মনিটরিংয়ে অভাব এবং শিক্ষকদের উদাসীনতার কারণেই খেলাধুলায় মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে পড়েছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক কায়সার আহমেদ৷
মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক কায়সার আহমেদছবি: Privat
বিজ্ঞাপন
ডয়চে ভেলে : মাদ্রাসাগুলোতে কি খেলাধুলার পর্যাপ্ত অবকাঠামো আছে? শিক্ষার্থীরা কি খেলাধুলার সুযোগ পায়?
অধ্যাপক কায়সার আহমেদ : অবশ্যই মাদ্রাসাগুলোতে খেলাধুলার পর্যাপ্ত অবকাঠামো আছে৷ একটা মাদ্রাসার অনুমোদন দেওয়ার আগে কিছু শর্ত পূরণ করতে হয়৷ এর মধ্যে কতটুকু জমি লাগবে সেটার একটা বাধ্যবাধকতা আছে৷ সুতারাং জমির যে হিসাব তার মধ্যে ভবন করা হলে তাতে কতটুকু জমি লাগে, খেলার জন্য কতটুকু মাঠ থাকবে, সেটা কিন্তু আগেই চূড়ান্ত করা হয়৷ অনুমোদিত সকল মাদ্রাসায় খেলাধুলার অবকাঠামোগত ব্যবস্থা আছে৷
বিনোদনের জন্য সংস্কৃতি চর্চার কী ধরনের ব্যবস্থা আছে?
অ্যাকাডেমিক কার্যকলাপ শেষ করে সংস্কৃতি চর্চার ব্যবস্থা ঠিক ওই অর্থে নেই৷ কিন্তু আমাদের অধিদপ্তরের যে ক্যালেন্ডার আছে, সেখানে কিন্তু তাদের বাৎসরিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার ব্যবস্থার কথা বলা আছে৷ বছরের কোন সময় এটা হবে, সেটাও নির্দিষ্ট করে দেওয়া আছে৷ ইতিহাস, ঐতিহ্যের সঙ্গে মিল রেখে আমাদের জাতীয় দিবসগুলো কিন্তু পালন করা হয়৷
‘নির্দেশনা আছে, বছরে অন্তত একবার ক্রীড়া অনুষ্ঠান আয়োজন করতে হবে’
This browser does not support the audio element.
সরকার থেকে কি খেলাধুলার জন্য কোনো বরাদ্দ দেওয়া হয়?
সরকারের তরফ থেকে দেওয়া হয় কিনা সেটা আমি বলতে পারবো না৷ তবে আমাদের অধিদপ্তর থেকে কী পরিমান বরাদ্দ দেওয়া হয়, সেটা আমি বলতে পারি৷ শিক্ষার্থীরা যখন ভর্তি হয় বা ফরম পূরণ করে, তখন ক্রীড়া ফি'র নামে একটা নির্দিষ্ট অর্থ নেওয়া হয়৷ এই অর্থ দিয়ে আমাদের অধিদপ্তরের উদ্যোগে দুটো ক্রীড়া অনুষ্ঠান হয়৷ একটা শীতকালীন ও আরেকটা গ্রীষ্মকালীন৷ এই ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় প্রতিষ্ঠান থেকে উপজেলা, জেলা ও বিভাগ হয়ে কেন্দ্রীয় প্রতিযোগিতা হয়৷ আমার বোর্ডে এই অর্থবছরের কথাই যদি বলি, আমরা ৩৫ লাখ টাকা রেখেছি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাঠ উন্নয়নের জন্য৷ এগুলো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের চাহিদা অনুযায়ি আমরা দেই৷ এর বাইরেও বোর্ড চেয়ারম্যানের নিজস্ব ফান্ড আছে, প্রয়োজন হলে সেখান থেকেও বরাদ্দ দেওয়া হয়৷ ক্রীড়া সামগ্রীর জন্য আবেদনের প্রেক্ষিতে বরাদ্দ দেই৷ সেখানেও ৩৫ লাখ টাকা বরাদ্দ আছে৷
মাদ্রাসাগুলোতে তো শরীর চর্চার শিক্ষকের পদ আছে, কিন্তু অধিকাংশ মাদ্রাসায় শিক্ষক নেই কেন?
