এক সময় শিক্ষকদের সবাই খুব সম্মান করতো৷ কিন্তু সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনায় উল্টো চিত্র দেখা গেল৷ কেন এই পরিবর্তন? ডয়চে ভেলেকে দেয়া সাক্ষাৎকারে এ বিষয়ে খোলামেলা অনেক কথা বলেছেন শিক্ষক নেতা অধ্যক্ষ মো. শাহজাহান আলম সাজু৷
বিজ্ঞাপন
স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ মো. শাহজাহান আলম সাজুর মতে, ম্যানেজিং কমিটির অবৈধ হস্তক্ষেপই গুণগত শিক্ষার বড় অন্তরায় হিসেবে কাজ করছে, কারণ, রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের নিয়ে গঠিত কমিটির কথা না শুনলে নানাভাবে নাজেহাল হতে হয় শিক্ষকদের৷ ফলে ক্লাসে পাঠদানের চেয়ে রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের আস্থাভাজন হওয়ার দিকেই শিক্ষকদের মনোযোগ বেশি৷ পাশাপাশি সুযোগ-সুবিধার অভাবও একটা বড় কারণ৷ একজন শিক্ষক যে বেতন পান, তা দিয়ে সংসার চালানো কঠিন৷ ফলে বেঁচে থাকার তাগিদেই শিক্ষকদের অন্য কাজেও মনযোগ দিতে হয় বলে বলে মনে করেন অধ্যক্ষ শাহজাহান আলম সাজু না৷
ডয়চে ভেলে:আপনি একজন শিক্ষক নেতা, আগে শিক্ষকদের মানুষ একটু অন্য চোখে দেখত, অন্যভাবে সম্মান করত৷ সাম্প্রতিক সময়ে আমরা দেখেছি, শিক্ষকদের চরম সম্মানহানির ঘটনাও ঘটছে৷ আপনি কি মনে করেন, শিক্ষকদের প্রতি মানুষের সম্মান কমছে?
শাহজাহান সাজু
অধ্যক্ষ মো. শাহজাহান আলম সাজু: এই ঘটনাগুলো আসলে আমাদের নৈতিক অবক্ষয়ের প্রতিফলন৷ একজন শিক্ষক মানুষ গড়ার কারিগর, উনি শিক্ষাদান করেন, এটাই তাঁর পেশা৷ তবে সাম্প্রতিককালে কিছু ঘটনা ঘটেছে, যেগুলো আসলে আমাদের সমাজের প্রতিটি স্তরে যে নৈতিক অবক্ষয় বিরাজমান, তারই প্রতিফলন৷
কেন শিক্ষকদের সম্মানের প্রবণতা কমে যাচ্ছে?
আমাদের নৈতিক শিক্ষার অভাব, আমাদের যে সামাজিক ‘অর্গান'গুলো আছে, তার প্রতিটিতে আমরা লক্ষ্য করছি যে, সামাজিক অবক্ষয়টা অতিমাত্রায় ছড়িয়ে পড়ছে৷ সামাজিক অবক্ষয় থেকেই অসম্মানবোধটার জন্ম৷ আমি এমনটাই মনে করি৷
শিক্ষকদের প্রতি মানুষের সম্মানবোধ কমার পেছনে শিক্ষকদের কোনো দায় আছে?
আমাদেরও কিছু দায় আছে৷ এটা যদি আমি অস্বীকার করি, তাহলে সঠিক হবে না৷ শিক্ষক হিসেবে আমাদের যে গুণগত মান বজায় রাখা উচিত, সেখানেও আমাদের ঘাটতি আছে৷ তার অনেকগুলো কারণও আছে৷ আজ আর্থিক দৈন্যতা, যথাযথ বেতন না পাওয়া, শিক্ষকদের পড়ালেখার বাইরে অন্য কাজে অংশ নেয়া ইত্যাদি বড় কারণ৷ এগুলো তো ইচ্ছাকৃত নয়৷ আসলে অনেক ক্ষেত্রে বেঁচে থাকার জন্যই একজন শিক্ষককে শিক্ষকতার পাশাপাশি অন্য কিছু করতে হয়৷ এ সব করতে গিয়ে একজন শিক্ষক যে সামাজিকভাবে সম্মান পেয়ে থাকেন, সেই জায়গাটা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে৷ এটাও একটা কারণ হতে পারে৷
শিক্ষকরা যে বেতন পান, সেটা কতটা সম্মানজনক?
