মনিটরিংয়ে অভাব এবং শিক্ষকদের উদাসীনতার কারণেই খেলাধুলায় মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে পড়েছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক কায়সার আহমেদ৷
বিজ্ঞাপন
ডয়চে ভেলে : মাদ্রাসাগুলোতে কি খেলাধুলার পর্যাপ্ত অবকাঠামো আছে? শিক্ষার্থীরা কি খেলাধুলার সুযোগ পায়?
অধ্যাপক কায়সার আহমেদ : অবশ্যই মাদ্রাসাগুলোতে খেলাধুলার পর্যাপ্ত অবকাঠামো আছে৷ একটা মাদ্রাসার অনুমোদন দেওয়ার আগে কিছু শর্ত পূরণ করতে হয়৷ এর মধ্যে কতটুকু জমি লাগবে সেটার একটা বাধ্যবাধকতা আছে৷ সুতারাং জমির যে হিসাব তার মধ্যে ভবন করা হলে তাতে কতটুকু জমি লাগে, খেলার জন্য কতটুকু মাঠ থাকবে, সেটা কিন্তু আগেই চূড়ান্ত করা হয়৷ অনুমোদিত সকল মাদ্রাসায় খেলাধুলার অবকাঠামোগত ব্যবস্থা আছে৷
বিনোদনের জন্য সংস্কৃতি চর্চার কী ধরনের ব্যবস্থা আছে?
অ্যাকাডেমিক কার্যকলাপ শেষ করে সংস্কৃতি চর্চার ব্যবস্থা ঠিক ওই অর্থে নেই৷ কিন্তু আমাদের অধিদপ্তরের যে ক্যালেন্ডার আছে, সেখানে কিন্তু তাদের বাৎসরিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার ব্যবস্থার কথা বলা আছে৷ বছরের কোন সময় এটা হবে, সেটাও নির্দিষ্ট করে দেওয়া আছে৷ ইতিহাস, ঐতিহ্যের সঙ্গে মিল রেখে আমাদের জাতীয় দিবসগুলো কিন্তু পালন করা হয়৷
‘নির্দেশনা আছে, বছরে অন্তত একবার ক্রীড়া অনুষ্ঠান আয়োজন করতে হবে’
সরকার থেকে কি খেলাধুলার জন্য কোনো বরাদ্দ দেওয়া হয়?
সরকারের তরফ থেকে দেওয়া হয় কিনা সেটা আমি বলতে পারবো না৷ তবে আমাদের অধিদপ্তর থেকে কী পরিমান বরাদ্দ দেওয়া হয়, সেটা আমি বলতে পারি৷ শিক্ষার্থীরা যখন ভর্তি হয় বা ফরম পূরণ করে, তখন ক্রীড়া ফি'র নামে একটা নির্দিষ্ট অর্থ নেওয়া হয়৷ এই অর্থ দিয়ে আমাদের অধিদপ্তরের উদ্যোগে দুটো ক্রীড়া অনুষ্ঠান হয়৷ একটা শীতকালীন ও আরেকটা গ্রীষ্মকালীন৷ এই ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় প্রতিষ্ঠান থেকে উপজেলা, জেলা ও বিভাগ হয়ে কেন্দ্রীয় প্রতিযোগিতা হয়৷ আমার বোর্ডে এই অর্থবছরের কথাই যদি বলি, আমরা ৩৫ লাখ টাকা রেখেছি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাঠ উন্নয়নের জন্য৷ এগুলো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের চাহিদা অনুযায়ি আমরা দেই৷ এর বাইরেও বোর্ড চেয়ারম্যানের নিজস্ব ফান্ড আছে, প্রয়োজন হলে সেখান থেকেও বরাদ্দ দেওয়া হয়৷ ক্রীড়া সামগ্রীর জন্য আবেদনের প্রেক্ষিতে বরাদ্দ দেই৷ সেখানেও ৩৫ লাখ টাকা বরাদ্দ আছে৷
মাদ্রাসাগুলোতে তো শরীর চর্চার শিক্ষকের পদ আছে, কিন্তু অধিকাংশ মাদ্রাসায় শিক্ষক নেই কেন?