এটা পুরোপুরি প্রতিষ্ঠানের অবহেলা৷ এমন না যে, ওই শিক্ষক নিলে এমপিও হবে না৷ কোনো প্রতিষ্ঠান না নিয়ে থাকলে তারা অবহেলার কারণে নেয়নি৷ এই পদে শিক্ষক নিলে সঙ্গে সঙ্গে এমপিও হয়ে যায়৷
একজন শিক্ষার্থীর সুস্থভাবে বেড়ে উঠার জন্য তো খেলাধূলা বা বিনোদনের ব্যবস্থা থাকা উচিত, তাই না?
অবশ্যই৷ শুধু লেখাপড়া তো জীবনের একটা অংশ৷ জীবনকে সুন্দর করার জন্য বিনোদন, শরীর চর্চা, খেলাধুলা এর কোন বিকল্পই নেই৷
খেলাধুলার জন্য শিার্থীদের পর্যাপ্ত সময় দেওয়া হয়?
একটা প্রতিষ্ঠান শুরু ও শেষ হওয়ার একটা সময় তো নির্দিষ্ট করা আছে৷ এর মাঝখানে একটা টাইম আছে, যেটা আমি-আপনিও ভোগ করে এসেছি৷ এই সময়ে আমরা যতটুকু খেলাধুলা করেছি, স্কুল ছুটি হওয়ার পর আমরা কিন্তু শরীর চর্চা শিক্ষকের তত্বাবধানে টিম করে খেলাধুলা করেছি৷ এখনো হয়তো আছে৷ তবে না থাকলে থাকা উচিত৷
মাদ্রাসায় খেলাধুলা ও সংস্কৃতি চর্চা
বাংলাদেশে দু’ ধরনের মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থা চালু আছে৷ একটি সরকার অনুমোদিত আলিয়া মাদ্রাসা, অন্যটি কওমি মাদ্রাসা৷ এসব মাদ্রাসায় খেলাধুলা ও সংস্কৃতি চর্চার সুযোগ কেমন, তা জানা যাবে এই ছবিঘরে৷
ছবি: Sazzad Hossain
মাদ্রাসার সংখ্যা
বাংলাদেশে সরকার অনুমোদিত আলিয়া মাদ্রাসার সংখ্যা প্রায় সাড়ে ১৫ হাজার৷ আর কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের হিসেবে, কওমি মাদ্রাসার সংখ্যা ১৩,৭১০টি৷ অবশ্য বছর তিনেক আগে কওমি মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিস ডিগ্রিকে সাধারণ শিক্ষার স্নাতকোত্তর সমমান মর্যাদা দেয়া হয়৷ দুই ধারা মিলিয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৫০ লাখ৷
দুই মাদ্রাসার দুই চিত্র
সরকার অনুমোদিত আলিয়া মাদ্রাসাগুলোতে খেলাধুলা ও সংস্কৃতি চর্চার সুযোগ থাকলেও বেশিরভাগ কওমি মাদ্রাসাতেই সেই সুযোগ নেই৷
ছবি: DW/M. Mamun
বছরে দুটো ক্রীড়া প্রতিযোগিতা
আলিয়া মাদ্রাসাগুলো নিয়ন্ত্রণ করে বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড৷ এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক কায়সার আহমেদ ডয়চে ভেলেকে জানান, বোর্ডের অধীনে প্রতিবছর শীত ও গ্রীষ্মকালে দুটি ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়৷ যদিও তিনি মনে করেন, মনিটরিংয়ের অভাব কিংবা শিক্ষকদের উদাসীনতার কারণে জাতীয় পর্যায়ের খেলাধুলায় স্কুল-কলেজের ছেলে-মেয়েদের চেয়ে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে আছে৷
ছবি: Privat
কওমি মাদ্রাসার কথা
বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতির যুগ্ম মহাসচিব ও ‘আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম’-এর সহকারী অধ্যাপক মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘কওমি মাদ্রাসায় শুধু ধর্মীয় শিক্ষা দেয়া হয়৷ জাগতিক বিষয়গুলো সেখানে গৌন৷ শরিয়তের সীমাবদ্ধতার কারণে কিছু বিষয়, যেমন টিভি দেখার মতো বিনোদনমূলক বিষয়গুলো সেখানে নিষিদ্ধ৷ খেলাধুলার ক্ষেত্রেও তারা নিরুৎসাহিত করে থাকে৷’’
