নর্থ রাইন ওয়েস্টফালিয়া রাজ্য সরকার স্কুলে ১৪ বছরের কম বয়সি মেয়েদের জন্য হিজাব নিষিদ্ধ করার কথা ভাবছে৷ তাদের এই পরিকল্পনাকে সমর্থন জানিয়েছে শিক্ষকদের সংগঠন৷ তবে মুসলিমদের সংগঠন এ উদ্যোগের সমালোচনা করেছে৷
বিজ্ঞাপন
সম্প্রতি জার্মানির সবচেয়ে ঘণবসতিপূর্ণ রাজ্য নর্থ রাইন ওয়েস্টফালিয়ার কর্তৃপক্ষ রাজ্যের সব স্কুলে ১৪ বছরের কম বয়সি মেয়েদের জন্য স্কুলে হিজাব নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব করেছে৷ জার্মানির শিক্ষকদের সংস্থা এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে৷ সংস্থার সভাপতি হাইনৎস-পেটার মাইডিংগার বিল্ড পত্রিকাকে বলেছেন, ‘‘হিজাব নিষিদ্ধ করার বিষয়টি সাধারণভাবে অন্তত সমাজে ধর্মের ভিত্তিতে বৈষম্য এবং ধর্মীয় কারণে বিদ্রুপ ইত্যাদি কমাতে সহায়তা করবে৷'' তবে ১৪ বছরের বেশি বয়সিদের জন্য যে এরপরও পরিস্থিতি একই থাকবে সেকথা স্বীকার করেছেন তিনি৷
জার্মান ফিলোসফিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান সুজানে লিন-ক্লিটৎসিংও স্কুলে হিজাব নিষিদ্ধ করার পক্ষে৷ বিল্ডকে তিনি বলেছেন, গণতন্ত্রে লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্যের স্থান নেই, অথচ ‘‘হিজাবকে তারই প্রতীক হিসেবে দেখা যেতে পারে এবং এ কারণে শ্রেণিকক্ষে এর স্থান হতে পারে না৷''
হিজাববিরোধী প্রচারণা #মেনইনহিজাব
১৯৭৯ সালে ইসলামিক বিপ্লবের পর থেকে ইরানে জনসমক্ষে নারীদের হিজাব পরা বাধ্যতামূলক হয়েছে৷ সম্প্রতি ইরানের পুরুষরা নারীদের হিজাববিরোধী আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে অভিনব প্রচারণা শুরু করেছেন৷ সেই প্রচারণার কিছু অংশ থাকছে ছবিঘরে৷
ছবি: Twitter/Lola Oltra
নিঃশব্দ প্রতিবাদ
ইরানের বেশিরভাগ পুরুষ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে নিজেদের হিজাব পরা ছবি শেয়ার করেছেন, যা এই মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়া জগতের সর্বত্র৷ ‘মাই স্টিলথি ফ্রিডম’ নামে এই প্রচারণার অংশ হিসেবে তারা এটা করছেন৷
ছবি: facebook/my stealthy freedom
সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল
নারী অধিকারের প্রতি সমর্থন জানিয়ে নিজেরা মাথা ঢেকে নারীদের সঙ্গে ছবি তুলে তা পোস্ট করছেন ফেসবুক-টুইটারে৷ এভাবে ছড়িয়ে দিয়েছেন পুরো দেশে৷ তাঁরা বলছেন, হিজাব নারী স্বাধীনতার লঙ্ঘনের প্রতীক৷
ছবি: facebook/my stealthy freedom
হিজাববিরোধী আন্দোলনের উদ্যোক্তা
এই প্রচারণা শুরু হয় সাংবাদিক ও নারী আন্দোলন কর্মী মসিহ আলিনেজাদের উদ্যোগে৷ তিনি ইরানের পুরুষদের হিজাব পরার এই বাধ্যতামূলক আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার ডাক দেন৷
ছবি: facebook/my stealthy freedom
নিউ ইয়র্ক থেকে আন্দোলন
পুরুষদের আহ্বান জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে বসবাসরত আলিনেজাদ বলেছেন, পুরুষদের নিজেদের হিজাব পরে দেখা উচিত তাদের কেমন লাগে৷
ছবি: facebook/my stealthy freedom
মাথা না ঢাকলে শাস্তি