আমরা যে বেতনটা পাচ্ছি, সেটাকে সম্মানজনক বলা যাচ্ছে না৷ তবে নতুন বেতন স্কেলে যেটা হয়েছে, তাতে কিছুটা বেড়েছে, এটা ঠিক৷ বাংলাদেশে শিক্ষকদের ৯৭ ভাগই বেসরকারি শিক্ষক৷ কিন্তু বেসরকারি শিক্ষক যাঁরা আছেন, তাঁদের ৭ লাখের মধ্যে ৫ লাখেরই মূল বেতন ঠিক আছে৷ কিন্তু আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধায় অনেক তফাত্আছে৷ মাত্র প্রায় ৩ শতাংশ শিক্ষক সরকারি শিক্ষার সঙ্গে সম্পৃক্ত৷ তাঁরা যে সুযোগ-সুবিধা পান আর ৯৭ ভাগ বেসরকারি শিক্ষক যে সুযোগ-সুবিধা পান, তার মধ্যে আকাশ পাতাল ব্যবধান৷ সুতারাং এই বেতন বৈষম্যটার দূরীকরণ দরকার৷ শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য সরকার ঘোষিত রূপকল্প ২০২১ বা ২০৪১ যেটাই ধরেন না কেন, এর বাস্তবায়নের মূল শক্তি কিন্তু শিক্ষকরাই৷ সুতারাং এই বিষয়টা সরকারের খেয়াল রাখা উচিত৷
শিক্ষার্থীদের চোখে শিক্ষকদের মর্যাদা
শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের কেমন চোখে দেখেন? ঢাকার কয়েকজন শিক্ষার্থীর কাছে সেটিই জানতে চেয়েছিলেন আলোকচিত্রী মুস্তাফিজ মামুন৷
ছবি: DW/M. Mamun
অনন্ত সাদ
ঢাকা নটরডেম কলেজের শিক্ষার্থী অনন্ত সাদ একজন শিক্ষকের ছেলে৷ তাঁর মতে, ‘‘মাতা-পিতার পরেই যাঁদের স্থান তাঁরাই হলেন শিক্ষক৷ আর এটা আমরা শিখেছি পরিবার থেকেই৷ শিক্ষকরা আমাদের সঙ্গে যতই রাগারাগি করেন না কেন সেটা আমাদের ভালোর জন্যই করে থাকেন৷ আমার বাবাও একজন শিক্ষক এবং তিনিই আমাকে শিখিয়েছেন কীভাবে শিক্ষকদের সম্মান করতে হয়৷’’
ছবি: DW/M. Mamun
কাজী ফয়সাল আরেফিন
তিনিও ঢাকার নটরডেম কলেজের শিক্ষার্থী৷ তিনি মনে করেন, শিক্ষকদের সম্মান সবার উপরে৷ তাই শুধু ছাত্রদের নয়, সবারই উচিত শিক্ষকদের যথাযথ সম্মান করা৷
ছবি: DW/M. Mamun
মোহাম্মদ নাঈম
ঢাকার নটরডেম কলেজের আরেক শিক্ষার্থী মোহাম্মদ নাঈম৷ তাঁর মতে, ‘‘শিক্ষক হলেন আমাদের সঠিকভাবে গড়ে তোলার কারিগর৷ সেই শিক্ষকদের যদি সম্মান করা না হয় তাহলে আমাদের উন্নতি সম্ভব নয়৷’’
ছবি: DW/M. Mamun
সুজানা জাহিদ
ঢাকার আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থী সুজানা জাহিদ মনে করেন, শিক্ষকরা বাবা-মায়ের মতোই৷ সুজানা জানালেন, বাবা মা-কে যতটা সম্মান করেন, ঠিক ততটাই সম্মান করেন তিনি শিক্ষকদের৷
ছবি: DW/M. Mamun
মুনিয়া
