ্রিলের মধ্যেই ব্রিজটা শেষ হতে হবে৷ স্টেনমান্স বললেন, ‘‘বাজারে যেতে পারা, অথবা অন্যান্য পরিষেবা নিতে পারাটা গ্রামবাসীদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷ এভাবে তারা কেনাকাটা করতে পারেন, ছোটরা আরো সহজে স্কুলে যেতে পারে, ডাক্তারের কাছে যাওয়া সহজ হয়৷ এরকম নানা সুবিধে৷''
অবশ্য জন একপো'র আশা, রাস্তাটা ছোটই থাকবে৷ নয়ত ঐ রাস্তা ধরে চোরাই কাঠ পাচার হয়ে জঙ্গলের সর্বনাশ হয়ে যেতে পারে৷ কিন্তু পন্থাই বা আর কী!
গ্রিট হফমান/এসি
কী নেই ভিরুঙ্গা পার্কে!
আফ্রিকার দেশ ডিআর কঙ্গোর ভিরুঙ্গা ন্যাশনাল পার্কে কী নেই? সক্রিয় আগ্নেয়গিরি, গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বন, সাভানা আর বরফে আচ্ছাদিত পর্বতমালা, গোরিলা, বিভিন্ন জাতের পাখি, উদ্ভিদ – আছে সবই৷ কিন্তু তারপরও যেন কী নেই?
ছবি: WWF/Brent Stirton
বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ
সক্রিয় আগ্নেয়গিরি, গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বন, সাভানা আর বরফে আচ্ছাদিত পর্বতমালা সমৃদ্ধ আফ্রিকার দেশ ডিআর কঙ্গোর ‘ভিরুঙ্গা ন্যাশনাল পার্ক’৷ তাই ইউনেস্কো ১৯৭৯ সালে এই পার্কের নাম বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে৷ এর আগে ১৯২৫ সালে তৎকালীন ঔপনিবেশিক শাসক বেলজিয়াম ভিরুঙ্গাকে সংরক্ষিত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করেছিল৷
ছবি: WWF/Brent Stirton
বিভিন্ন জাতের পাখি ও উদ্ভিদ
ভিরুঙ্গা পার্কে প্রায় ৭০০ প্রজাতির পাখি ও দুই হাজার প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে৷ পাশের গোমা শহরের জন্য জ্বালানি সরবরাহ করতে গিয়ে প্রতি বছর পার্কের বনাঞ্চলের একটা বড় অংশ হারিয়ে যাচ্ছে৷ জঙ্গিরাও এই বনের কাঠ কেটে বিক্রি করে সেই অর্থ দিয়ে অস্ত্র কিনে থাকে৷
ছবি: WWF/Brent Stirton
গোরিলার বাস
ভিরুঙ্গা পার্কের অন্যতম বাসিন্দা প্রায় ২০০ গোরিলা৷ ইউনেস্কোর এই পার্ককে স্বীকৃতি দেয়ার পেছনে বিলুপ্ত হতে থাকা এই প্রাণীর অবস্থানও একটা কারণ৷
ছবি: WWF/Brent Stirton
তেল অনুসন্ধান নয়
লন্ডন-ভিত্তিক একটি কোম্পানি ‘সোকো ইন্টারন্যাশনাল’ ভিরুঙ্গা পার্কে তেল অনুসন্ধান করতে চেয়েছিল৷ কিন্তু আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ফান্ড ফর নেচার’ বা ডাব্লিউডাব্লিউএফ এর প্রতিবাদ জানালে সেই পরিকল্পনা বাদ হয়ে যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
অনুসন্ধানে যে বিপদ হতে পারতো
তেল অনুসন্ধানের অনুমতি দিলে ভিরুঙ্গা পার্কের এডওয়ার্ড লেকের পানি দূষিত হয়ে পড়তো৷ এতে ঐ লেকের ধারে বাস করা প্রায় ৫০ হাজার পরিবারের সমস্যা হতো৷ কারণ তাঁরা পানি পান ও রান্নার কাজের প্রয়োজনীয় পানি ঐ লেক থেকেই সংগ্রহ করে থাকেন৷ এছাড়া লেকে থাকা মাছগুলোও মরে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল৷ এই মাছ ঐ পরিবারগুলোর আয়ের একটা বড় উৎস৷
ছবি: WWF/Brent Stirton
যুদ্ধ থেকে পালিয়ে
মহিলারা পার্কের একটি স্থানীয় বাজারে শুঁটকি বিক্রি করছেন৷ ডিআর কঙ্গোর পূর্বাঞ্চলে বিভিন্ন জঙ্গি গোষ্ঠী সক্রিয় থাকায় ভয়ে সেখান থেকে অনেক মানুষ পালিয়ে এই পার্কে অবস্থান নিয়েছে৷ অবশ্য এই পার্কেরও একটা অংশে এক সময় অনেক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে৷
ছবি: WWF/Brent Stirton
লোকদের বোঝাতে হবে
পার্কের ডিরেক্টর ইমানুয়েল দ্য মেরোড বলেন, ‘‘ভিরুঙ্গাকে বাঁচাতে হলে আমাদের মানুষদের বোঝাতে হবে যে বন সংরক্ষণের একটা আর্থিক দিক রয়েছে৷’’
ছবি: Getty Images
সংরক্ষণের আর্থিক দিক
ডাব্লিউডাব্লিউএফ বলছে ভিরুঙ্গা পার্ককে ঘিরে প্রায় ৪৫ হাজার চাকরি সৃষ্টি করা যেতে পারে৷ জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র, মৎস্য উৎপাদন, ইকো ট্যুরিজম, গবেষণা, শিক্ষা – এ সব খাতে এই চাকরির ব্যবস্থা করা সম্ভব৷ ঠিকমতো পরিকল্পনা করলে এই পার্ক থেকে বছরে প্রায় দশ লক্ষ ইউরো আয় করা সম্ভব৷