ছবি: Privat
আছে ব্যতিক্রম
ঢাকার নূরীয়া হাজারীবাগ মাদ্রাসা একটি কওমি মাদ্রাসা৷ সেখানকার নূরানী বিভাগের প্রধান শিক্ষক হাফেজ মো: মুজিবুল হক মনে করেন, শিক্ষার্থীদের একজন পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য খেলাধুলা ও বিনোদনের প্রয়োজন আছে৷ তিনি জানান, তার মাদ্রাসায় প্রতি বৃহস্পতিবার গজল ও কেরাতের উপর প্রশিক্ষণ দেয়া হয়৷ এছাড়া বছরে তিনবার গজল ও কেরাত প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়৷
ছবি: Sazzad Hossain
সরকারি সহায়তা প্রয়োজন
ফেঞ্চুগঞ্জের মদিনাতুল উলুম শাহ মালুম মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা ফখরুল ইসলাম জানান, তার মাদ্রাসায় শরীরচর্চার শিক্ষক নেই৷ তবে ছেলেরা সময় পেলে মাদ্রাসার সামনের মাঠে খেলাধুলা করে৷ মাদ্রাসা থেকে কোনো সরঞ্জাম দেয়া হয় না৷ শিক্ষার্থীরাই ব্যাট-বল নিয়ে আসে৷ তিনি বলেন, ‘‘খেলাধুলার জন্য সরকারের সহায়তা পেলে ভালো হয়৷’’ ছবিতে ঢাকার হাজারীবাগের আল-জামি’আ মাদীনাতুল উলূম মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Sazzad Hossain
ফুটবল খেলতে ভালো লাগে
ঢাকার নূরীয়া হাজারীবাগ মাদ্রাসার শিক্ষার্থী তানিমের (১২) ফুটবল খেলতে ভালো লাগে৷ তাই বিকেল হলেই সে মাঠে ফুটবল খেলতে যায়৷
ছবি: Sazzad Hossain
খেললে পড়াশোনায় মন বসে
ঢাকার নূরীয়া হাজারীবাগ মাদ্রাসার আরেক শিক্ষার্থী হাছান (১৫) মনে করে, খেলাধুলা করলে মন ভালো থাকে, পড়াশোনায় মন বসে৷
ছবি: Sazzad Hossain
মন ভালো থাকে
নূরীয়া হাজারীবাগ মাদ্রাসার শিক্ষার্থী মোঃ ইমরান হোসাইন ক্রিকেট, ফুটবল ও ব্যাডমিন্টন খেলতে ভালোবাসে৷ খেলাধুলা করলে মন ভালো থাকে বলে মনে করে সে৷
ছবি: Sazzad Hossain
কওমিতে সৃজনশীল চর্চার সুযোগ কম
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপপরিচালক (সম্পাদক, প্রকাশনা বিভাগ) আনোয়ার কবীর ডয়চে ভেলেকে বলেন, কওমি ধারায় সৃজনশীল চর্চার সুযোগ অনেক কম৷ কারণ, তারা নিজেরাই সিলেবাস নিয়ন্ত্রণ করে৷ তাই কওমি-পড়ুয়া শিশুদের গোঁড়ামিমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে তৃণমূল পর্যায়ে সৃজনশীল চর্চা প্রসারিত করতে হবে বলে মনে করেন তিনি৷
ছবি: Privat
উদ্যোগ
কওমি শিক্ষাধারাকে মূলধারার সমান্তরাল করতে সরকারি কিছু উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে৷ কওমি মাদ্রাসা নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান ‘বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ’ বা বেফাক নেতাদের সঙ্গে সরকারের যোগাযোগ আগের তুলনায় বেড়েছে৷ কওমি মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিসকে বছর তিনেক আগে সাধারণ শিক্ষার স্নাতকোত্তর সমমান মর্যাদা দেয়া হয়৷
ছবি: DW/M. Mamun
11 ছবি1 | 11
সাধারণ স্কুল-কলেজে বাৎসরিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা হয়৷ মাদ্রাসায় কি এমন কিছু হয়?
