1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

এগোল গরমের ছুটি, পশ্চিমবঙ্গে সংকটে শিক্ষাব্যবস্থা

৫ এপ্রিল ২০২৫

শিক্ষক নিয়োগ বাতিলের পর পঠনপাঠন ঘিরে এমনিতেই সংশয় রয়েছে, তার উপর ছুটি এগিয়ে আসায় সংকট আরো বাড়বে বলে আশঙ্কা।

ভারতের একটি স্কুলে ক্লাসে শিক্ষার্থীরা
সুপ্রিম কোর্ট ২৬ হাজার শিক্ষক-কর্মচারীর নিয়োগ বাতিলের পর স্কুলে গরমের ছুটি এগিয়ে এনেছে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারছবি: Saurabh Das/AP Photo/picture alliance

সুপ্রিম কোর্টের রায়ে প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মচারীর চাকরি বাতিল হয়ে গিয়েছে। এর ফলে অভূতপূর্ব সংকটের মুখে পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষা ব্যবস্থা।

রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে থাকা শয়ে শয়ে স্কুলে নিয়োগ পেয়েছিলেন শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মীরা। ২০১৬ সালের এসএসসি–র সেই প্যানেল দুর্নীতির অভিযোগে বাতিল হয়ে গিয়েছে। এর ফলে বিভিন্ন স্কুলে চাকরিরত শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মীদের প্রতিষ্ঠান ছাড়তে হয়েছে। সেই জায়গায় তৈরি হয়েছে শূন্যতা। এরই মধ্যে এসেছে গরমের ছুটির ঘোষণা। শিক্ষা জগতের সঙ্গে যুক্ত অনেকের মতে, এই শূন্যতার সংকট থেকে উদ্ধার পেতে গরমের ছুটি এগিয়ে আনা হয়েছে।

এপ্রিলের গোড়া থেকেই গরমে হাঁসফাঁস করছে রাজ্য। প্রচণ্ড তাপমাত্রার কারণ সামনে রেখে আগেভাগেই গরমের ছুটি ঘোষণা করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আগামী মাস নয়, চলতি মাস থেকে পড়ছে গরমের ছুটি। ৩০ এপ্রিল থেকে স্কুলে ছুটি শুরু হয়ে যাচ্ছে। নবান্ন থেকে করা সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, গরমে পড়ুয়াদের যাতে কষ্ট না হয়, তার জন্যই এই সিদ্ধান্ত। তবে কত দিন এই ছুটি চলবে, সেটা জানানো হয়নি।

১২ মে থেকে এই মৌসুমে গরমের ছুটি পড়ার কথা ছিল। গত বছরের মতো এ বারও ছুটি এগিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রীর ভাষায়, ‘‘আগে মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে গরমের ছুটি হত। এখন যেহেতু গরম পড়েছে, তাই বাচ্চাদের কষ্ট হয়। এই কারণেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।'' শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, ৩০ এপ্রিল থেকে স্কুলগুলিতে গরমের ছুটি পড়বে, যাতে ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকদের সমস্যা না হয়।

ছুটির মুখে সংকট

অনেক স্কুলে শিক্ষকের সংখ্যা কমে যাওয়ায় এমনিতেই সমস্যা হচ্ছিল। সেই সংখ্যা আরো কমে যাওয়ায় অনেক স্কুলে কোনো কোনো বিষয়ের শিক্ষক নেই। এমন অনেক স্কুলের কথা উঠে আসছে, যেখানে এখন কোনো শিক্ষক বা অশিক্ষক কর্মী নেই। এ সব স্কুলে গ্রীষ্মের অবকাশের আগেই কার্যত ছুটি পড়ে গিয়েছে। অন্যান্য স্কুলের প্রধান শিক্ষকরা জরুরি বৈঠকে বসে সমস্যার মোকাবিলা করার উপায় খুঁজছেন।

ছুটির পরে স্কুল ফের খুললে কীভাবে চলবে, সেটা আমরাও জানি না: চন্দন মাইতি

This browser does not support the audio element.

দক্ষিণ ২৪ পরগনার মথুরাপুরের কৃষ্ণচন্দ্রপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে ৮ জন শিক্ষকের চাকরি চলে গিয়েছে। কীভাবে স্কুল চালাচ্ছেন এই প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক চন্দন মাইতি? ডিডাব্লিউকে তিনি বলেন, "আমরা জরুরি ভিত্তিতে বৈঠক করে ঠিক করেছি, দিনে পাঁচটির বদলে ছ'টি ক্লাস নেয়া হবে। আমরা সকলে ভাগাভাগি করে ক্লাস নেব। কিন্তু এভাবে দীর্ঘকাল চলতে পারে না। গরমের ছুটির পরে স্কুল ফের খুললে কীভাবে চলবে, সেটা আমরাও জানি না।"

এবারও গরমের ছুটি এগোন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে প্রধান শিক্ষক। তার বক্তব্য, "আমাদের গ্রীষ্মপ্রধান দেশ। রাজ্যে সরকার কি জানে না, খুব গরম পড়বে? তাহলে মাত্র ১১ দিনের ছুটির কথা কেন বলা হয়েছিল? ৩ এপ্রিল জানা গেল, ৩০ এপ্রিল থেকে ছেলেমেয়েরা ছুটি পাবে। বছরের শুরুতেই এটা কেন বলা হল না? ২৬ হাজার চাকরি বাতিলের পর ছুটি এগিয়ে আনা হচ্ছে, যাতে শিক্ষকরা আন্দোলনে না নেমে ছুটিতে চলে যান।"