ইরানে নারীদের মাথা ঢাকার বিষয়টি কঠোরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয়৷ বিশেষ করে সেখানকার নৈতিক পুলিশ বিষয়টির প্রতি লক্ষ্য রাখে৷ হিজাব না পরলে বা মাথায় কাপড় না দিলে জেল-জরিমানা হতে পারে৷
ছবি: facebook/my stealthy freedom
নারী স্বাধীনতার লঙ্ঘন
সম্প্রতি ইরানের নারীরা এই কঠোর নিয়মের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেক লেখালেখি করছেন৷ তাদের দাবি, এটা নারী স্বাধীনতার লঙ্ঘন৷ তাদের স্বাধীনতা যেন ফিরিয়ে দেয়া হয়৷
ছবি: facebook/my stealthy freedom
‘মেন ইন হিজাব’
২০১৪ সালে আলিনেজাদ ফেসবুকে একটি পাতা বানিয়েছিলেন যার নাম ‘মেন ইন হিজাব’৷ সেই থেকে ফেসবুক ও টুইটারে ইরানি পুরুষেরা মাথায় হিজাব পরে ছবি তুলে পোস্ট করতে থাকেন৷
ছবি: facebook/my stealthy freedom
সমালোচনা
পুরুষের হিজাব পরা বা না পরাটা কোনো বিষয় নয়, যদিও এটাকে সমাজ ভালো চোখে দেখে না৷ ইরানেও পুরুষের এ ধরনের কাজের সমালোচনা করেছেন আইন প্রণেতারা৷
ছবি: facebook/my stealthy freedom
মডেলদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা
সম্প্রতি ইরানের সরকার ইন্টারনেটে ইসলামবিরোধী পোস্টের জন্য দেশের কয়েকজন নামি-দামি মডেলের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নিয়েছে৷ এই মডেলরা ইন্টারনেটে এমন কিছু ছবি পোস্ট করেছেন, যেগুলোতে তাদের মাথায় কাপড় ছিল না৷
ছবি: FARS
9 ছবি1 | 9
নর্থ রাইন ওয়েস্টফালিয়া রাজ্যের সব স্কুলে হিজাব নিষিদ্ধের উদ্যোগে মুসলমানদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে৷ উদারপন্থিরা বলছেন, উদ্যোগটি প্রশংসনীয়৷ তবে অন্য অনেকে মনে করছেন, এ উদ্যোগ ব্যক্তি স্বাধীনতা এবং ধর্ম পালনের অধিকারে হস্তক্ষেপের শামিল৷
সেইরান আতেস একজন উদারপন্থি মুসলমান৷ বার্লিনের ইবনে রুশদ-গ্যোয়েটে মসজিদের সহ-প্রতিষ্ঠাতা সেইরান স্কুলে হিজাব নিষিদ্ধ করার মাঝে সমস্যার কিছু দেখছেন না৷ বরং তিনি মনে করেন, এমন উদ্যোগ অনেক আগেই নেয়া উচিত ছিল৷
তবে জার্মানির ইসলামিক কাউন্সিল বিষয়টি নিয়ে সমালোচনামুখর৷ সংগঠনটির চেয়ারম্যান বুরহান কেসিচি মনে করেন, মেয়েদের হিজাব পরতে বাধ্য করে যেমন কিছু মানুষ অন্যায় করে, স্কুলে হিজাব পরা নিষিদ্ধ হলে সেরকম অন্যায়ই করা হবে৷ তাঁর মতে, ‘‘বাধ্যতামূলকভাবে হিজাব পরা এবং হিজাব নিষিদ্ধ করা আসলে একই ধরনের কাজ – দু'টোই মুসলমানদের আঘাত করে৷''
হিজাব পরা ফ্যাশন মডেল
উদ্বাস্তু-সন্তান ও মার্কিন নাগরিক হালিমা এডেন ফ্যাশনের জগতে এক পথিকৃৎ৷ নিউ ইয়র্ক, মিলান ও লন্ডনের ফ্যাশন শো-তে প্রথম যে মডেল হিজাব পরে রানওয়েতে নামেন, তিনি হলেন হালিমা৷
ছবি: Reuters/B. McDermid
মার্কিন জাতীয় পতাকার রঙে হিজাব
ছবিতে লাল-সাদা-নীল রঙের হিজাব পরে যাঁকে দেখা যাচ্ছে, তিনি হলেন ১৯ বছরের তরুণী হালিমা এডেন, যিনি ধর্মপ্রাণ মুসলিম৷ হালিমা শুধু হিজাবই পরেন না, তিনি মুসলিম নারীদের মতো শরীর ঢেকে রাখেন৷ তবুও ফ্যাশনের জগতে তাঁর সাফল্য দেখবার মতো...