এটা পুরোপুরি প্রতিষ্ঠানের অবহেলা৷ এমন না যে, ওই শিক্ষক নিলে এমপিও হবে না৷ কোনো প্রতিষ্ঠান না নিয়ে থাকলে তারা অবহেলার কারণে নেয়নি৷ এই পদে শিক্ষক নিলে সঙ্গে সঙ্গে এমপিও হয়ে যায়৷
একজন শিক্ষার্থীর সুস্থভাবে বেড়ে উঠার জন্য তো খেলাধূলা বা বিনোদনের ব্যবস্থা থাকা উচিত, তাই না?
অবশ্যই৷ শুধু লেখাপড়া তো জীবনের একটা অংশ৷ জীবনকে সুন্দর করার জন্য বিনোদন, শরীর চর্চা, খেলাধুলা এর কোন বিকল্পই নেই৷
খেলাধুলার জন্য শিার্থীদের পর্যাপ্ত সময় দেওয়া হয়?
একটা প্রতিষ্ঠান শুরু ও শেষ হওয়ার একটা সময় তো নির্দিষ্ট করা আছে৷ এর মাঝখানে একটা টাইম আছে, যেটা আমি-আপনিও ভোগ করে এসেছি৷ এই সময়ে আমরা যতটুকু খেলাধুলা করেছি, স্কুল ছুটি হওয়ার পর আমরা কিন্তু শরীর চর্চা শিক্ষকের তত্বাবধানে টিম করে খেলাধুলা করেছি৷ এখনো হয়তো আছে৷ তবে না থাকলে থাকা উচিত৷
মাদ্রাসায় খেলাধুলা ও সংস্কৃতি চর্চা
বাংলাদেশে দু’ ধরনের মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থা চালু আছে৷ একটি সরকার অনুমোদিত আলিয়া মাদ্রাসা, অন্যটি কওমি মাদ্রাসা৷ এসব মাদ্রাসায় খেলাধুলা ও সংস্কৃতি চর্চার সুযোগ কেমন, তা জানা যাবে এই ছবিঘরে৷
ছবি: Sazzad Hossain
মাদ্রাসার সংখ্যা
বাংলাদেশে সরকার অনুমোদিত আলিয়া মাদ্রাসার সংখ্যা প্রায় সাড়ে ১৫ হাজার৷ আর কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের হিসেবে, কওমি মাদ্রাসার সংখ্যা ১৩,৭১০টি৷ অবশ্য বছর তিনেক আগে কওমি মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিস ডিগ্রিকে সাধারণ শিক্ষার স্নাতকোত্তর সমমান মর্যাদা দেয়া হয়৷ দুই ধারা মিলিয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৫০ লাখ৷
দুই মাদ্রাসার দুই চিত্র
সরকার অনুমোদিত আলিয়া মাদ্রাসাগুলোতে খেলাধুলা ও সংস্কৃতি চর্চার সুযোগ থাকলেও বেশিরভাগ কওমি মাদ্রাসাতেই সেই সুযোগ নেই৷
ছবি: DW/M. Mamun
বছরে দুটো ক্রীড়া প্রতিযোগিতা
আলিয়া মাদ্রাসাগুলো নিয়ন্ত্রণ করে বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড৷ এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক কায়সার আহমেদ ডয়চে ভেলেকে জানান, বোর্ডের অধীনে প্রতিবছর শীত ও গ্রীষ্মকালে দুটি ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়৷ যদিও তিনি মনে করেন, মনিটরিংয়ের অভাব কিংবা শিক্ষকদের উদাসীনতার কারণে জাতীয় পর্যায়ের খেলাধুলায় স্কুল-কলেজের ছেলে-মেয়েদের চেয়ে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে আছে৷
ছবি: Privat
কওমি মাদ্রাসার কথা
বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতির যুগ্ম মহাসচিব ও ‘আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম’-এর সহকারী অধ্যাপক মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘কওমি মাদ্রাসায় শুধু ধর্মীয় শিক্ষা দেয়া হয়৷ জাগতিক বিষয়গুলো সেখানে গৌন৷ শরিয়তের সীমাবদ্ধতার কারণে কিছু বিষয়, যেমন টিভি দেখার মতো বিনোদনমূলক বিষয়গুলো সেখানে নিষিদ্ধ৷ খেলাধুলার ক্ষেত্রেও তারা নিরুৎসাহিত করে থাকে৷’’
