যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক তিনি৷ নাম ব্যারি হোয়াইট জুনিয়র৷ প্রতিটি শিক্ষার্থীর ব্যক্তিত্ব অনুযায়ী তিনি তাদের সঙ্গে ভিন্ন ভিন্নভাবে হাত মেলান৷ আর তাঁর এই হাত মেলানোর ভিডিওটি হয়েছে ভাইরাল৷
বিজ্ঞাপন
নর্থ ক্যারোলাইনার অ্যাশলে পার্ক এলিমেন্টারি স্কুলের শিক্ষক ব্যারি হোয়াইট জুনিয়র৷ এই বছরের ফেব্রুয়ারিতে তার স্কুলের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়ে যায়৷ আর সেটা হলো, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাঁর হাত মেলানোর ভিডিও৷ শিক্ষকের এই যে ‘এনার্জি' সেটা শিক্ষার্থীদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ে৷ আর তাই তো তিনি ‘টিচার কুল' হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন৷ তাঁর ‘হাই ফাইভ' বা হাত মেলানোর মধ্যে নাচের ভঙ্গিমা ও বিভিন্ন স্টেপস থাকে৷ ভিডিওতেই আপনারা তার এক ঝলক দেখতে পাবেন৷ ঠিক ক্লাস শুরুর আগে, তিনি ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে হাত মেলান, এতে শিক্ষার্থীরা উজ্জীবিত হয়ে ক্লাসে যায়, সবার মুখে থাকে হাসি৷
তবে ২৩শে মার্চ তাঁর শিক্ষার্থীদের জন্য ছিল অন্যরকম একটা দিন৷ সেদিন তাদের জন্য ছিল বিশেষ চমক৷ বাস্কেটবল দল হ্যারলেম গ্লোবটটার্স-এর বিখ্যাত তারকা খেলোয়াড়কে নিয়ে সেদিন সকালে স্কুলে হাজির হয়েছিলেন ব্যারি৷ আর তিনি কীভাবে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে হাত মেলালেন দেখুন ভিডিওতে৷ হোয়াইট জুনিয়র বিখ্যাত বাস্কেটবল খেলোয়াড় লেব্রন জেমসের হ্যান্ডশেক দেখে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন৷ ২৩শে মার্চ মোবাইল ভিডিওটি প্রকাশ হওয়ার পর তা ভাইরাল হয়ে যায়৷
এটা পড়ার পর আপনি আর ‘হ্যান্ডশেক’ করবেন না
হ্যান্ডশেক বা করমর্দনকে আপনি কাউকে অভ্যর্থনা জানানোর বন্ধুত্বপূর্ণ কিংবা পেশাদার একটা উপায় মনে করেন, তাই না? আরেকবার ভাবুন৷ পশ্চিমা সংস্কৃতিতে রোগজীবাণু ছড়ানোর অন্যতম উপায় হচ্ছে হ্যান্ডশেক৷
ছবি: Fotolia/Andres Rodriguez
প্রাচীন প্রথা
দু’হাজারের বছরের বেশি সময় ধরে হ্যান্ডশেক চালু রয়েছে৷ প্রাচীন গ্রিক এই বোতলটি তার এক প্রমাণ৷ তবে গ্রিকরা তখন হ্যান্ডশেকের সঙ্গে রোগের সম্পর্কের বিষয়টি ধরতে পারেনি৷ তারা মনে করতো রোগবালাই ‘হিউমারের’ সঙ্গে সম্পর্কিত এবং ঈশ্বর প্রদত্ত শাস্তি৷
ছবি: picture alliance/Prisma Archiv
শান্তির ইঙ্গিত
ধারণা করা হয় হ্যান্ডশেকের শুরুটা হয়েছিল দু’জন মানুষের মধ্যে ইতিবাচক সম্পর্ক স্থাপনের উপায় হিসেবে৷ প্রাচীনকালে ডান হাত হ্যান্ডশেকের ভঙ্গিতে এগিয়ে দিয়ে বোঝানো যেত মানুষটি কোনো অস্ত্র প্রদর্শন করছে না৷ তাছাড়া হ্যান্ডশেক মানুষের মস্তিষ্কে ‘অক্সিটোকিন’ হরমোন নিঃসরণ করে যা দু’জন মানুষের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে গড়তে সহায়ক৷ তবে গবেষকরা বলছেন, এভাবে জীবাণুও ছড়ায়৷