ঢাকার মতিঝিল মডেল স্কুলের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী মুনিয়া শিক্ষকদের পৃথিবীর সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তি হিসেবেই দেখেন৷
ছবি: DW/M. Mamun
সারজিমা হোসেন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী সাহিত্যের শিক্ষার্থী সারজিমা হোসেন তৃমার বাবা-মা দুজনই শিক্ষক৷ তাঁর মতে, ‘‘আমাদের সমাজে বর্তমানে শিক্ষকদের সম্মান অনেক কমে গেছে৷ তবে আমরা সবসময়ই শিক্ষকদের যথাযথ সম্মান দিয়ে থাকি৷ আরেকটা বিষয় হলো, রাজনৈতিকভাবে শিক্ষদের অনেক হেয়, অসম্মান করা হয় যেটা বন্ধ হওয়া উচিত৷’’
ছবি: DW/M. Mamun
মেহনাজ জাহান
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী সাহিত্যের আরেক শিক্ষার্থী মেহনাজ জাহান বলেন, ‘‘শিক্ষকরা আমাদের গুরুজন৷’’ তাঁর মতে, শিক্ষকরা একেকজন পিতা-মাতা৷ সুতরাং তাঁরা যদি কোনো ভুলও করে থাকেন সেজন্য তাঁদের কোনোভাবেই অসম্মান করা যাবে না৷ ‘‘আমাদের সবসময় মনে রাখতে হবে সামান্য কিছু হলেও আমরা তাঁদের কাছে শিখেছি,’’ বলেন তিনি৷
ছবি: DW/M. Mamun
ইফতেখার ইসলাম
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পালি অ্যান্ড বুদ্ধিস্ট স্টাডি বিভাগের শিক্ষার্থী ইফতেখার ইসলাম৷ তিনি বলেন, ‘‘যাঁদের হাত ধরে এতদূর এসেছি, তাঁরাই হলেন আমাদের শিক্ষক৷ তাই তাঁদের সম্মান সবার আগে৷’’
ছবি: DW/M. Mamun
মাহবুবুর রহমান
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী মাহবুবুর রহমান৷ তাঁর মতে, বাবা-মা কোনো ভুল করলে যেমন আমরা তাঁদের বিরুদ্ধে যেতে পারিনা, তেমনি শিক্ষকরাও ভুল করলে তাঁদের অসম্মান করতে পারিনা৷
ছবি: DW/M. Mamun
তাহমিদ ইবনে আলম
তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি সাহিত্যের শিক্ষার্থী৷ তাঁর মতে, শিক্ষকরা হাতে ধরে সবকিছু শিক্ষা দেন, সুতরাং তাঁদের সম্মান সবার আগে৷ কোনো শিক্ষার্থীরই উচিত হবে না শিক্ষকদের অসম্মান করা৷
ছবি: DW/M. Mamun
10 ছবি1 | 10
সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক যোগাযোগের সাইটে একটা বিষয় ব্যপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে, যেখানে দেখা যাচ্ছে, জিপিএ-৫ পাওয়া একজন শিক্ষার্থী ভাষা দিবস, স্বাধীনতা দিবস সম্পর্কেও জানে না৷ এর জন্য শিক্ষকদের দায় কতটা?
