1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

শিক্ষক থাকলে পড়ুয়া নেই, পড়ুয়া থাকলে শিক্ষক নেই

২২ অক্টোবর ২০২৫

কোথাও শিক্ষকের অভাব। কোথাও পড়ুয়ার সংখ্যা তলানিতে। প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত রাজ্যের স্কুল শিক্ষার এমনই ছবি উঠে এলো কেন্দ্রীয় রিপোর্টে।

Indien Schule Bildung Kinder Schulkinder
ছবি: Payel Samanta/DW

শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে মামলা চলায়বহু পদ দীর্ঘদিন শূন্য হয়ে পড়ে রয়েছে। আবার যেখানে শিক্ষকরা আছেন, সেখানে তারা যথেষ্ট সংখ্যক পড়ুয়া পাচ্ছেন না। এই উভয় সংকটের ফাঁসে প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা।

মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক

কেন্দ্রীয় সরকারের দ্বারা পরিচালিত সমগ্র শিক্ষা প্রকল্পে প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত উন্নত মানের শিক্ষাদানকে লক্ষ্য হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে সব পড়ুয়াকে পর্যাপ্ত শিক্ষা পরিকাঠামোর অধীন নিয়ে এসে বৈষম্য দূরীকরণের দিকে এগিয়ে যাওয়া এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য। 

কিন্তু স্কুলে যদি পর্যাপ্ত শিক্ষক না থাকে, যদি পড়ুয়ার অভাব হয়, তাহলে কি এই লক্ষ্য পূরণ করা সম্ভব? এমনই আশঙ্কা উঠে এলো সমগ্র শিক্ষা প্রকল্পের প্রজেক্ট অ্যাপ্রুভাল বোর্ডের রিপোর্টে। শিক্ষা ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রকল্পের রূপায়ণে সহযোগী হিসেবে এই বোর্ড রয়েছে। এরা প্রকল্পের লক্ষ্য অনুযায়ী কত টাকা বরাদ্দ করা হবে, তা নির্ধারণ করে।

২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে বিভিন্ন রাজ্যের অবস্থান মূল্যায়ন করা হয়েছে এই রিপোর্টে। পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে যে তথ্য তুলে ধরা হয়েছে, তাতে শিক্ষক ও পড়ুয়া উভয়েরই ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্কুলগুলোয় বিভিন্ন বিষয়ে পড়ানোর জন্য উপযুক্ত শিক্ষক অভাব রয়েছে। এই সংখ্যা প্রায় ৭২ হাজার। 

মাধ্যমিক স্তরে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকের ৩৩ হাজার ৩৬৯টি পদ খালি। উচ্চমাধ্যমিক স্তরে ৩৮ হাজার ৮৯৯টি শিক্ষকের পদ শূন্য। এর সঙ্গে যোগ করতে হবে আরো ১৭ হাজারের বেশি শিক্ষক-শিক্ষিকাকে। চলতি বছরের ৩ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টের রায়ে ২০১৬ সালের নিয়োগ প্যানেল বাতিল হয়ে যায়। এই সংখ্যা যোগ করলে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকের শূন্যপদ আরো বেশি হওয়ার কথা।

 

পড়ুয়ার সংখ্যা কম 

শিক্ষকের অভাবের পাশাপাশি চিন্তার কারণ স্কুলে স্কুলে পড়ুয়াদের সংখ্যা হ্রাস। কেন্দ্রীয়  সরকারের শিক্ষা মন্ত্রকের অধীনে দেশের স্কুল শিক্ষা সংক্রান্ত তথ্য জমা পড়ে ইউনিফায়েড ডিস্ট্রিক্ট ইনফরমেশন সিস্টেম ফর এডুকেশন প্লাস নামক ব্যবস্থায়। বিভিন্ন স্কুল তাদের পরিকাঠামোর সুযোগ-সুবিধা, শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রী সংক্রান্ত তথ্য এখানে জমা দেয়। 

এই তথ্যপঞ্জিতে দেখা যাচ্ছে, বছর দুয়েক আগে যেখানে উচ্চমাধ্যমিক স্তরে প্রায় ৬৮ শতাংশ পড়ুয়া ভর্তি হত, সেটা গত বছরে কমে গিয়েছে। বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকের অভাব এই ক্ষেত্রে অনেকটা দায়ী বলে মনে করা হচ্ছে। যারা দশম শ্রেণির পরীক্ষায় পাশ করে বিজ্ঞান বা হিউম্যানিটিজ নিয়ে একাদশে পড়া শুরু করবে, তাদের ক্ষেত্রে ভর্তির হার ৬৪ শতাংশের মতো। এক্ষেত্রে জাতীয় হার ৭১ শতাংশের বেশি।

এই সমস্যার সমাধান করতে পারে শূন্যপদে দ্রুত নিয়োগ। পশ্চিমবঙ্গে এই নিয়োগ করবে স্কুল সার্ভিস কমিশন। রাজ্য সরকারের অধীন স্বশাসিত এই সংস্থা এখন সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ২০১৬ সালে বাতিল হওয়া প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর নিয়োগ প্রক্রিয়া চালাচ্ছে। এই নিয়োগ হলে সার্বিক শূন্যতা কিছুটা কমবে বটে, কিন্তু ৭২ হাজার শিক্ষকের শূন্যপদ একই থেকে যাবে। যেহেতু সমগ্র শিক্ষা প্রকল্পের রিপোর্টে প্যানেল বাতিলের আগের হিসেব তুলে ধরা হয়েছিল। 

