ফরাসি শিক্ষক হত্যা মামলায় আরো চার ছাত্রের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করল পুলিশ।
বিজ্ঞাপন
ফরাসি শিক্ষক হত্যা মামলায় আরো চার ছাত্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনলো পুলিশ। তাদের তিন জনের বয়স ১৩ থেকে ১৪ বছরের মধ্যে। এর আগে দুই ছাত্রকে অভিযুক্ত বলে ঘোষণা করেছিল ফরাসি পুলিশ। তাদের বয়স ১৪ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে। আপাতত আদালতের নজদরদারিতে রয়েছে তারা।
শার্লি এবদোর কার্টুন ক্লাসে দেখিয়েছিলেন ফরাসি শিক্ষক স্যমুয়েল প্যাটি। বাকস্বাধীনতার অর্থ বোঝানোর জন্য মহানবীর (সা:) কার্টুন নিয়ে আলোচনা করেছিলেন ক্লাসরুমে। তার পরেই তাঁর উপর হামলা চালায় এক জঙ্গি। মাথা কেটে নেওয়া হয় শিক্ষকের। যা নিয়ে ফ্রান্স জুড়ে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি হয়। ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ ইসলামিক চরমপন্থার বিরুদ্ধে একের পর এক ব্যবস্থা নিতে শুরু করেন। যা নিয়ে বিশ্ব জুড়ে বিতর্ক শুরু হয়।
মুসলিম বিশ্বে মাক্রোঁর সমালোচনা এবং জবাব
চরমপন্থিদের হামলায় নিহত শিক্ষক স্যামুয়েল প্যাটিকে মরনোত্তর লিজিয়ন অফ অনার দিয়ে তাকে পূর্ণ সমর্থন জানানোর পর থেকে মুসলিম বিশ্বে তোপের মুখে পড়েছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ৷ দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: Reuters/E. Gaillard
মাক্রোঁ যা বলেছিলেন
গত ২১ অক্টোবর প্যাটিকে মরনোত্তর লিজিয়ন অফ অনারে ভূষিত করে প্রেসিডেন্ট মাক্রোঁ বলেন, ''আমরা কার্টুন ছাড়বো না৷ ইউরোপীয় গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ মূল্যবোধকে রক্ষা করতে গিয়ে প্যাটি জীবন দিয়েছেন । তিনি এই প্রজাতন্ত্রের মুখ।''
ছবি: Francois Mori/Pool/Reuters
এর্দোয়ানের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া
মাক্রোঁর বক্তব্য শুনে তাকে মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দিয়ে এক সভায় তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়্যেপ এর্দোয়ান বলেন,‘‘মাক্রোঁ নামের এই ব্যক্তির ইসলাম ও মুসলমানদের নিয়ে সমস্যা কী? একজন রাষ্ট্রনেতা যদি বিশ্বাসের স্বাধীনতা না বোঝেন এবং তার দেশে বসবাসরত কয়েক মিলিয়ন ভিন্ন বিশ্বাসের অনুসারীদের সঙ্গে এমন আচরণ করেন, তাহলে তাকে আর কী বলা যায়!’’
