ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁর শীর্ষ নিরাপত্তারক্ষীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, প্যারিসে মে দিবসের বিক্ষোভের সময় তিনি এক শিক্ষার্থীকে পিটিয়েছিলেন৷
বিজ্ঞাপন
চলতি বছরের পহেলা মে বিক্ষোভ চলাকালে এক যুবককে পিটিয়েছিলেন মাঁক্রোর শীর্ষ নিরাপত্তারক্ষী আলেকজান্দ্রে বেনাল্লা৷ সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর তাকে বরখাস্ত করেন মাক্রোঁ৷ এই ঘটনাকে তাঁর প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন সবচেয়ে বড় কেলেঙ্কারি মনে করা হচ্ছে৷
এক তদন্ত সূত্র থেকে জানা গেছে, কেবল বেনাল্লা নন, দুই উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাসহ আরও তিনজনকে বরখাস্ত করেছেন মাক্রোঁ৷ বেনাল্লার বিরুদ্ধে সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে সহিংস আচরণ, পুলিশের পোশাকের অবৈধ ব্যবহার এবং অনুমতি ছাড়া নজরদারি ভিডিও ফুটেজের ব্যবহারের অভিযোগ আনা হয়েছে৷
ফরাসি পত্রিকা লে মঁদে চলতি সপ্তাহে তাদের ওয়েবসাইটে স্মার্টফোনে তোলা একটি ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করে৷ সেখানে দেখা যায়, বেনাল্লা এক বিক্ষোভকারী যুবককে পেটাচ্ছেন৷ মে দিবসের ঐ বিক্ষোভের সময় তার মাথায় ছিল পুলিশের হেলমেট৷ বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় ভিডিওটি প্রকাশ করে ঐ পত্রিকা, যেখানে তাকে পুলিশের পোশাকে এক নারীর সঙ্গে ধস্তাধস্তি করতে দেখা যায়৷
এসব ফুটেজ প্রকাশ হওয়ার পর মাক্রোঁর অফিস থেকে বলা হয়েছিল, বেনাল্লাকে পুলিশের বিভিন্ন অভিযান পর্যবেক্ষণের অনুমতি দেয়া আছে৷ তবে এরপর বেনাল্লাকে দুই সপ্তাহের জন্য ‘বিনা বেতনে' বরখাস্ত করার খবর জানা যায়৷ পাশাপাশি তাকে মাক্রোঁর বিভিন্ন সফরের নিরাপত্তার দায়িত্ব থেকে সরিয়ে প্রশাসনিক কাজে লাগানো হয়৷ তবে বিএফএম টিভি চ্যানেল তাদের রিপোর্টে জানিয়েছে, বেনাল্লা চলতি সপ্তাহেই তার কাজে ফিরেছেন৷ এমনকি বিশ্বকাপজয়ী ফরাসি ফুটবল দলকে যে বাসে করে প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, সেই বাসে নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন তিনি৷
শুক্রবার ফরাসি আইনজীবীরা জানিয়েছেন, ‘‘পহেলা মে বিক্ষোভের সময় বেনাল্লা একা ছিলেন না, তাকে সহযোগিতা করেছেন আরও একজন নিরাপত্তা সহযোগী ভিনসেন্ট ক্রেজ৷ তাকেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে৷''
তবে এই কেলেঙ্কারিতে মাক্রোঁর জনপ্রিয়তায় বেশ ভাটা পড়েছে৷ বুধবার ও বৃহস্পতিবার জনমত জরিপে মাক্রোঁর পক্ষে মাত্র ৩৯ শতাংশ ভোট পড়েছে৷ পহেলা মে'র বিক্ষোভের পরদিনই মাক্রোঁ টুইটারে লিখেছিলেন, ‘‘যারা এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে, যারা দায়ী, তাদের বিরুদ্ধে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হবে৷ ''
শুক্রবার বেশিরভাগ সংবাদপত্র লিখেছে, বৃহস্পতিবার ফ্রান্সের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে মাক্রোঁর এক সফরের সময় এই ঘটনা সম্পর্কে তাঁকে প্রশ্ন করা হলেও তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি৷ পত্রিকাগুলো লিখেছে, লে মঁদে'র অনুসন্ধান ছাড়া এই ঘটনা কেউ জানতেই পারতো না৷ আইনজীবীরা স্বপ্রণোদিত হয়ে তদন্ত শুরু করেছেন৷ বিরোধী দল দাবি করেছে, মাক্রোঁকে পার্লামেন্টে এর জবাব দিতে হবে৷ তবে ফরাসি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বৃহস্পতিবার পার্লামেন্টে জানিয়েছিলেন, শিক্ষার্থীদের এ ধরনের বিক্ষোভে হস্তক্ষেপ করার কোনো অধিকার বেনাল্লার নেই৷
আকর্ষণীয় কয়েকজন সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান
