1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিক, সবার মুখে হাসি ফুটুক! 

৭ সেপ্টেম্বর ২০২১

দীর্ঘ দেড় বছর পর স্কুল খোলার ঘোষণায় শিক্ষার্থীদের জন্য শুরু হচ্ছে এক নতুন পরীক্ষা৷ এত লম্বা সময় স্কুলে না যাওয়ায় স্বাভাবিক পড়াশোনার পাশাপাশি মেলামেশা করতেও হয়ত কিছুটা ভুলে গেছে ওরা৷

ফাইল ছবিছবি: bdnews24.com

দুই সন্তানের মা ব্যাংকার নুসরাত লায়লা টুম্পা জানালেন, স্কুল খোলার ঘোষণায় তারা সবাই খুশি৷ সপ্তাহে একদিন করে ঢাকার প্লেপ্যান স্কুলে যাবে ক্লাস নাইনের ছাত্র ছেলে আজান আহনাফ খান৷ তবে এই স্কুলেরই তৃতীয় ক্লাসের ছাত্র আরহান বারি গর্বের মা জিনিয়া আজাদ তার ছেলের স্কুলে যাওয়া নিয়ে খানিকটা শঙ্কিত৷ তার মিশুক আর চঞ্চল প্রকৃতির ছেলে কি বন্ধুদের সাথে দেখা হলে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে পারবে? স্কুল ছুটির পর তিন চার ক্লাসের বাচ্চারা হুড়োহড়ি করে একসাথে বের হওয়ার দৃশ্য ভেবে শঙ্কিত গর্বের মা৷ শিশুরা করোনা ভাইরাসের ক্যারিয়ার হিসেবে কাজ করে সেটাও তার উদ্বেগের কারণ বলে জানালেন তিনি৷ আর ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের নুসরাত লায়লার দ্বিতীয় সন্তান স্যার জন উইলসন স্কুলের ক্লাস টুয়ের ছাত্রী মেয়ে জায়রা আয়েশা স্কুলে যাওয়ার জন্য একেবারে তৈরি৷ ওর মা জানালেন, করোনার সচেতনতার বিষয়গুলো নিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ এবং অভিভাবকের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ বাচ্চারা বাসায় থেকে বিরক্ত হয়ে যাচ্ছিল,  স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত অভিভাবক এবং সন্তান সবার জন্য সুখকর হবে বলেই মনে করেন তিনি৷

স্কুলে তো শুধু  শিশুদের লেখাপড়াই শেখানো হয় না, সবার সাথে মিলেমিশে চলা বা সামাজিক হতেও শেখানো হয়৷  যেকোনো শিশুই কিছুদিন স্কুলে যাওয়ার পর তার মা-বাবা শিশুর আচরণে তা খুব ভালোভাবেই লক্ষ্য করে থাকেন৷ অভিভাবক হিসেবে আমরা নিজেরাও তা জানি৷ গ্রীষ্মের ছুটি কিংবা শীতকালীন অল্পদিনের স্কুল ছুটির পরই তা বোঝা যায় আর এবার তো শিক্ষার্থীদের দেড় বছরের করোনাকালীন লম্বা ছুটি!  শুরুতে কিছুটা অসুবিধা  হলেও  শিশুরা খুব তাড়াতাড়ি আবার অভ্যস্ত হয়ে উঠে নতুন পরিস্থিতির সাথে৷

আর তা আবারো খেয়াল করলাম আমার পাশের বাড়ির হাসিখুশি ১০ বছরের মেয়ে অ্যাম্বিকে দেখে৷ কয়েক সপ্তাহ আগেই দেখা হলে মেয়েটিব মাথা নীচু করে এড়িয়ে যেতো৷ আর স্কুলে যাওয়ার দুই সপ্তাহের মধ্যেই মেয়েটি আবার আগের মতো দূর থেকেই হাত তুলে মিষ্টি করে হেসে হ্যালো বলছে৷ বিকেলে মনের আনন্দে আশেপাশে বন্ধুদের সাথে সাইকেল চালাচ্ছে আবার আগের মতো ৷ প্রায় একই বয়সি আরেক প্রতিবেশি  ছেলে পাউলের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা! আমাদের পাড়ায় যেন আবার প্রাণ ফিরে এসেছে! শুধু শিশুরা নয়, জার্মানিতে  স্কুল খুলে যাওয়ায় ওদের মা-বাবার মধ্যেও ইতিবাচক পরিবর্তন লক্ষ্য করছি৷ এবার করোনা আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্ব খুব ভালোভাবেই বুঝিয়ে দিয়েছে৷  আর মানসিক স্বাস্থ্য যে শরীরে বড় প্রভাব ফেলে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না!