আমার নিজের জায়গাতে, আমরা পারিবারিকভাবে একটা মাদ্রাসা করেছি৷ সেটাতে আমি দেখি, বছরে শুরুর দিকে জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারি মাসে তারা বাৎসরিক ক্রীড়া অনুষ্ঠানটা করে৷ অধিদপ্তরেরও নির্দেশনা আছে, বছরে অন্তত একবার ক্রীড়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে হবে৷
মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরাও আছে৷ তবে আমি আপনার সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত যে, মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা একটু পিছিয়ে আছে৷ মনিটরিংয়ের অভাব বা শিক্ষকদের উদাসীনতার কারণেই এটা হয়েছে৷
ধর্মীয় দিক থেকে খেলাধুলায় কোনো বাধা আছে কি?
কোনো অভিযোগ আকারে আমরা এমন কিছু পাইনি৷ কোনো প্রতিষ্ঠান থেকেও আমাদের কাছে এ ব্যাপারে কিছু বলা হয়নি৷ এমনকি কোনো অভিভাবকও আমাদের কাছে অভিযোগ করেনি যে, তার ছেলে খেলাধুলা করতে চায়, কিন্তু প্রতিষ্ঠান সেই সুযোগ দিচ্ছে না৷ আমার পক্ষে প্রতিটা মাদ্রাসা দেখা সম্ভব না৷ তবে আমি যখন বাড়িতে যাই তখন কিন্তু দেখি, আমার মাদ্রাসায় মাঠে ছাত্ররা হয় ফুটবল বা ক্রিকেট খেলছে৷
মাদ্রাসায় খেলাধুলা বা বিনোদন নিয়ে আপনাদের কোনো পরিকল্পনা আছে?
পরিকল্পনা বলতে চাই না, আমার একটা সাজেশন আছে৷ সেটা হলো, শরীর চর্চার শিক্ষককে অধিকাংশ শিক্ষার্থীকে নিয়ে সপ্তাহে অন্তত দুই দিন প্রতিষ্ঠানের মাঠে খেলাধুলার ব্যবস্থা করতে হবে৷ অধিকাংশ বলছি, এই কারণে যে, অনেক শিক্ষার্থী শারীরিকভাবে খেলাধুলার জন্য বা মাঠে দৌড়-ঝাঁপ করার জন্য ফিট না-ও থাকতে পারে৷ এটা নিশ্চিত করতে হবে প্রতিষ্ঠান প্রধান ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের৷
আপনি তো অনুমোদিত মাদ্রাসার কথা বললেন৷ অধিকাংশ বেসরকারি মাদ্রাসায় খেলাধুলার কোনো ব্যবস্থাই নেই৷ বোর্ডের এক্ষেত্রে কিছু করণীয় আছে কি?