ছবি: Privat
আছে ব্যতিক্রম
ঢাকার নূরীয়া হাজারীবাগ মাদ্রাসা একটি কওমি মাদ্রাসা৷ সেখানকার নূরানী বিভাগের প্রধান শিক্ষক হাফেজ মো: মুজিবুল হক মনে করেন, শিক্ষার্থীদের একজন পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য খেলাধুলা ও বিনোদনের প্রয়োজন আছে৷ তিনি জানান, তার মাদ্রাসায় প্রতি বৃহস্পতিবার গজল ও কেরাতের উপর প্রশিক্ষণ দেয়া হয়৷ এছাড়া বছরে তিনবার গজল ও কেরাত প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়৷
ছবি: Sazzad Hossain
সরকারি সহায়তা প্রয়োজন
ফেঞ্চুগঞ্জের মদিনাতুল উলুম শাহ মালুম মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা ফখরুল ইসলাম জানান, তার মাদ্রাসায় শরীরচর্চার শিক্ষক নেই৷ তবে ছেলেরা সময় পেলে মাদ্রাসার সামনের মাঠে খেলাধুলা করে৷ মাদ্রাসা থেকে কোনো সরঞ্জাম দেয়া হয় না৷ শিক্ষার্থীরাই ব্যাট-বল নিয়ে আসে৷ তিনি বলেন, ‘‘খেলাধুলার জন্য সরকারের সহায়তা পেলে ভালো হয়৷’’ ছবিতে ঢাকার হাজারীবাগের আল-জামি’আ মাদীনাতুল উলূম মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Sazzad Hossain
ফুটবল খেলতে ভালো লাগে
ঢাকার নূরীয়া হাজারীবাগ মাদ্রাসার শিক্ষার্থী তানিমের (১২) ফুটবল খেলতে ভালো লাগে৷ তাই বিকেল হলেই সে মাঠে ফুটবল খেলতে যায়৷
ছবি: Sazzad Hossain
খেললে পড়াশোনায় মন বসে
ঢাকার নূরীয়া হাজারীবাগ মাদ্রাসার আরেক শিক্ষার্থী হাছান (১৫) মনে করে, খেলাধুলা করলে মন ভালো থাকে, পড়াশোনায় মন বসে৷
ছবি: Sazzad Hossain
মন ভালো থাকে
নূরীয়া হাজারীবাগ মাদ্রাসার শিক্ষার্থী মোঃ ইমরান হোসাইন ক্রিকেট, ফুটবল ও ব্যাডমিন্টন খেলতে ভালোবাসে৷ খেলাধুলা করলে মন ভালো থাকে বলে মনে করে সে৷
ছবি: Sazzad Hossain
কওমিতে সৃজনশীল চর্চার সুযোগ কম
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপপরিচালক (সম্পাদক, প্রকাশনা বিভাগ) আনোয়ার কবীর ডয়চে ভেলেকে বলেন, কওমি ধারায় সৃজনশীল চর্চার সুযোগ অনেক কম৷ কারণ, তারা নিজেরাই সিলেবাস নিয়ন্ত্রণ করে৷ তাই কওমি-পড়ুয়া শিশুদের গোঁড়ামিমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে তৃণমূল পর্যায়ে সৃজনশীল চর্চা প্রসারিত করতে হবে বলে মনে করেন তিনি৷
ছবি: Privat
উদ্যোগ
কওমি শিক্ষাধারাকে মূলধারার সমান্তরাল করতে সরকারি কিছু উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে৷ কওমি মাদ্রাসা নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান ‘বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ’ বা বেফাক নেতাদের সঙ্গে সরকারের যোগাযোগ আগের তুলনায় বেড়েছে৷ কওমি মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিসকে বছর তিনেক আগে সাধারণ শিক্ষার স্নাতকোত্তর সমমান মর্যাদা দেয়া হয়৷
ছবি: DW/M. Mamun
11 ছবি1 | 11
সাধারণ স্কুল-কলেজে বাৎসরিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা হয়৷ মাদ্রাসায় কি এমন কিছু হয়?