ছবি: Sercan Kucuksahin/AA/picture-alliance
মাক্রোঁর সমালোচনায় ইমরান খান
টুইটারে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান লিখেছেন, ‘‘একজন নেতার প্রধান গুণ হলো, তিনি সব মানুষকে বিভক্ত না করে ম্যান্ডেলার মতো ঐক্যবদ্ধ করেন৷এটি এমন এক সময় যখন প্রেসিডেন্ট মাঁক্রো নিরাময়ের ব্যবস্থা নিতে পারতেন এবং চরমপন্থাকে আর ছাড় দিতে অস্বীকার করতে পারতেন, অথচ তিনি আরো মেরুকরণ এবং প্রান্তিকীকরণের পথ ধরলেন যা অনিবার্যভাবেই মৌলবাদের দিকে নিয়ে যায়৷’’
মাক্রোঁর জবাব
তার সমালোচনার জবাবে টুইটারে এমানুয়েল মাক্রোঁ লিখেছেন, ‘‘আমরা কখনো হাল ছাড়বো না৷ আমরা শান্তির চেতনায় সব পার্থক্যকে সম্মান করি৷ আমরা ঘৃণা ছড়ানো বক্তব্য গ্রহণ করি না এবং যুক্তিসঙ্গত বক্তব্যকে রক্ষা করি৷ আমরা সব সময় মানুষের মর্যাদাবোধ এবং সার্বজনীন মূল্যবোধের পাশে থাকবো৷’’
মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিশামুদ্দীন হুসেইন এক বিবৃতিতে বলেছেন,
‘‘ইসলাম ধর্মের অবমাননা হয় এমন যে কোনো উত্তেজক বক্তব্য বা কাজের আমরা তীব্র নিন্দা করি৷’’
ছবি: Reuters
‘জনগণকে সন্ত্রাসবাদের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন মাক্রোঁ’
চেচনিয়ার নেতা রমজান কাদিরভ ইন্সটাগ্রামে এমানুয়েল মাক্রোঁর উদ্দেশ্যে লিখেছেন, ‘‘ আপনি জনগণকে সন্ত্রাসবাদের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন৷ আপনি তরুণদের মস্তিষ্কে সন্ত্রাসবাদ ছড়ানোর অবস্থা তৈরি করছেন৷ আপনি খুব সাহস করে নিজেকে আপনার দেশে সন্ত্রাসবাদের নেতা, সন্ত্রাসবাদের প্রেরণাদাতা মনে করতে পারেন৷’’
ছবি: Imago-Images/ITAR-TASS/ Press Office Republic of Chechnya
প্রবাসে অবস্থানরত নাগরিকদের জন্য উদ্বেগ
ফ্রান্সের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে ইন্দোনেশিয়া, তুরস্ক, বাংলাদেশ, ইরাক ও মৌরিতানিয়ায় অবস্থানরত সকল ফরাসি নাগরিককে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে বলেছে৷ সবাইকে সব জনসমাবেশ এবং কার্টুনের বিরুদ্ধে সব প্রতিবাদ সমাবেশ থেকেও দূরে থাকতে বলা হয়েছে বিবৃতিতে৷
ছবি: Reuters/E. Gaillard
7 ছবি1 | 7
ঘটনার পর পুলিশ অভিযুক্ত ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে সাত জন ছাত্রকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তার মধ্যে অনেককেই পরে ছেড়ে দেওয়া হয়। দুই জন ছাত্রকে অভিযুক্ত বলে চার্জ গঠন করা হয়। বৃহস্পতিবার প্যারিসের পুলিশ সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছে, আরো তিন ছাত্রের বিরুদ্ধেও চার্জ গঠন করা হয়েছে। ওই ছাত্ররা শিক্ষককে চিনিয়ে দিয়েছিল। আততায়ীকে শিক্ষকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার ষড়যন্ত্রে যুক্ত ছিল।
চতুর্থ এক অভিযুক্তের বিরুদ্ধেও চার্জ গঠন করা হয়েছে। ১৪-১৫ বছরের সেই নারী আরো এক অভিযুক্তের মেয়ে। মেয়েটির বাবা ইন্টারনেটে প্যাটির বিরুদ্ধে জনমত গঠনের চেষ্টা করছিলেন। অভিযোগ, মেয়েটি ওই দিন ক্লাসে ছিল না। কিন্তু সে ভূয়া তথ্য দিয়ে ইন্টারনেটে জনমত গঠনে সাহায্য করেছে। ওই দিন ক্লাসে কী কী হয়েছে, তার বর্ণনা দিয়েছিল সে। প্যারিসের পুলিশ তার বিরুদ্ধেও চার্জ গঠন করেছে।
শিক্ষক হত্যার ঘটনার পর বিশ্ব জুড়ে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে। ফরাসি প্রেসিডেন্টের বক্তব্য, দেশে বাকস্বাধীনতা রক্ষার জন্য সমস্ত পদক্ষেপ তিনি নেবেন। মুসলিম বিশ্বের একটি বড় অংশের প্রশ্ন, যে কার্টুন ছাপা হয়েছিল শার্লি এবদোতে, তা অপমানজনক। শিক্ষক হত্যার পরে দেশে ইসলামিক চরমপন্থা বন্ধ করতে একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছেন মাক্রোঁ। এখনো নতুন নতুন আইনের কথা বলছেন। তা নিয়েও এর্দোয়ান, ইমরান খানদের সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে তাঁকে। তবে মাক্রোঁ তাঁর অবস্থান থেকে সরবেন না বলেই জানিয়ে দিয়েছেন। তারই মধ্যে নতুন করে চার ছাত্রের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন বিতর্কে নতুন মাত্রা জুগিয়েছে।