অনুমোদিত মাদ্রাসাগুলোকেই আমাদের পক্ষে মনিটরিং করা সম্ভব৷ যে প্রতিষ্ঠানকে আমরা অনুমোদন দেইনি তার কোনো পরিসংখ্যান আমাদের কাছে নেই৷ সে কী করছে আমরা জানি না৷ ১৫ হাজার মাদ্রাসাকে আমাদের মনিটরিং করতে হয়৷ তার বাইরে গিয়ে ওইগুলো মনিটরিং করতে পারলে হয়ত ভালো হতো৷ কিন্তু সেটা বোধহয় সম্ভব না৷
গতবছর জুনের ছবিঘরটি দেখুন...
বাংলাদেশে কওমি মাদ্রাসা ও শিক্ষা
কওমি মাদ্রাসা বেসরকারি ইসলাম ধর্ম ভিত্তিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান৷ ঢাকার কামরাঙ্গির চরে এমনই এক মাদ্রাসা জামিয়া নূরিয়া ইসলামিয়া৷ সেখানে একটা গোটা দিন কাটিয়ে কওমি শিক্ষা ব্যবস্থার নানা দিক ক্যামেরায় তুলে ধরেছেন মুস্তাফিজ মামুন৷
ছবি: DW/M. Mamun
সরকার কর্তৃক স্বীকৃতি
বাংলাদেশে প্রচলিত দু’ ধরনের মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে কওমি মাদ্রাসা একটি৷ উনিশ শতকে ভারতীয় উপমহাদেশে প্রতিষ্ঠিত দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্রাসার মাধ্যমে বাংলাদেশেও কওমি শিক্ষাব্যবস্থার প্রচলন হয়৷ দীর্ঘকাল ধরে কওমি মাদ্রাসা সরকারের আর্থিক সহায়তা ছাড়াই সাধারণ জনগণের সহায়তায় পরিচালিত হয়ে আসছিল৷ সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক স্বীকৃতি লাভ করেছে ইসলামি এ শিক্ষা ব্যবস্থা৷
ছবি: DW/M. Mamun
১৪ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী
বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস)-এর ২০১৫ সালের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ১৩ হাজার ৯০২টি কওমি মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৪ লাখেরও বেশি৷ তবে বেসরকারি হিসেব মতে, সারা দেশে কওমি মাদ্রাসার সংখ্যা ২০ হাজারের বেশি৷
ছবি: DW/M. Mamun
মাদ্রাসার একটি ক্লাসরুম
কওমি শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিচালিত ঢাকার জামিয়া নূরিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসার প্রাথমিক স্তরের একটি শ্রেণিকক্ষ৷ এ শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রাথমিক স্তরে আরবির পাশাপাশি বাংলা, ইংরেজিসহ সাধারণ শিক্ষাও দেওয়া হয়৷
ছবি: DW/M. Mamun
সহশিক্ষায় বাধা নেই শিশুদের
কওমি শিক্ষা ব্যবস্থায় সহশিক্ষা স্বীকৃত নয়৷ তাই মহিলাদের শিক্ষার জন্য আলাদা কিছু প্রতিষ্ঠান আছে৷ তবে প্রাথমিক স্তরে শিশুদের সহশিক্ষার কোনো বাধা নেই৷
ছবি: DW/M. Mamun
স্বতন্ত্র শিক্ষা বোর্ড দ্বারা পরিচালিত
বাংলাদেশের কওমি মাদ্রাসাগুলোর একাংশ পরিচালিত হয় স্বতন্ত্র একটি শিক্ষা বোর্ডের মাধ্যমে৷ ‘বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া’ (বেফাক) নামের এই শিক্ষা বোর্ড কওমি মাদ্রাসার পরীক্ষাসহ নানা বিষয় নিয়ন্ত্রণ করে থাকে৷
ছবি: DW/M. Mamun