আমার নিজের জায়গাতে, আমরা পারিবারিকভাবে একটা মাদ্রাসা করেছি৷ সেটাতে আমি দেখি, বছরে শুরুর দিকে জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারি মাসে তারা বাৎসরিক ক্রীড়া অনুষ্ঠানটা করে৷ অধিদপ্তরেরও নির্দেশনা আছে, বছরে অন্তত একবার ক্রীড়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে হবে৷
মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরাও আছে৷ তবে আমি আপনার সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত যে, মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা একটু পিছিয়ে আছে৷ মনিটরিংয়ের অভাব বা শিক্ষকদের উদাসীনতার কারণেই এটা হয়েছে৷
ধর্মীয় দিক থেকে খেলাধুলায় কোনো বাধা আছে কি?
কোনো অভিযোগ আকারে আমরা এমন কিছু পাইনি৷ কোনো প্রতিষ্ঠান থেকেও আমাদের কাছে এ ব্যাপারে কিছু বলা হয়নি৷ এমনকি কোনো অভিভাবকও আমাদের কাছে অভিযোগ করেনি যে, তার ছেলে খেলাধুলা করতে চায়, কিন্তু প্রতিষ্ঠান সেই সুযোগ দিচ্ছে না৷ আমার পক্ষে প্রতিটা মাদ্রাসা দেখা সম্ভব না৷ তবে আমি যখন বাড়িতে যাই তখন কিন্তু দেখি, আমার মাদ্রাসায় মাঠে ছাত্ররা হয় ফুটবল বা ক্রিকেট খেলছে৷
মাদ্রাসায় খেলাধুলা বা বিনোদন নিয়ে আপনাদের কোনো পরিকল্পনা আছে?
পরিকল্পনা বলতে চাই না, আমার একটা সাজেশন আছে৷ সেটা হলো, শরীর চর্চার শিক্ষককে অধিকাংশ শিক্ষার্থীকে নিয়ে সপ্তাহে অন্তত দুই দিন প্রতিষ্ঠানের মাঠে খেলাধুলার ব্যবস্থা করতে হবে৷ অধিকাংশ বলছি, এই কারণে যে, অনেক শিক্ষার্থী শারীরিকভাবে খেলাধুলার জন্য বা মাঠে দৌড়-ঝাঁপ করার জন্য ফিট না-ও থাকতে পারে৷ এটা নিশ্চিত করতে হবে প্রতিষ্ঠান প্রধান ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের৷
আপনি তো অনুমোদিত মাদ্রাসার কথা বললেন৷ অধিকাংশ বেসরকারি মাদ্রাসায় খেলাধুলার কোনো ব্যবস্থাই নেই৷ বোর্ডের এক্ষেত্রে কিছু করণীয় আছে কি?