ছবি: Fotolia/Sergiy Serdyuk
ভিন্ন ভিন্ন অর্থ
সংস্কৃতিভেদে হ্যান্ডশেকের অর্থও ভিন্ন হয়৷ পশ্চিমা সমাজে দৃঢ় করমর্দনের মাধ্যমে ব্যক্তির ইতিবাচক এবং সুদৃঢ় মনোভাব ফুটিয়ে তোলা হয়৷ তবে পূর্বের সংস্কৃতিতে নরম করমর্দনের প্রচলন বেশি৷ সেখানে দৃঢ় করমর্দনকে আধিপত্য স্থাপনের চেষ্টা হিসেবে বিবেচনা করা হয়৷
ছবি: imago/imagebroker
নোংরা অভ্যাস
হ্যান্ডশেকের মাধ্যমে সর্দি বা জ্বরের ভাইরাস, পাঁচড়ার জীবাণু, এবং স্ট্যাফিলোকোকাসের মতো ব্যাকটেরিয়া একজনের দেহ থেকে অন্যের দেহে পৌঁছায়৷ আপনি নিজেই ভাবুন, সর্দি হলে কী করেন? হাত দিয়ে নাক পরিষ্কার করেন, তাই না? এভাবেই নাক দিয়ে হাতে যায় ভাইরাস, সেখান থেকে হ্যান্ডশেকের মাধ্যমে অন্যের দেহে৷ এরপরও কি হ্যান্ডশেক করতে মন চাইছে আপনার?
ছবি: picture alliance/dpa/Centers for Disease Control and Prevention/MCT /Landov
পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকার উপায়
হ্যান্ডশেকসহ বিভিন্ন উপায়ে আসা রোগজীবাণু থেকে বাঁচার অন্যতম উপায় হচ্ছে নিয়মিত গরম পানি এবং সাবান ব্যবহার করে হাত ধোয়া৷ তবে অনেক মানুষই এব্যাপারে সচেতন নয়৷ এক জরিপ বলছে, গণশৌচাগার ব্যবহারের পর মাত্র দুই-তৃতীয়াংশ ব্যক্তি পানি দিয়ে হাত পরিষ্কার করেন৷
ছবি: BilderBox
হ্যান্ডশেক ফোবিয়া
বিল গেটস এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো বিশিষ্ট ব্যক্তিরা করমর্দন করেন না৷ সম্ভবত রোগজীবাণু থেকে দূরে থাকতে এই চেষ্টা তাঁদের৷ তবে একান্ত যদি হ্যান্ডশেক থেকে রেহাই পাওয়ার উপায় না থাকে, তাহলে সঙ্গে রাখতে পারেন ‘হ্যান্ড-সেনিটাইজার৷’ তাহলে প্রতিবার করমর্দনের পর এটি ব্যবহার করে হাত জীবাণুমুক্ত করতে পারবেন৷
ছবি: Fotolia/koszivu
হ্যান্ডশেকের বিকল্প
সাম্প্রতিক এক গবেষণায় স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে সম্পৃক্ত স্থানগুলোতে হ্যান্ডশেক নিষিদ্ধের প্রস্তাব করা হয়েছে৷ বিশেষ করে হাসপাতালগুলো হতে পারে করমর্দন মুক্ত স্থান৷ আর হ্যান্ডশেকের সঙ্গে রোগ-বালাইয়ের সম্পর্ক নিয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতাও ক্রমশ বাড়ছে৷ ফলে ‘অ্যান্টি-হ্যান্ডশেক’ মুভমেন্টের প্রতি সমর্থন বাড়ছে৷ কিন্তু হ্যান্ডশেকের বিকল্প কি হতে পারে?
ছবি: Fotolia/Andres Rodriguez
মুঠো সম্ভাষণ
গবেষকরা বলছেন, করমর্দনের বদলে হাত মুঠো করে উপরের ছবির মতো করে সম্ভাষণ বা অভিবাদন জানালে নাকি রোগজীবাণু ছড়ানোর আশঙ্কা ৯০ শতাংশ কমে যায়৷ প্রশ্ন হচ্ছে, এই পন্থা কি আপনার পছন্দ?