ঢাকা আর কোলনের পর এবার একটু তাকানো যাক ঢাকার বাইরের শহর ময়মনসিংহে৷ সেখানেও স্কুল কলেজগুলোতে খোলার প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে৷ চলছে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ৷ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভেতরে হাত ধোয়া আর জীবাণুমুক্ত করার জন্য সব ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হচ্ছে বলে জানালেন আনন্দমোহন কলেজের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর শাহনাজ পারভীন৷ তিনি বললেন, আমাদের কলেজটি বড় বলে শিক্ষার্থীদের ক্লাসরুমে দূরত্ব বজায় রেখে বসা কোনো সমস্যা হবে না৷ ক্লাসের সময়কাল একটু কমিয়ে আনার নির্দেশ এসেছে ঢাকা থেকে ৷ এসব নানা বিষয় নিয়ে আলাপ  আলোচনা করতে তিনি আজ কলেজে গিয়েছেন৷

দীর্ঘদিন কলেজ বন্ধ থাকায় যেসব ছাত্র গ্রামের বাড়িতে চলে গিয়েছিল তারা ধীরে ধীরে আবার ফিরতে শুরু করেছে৷ স্কুলের নতুন ড্রেস বানাতে শহরের দর্জির দোকানগুলোতে  ভিড়, শহরে কেমন যেন এক উৎসবের আমেজ৷ শাহনাজ পারভীনের কন্যা মেহনাজ পারভীন মায়া ময়মনসিংহের আফরোজ খান মডেল স্কুলের এসএসসি  পরীক্ষার্থী৷ স্কুল খুলবে বলে মায়াও খুব খুশী , সে জানালো শ্রেণিকক্ষে ক্লাস করে যে আনন্দ সে পায় অনলাইনে ক্লাস করে সেটা পাওয়া যায়নি৷ জানা গেল, এসএসসি পরীক্ষার প্রিপারেশন ভালোভাবেই নিয়েছে মায়া৷

এদিকে ঢাকার বনশ্রী শাখার আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থীর মা তাহমিনা তানি জানালেন,  ঐ স্কুলের করোনার বিধিনিষেধ সম্পর্কে তিনি অনেকটাই নিশ্চিত৷ তাই তার বড় ছেলে পঞ্চম শেণির ছাত্র রাফায়েত তানভীর তালহাকে ১২ তারিখ থেকেই স্কুলে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷ তার বড় ছেলে করোনা নিয়ে সচেতন থাকায় ওকে নিয়ে তেমন ভাবনা নেই তার৷  তবে বনশ্রী বিদ্যা নিকেতনের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র ছোট ছেলে রাকায়েত তানভীর তাহিরকে  কিছুদিন পর স্কুলে পাঠানোর কথা ভাবছেন তিনি৷  মানে স্কুল খোলার পরে করোনা পরিস্থিতি কেমন দাড়ায় তার ওপর নির্ভর করে তাহিরের স্কুলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত৷ যদিও স্কুলে যেতে দুই ছেলের মধ্যে কারোই আগ্রহের কমতি নেই৷

নুরুননাহার সাত্তার, ডয়চে ভেলেছবি: DW/A. Islam

গত দেড় বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও অনলাইন ক্লাস চলছিল৷ যদিও দেশের সব অঞ্চলের শিক্ষার্থী সে সুবিধা পায়নি৷ এছাড়াও বিভিন্ন মহল থেকে নানাভাবে স্কুল খোলার চাপ আসছিল৷ অবশেষে ১২ সেপ্টেম্বর স্কুল কলেজ খুলছে৷

সম্প্রতি প্রকাশিত  ইউনিসেফের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনাকালে দীর্ঘসময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বাংলাদেশে চার কোটিরও বেশি শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷

জাতিসংঘের শিশু তহবিলের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, শিশুরা যত বেশি সময় স্কুলের বাইরে থাকবে তত বেশি তাদের স্কুলে ফেরার সম্ভাবনা কমে যাবে৷এর কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে সহিংসতা, শিশুশ্রম ও বাল্যবিবাহের ঝুঁকির কথা৷ যদিও দেশের সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার কয়েক দফা উদ্যোগ নিয়েও করোনার সংক্রমণ বাড়ায় তা সফল হয়নি৷

বাংলাদেশের পত্রপত্রিকা বা সোশাল মিডিয়ায় বিয়ে বা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মানুষের ভিড়ের ছবি দেখে এত দীর্ঘ সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা যুক্তিসঙ্গত হয়েছে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠেছে৷ যাই হোক কদিন পরেই সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে যাচ্ছে, আশা থাকবে, স্কুল কলেজ খুলে দেওয়ার ব্যাপারে জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির দেওয়া করোনার বিধিনিষেধগুলো মেনে চলবে সকলে৷ সরকারের কাছে প্রত্যাশা থাকবে, বড়দের পাশাপাশি শিশুদেরও যত তাড়াতাড়ি সম্ভব টিকার আওতায় আনা হোক৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