আমাদের যে পাঠ্যপুস্তক আছে সেখানে এক সময় মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস আরো বিকৃত ছিল৷ সঠিক গুরুত্ব দিয়ে সেগুলো পড়ানো হতো না৷ এখন যদিও সরকার অনেক গুরুত্ব দিয়ে এগুলো পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করেছে৷ সব মিলিয়ে আসলে আমাদের শিক্ষকদের আরো একটু বেশি দায়িত্বশীল ও সচেতনভাবে পাঠদান করা উচিত৷ আসলে এই সাধারণ বিষয়গুলো শিক্ষার্থীদের জানা উচিত এবং শিক্ষকদেরও দায়িত্বশীল হয়ে এগুলো শেখানো উচিত৷
শিক্ষকরা কতটা দায়িত্বশীলভাবে পাঠদান করতে পারছেন বলে আপনি মনে করেন?
আসলে শিক্ষকদের তো অনেকগুলো সমস্যা৷ আমাদের যে বেতন কাঠামো সেটা তো আগেই বললাম৷ একজন শিক্ষকের যদি চাকরির নিশ্চয়তা থাকে, বেতনটা ভালো থাকে, তাহলে তিনি ভালোভাবে পাঠদান করাতে পারেন৷ এই যে আমাদের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ম্যানেজিং কমিটির দৌরাত্ব, তাদের অবৈধ হস্তক্ষেপ, বেতন বৈষম্য এমনকি শিক্ষকদের একটা বড় অংশ বেতনই পান না৷ এই কারণগুলো এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট৷ একজন শিক্ষকের যদি নিজের নিরাপত্তা না থাকে, মর্যাদা না থাকে তাহলে তিনি শিক্ষাদানের উত্সাহটা পাবেন কিভাবে? এসব কারণেই তাঁরা উত্সাহটা হারিয়ে ফেলছেন৷ শিক্ষার ক্ষেত্রে এগুলো বড় ফ্যাক্টর৷
আপনি বলছিলেন, ম্যানেজিং কমিটির কথা৷ ম্যানেজিং কমিটির রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের দিয়ে গঠিত হওয়ার কারণেই কি শিক্ষকদের দায়িত্ব পালনে বাঁধা সৃষ্টি করা হচ্ছে?
আমাদের ম্যানেজিং কমিটিগুলো রাজনৈতিক প্রভাবাধীন ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ দিয়ে তৈরি৷ ফলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মূল কাজ পঠন-পাঠন বা শিক্ষাদান সেটা কিন্তু ঠিকভাবে করতে প্রতিষ্ঠান প্রধানরা পারেন না, কারণ, তাদের প্রভাবিত করে কমিটি৷ এসব কারণেও পড়ালেখার ক্ষেত্রে বাঁধার সম্মূখীন হতে হয়৷ গুণগত শিক্ষার ক্ষেত্রে ম্যানেজিং কমিটির যে অবৈধ হস্তক্ষেপ এটাও একটা বড় কারণ৷
শিশুদের নানা রকমের ক্লাসরুম
বর্ণমালার সঙ্গে পরিচয়ের মাধ্যমে শুরু হয় শিক্ষাজীবন৷ সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ার জন্য শিশুদের শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই৷ চলুন দেখা যাক, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শ্রেণিকক্ষে শিশুদের কীভাবে লেখাপড়া শেখানো হয়৷
ছবি: picture-alliance/landov
বেশির ভাগ দেশের শ্রেণিকক্ষে যা থাকে...
বিশ্বের প্রায় সব দেশের শ্রেণিকক্ষেই চক আর ব্ল্যাক বোর্ড থাকে৷ শিক্ষক বা শিক্ষিকা সেই ব্ল্যাকবোর্ডে লিখে শিক্ষার্থীদের বোঝান৷ শিক্ষার্থীরা বেঞ্চে বসে বসে শোনে৷ তবে অনেক দেশই এই সাবেকি ব্ল্যাকবোর্ড এবং চক ছেড়ে দিয়েছে৷ আবার এমন দেশও আছে, যেখানে ছাত্র-ছাত্রীদের মাথার ওপরে কোনো ছাদ নেই৷ মাটিতে বসেই লেখাপড়া করতে হয় তাদের৷
ছবি: AP
দক্ষিণ কোরিয়ায় ডিজিটাল বই...
