বাংলাদেশের রাজনৈতিক-সামাজিক আন্দোলনে ছাত্র সমাজের অংশ গ্রহণ নতুন কিছু নয়৷ ভাষা আন্দোলনের সময় থেকে মূলত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরাই এ দেশের সকল ঐতিহাসিক অর্জনের পথ দেখিয়ে এসেছেন, রাজপথের সৈনিক হিসেবে সরব থেকেছেন সব সময়৷
বিজ্ঞাপন
বাসভাড়ায় শিক্ষার্থীদের বিশেষ সুবিধার দাবিতে ঢাকার রাজপথে গত কয়েকদিন ধরে চলমান ছাত্র-বিক্ষোভ দেখে তাই অবাক হওয়ার কিছু নেই৷ এই আন্দোলনের প্রাথমিক বিজয়ও অর্জিত হয়েছে এরই মধ্যে, বিআরটিসির সরকারি বাসে তো বটেই বেসরকারি মালিকানাধীন বাস কোম্পানিগুলোও শিক্ষার্থীদের কাছে অর্ধেক ভাড়া নিতে রাজি হয়েছে৷ নানা শর্তের বেড়াজালে আটকানো সেই ঘোষণা অবশ্য সন্তুষ্ট করতে পারেনি তাদের, আন্দোলনও থামেনি তাই৷
শিক্ষার্থীদের জন্য গণপরিবহণে বিশেষ সুবিধার দাবিটাও একেবারে অচেনা নয়৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে শুরু করে জার্মানিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই নানা রূপে এই সুবিধা পেয়ে থাকেন শিক্ষার্থীরা৷ কোথাও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দেয়া ট্র্যাভেল কার্ড ব্যবহার করে বিনাভাড়ায় ভ্রমণের সুযোগ থাকে, কোথাও বা থাকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচয়পত্র ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের জন্য হ্রাসকৃত মূল্যের বিশেষ টিকেট ক্রয়ের ব্যবস্থা৷ মোট কথা, ভবিষ্যতের করদাতা নাগরিক হিসেবে নিজেদের ক্যারিয়ার গড়ে তোলার আগে শিক্ষার্থীদের জন্য গণ-পরিবহণ ব্যবস্থায় কিছুটা সুবিধা দেয়াই ‘সভ্য সমাজের’ রীতি৷ তবে ‘সভ্য সমাজের’ অন্য অনেক রীতির মতোই এ রীতিটিও আমাদের এই দেশে পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি কখনোই৷ রাজধানীর কোনো কোনো রুটে এক সময় হাফ-ভাড়ার প্রবর্তন থাকলেও এ নিয়ে বাসশ্রমিকদের সঙ্গে বাকবিতন্ডা হতো সব সময়৷ আর সাম্প্রতিককালে তো উঠেই গিয়েছিল এই প্রথা৷
বিশ্বে শিক্ষার্থীদের ১২টি আলোচিত আন্দোলন
সারা বিশ্বেই দাবি আদায়ে সোচ্চার থাকে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা৷ কোনোটি সফল হয়, কোনোটি হয় না৷ তবে সফল না হলেও কিছুটা প্রভাব রেখে যায়৷ ছবিঘরে বাংলাদেশের বাইরের আন্দোলনগুলোর কথা থাকছে৷
ছবি: UPI/dpa/picture-alliance
হিটলারের সমালোচনা
১৯৪২ সালে জার্মানির মিউনিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী ‘হোয়াইট রোজ সোসাইটি’ নামে এক প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তুলেছিল৷ তারা হিটলারের শাসন ও ইহুদিদের উপর অত্যাচারের সমালোচনা করে বেনামে লিফলেট বিলি করেছিল৷ হিটলারের পুলিশ বাহিনী গেস্টাপো অধিকাংশ মূল আন্দোলনকারীকে আটক করেছিল৷ পরে বিচার করে তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়৷ ছবিতে আন্দোলনের অন্যতম উদ্যোক্তা সোফি শল (ডানে) ও তার ভাই হান্সকে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
যুক্তরাষ্ট্রের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন
১৯৬৮ সালে ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েকটি বিক্ষোভ হয়৷ ভিয়েতনাম যুদ্ধে লিপ্ত মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক সংস্থার সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পৃক্ত থাকা এবং নির্মিতব্য জিমনেশিয়ামে বর্ণবাদী পরিকল্পনার প্রতিবাদে আন্দোলনে নেমেছিল শিক্ষার্থীরা৷ বিক্ষোভকারীদের সরাতে সহিংস উপায় বেছে নেয় পুলিশ৷ বিক্ষোভে জড়িত থাকায় কমপক্ষে ৩০ জন শিক্ষার্থীকে বরখাস্ত করা হয়েছিল৷ তবে দুটি দাবিই মানা হয়েছিল৷