শিক্ষকদের একাংশ উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের আবহাওয়ার পার্থক্য নিয়ে সওয়াল করেছেন। তাদের মতে, উত্তরবঙ্গে এপ্রিল মাসে তেমন গরম পড়ে না, যে স্কুলে ছুটি দিতে হবে। আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়িতে মে মাসের আগে খুব একটা গরম পড়ে না। এর সঙ্গে সরকারি প্রকল্প চালানো নিয়েও প্রশ্ন আছে।

চন্দন মাইতি বলেন, "অনেক জায়গায় স্কুলে শিক্ষক প্রায় থাকবে না। এর ফলে রাজ্য সরকারের যেসব প্রকল্পের কাজ আমাদের করতে হয়, সেগুলো বাধাপ্রাপ্ত হবে। এই সংকট আড়ালে রাখতেই আগাম ছুটির ঘোষণা করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা হোক।"

শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের রাজ্য সম্পাদক, শিক্ষক কিংকর অধিকারী ডিডাব্লিউকে বলেন, "এক মাস আগে কীভাবে জানা গেল, ৩০ এপ্রিল তাপমাত্রা কত থাকবে। এটা তো আবহবিদরা বলতে পারেন। চলতি যে সংকট, তার মোকাবিলা করার জন্যই কি ঘোষণা করা হল? এর ফলে সংকট আরো বাড়বে। প্রাথমিক স্কুল আগেই প্রায় বন্ধ হওয়ার জোগাড়। এবার উচ্চমাধ্যমিক স্তরেও প্রভাব পড়বে। এর ফলে বেসরকারিকরণের দিকে আরো একধাপ এগিয়ে গেল আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা।"

ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট?

পূর্ব মেদিনীপুরের হলদিয়া বিবেকানন্দ বিদ্যাভবন পাঁচ জন শিক্ষকের চাকরি গিয়েছে। এদের মধ্যে তিনজন শিক্ষিকা।  কোনো অশিক্ষক কর্মচারী চাকরি হারাননি। সংখ্যায় কম হলেও বাড়তি ক্লাস নেওয়ার ভাবনা রয়েছে এই স্কুলেও।

এখানকার প্রধান শিক্ষক ড. হরিদাস ঘটক বলেন, "আপাতত সরকার ছুটি দিয়ে ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট করার চেষ্টা করলেও এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান দরকার। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে চাকরিহারা শিক্ষকদের বৈঠক রয়েছে আগামী সোমবার। সবাই সেই বৈঠকের দিকে তাকিয়ে। আমার ধারণা, এই শিক্ষকদের অস্থায়ী ভিত্তিতে স্কুলে পড়ানোর প্রস্তাব দেয়া হতে পারে। এই শিক্ষকরা ৬০-৭০ হাজার টাকা বেতন পেতেন মাসে। সেই টাকা আর রাজ্য সরকারকে খরচ করতে হবে না।"

ড. ঘটক মনে করেন, শুধু অস্থায়ী নিয়োগ দিয়ে শিক্ষকদের ক্ষত দূর করা যাবে না। তাদের যে সামাজিক সম্মান একজন শিক্ষক হিসেবে, সেটা এই দুর্নীতির জেরে নষ্ট হয়ে গিয়েছে।

শিক্ষকদের একাংশের বক্তব্য, সুপ্রিম রায়ের সঙ্গে এর সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই। গত বছর সরকারি স্কুলগুলিতে ৯ থেকে ২০ মে পর্যন্ত ছিল গ্রীষ্মের ছুটি। সেবারও ২১ এপ্রিলই ছুটি পড়ে যায়। ফের স্কুল খোলে ২ জুন। অর্থাৎ প্রায় দেড় মাস ছিল অবকাশ। তাই এ বার ছুটি এপ্রিলে এগিয়ে আনার সঙ্গে এসএসসি রায়ের সম্পর্ক নেই বলে দাবি শিক্ষকদের একাংশের। তাদের বক্তব্য, চলতি সংকট মোকাবিলা করতে যদি ছুটি হাতিয়ার হত, তা হলে ২১ এপ্রিলের আগে থেকেই স্কুল বন্ধ থাকত। তেমন পদক্ষেপ নেয়নি রাজ্য সরকার।

ছুটি নিয়ে বিতর্কের থেকে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে বেশি চিন্তিত শিক্ষাবিদরা। অধ্যাপক, শিক্ষাবিদ মিরাতুন নাহার ডিডাব্লিউকে বলেন, "সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থাকে পুরো মাত্রায় তালাবন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে, যাতে বেসরকারি স্কুলগুলোর রমরমা চলতে থাকে। এতে কেন্দ্রের ভূমিকাও আছে। যাদের পয়সা আছে, তারা সেই স্কুলগুলোতে বিপুল টাকা খরচ করে ছেলেমেয়েদের অর্থ রোজগারের মানবযন্ত্র তৈরি করবেন। এতে পড়ুয়ারা সত্যিকারের শিক্ষিত হিসেবে তৈরি হবে না।"

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