দক্ষিণ কোরিয়ার স্কুলে এসে গেছে কম্পিউটার৷ ইন্টারনেট সংযোগও দেয়া হয়েছে প্রতিটি ক্লাসরুমে৷ অর্থাৎ ভবিষ্যতে শিক্ষার্থীদের হাতে কোনো বই-খাতা থাকবে না৷ বইয়ের পরিবর্তে ‘ই-বুক’ দেয়া হবে তাদের৷ সেই লক্ষ্যেই কাজ করছে সরকার৷ সবাইকে ডিজিটাল শিক্ষাদান পদ্ধতির আওতায় নিতে দরিদ্র পরিবারের ছেলে-মেয়েদের বিনামূল্যে ‘ট্যাবলেট পিসি’ দেয়ার কথাও ভাবা হচ্ছে৷
ছবি: AP
ঘানার শিশুদের অবস্থা
অনেক দেশের স্কুলে আবার কম্পিউটার তো দূরের কথা, ক্লাসরুমই নেই৷ আফ্রিকার দেশ ঘানার এই স্কুলটি দেখুন৷ ভবনই নেই! তাই গাছের ছায়াতেই নেয়া হচ্ছে ক্লাস৷ শিক্ষিকা পড়াচ্ছেন আর ছোটমনিরা বেঞ্চে বসে মন দিয়ে শুনছে তাঁর কথা৷
ছবি: Fotolia/Living Legend
জার্মানির অত্যাধুনিক ক্লাসরুম
জার্মানিতে কিন্তু ছোট ছোট বাচ্চারাও ক্লাসে পেন্সিল ব্যবহার করে না৷ নোট লেখার বইও নয়৷ টাচ প্যাড, স্মার্টবোর্ড, নেটবুক – এই সমস্ত আধুনিক জিনিসপত্র এ বয়সেই এসে গেছে তাদের হাতে৷
ছবি: AP
যুক্তরাষ্ট্রের স্কুল
শিল্পোন্নত দেশগুলোতে শিশুদের শিক্ষা যেন বাড়তি চাপ৷ ছবির এই চার বছর বয়সি শিশুগুলোর মতো সব শিশুকেই বলতে গেলে মায়ের কোল থেকে নেমে ঢুকে পড়তে হয় স্কুলে৷ চাপ যে তখন থেকেই শুরু!
ছবি: AP
কেনিয়ার স্কুল এবং ক্লাসরুম
কেনিয়ায় শিক্ষাজীবনের প্রথম আট বছর শিক্ষার্থীদের কোনো বেতন দিতে হয় না৷ তারপরও লেখাপড়া করা সবার জন্য খুব সহজসাধ্য নয়৷ দরিদ্র পরিবারের বাবা-মায়েরা বই-খাতা, পেন্সিল, পোশাক, জুতো ইত্যাদির খরচ জোগাতে পারেন না বলে অনেক শিশুকেই লেখাপড়া ছেড়ে দিতে হয়৷
ছবি: DW/J.Bruck
ব্রিটেনের স্কুলে ‘ইউনিফর্ম’ বাধ্যতামূলক
ইংল্যান্ডের প্রায় সব স্কুলেই শিক্ষার্থীদের নির্ধারিত পোশাক পরতে হয়৷ সবাই এক রকম পোশাক পরলে শিক্ষার্থীদের চিনতে সুবিধা হয় এবং তাদের পড়াশোনাতেও মন বসে – এমন কিছু যুক্তিতেই শিক্ষার্থীদের নির্দিষ্ট পোশাক পরার নিয়ম মানছে স্কুলগুলো৷ তবে ব্রিটেনে একটা সুবিধা আছে৷ দরিদ্র পরিবারের সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ হিসেবে অনুদান দেয়া হয়৷ ফলে দরিদ্ররা চাইলেই ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া শেখাতে পারেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/dpaweb
পাকিস্তিনে অবহেলিত শিক্ষাখাত
পাকিস্তানে গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষাখাতে বরাদ্দ কমিয়ে সামরিক খাতে ব্যয় বাড়ানো হচ্ছে৷ ফলে শিক্ষার হার আরো কমছে, কমছে স্কুলও৷ ওপরের ছবিতে একটি পার্কে লেখাপড়া করতে দেখা যাচ্ছে শিশুদের৷ পাকিস্তানে এমন দৃশ্য অপরিচিত নয়৷
ছবি: AP
দক্ষিণ সুদানে মেয়েরা বিপদে...