ছবি: Dave Pickoff/AP Photo/picture alliance
মিয়ানমারে বিক্ষোভ
১৯৬২ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছিল রেঙ্গুন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা৷ জেনারেল নে উইনের সামরিক সরকার শক্ত হাতে বিক্ষোভ দমন করায় একশ’র বেশি বিক্ষোভকারী মারা গিয়েছিল৷ বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল৷ চার মাস পর সরকারের কঠোর নিয়ন্ত্রণে বিশ্ববিদ্যালয় খুলেছিল৷ ১৯৮৮ সালে আবারও আন্দোলন (ছবি) শুরু করেছিল শিক্ষার্থীরা৷ সেটি দমানো হলেও নে উইন পদত্যাগ করেছিলেন৷
ছবি: AFP/Getty Images
গ্রিসের এথেন্সে বিক্ষোভ
গ্রিসে তখন ছয় বছর ধরে সামরিক শাসন চলছিল৷ এর প্রতিবাদে ১৯৭৩ সালে এথেন্স পলিটেকনিকের একদল বামপন্থি শিক্ষার্থী বিক্ষোভ শুরু করেন৷ দ্রুত তাদের সঙ্গে আরো শিক্ষার্থী যোগ দেন৷ বিক্ষোভ দমাতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ট্যাংক ঢুকিয়ে দেয়া হয়৷ এতে কয়েকজন শিক্ষার্থীসহ ২৪ জন মারা যান৷ শিক্ষার্থীদের এই বিক্ষোভের সুযোগ নিয়ে আরেক ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তা আরেকটি অভ্যুত্থান করে বসেন৷ এর কয়েকমাস পর সামরিক সরকারের পতন ঘটে৷
ছবি: AFP/Getty Images
বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলন
সাউথ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের প্রথম বড় বিক্ষোভটি করেছিল শিক্ষার্থীরা৷ ১৯৭৬ সালে জোহানেসবার্গের সোয়েটো এলাকার কৃষ্ণাঙ্গ শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করে৷ পড়ালেখার মাধ্যম হিসেবে ইংরেজির পাশাপাশি আফ্রিকান ভাষা যুক্ত করার প্রতিবাদে এই বিক্ষোভ হয়৷ আফ্রিকান ভাষাটি বর্ণবাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ায় প্রতিবাদ হয়৷ বিক্ষোভ দমাতে পুলিশ গুলি চালালে সরকারি হিসেবে ১৭৬ জন (মতান্তরে প্রায় ৭০০ জন) প্রাণ হারান৷
ছবি: UPI/dpa/picture-alliance
প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ
১৯৯৮ সালের ১২ মে ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট সুহার্তোর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু করেছিল ত্রিশক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা৷ তাদের দমাতে পুলিশ গুলি চালালে চারজন মারা যায়৷ এর প্রতিবাদে দেশব্যাপী বিক্ষোভ শুরু হলে সুহার্তো পদত্যাগ করতে বাধ্য হন৷ ৩০ বছর ক্ষমতায় ছিলেন সাবেক সামরিক কর্মকর্তা সুহার্তো৷
ছবি: Robertus Pudyanto/ZUMAPRESS.com/picture alliance
তিয়েনআনমেন স্কোয়ার বিক্ষোভ
চীনের কমিউনিস্ট পার্টির চেয়ারম্যান ও মহাসচিব ছিলেন হু ইয়াওবাং৷ তিনি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংস্কারের পক্ষে ছিলেন৷ সে কারণে একসময় তিনি দলের পদ হারান৷ ১৯৮৯ সালে তার মৃত্যুর পর গণতন্ত্রপন্থি শিক্ষার্থীরা বেইজিংয়ের তিয়েনআনমেন স্কোয়ারে বিক্ষোভ শুরু করে৷ পরে সেটা বড় হলে তাদের দমাতে সামরিক আইন জারি করা হয়৷ ট্যাংক দিয়ে শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালানো হয়৷ এতে মতান্তরে কয়েকশ থেকে কয়েক হাজার মানুষের মৃত্যু হয়৷
ছবি: AP Photo/picture alliance
ইরানের ‘তিয়েনআনমেন স্কোয়ার’
১৯৯৯ সালে সংস্কারবাদী পত্রিকা ‘সালাম’ বন্ধের প্রতিবাদে তেহরানের রাস্তায় নেমেছিলেন শিক্ষার্থীরা৷ এরপর পুলিশ হলে ঢুকে বিছানা পুড়িয়ে দেয়, জানালার কাচ ভেঙে ফেলে৷ ছয় দিন ধরে চলা আন্দোলনের সময় কয়েক হাজার জনকে আটক করা হয়৷ প্রায় ৭০ জন নিখোঁজ হন৷ বিক্ষোভের পর সরকার উলটো বাকস্বাধীনতা আইন আরও কঠোর করেছিল৷