শুধু সৌন্দর্য্য নয়, আচরণ এবং ব্যক্তিত্বও মানুষের চেহারায় ফুটিয়ে তোলে আকর্ষণের ছাপ৷ নিজস্ব বৈশিষ্ট্যে বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান জায়গা করে নিচ্ছেন বিশ্ববাসীর মনে৷ এমন কয়েকজনকে নিয়েই আজকের ছবিঘর৷
ছবি: Getty Images/AFP/STR
কোলিন্ডা গ্রাবার-কিটারোভিচ
বিশ্বকাপ ফুটবলে গ্যালারিতে সবার নজর কেড়েছিলেন ক্রোয়েশিয়ার সুন্দরী প্রেসিডেন্ট কোলিন্ডা গ্রাবার-কিটারোভিচ৷ ২০১৫ সাল থেকে তিনি প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেছেন৷ তবে তাঁর রাজনৈতিক ক্যারিয়ার বর্ণাঢ্য৷ প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে কাজ করেছেন ইউরোপ বিষয়কমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে৷ ২০০৮ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত জাতিসংঘে ক্রোয়েশিয়ার দূত ছিলেন কোলিন্ডা৷
ছবি: Reuters/D. Sagolj
ভ্লাদিমির পুটিন
১৯ বছর ধরে কখনও সরকারপ্রধান, কখনও রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন সাবেক এই রুশ গোয়েন্দা৷ ১৯৯৯ থেকে ২০০০ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী, ২০০০ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি, ২০০৮ থেকে ২০১২ পর্যন্ত আবার প্রধানমন্ত্রী, এবং এরপর থেকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন পুটিন৷ ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের ভাঙনের পর বিশ্ব রাজনীতিতে রাশিয়া যে অবস্থান খুইয়েছিল, তার অনেকটাই পুনরুদ্ধার করেছেন পুটিন৷
ছবি: Reuters/G. Dukor
এমানুয়েল মাক্রোঁ
ফ্রান্সের ইতিহাসে সবচেয়ে কমবয়সি প্রেসিডেন্ট মাক্রোঁ৷ ২০১৭ সালে মাত্র ৩৯ বছর বয়সে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন তিনি৷ তরুণ রাজনীতিবিদ হলেও ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাজনীতিতে তাঁর ভূমিকা প্রশংসা পেয়েছে বিশ্বনেতাদের কাছে৷ বিশ্বকাপ ফাইনালে ফ্রান্সের খেলা চলাকালীন সময়ে ভিআইপি গ্যালারিতে মাক্রোঁ’র উত্তেজনা নজর কেড়েছে অনেকের৷
ছবি: Reuters/C. Platiau
জাস্টিন ট্রুডো
৪৪ বছর বয়সে ক্যানাডার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়ে সাড়া ফেলেছিলেন ট্রুডো৷ সুদর্শন এই তরুণের মন্ত্রিসভাকে বিশ্বের সবচেয়ে বৈচিত্র্যময় মন্ত্রিসভা হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়৷ তাঁর মন্ত্রিসভায় আদিবাসী ছাড়াও বিভিন্ন ধর্ম-বর্ণের ক্যানাডিয়ান পেয়েছেন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব৷ এছাড়াও বৈশ্বিক বিভিন্ন ইস্যুতে তাঁর প্রগতিশীল চিন্তাভাবনাও তাঁকে তরুণদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় করে তুলেছে৷
ছবি: picture-alliance/empics/A. Wyld
বরুট পাহো
২০০৭ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত স্লোভেনিয়ার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের পর ২০১২ থেকে দেশটির প্রেসিডেন্ট পাহো৷ অনেকটা আনুষ্ঠানিক পদ হলেও প্রেসিডেন্ট হিসেবে পাহো বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখার চেষ্টা করে চলেছেন৷ ইউক্রেন সংকট নিরসন এবং ট্রাম্প-পুটিন বৈঠকে তাঁর আন্তরিক চেষ্টা ইউরোপের রাজনীতিতে বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছিল৷
ছবি: Reuters/S. Zivulovic
এনরিকে পেনিয়া নিয়েটো
২০১২ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত মেক্সিকোর প্রেসিডেন্টের দায়িত্বে ছিলেন সুদর্শন এই মেক্সিকান৷ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের একচেটিয়া আধিপত্য ভাঙা, জ্বালানি খাত আধুনিকায়ন, রাষ্ট্রীয় শিক্ষা ব্যবস্থার অর্থায়নসহ নানা উদ্যোগে মেক্সিকোর তরুণদের মধ্যে তিনি ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন৷