ছবি: Reuters/B. McDermid
মার্কিন ‘অ্যালিওর’ থেকে আর্বি ‘ভোগ’-এর প্রচ্ছদে
হালিমা সম্প্রতি মার্কিন মহিলা পত্রিকা ‘অ্যালিওর’-কে বলেছেন যে, তিনি ‘‘মুসলিম মহিলাদের সম্পর্কে ভুল ও বস্তাপচা ধারণা’’ দূর করতে চান৷ ‘অ্যালিওর’ পত্রিকার জুলাই মাসের ইস্যুর প্রচ্ছদে রয়েছেন হালিমা, যেমন তিনি ‘ভোগ’ পত্রিকার আর্বি সংস্করণের আগস্ট মাসের ইস্যুর প্রচ্ছদে ছিলেন৷
ছবি: Reuters/B. McDermid
হিজাব পরে রানওয়েতে
২০১৭ সালের গোড়া থেকে হালিমা আইএমজি মডেলস সংস্থার মডেল – হাদিদ ভগিনীদ্বয় অথবা জিসেল ব্যুন্ডসেন-এর মতো সুপারমডেলরা যে সংস্থার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ৷ ছবিতে হালিমাকে মিলানে ম্যাক্স মারা কোম্পানির হয়ে মডেলিং করতে দেখা যাচ্ছে৷ ব়্যাপার কেনি ওয়েস্ট-এর ফ্যাশন লেবেল ‘ইজি’ অথবা আলবের্তো ফেরেত্তি-র হয়েও তিনি রানওয়েতে নেমেছেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Medina
উদ্বাস্তু থেকে ফ্যাশন মডেল
হালিমার জন্ম কেনিয়ার একটি উদ্বাস্তু শিবিরে৷ ছোটবেলায় মায়ের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটায় আসেন – আজ সেখানেই পড়াশুনা করছেন৷ হালিমা জন্মসূত্রে সোমালি৷ তাঁর পরিবার সোমালিয়ার গৃহযুদ্ধ থেকে কেনিয়ায় পলায়ন করেছিল৷
ছবি: Reuters/B. McDermid
মিস মিনেসোটা হতে গিয়ে...
...২০১৬ সালে বিকিনির বদলে বুর্কিনি পরেন হালিমা৷ মিস মিনেসোটা হলো মিস ইউএসএ সৌন্দর্য প্রতিযোগিতার প্রাথমিক পর্যায়৷ গোড়ার দিকেই বাদ পড়েন হালিমা, কিন্তু প্রতিযোগিতার আয়োজক আইএমজি মডেলস সংস্থা তাঁকে মডেল হিসেবে চুক্তিবদ্ধ করে৷ মনে করা যেতে পারে, ২০১৫ সাল অবধি মিস ইউএসএ প্রতিযোগিতার আয়োজক ছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প৷
ছবি: Imago
দু’পক্ষ থেকেই সমালোচনা
হালিমা যে মডেলিং করছেন, রক্ষণশীল মুসলিমদের সেটা পছন্দ নয়৷ অপরদিকে উদারপন্থি মুসলিমদের কাছে নারীদের পরিধেয়র উপর বাধানিষেধ গ্রহণযোগ্য নয়৷ হালিমা বলেন, সৌন্দর্যই তাঁর সব কথা নয়; এছাড়া হিজাব পরার ফলে তাঁকে ‘‘তুই বড় মোটা হয়ে গেছিস’’, ‘‘তুই বড় রোগা হয়ে গেছিস’’, এ সব কথা শুনতে হয় না৷