ছবি: AFP/Getty Images
লন্ডনে বিক্ষোভ
শিক্ষাখাতে বরাদ্দ কমানো ও বিশ্ববিদ্যালয়ের টিউশন ফি বৃদ্ধির সরকারি প্রস্তাবের প্রতিবাদে ২০১০ সালে লন্ডনে কয়েকটি বিক্ষোভ হয়৷ কোনো কোনো বিক্ষোভে ৩০ থেকে ৫০ হাজার শিক্ষার্থী অংশ নেয়৷ এক পর্যায়ে বিক্ষোভকারীরা সরকারি দলের ক্যাম্পেন হেডকোয়ার্টারে ঢুকে পড়েছিলেন৷ বিক্ষোভকারীরা বিভিন্ন জায়গায় ভাঙচুর করেছিল৷
ছবি: Oli Scarff/Getty Images
হংকংয়ের ‘ছাতা বিপ্লব’
২০১৪ সালে চীনের কংগ্রেস হংকংয়ের নির্বাচনি ব্যবস্থায় সংস্কারের প্রস্তাব করে৷ সেটি বাস্তবায়িত হলে চীনের প্রভাব আরও বাড়বে বলে হংকংয়ের শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমেছিল৷ বিক্ষোভ দমাতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করে৷ বিক্ষোভকারীদের মারধরও করা হয়৷ এসব থেকে বাঁচতে ছাতার ব্যবহার শুরু করেছিল তারা৷ তাই এটি ‘আমব্রেলা রেভুলিউশন’ নামে পরিচিত হয়ে উঠেছিল৷ ২০১৮ সালে নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন পেয়েছিল এই আন্দোলন৷
ছবি: AFP/Getty Images/D. de la Rey
পৃথিবী বাঁচানোর আন্দোলন
২০১৮ সালে প্রতি শুক্রবার স্কুলে না গিয়ে সংসদের কাছে এই পোস্টার নিয়ে দাঁড়াতেন সুইডেনের স্কুল শিক্ষার্থী গ্রেটা টুনব্যার্গ৷ সেখানে লেখা আছে ‘স্কুল স্ট্রাইক ফর ক্লাইমেট’৷ টুনব্যার্গের এই আন্দোলন এখন সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে৷ জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে এখন সোচ্চার শিক্ষার্থীরা৷
ছবি: picture-alliance/DPR/H. Franzen
ভারতের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন
২০১৪ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী ঐ বিশ্ববিদ্যালয়েরই কিছু ছাত্রের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ আনে৷ ঘটনার তদন্তের দাবি উঠলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শোনেনি৷ তাই শিক্ষার্থীরা কয়েকটি প্রশাসনিক ভবন ঘেরাও করেছিল৷ পুলিশ বিক্ষোভকারীদের উপর লাঠিচার্জ করে৷ উপাচার্যের নির্দেশে পুলিশ এমন আচরণ করে বলে অভিযোগ ওঠে৷ আন্দোলন অন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও ছড়িয়ে পড়েছিল৷ পরে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন উপাচার্য৷
ছবি: ZUMA Press/imago images
12 ছবি1 | 12
দাবিটা কিন্তু নতুন নয়! এই ভূখণ্ডের প্রথম সত্যিকারের ছাত্র আন্দোলন হিসেবে পরিচিত ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলনের অন্যতম একটি দাবি ছিল গণ-পরিবহণে শিক্ষার্থীদের ‘অর্ধেক ভাড়া নিশ্চিত করা৷ ছয় দশক পরে, স্বাধীন বাংলাদেশে এসে সেই পুরোনো দাবি নিয়ে আবার শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে নামতে হচ্ছে, এটাই আসলে লজ্জার ব্যাপার৷ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের যৌক্তিকতা নিয়ে তাই সংশয়ের অবকাশ নেই৷