দক্ষিণ সুদানেও প্রায় একই অবস্থা৷ গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত দেশটির শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে রীতিমতো সংগ্রাম করে টিকে থাকতে হচ্ছে৷ সে দেশের মাত্র ১৬ ভাগ নারী এখন কোনো রকমে পড়তে এবং লিখতে পারে৷ যুদ্ধের ধ্বংসলীলা থেকে হাতে গোনা যে কয়েকটি স্কুল রক্ষা পেয়েছে, তার মধ্যে অনেকগুলোতে চেয়ার-টেবিল, বেঞ্চ নেই৷ বই-পত্রও নেই কিছু স্কুলে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
উন্নতিশীল ব্রাজিলেরও করুণ অবস্থা
দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়ন হচ্ছে ব্রাজিলে৷ কিন্তু তাতে দরিদ্রদের ভাগ্যের খুব একটা উন্নতি হচ্ছে না৷ গ্রামাঞ্চলের স্কুলগুলোতে তাই খুব কষ্ট করে লেখাপড়া করতে হয় শিশুদের৷
ছবি: dapd
উন্নতিশীল ব্রাজিলেরও করুণ অবস্থা
দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়ন হচ্ছে ব্রাজিলে৷ কিন্তু তাতে দরিদ্রদের ভাগ্যের খুব একটা উন্নতি হচ্ছে না৷ গ্রামাঞ্চলের স্কুলগুলোতে তাই খুব কষ্ট করে লেখাপড়া করতে হয় শিশুদের৷
ছবি: picture-alliance/dpa
এবং বাংলাদেশ...
২০১৩ সালের ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের সময় অসংখ্য স্কুলের ক্ষতি সাধন করা হয় বাংলাদেশ৷ এ বছর দীর্ঘদিন হরতাল, অবরোধ চলায় স্কুলগুলোও অনেক দিন বন্ধ ছিল৷ এক পর্যায়ে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ক্লাস নিতে শুরু করে কিছু স্কুল৷ হরতাল-অবরোধের কারণে সপ্তাহের ৫-৬ দিন গৃহবন্দী, তারপর ছুটির দিনে স্কুলবন্দী৷ বাংলাদেশের শিশুদের অসহায়ত্ব ভাষায় বর্ণনা করা কঠিন৷
ছবি: picture-alliance/landov
12 ছবি1 | 12
শিক্ষকদের সম্মানের জায়গায় ফিরে যেতে হলে আমাদের কী করা উচিত?
শিক্ষকদের চাকরির নিরাপত্তা, আর্থিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে৷ তাহলে শিক্ষকরা পঠন-পাঠনে মনোনিবেশ করতে পারবেন৷ ম্যানেজিং কমিটিতে রাজনৈতিক প্রভাব বন্ধ করতে হবে৷ যদিও সাম্প্রতিককালে হাইকোর্ট থেকে একটা সিদ্ধান্ত এসেছে, তাতে বলা হয়েছে এমপিরা ইচ্ছে করলেই ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হতে পারবেন না৷ এটা একটা পজিটিভ সাইড৷ তবে শিক্ষকদেরও দায়িত্ব হবে তাদের নৈতিক দায়িত্বের ব্যাপারে আরো বেশি মনোযোগী হওয়া৷ রাজনৈতিক প্রভাবের বাইরে গিয়ে শিক্ষকদের পঠন-পাঠনে আরো বেশি মনোযোগী হওয়া ও গুণগত শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে৷ নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধসহ বাঙালি কৃষ্টি-কালচার দায়িত্বের সঙ্গে শেখাতে হবে৷
শিক্ষক নেতা হিসেবে শিক্ষকদের প্রতি আপনার পরামর্শ কী?