অনুমোদিত মাদ্রাসাগুলোকেই আমাদের পক্ষে মনিটরিং করা সম্ভব৷ যে প্রতিষ্ঠানকে আমরা অনুমোদন দেইনি তার কোনো পরিসংখ্যান আমাদের কাছে নেই৷ সে কী করছে আমরা জানি না৷ ১৫ হাজার মাদ্রাসাকে আমাদের মনিটরিং করতে হয়৷ তার বাইরে গিয়ে ওইগুলো মনিটরিং করতে পারলে হয়ত ভালো হতো৷ কিন্তু সেটা বোধহয় সম্ভব না৷
গতবছর জুনের ছবিঘরটি দেখুন...
বাংলাদেশে কওমি মাদ্রাসা ও শিক্ষা
কওমি মাদ্রাসা বেসরকারি ইসলাম ধর্ম ভিত্তিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান৷ ঢাকার কামরাঙ্গির চরে এমনই এক মাদ্রাসা জামিয়া নূরিয়া ইসলামিয়া৷ সেখানে একটা গোটা দিন কাটিয়ে কওমি শিক্ষা ব্যবস্থার নানা দিক ক্যামেরায় তুলে ধরেছেন মুস্তাফিজ মামুন৷
ছবি: DW/M. Mamun
সরকার কর্তৃক স্বীকৃতি
বাংলাদেশে প্রচলিত দু’ ধরনের মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে কওমি মাদ্রাসা একটি৷ উনিশ শতকে ভারতীয় উপমহাদেশে প্রতিষ্ঠিত দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্রাসার মাধ্যমে বাংলাদেশেও কওমি শিক্ষাব্যবস্থার প্রচলন হয়৷ দীর্ঘকাল ধরে কওমি মাদ্রাসা সরকারের আর্থিক সহায়তা ছাড়াই সাধারণ জনগণের সহায়তায় পরিচালিত হয়ে আসছিল৷ সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক স্বীকৃতি লাভ করেছে ইসলামি এ শিক্ষা ব্যবস্থা৷
ছবি: DW/M. Mamun
১৪ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী
বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস)-এর ২০১৫ সালের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ১৩ হাজার ৯০২টি কওমি মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৪ লাখেরও বেশি৷ তবে বেসরকারি হিসেব মতে, সারা দেশে কওমি মাদ্রাসার সংখ্যা ২০ হাজারের বেশি৷
ছবি: DW/M. Mamun
মাদ্রাসার একটি ক্লাসরুম
কওমি শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিচালিত ঢাকার জামিয়া নূরিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসার প্রাথমিক স্তরের একটি শ্রেণিকক্ষ৷ এ শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রাথমিক স্তরে আরবির পাশাপাশি বাংলা, ইংরেজিসহ সাধারণ শিক্ষাও দেওয়া হয়৷
ছবি: DW/M. Mamun
সহশিক্ষায় বাধা নেই শিশুদের
কওমি শিক্ষা ব্যবস্থায় সহশিক্ষা স্বীকৃত নয়৷ তাই মহিলাদের শিক্ষার জন্য আলাদা কিছু প্রতিষ্ঠান আছে৷ তবে প্রাথমিক স্তরে শিশুদের সহশিক্ষার কোনো বাধা নেই৷
ছবি: DW/M. Mamun
স্বতন্ত্র শিক্ষা বোর্ড দ্বারা পরিচালিত
বাংলাদেশের কওমি মাদ্রাসাগুলোর একাংশ পরিচালিত হয় স্বতন্ত্র একটি শিক্ষা বোর্ডের মাধ্যমে৷ ‘বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া’ (বেফাক) নামের এই শিক্ষা বোর্ড কওমি মাদ্রাসার পরীক্ষাসহ নানা বিষয় নিয়ন্ত্রণ করে থাকে৷
ছবি: DW/M. Mamun