কিন্তু এই আন্দোলন, এবং সাম্প্রতিক সময়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যাপক অংশগ্রহণে সফল হওয়া আন্দোলনগুলোর গতি-প্রকৃতি অনুসরণ করলে বিষয়টিকে মোটেই এমন সরলভাবে দেখার সুযোগ নেই৷ হাফ-ভাড়ার আন্দোলন চলার মধ্যেই সড়ক দুর্ঘটনায় কয়েকজন শিক্ষার্থীর মৃত্যু চলমান আন্দোলনটির রূপ বদল করে পরিণত করেছে নিরাপদ সড়ক দাবির আন্দোলনে৷ বছর দুয়েক আগে ঠিক এ রকমই একটি আন্দোলন কাঁপিয়ে দিয়েছিল ঢাকার রাজপথ৷ আর তার কিছুদিন আগে সারা দেশেই সাড়া ফেলেছিল সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটা সংস্কারের দাবিতে গড়ে ওঠা অন্য একটি আন্দোলন৷ ওই আন্দোলনগুলোতে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীর অংশ গ্রহণ ছিল লক্ষ্যণীয়৷ তাদের অনেকেই এসেছেন স্বতঃস্ফূর্তভাবে৷ কিন্তু প্রতিবারই দেখা গেছে, আন্দোলন যেন শেষ হতেই চায় না৷ যে দাবিতে বিক্ষোভের সূচনা, তার বেশিরভাগ অর্জিত হলেও সন্তুষ্ট হচ্ছেন না তারা, নানা ছুতোয় তাদের আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে৷ অন্য দিকে এই দীর্ঘসূত্রিতার এক পর্যায়ে ছাত্রদেরই অন্য একটি অংশকে আবার ব্যবহার করা হচ্ছে এই আন্দোলন বানচাল করার কাজে৷
একনজরে কোটা সংস্কার আন্দোলন
সরকারি চাকরিতে নিয়োগে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে বেশ কিছুদিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে আসছিল ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’৷ প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার মধ্য দিয়ে তা শেষ হয়৷ দেখে নেয়া যাক আন্দোলনের খণ্ডচিত্র...
ছবি: bdnews24.com
পদযাত্রা
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে নানা কমর্সূচি পালনের পর রোববার পদযাত্রার কর্মসূচি দেয় ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’৷
ছবি: bdnews24.com
অবস্থান কর্মসূচি
পদযাত্রা কর্মসূচি শেষে ঢাকার শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেয় আন্দোলনরতরা৷
ছবি: bdnews24.com
দিনব্যাপী বিক্ষোভ
রোববার দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি চলতে থাকে৷ এ সময় পুলিশ আন্দোলনকারীদেরকে বেশ কয়েকবার উঠিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলেও শিক্ষার্থীরা অনড় থাকে৷
ছবি: bdnews24.com
পুলিশের অ্যাকশন
রাত ৮টার দিকে লাঠিপেটা ও রাবার বুলেট-কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে অবরোধকারীদের উঠিয়ে দেয় পুলিশ৷ অবরোধকারীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির দিকে পিছু হটলে তাঁদের উপর ছাত্রলীগের কিছু নেতা-কর্মীর চড়াও হওয়ার অভিযোগ ওঠে৷
ছবি: bdnews24.com
সংঘাত
শাহবাগ ছাড়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি সংলগ্ন এলাকায় রাতে খণ্ড খণ্ড বিক্ষোভ চলে; পুলিশও তাঁদের লক্ষ্য করে কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট ছোঁড়ে৷ দু’পক্ষের সংঘাত ছড়িয়ে পরে৷
ছবি: bdnews24.com
উপাচার্যের বাড়িতে ভাংচুর
গভীর রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাড়িতে ভাঙচুর হয়৷ বাড়িতে ব্যাপক ভাংচুরের পাশাপাশি দুটি গাড়িতেও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়৷ ভাংচুর শুরুর আগে সব সিসি ক্যামেরা ভেঙ্গে ফেলা হয়৷
ছবি: bdnews24.com
উপাচার্যের অভিযোগ
সোমবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, তাঁর প্রাণনাশের জন্যই বাড়িতে হামলা চালানো হয়েছে৷ তবে তিনি আরো বলেন, এমন হামলা সাধারণ ছাত্ররা চালাতে পারে তাঁর কাছে তা বিশ্বাসযোগ্য নয়৷
ছবি: bdnews24.com
সমঝোতা
সোমবার যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে সরকারের একটি প্রতিনিধি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেন৷ মীমাংসাও হয়৷ ফলে আলোচনায় অংশ নেয়া নেতারা আন্দোলন স্থগিত ঘোষণা করেন৷ তবে আন্দোলনকারীদের একাংশ আন্দোলনে থাকে৷
