সর্বোচ্চ আদালত জানিয়েছে, আগামী ১৬ জুলাই এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে। ততদিন পর্যন্ত এই স্থগিতাদেশ বহাল থাকবে।
তাছাড়া অযোগ্যদের এখনই ১২ শতাংশ হারে সুদ দিয়ে তাদের বেতনের টাকা ফেরত দিতে হবে না। স্থগিতাদেশ থাকছে সেখানেও।
শুধুমাত্র প্যানেলের বাইরে থেকে যাদের চাকরি হয়েছিল, শূন্য ওএমআর শিট দিয়ে যারা চাকরি পেয়েছিলেন, তাদের বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্তের ক্ষেত্রে কোনো স্থগিতাদেশ জারি করা হয়নি। অতিরিক্ত শূন্যপদ যারা তৈরি করেছিলেন, তাদের বিরুদ্ধেও তদন্ত চলবে, কিন্তু কোনো কড়া পদক্ষেপ নেয়া যাবে না।
সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের পর্যবেক্ষণ হলো, যদি যোগ্য ও অযোগ্যদের আলাদা করা যায়, তাহলে গোটা প্যানেল বাতিলের দরকার হয় না। কীভাবে যোগ্য ও অযোগ্যদের আলাদা করা যাবে, তা ঠিক করতে হবে।
আংশিক জয়, চাকরি পেলে জয় সম্পূর্ণ হবে, জানালেন বিক্ষোভকারীরা
নিয়োগ-দুর্নীতির বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে কলকাতার রাস্তায় বিক্ষোভ দেখানো মানুষদের কাছে, এই জয় আংশিক।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
নৈতিক জয়ের দাবি
বিক্ষোভকারী সীমা পান্ডে জানিয়েছেন, ''আজকের রায় আমাদের নৈতিক জয় বলেই মনে হচ্ছে। আমাদের মতো চাকরিপ্রার্থীরাও আশার আলো দেখলো, আমাদের মনে হচ্ছে, বিচার বিভাগ আমাদের ঠিক পথে নিয়ে যাবে । সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে ২০১৪ সালে যে খালি পদ ছিল এবং ২০২৪ সালে একই খালি পদ দেখানো হচ্ছে। আমাদের প্রশ্ন, নতুন স্কুলে শিক্ষকদের পদগুলোর কী হলো?''
ছবি: Satyajit Shaw/DW
সাময়িক স্বস্তি
চাকরিপ্রার্থী ও বিক্ষোভকারী জয়িতা রায় বোসের মনে হচ্ছে, হাইকোর্টের রায় তাদের সাময়িক স্বস্তি দিলো। জয়িতা বলেছেন, '' আমাদের দীর্ঘ আট বছরের কষ্ট এবং যুদ্ধের পর এই রায়কে সাময়িক স্বস্তি বলা যেতে পারে। এখনো পুরোপুরি স্বস্তি আমরা পাচ্ছি না। যোগ্যরা যতদিন চাকরি না পাচ্ছেন ততদিন পুরো স্বস্তি পাবো না।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
ক্যান্সার আক্রান্ত সোমা যা বলেছেন
ক্যান্সার আক্রান্ত সোমা দাসের চাকরি থাকবে। কলকাতা হাইকোর্ট তাদের রায়ে জানিয়েছে, মানবিক কারণে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এরপর আনন্দবাজারকে সোমা জানিয়েছেন, ''জিতেও হারলাম, নাকি হেরেও জিতলাম তা বুঝতে পারছি না।'' সোমা বলেছেন, ''চাকরি হয়তো করব। কিন্তু আমার মতো অনেকের মনে সারা জীবন এটাই থেকে যাবে, ক্যান্সারের জন্যে চাকরিটা থেকে গেল। আমার থেকে অভাগা কেউ নেই। আমার যোগ্যতা যেন দুর্নীতির তলায় হারিয়ে গেল।'
ছবি: Subrata Goswami/DW
সত্যের জয় হয়েছে, বলছেন রাসমণি
রাসমণি পাত্র দীর্ঘদিন ধরে গান্ধী মূর্তির নিচে বসে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। রায়ের পর তার মনে হয়েছে, ''সত্যের জয় হয়েছে। আমাদের আন্দোলনও কিছুটা সফল হয়েছে। তবে পুরোপুরি সফল এখনো হইনি। যখন সব যোগ্য় প্রার্থী চাকরি পাবে, চাকরির নিয়োগপত্র নিয়ে আমরা গান্ধী মূর্তির বিক্ষোভ শেষ করব, সেদিন সত্যিকারের জয় হবে।''
ছবি: Satyajit Shaw/DW
এক হাজার ১৩৫ দিনের লড়াই
অভিষেক সেন জানিয়েছেন, তারা এক হাজার ১৩৫ দিন ধরে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। রোদ-জল-ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে প্রতিবাদ জারি রেখেছেন। অভিষোক জানিয়েছেন, ''যারা দুর্নীতি করে চাকরি পেয়েছে তাদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হলো, সেদিক থেকে দেখতে গেলে দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদের জয় হলো। কিন্তু আমাদের নিয়োগ নিয়ে নির্দেশ এলে বলতে পারতাম, পুরো জয় হয়েছে।''
ছবি: Satyajit Shaw/DW
বিক্ষোভ চলছে
সোমবারও বিক্ষোভে বসেছিলেন শিক্ষক পদপ্রার্থীরা। তাদের হাতে ছিল পোস্টার। তাতে দাবি জানানো হয়েছে, যোগ্য প্রার্থীদের চাকরি দিতে হবে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
বিকাশরঞ্জন যা বলছেন
আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেছেন, ''এটা ঐতিহাসিক রায়। সমানাধিকার রক্ষা পেল। এই রায় দুর্নীতিবাজদের মুখোশ খুলে দিয়েছে। বহু মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাদের বোঝা উচিত, দুর্নীতিগ্রস্ত দলকে ক্ষমতায় আনার ফল কী হতে পারে।''
ছবি: Satyajit Shaw/DW
আইনজীবীর বক্তব্য
আইনজীবী সহস্রাংশু ভট্টাচার্য বলেছেন, ''তৃণমূল সরকার আসার পর চাকরি নিয়ে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে। হাইকোর্টের রায়ে তা প্রমাণ হয়ে গেল। ২৬ হাজার শিক্ষকের চাকরি বাতিল করা হলো।''
ছবি: Satyajit Shaw/DW
সর্বোচ্চ আদালতে যাবেন মমতা
চাকরিহারাদের পাশে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ''এই রায় বেআইনি। আমরা সর্বোচ্চ আদালতে যাব। আশা রাখুন।''
ছবি: Prabhakar Mani Tewari/DW
9 ছবি1 | 9
এর আগে এসএসসির পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ আদালতে দাবি করা হয়, ১৯ হাজার চাকরি যোগ্যরাই পেয়েছে।
আইনজীবী বিকাশ ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্ট আপাতত স্থগিতাদেশ দিয়েছে। সকলের চাকরি বহাল থাকছে। তবে ওদের একটা মুচলেকা দিতে হবে। সিবিআই তদন্ত চালিয়ে যাবে।''
এই মুচলেকা হলো, অযোগ্য প্রমাণ হলে বেতন ফেরত দিতে হবে।
তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার বা তৃণমূল কংগ্রেস বার বার মানবিকতার কথা বলেছিল, চাকরি না খাওয়ার কথা বলেছিল, আপাতত সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তার প্রতিফলন দেখা গেলো।''