আমার পরামর্শ হলো – সরকার আমাদের যেটুকু বেতন বাড়িয়েছে, দায়িত্বের ব্যাপারেও আমাদের মনোযোগ দিতে হবে৷ আরেকটা কথা মনে রাখতে হবে, আমরা শুধু টাকার জন্য চাকরি করি না, আমরা মানুষ গড়ার কারিগর৷ মানুষ গড়ার কারিগর মনে করেই আমাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে৷ শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের সঙ্গে আমাদেরও দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে৷ একজন শিক্ষক অনুকরণীয়৷ তাঁকে সবাই অনুসরণ করবে৷ সুতরাং আমাদের আচরণও সেরকম অনুসরণীয় হতে হবে৷ শিক্ষকদের প্রতি আমার আহ্বান, ‘‘আমরা শুধু চাকরি করি না, মানুষ গড়ি৷ এই সম্মানটুকু আমাদের রক্ষা করতে হবে৷''
শিশুদের আইকিউ বাড়ানোর সহজ উপায়
আইকিউ, অর্থাৎ বুদ্ধি বেশি শানানো না হলে এখন প্রতিযোগিতার দুনিয়ায় টেকা দায়৷ কিন্তু শিশুদের আইকিউ কীভাবে বাড়ানো যায়? খুব সহজ কিছু উপায় দেখিয়েছেন শিশু বিশেষজ্ঞ ক্যারেন কুইন৷ দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: picture-alliance/beyond/Vladimir Godnik
সব বিষয়ে কথা বলুন
আপনার সন্তানের সঙ্গে সম্ভব হলে সব বিষয়েই কথা বলবেন৷ এতে অল্প অল্প করে জ্ঞান তো বাড়বেই, পাশাপাশি ভাষায় দক্ষতাও বাড়বে৷ শিশু বেশি কথা বললেই ভালো৷ কথা বলায় নিরুৎসাহিত করা তাদের বিকাশের জন্য ক্ষতিকর৷ এক গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব শিশু খুব কম কথা বলে, তাদের তুলনায় বেশি কথা বলতে অভ্যস্ত শিশুদের বুদ্ধি অন্তত ২৮ পয়েন্ট বেশি৷
ছবি: Fotolia/athomass
ভাবনা আর দেখার জগতটা বড় করুন
নানা ধরনের রং, বিভিন্ন আকৃতির বস্তু, নানা রকমের ফল এবং প্রাণী দেখাতে হবে শিশুদের৷ স্কুলে যদি সে ব্যবস্থা থাকে তাহলে তো কথাই নেই৷ তবে নিজেও এমন কিছু বই কিনে দিন, যা পড়ে বা যেসব বইয়ের ছবি দেখে শিশু এ সব সম্পর্কে জানতে পারে৷
ছবি: Fotolia/Eisenhans
গুনতে শেখান
বাচ্চাদের খুব সহজেই গুনতে শেখানো যায়৷ এই যেমন যদি বলেন, ‘‘পাঁচ মিনিটের মধ্যে খাবার তৈরি হয়ে যাবে’’ – তাহলে কিন্তু শিশু ৫ সংখ্যাটার সঙ্গে পরিচিত হলো৷ যদি বলেন, ‘‘তোমার তিনটা চকলেট আছে, আমার আছে দুটো’’ – তাহলে আপনি ওকে ২ আর ৩ শিখতে সহায়তা করলেন৷ চকলেট যদি হাতে নিয়ে দেখান – তাহলে ওরা আরো উৎসাহ নিয়ে সংখ্যাগুলো শেখার সঙ্গে সঙ্গে গুণতেও শিখবে৷