প্রাথমিক স্তরে শিক্ষকের শূন্যপদ অপেক্ষাকৃত অনেক কম হলেও পড়ুয়ার সংখ্যাও বেশ কম। প্রজেক্ট অ্যাপ্রুভাল বোর্ডের রিপোর্ট অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গে প্রাথমিক স্কুলের মোট সংখ্যা ৬৬ হাজার ৭৪৪। এর মধ্যে কোনো পড়ুয়া নেই এমন স্কুলের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৭০০। ১৫ জনের কম পড়ুয়া রয়েছে সাড়ে তিন হাজারের বেশি স্কুলে। ৩০ জনের কম পড়ুয়া আছে এমন স্কুলের সংখ্যা সাড়ে ১১ হাজারের বেশি। 

অথচ প্রাথমিকে শিক্ষকের শূন্যপদ মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিকের মতো, একথা বলা যাবে না। মাত্র একজন করে শিক্ষক আছে, এমন স্কুলের সংখ্যা পাঁচ হাজারের কিছু বেশি। অর্থাৎ একাধিক শিক্ষক থাকলেও সেখানে পড়ানোর মতো পর্যাপ্ত সংখ্যক ছাত্রছাত্রী থাকছে না। এই রিপোর্টে বোঝা যাচ্ছে, স্কুলে সবাই পড়তে আসছে না বা মাঝপথে পড়া ছেড়ে দিচ্ছে।

উচ্চপ্রাথমিকের ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গে মোট স্কুলের সংখ্যা ৬ হাজার ৪২৬। কোনো পড়ুয়া নেই এমন স্কুলের সংখ্যা আড়াইশোর কিছু বেশি। ৩০ জনের কম পড়ুয়া রয়েছে প্রায় দেড় হাজার স্কুলে। ৮৯১টি স্কুলে মাত্র একজন শিক্ষক রয়েছেন। এই স্কুলের বাইরে, যেখানে একাধিক শিক্ষক রয়েছেন, সেখানেও পড়ুয়ার সংখ্যা যথেষ্ট নয়।

বঙ্গীয় প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনন্দ হাণ্ডা ডিডাব্লিউকে বলেন, "শিক্ষার অধিকার আইন অনুযায়ী প্রতি ৩০ জন ছাত্রপিছু একজন শিক্ষক থাকবেন। মোট ছাত্র সংখ্যাকে ৩০ দিয়ে ভাগ করলে শিক্ষকের সংখ্যাটা বেরিয়ে আসে। ২০২৩-এর শীতকালীন অধিবেশনে সরকার জানিয়েছিল, প্রাথমিকে এক লক্ষ ৯০ হাজার শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। আমাদের দাবি, প্রাথমিক স্তরে প্রাক প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত প্রতিটি ক্লাসের জন্য একজন করে ছয়জন শিক্ষক ও একজন অশিক্ষক কর্মচারী নিয়োগ করতে হবে।"

পূর্ব মেদিনীপুরের হলদিয়া বিবেকানন্দ বিদ্যাভবনের প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষক সংগঠনের অন্যতম নেতা হরিদাস ঘটক ডিডাব্লিউকে বলেন, "আমার হলদিয়া অঞ্চলে এমন একাধিক উচ্চপ্রাথমিক স্কুল আছে, যেখানে কোনো ছাত্রছাত্রী নেই। শিক্ষকরা স্কুলে আসেন, কিছুটা সময় কাটিয়ে চলে যান। এদের বেতন দিতে হচ্ছে রাজ্য সরকারকে। স্কুল পরিদর্শকের দপ্তরের কাছে এই তথ্য নিশ্চিতভাবে আছে। তার অর্থ রাজ্য সরকারের কাছেও আছে। আমার প্রশ্ন, এই শিক্ষকদের কেন এই স্কুলে ফেলে রাখা হয়েছে? যে স্কুলে শিক্ষক নেই, অথচ পড়ুয়া আছে, সেখানে কেন এদের পাঠানো হচ্ছে না? এইগুলো ভাবার মানুষের অভাব হয়ে গিয়েছে। ঠিকঠাক নজরদারি হচ্ছে না।"

এই অভাবের জন্য উৎস্যশ্রী প্রকল্পকে কিছুটা দায়ী করছেন তিনি। বলেন, "আমি আমার পছন্দ মতো বাড়ির কাছে স্কুলে চলে যাব, এই ব্যবস্থা যদি চলতে থাকে, তাহলে পড়ানোর মানসিকতা থাকবে না। যে শিক্ষকরা স্কুল বদলে নিচ্ছেন, তারা তা করছেন নিজেদের স্বার্থে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসন্তী থেকে যদি সবাই  কলকাতায় চলে আসেন, তাহলে প্রান্তিক এলাকায় কে পড়বেন? এক্ষেত্রে মিউচুয়াল ট্রান্সফার সমাধান হতে পারে।"

আনন্দ হাণ্ডার মতে, "বাম আমলে আশির দশক থেকে পাশ-ফেল প্রথা তুলে দেওয়া, ইংরেজি বাতিলের ফলে বেসরকারি স্কুলের গুরুত্ব বাড়তে থাকে। তখন থেকেই শিক্ষকের শূন্যপদ প্রাথমিক স্কুলে বাড়ছিল। এখন সরকার দেখছে, কোনো রকমে স্কুলগুলি চলে যাচ্ছে। তাই তারা আর নিয়োগের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে না। এর ফলে প্রাথমিক স্কুলে পড়ার আগ্রহ কমে যাচ্ছে। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার উভয়ই এজন্য দায়ী।"

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