ক্লাস হয় আরবি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী
কওমি মাদ্রাসার শিক্ষা সেশন পরিচালনা হয় আরবি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী৷ সাধারণত বেফাক আওতাধীন মাদ্রাসাগুলোর নতুন সেশন শুরু হয় আরবি ক্যালেন্ডারের শাওয়াল মাসের ১০ তারিখ থেকে৷
ছবি: DW/M. Mamun
পড়া ও শোয়ার জায়গা একটাই
ঢাকার জামিয়া নূরিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসার একটি শ্রেণিকক্ষ৷ এই কক্ষটি শিক্ষার্থীদের থাকার জায়গাও৷ সাধারণত কওমি মাদ্রাসাগুলিতে পাঠদান এবং শিক্ষার্থীদের থাকার জায়গা একই হয়ে থাকে৷
ছবি: DW/M. Mamun
সর্বক্ষণের সঙ্গী একজন শিক্ষক
কওমি মাদ্রাসার প্রতিটি শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি একজন শিক্ষকও থাকেন৷
ছবি: DW/M. Mamun
রুটিনমাফিক জীবন
কওমি মাদ্রাসাগুলো সম্পূর্ণ আবাসিক ব্যবস্থায় পরিচালিত৷ তাই শিক্ষার্থীদের সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিভিন্ন রুটিনের মধ্য দিয়ে সময় অতিবাহিত করতে হয়৷
ছবি: DW/M. Mamun
উচ্চশিক্ষার সুযোগ
কওমি মাদ্রাসার শিক্ষা ব্যবস্থার একটি অংশ হিফজুল কোরান (বানানভেদে কোরআন)৷ এ বিষয়ের শিক্ষার্থীরা শুধুমাত্র পবিত্র কোরান শরীফ মুখস্থ করে থাকেন৷ তবে হিফজুল কোরান শেষ হলে কওমি মাদ্রাসাগুলোতে অন্য বিষয়ে উচ্চশিক্ষারো সুযোগ আছে৷
ছবি: DW/M. Mamun
সর্ব্বোচ্চ শ্রেণি দাওরায়ে হাদিস
জামিয়া নূরিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিসের একটি শ্রেণিকক্ষ৷ এটি কওমি শিক্ষা ব্যবস্থার সর্বোচ্চ শ্রেণি৷ সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকার এই শ্রেণিকেই মাস্টার্স-এর সমমান বলে ঘোষণা করেছে৷
ছবি: DW/M. Mamun
পড়াশোনার মূল মাধ্যম আরবি
কওমি মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিস শ্রেণিতে শিক্ষার্থীদের হাদিস সম্পর্কিত বিষয়ে বিস্তারিত পড়ানো হয়৷ এ বিষয়ে পড়ানোর মূল মাধ্যম আরবি ভাষা৷ হাদিসের যথাযথ ব্যাখ্যা আরবি ভাষাতেই সম্ভব, এমনটাই মনে করা হয়ে থাকে৷
ছবি: DW/M. Mamun
আছে উর্দু এবং ফারসি ভাষাও
বাংলাদেশের কাওমি মাদ্রাসাগুলোয় প্রাথমিক স্তরে আরবির সঙ্গে বাংলা, ইংরেজি ইত্যাদি পড়ানো হলেও উচ্চস্তরে আরবি ছাড়াও পড়ানো হয় উর্দু এবং ফারসি ভাষা৷
ছবি: DW/M. Mamun
গরিব ছাত্রদের জন্য ফ্রি খাবার
কওমি মাদ্রাসাগুলোয় গরিব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে খাবারের ব্যবস্থা রয়েছে৷ তবে সামর্থবানদের থাকা ও খাওয়ার জন্য নির্ধারিত মূল্য পরিশোধ করতে হয়৷
ছবি: DW/M. Mamun
মেঝেতেই খাওয়া-দাওয়া, পড়াশোনা
শিক্ষা কার্যক্রম, খাওয়া-দাওয়া ইত্যাদি ক্ষেত্রে টেবিল-চেয়ারের ব্যবহার নেই কওমি মাদ্রাসাগুলোয়৷ ইসলামি সুন্নত অনুসরণে পাঠদান কার্যক্রম, খাওয়া-দাওয়া ইত্যাদি সম্পন্ন হয় মেঝেতেই৷