ছবি: Colourbox/Abbyasov Alexey
স্মৃতি পরীক্ষা
কোনো বই পড়া শেষ হলে আপনার সন্তানকে বইয়ের গল্পটা নিজের মতো করে বলতে বলুন৷ এভাবে শিশুর স্মৃতিশক্তি বাড়ানো যায়৷ স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর আরো সহজ উপায়ও আছে৷ টেবিলের ওপর কিছু ক্যান্ডি রেখে সন্তানকে দেখান৷ দেখা হয়ে গেলে ক্যান্ডিগুলো কাগজ বা কাপড় দিয়ে ঢেকে দিন৷ তারপর ওকে বলুন টেবিলের ফাঁকা জায়গায় সমান সংখ্যক চকলেট ক্যান্ডির মতো সাজিয়ে রাখতে৷ এভাবেও শিশুর স্মৃতিশক্তি বাড়ানো যায়৷
ছবি: Fotolia/Tatyana Gladskih
খেলনা
পাজল, লেগো কাঠের তৈরি নানা ধরণের ব্লক – এ সব বাচ্চাদের জন্য স্রেফ খেলনা হলেও, ওদের বুদ্ধাঙ্ক বা আইকিউ বৃদ্ধিতে খুব ভালো ভূমিকা রাখে৷
ছবি: picture alliance/landov
সমস্যার সমাধান
নিজের কাপড় নিজেকেই পরতে দিন৷ খুব বেশি সময় লাগছে? বিরক্ত হবেন না৷ ওকে সময় দিন, ওর মতো করে কম সময়ে কাজটা শেষ করার সুযোগ দিন৷ ধীরে ধীরে ও সমস্যাটার একটা সমাধান ঠিকই বের করবে৷ এভাবে রাতের খাবারে কী কী খাওয়া যায়, ও কোথায় বেড়াতে যেতে চায় – এ ধরণের সিদ্ধান্ত নেয়ার সুযোগও দিন বাচ্চাদের৷ এর ফলে ওদের চিন্তা করা এবং সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা বাড়বে৷
ছবি: picture-alliance/Beyond
সৃষ্টিশীল কাজ
বাসায় ছবি আঁকার কাগজ, রং, তুলি, কাঁচি, আঠা, ব্রাশ – এ সব রাখতে ভুলবেন না৷ এ ধরনের জিনিস নিয়ে খেলতে খেলতেও অনেক শিশু সৃষ্টিশীল কাজে আগ্রহী হয়ে ওঠে৷ পরবর্তী জীবনে এই আগ্রহটাই হয়ত ওকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যাবে৷
ছবি: picture-alliance/beyond/Vladimir Godnik
7 ছবি1 | 7
শিক্ষকদের প্রতিনিধি হিসেবে এই মুহূর্তে সরকারের কাছে আপনার চাওয়া কী?
একটি শোষণহীন, সন্ত্রাসমুক্ত সমাজ৷ আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাওয়ার জন্য উদ্যোগ নিতে হবে৷ সরকারকে কিছু দায়িত্ব নিয়ে শিক্ষকদের সম্মানবৃদ্ধি, শিক্ষাঙ্গনে যে সমস্যা আছে তার সমাধান করতে হবে৷ বেতনসহ অন্যান্য যে সুযোগ-সুবিধা আছে, সেগুলো বাড়ানোর জন্য আমি সরকারের প্রতি অনুরোধ জানাই৷ আমাদের মনে রাখতে হবে, মোট শিক্ষা ব্যবস্থার শতকরা ৯৭ ভাগ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা বা পড়ালেখা করে৷