ক্লাস হয় আরবি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী
কওমি মাদ্রাসার শিক্ষা সেশন পরিচালনা হয় আরবি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী৷ সাধারণত বেফাক আওতাধীন মাদ্রাসাগুলোর নতুন সেশন শুরু হয় আরবি ক্যালেন্ডারের শাওয়াল মাসের ১০ তারিখ থেকে৷
ছবি: DW/M. Mamun
পড়া ও শোয়ার জায়গা একটাই
ঢাকার জামিয়া নূরিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসার একটি শ্রেণিকক্ষ৷ এই কক্ষটি শিক্ষার্থীদের থাকার জায়গাও৷ সাধারণত কওমি মাদ্রাসাগুলিতে পাঠদান এবং শিক্ষার্থীদের থাকার জায়গা একই হয়ে থাকে৷
ছবি: DW/M. Mamun
সর্বক্ষণের সঙ্গী একজন শিক্ষক
কওমি মাদ্রাসার প্রতিটি শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি একজন শিক্ষকও থাকেন৷
ছবি: DW/M. Mamun
রুটিনমাফিক জীবন
কওমি মাদ্রাসাগুলো সম্পূর্ণ আবাসিক ব্যবস্থায় পরিচালিত৷ তাই শিক্ষার্থীদের সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিভিন্ন রুটিনের মধ্য দিয়ে সময় অতিবাহিত করতে হয়৷
ছবি: DW/M. Mamun
উচ্চশিক্ষার সুযোগ
কওমি মাদ্রাসার শিক্ষা ব্যবস্থার একটি অংশ হিফজুল কোরান (বানানভেদে কোরআন)৷ এ বিষয়ের শিক্ষার্থীরা শুধুমাত্র পবিত্র কোরান শরীফ মুখস্থ করে থাকেন৷ তবে হিফজুল কোরান শেষ হলে কওমি মাদ্রাসাগুলোতে অন্য বিষয়ে উচ্চশিক্ষারো সুযোগ আছে৷
ছবি: DW/M. Mamun
সর্ব্বোচ্চ শ্রেণি দাওরায়ে হাদিস
জামিয়া নূরিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিসের একটি শ্রেণিকক্ষ৷ এটি কওমি শিক্ষা ব্যবস্থার সর্বোচ্চ শ্রেণি৷ সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকার এই শ্রেণিকেই মাস্টার্স-এর সমমান বলে ঘোষণা করেছে৷
ছবি: DW/M. Mamun
পড়াশোনার মূল মাধ্যম আরবি
কওমি মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিস শ্রেণিতে শিক্ষার্থীদের হাদিস সম্পর্কিত বিষয়ে বিস্তারিত পড়ানো হয়৷ এ বিষয়ে পড়ানোর মূল মাধ্যম আরবি ভাষা৷ হাদিসের যথাযথ ব্যাখ্যা আরবি ভাষাতেই সম্ভব, এমনটাই মনে করা হয়ে থাকে৷
ছবি: DW/M. Mamun
আছে উর্দু এবং ফারসি ভাষাও
বাংলাদেশের কাওমি মাদ্রাসাগুলোয় প্রাথমিক স্তরে আরবির সঙ্গে বাংলা, ইংরেজি ইত্যাদি পড়ানো হলেও উচ্চস্তরে আরবি ছাড়াও পড়ানো হয় উর্দু এবং ফারসি ভাষা৷
ছবি: DW/M. Mamun
গরিব ছাত্রদের জন্য ফ্রি খাবার
কওমি মাদ্রাসাগুলোয় গরিব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে খাবারের ব্যবস্থা রয়েছে৷ তবে সামর্থবানদের থাকা ও খাওয়ার জন্য নির্ধারিত মূল্য পরিশোধ করতে হয়৷
ছবি: DW/M. Mamun
মেঝেতেই খাওয়া-দাওয়া, পড়াশোনা
শিক্ষা কার্যক্রম, খাওয়া-দাওয়া ইত্যাদি ক্ষেত্রে টেবিল-চেয়ারের ব্যবহার নেই কওমি মাদ্রাসাগুলোয়৷ ইসলামি সুন্নত অনুসরণে পাঠদান কার্যক্রম, খাওয়া-দাওয়া ইত্যাদি সম্পন্ন হয় মেঝেতেই৷