ছবি: bdnews24
নারী অংশগ্রহণ
সরকারি চাকরিতে ১০ ভাগ নারী কোটা থাকলেও কোটা সংস্কার আন্দোলনে প্রচুর নারী অংশ নেন৷
ছবি: bdnews24
স্থবিরতা
ঢাকা তো বটেই পুরো দেশের অনেক উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানই একে একে অচল হয়ে পড়ে৷ রাস্তা বন্ধ করে শিক্ষার্থীরা দাবি আদায়ের আন্দোলন শুরু করেন৷
দেশব্যাপী আন্দোলনের তীব্রতা বেড়ে যায়৷ আন্দোলনরতরা ছাত্রলীগের একাংশের নির্যাতন এবং সরকারের দুই মন্ত্রীর ‘আপত্তিকর’ বক্তব্যের প্রতিবাদে সমাবেশ ও প্রতিবাদ অব্যাহত রাখে৷
ছবি: bdnews24.com
হেনস্থার শিকার পুলিশ ও সাংবাদিক
আন্দোলন চলার সময় বেশ কয়েকজন সাংবাদিক ও পুলিশ হেনস্থার শিকার হন৷ এখানে এক পুলিশ কর্মকর্তার আন্দোলনকারীদের হাতে নাজেহাল হতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: bdnews24.com
অপেক্ষা
কোটা বৈষম্যের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য দাবি করে আন্দোলনকারীরা৷ বুধবার বিকালে প্রধানমন্ত্রী সংসদে এ বিষয়ে কথা বলছেন জানালে শুরু হয় অপেক্ষার প্রহর৷
ছবি: bdnews24.com
অবশেষে অপেক্ষার অবসান
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে সব কোটা তুলে দেওয়ার ঘোষণা দিলে আন্দোলনরতরা তাঁর এবং বঙ্গবন্ধুর ছবি নিয়ে আনন্দ মিছিল করে৷
ছবি: bdnews24.com
15 ছবি1 | 15
দুটি প্রবণতাই মারাত্মক৷ গণতান্ত্রিক সমাজে অধিকার ক্ষুন্ন হয়েছে অনুভব করলে শিক্ষার্থীসহ যে কোনো গোষ্ঠীর শ্রেণি, পেশা বা অন্য কোনো সূত্রে সংগঠিত হয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করা এবং তার মধ্য দিয়ে দাবি আদায়ের চেষ্টা করে যাওয়াই রীতি৷ কিন্তু, সেই চেষ্টারও একটা সীমা থাকে৷ বিক্ষোভের নামে অন্যদের ক্ষতি সাধন করার অধিকার কারো নেই৷ কোটা-সংস্কার আন্দোলনের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে অগ্নিসংযোগ, কিংবা সাম্প্রতিক আন্দোলনের সময় বেশ কয়েকটি বাস জ্বালিয়ে দেয়ার ঘটনাকে কোনোক্রমেই আন্দোলনের উপযুক্ত কৌশল বলে বিবেচনা করা যায় না৷ তেমনি আন্দোলনরতদের ওপর হেলমেট-হাতুড়ির আক্রমণও কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়৷ দুইপক্ষের অবাঞ্ছিত আচরণ প্রশ্ন জাগায়- তাহলে কি তারা অন্য কোনো পক্ষের ক্রীড়নক হয়ে উঠছেন? পেছন থেকে আসলে কলকাঠি নাড়ছেন অন্য কেউ?
শিক্ষার্থীদের যে ঐতিহাসিক আন্দোলনে এই হাফ-ভাড়ার দাবি প্রথম উঠেছিল, সেই আন্দোলনের চরিত্র কিন্তু এরকম ছিল না৷ সে আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল আসলে শিক্ষার্থীদের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম সংক্রান্ত দাবিকে ঘিরে৷ হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশনের প্রস্তাব অনুসারে গৃহীত কালা-কানুন এবং শিক্ষা সংকোচন নীতির বিরোধিতাই ছিল এই আন্দোলনের মূল লক্ষ্য, তার সঙ্গে যোগ করা হয়েছিল সাধারণ মানুষের অধিকারসংক্রান্ত নানা দাবি-দাওয়া৷ সাম্প্রতিক সময়ে শিক্ষার্থীদের অ্যাকাডেমিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে এরকম আন্দোলন মোটেই গড়ে উঠছে না৷ এরকম ইস্যুর কিন্তু অভাব নেই৷ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নানা রকম অব্যবস্থাপনার খবর প্রায়ই সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম হচ্ছে; বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের আবাসন ব্যবস্থা, বিশেষ করে ডাইনিং-ক্যান্টিনের খাবারের মান নিয়েও অসন্তোষ রয়েছে৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি প্রক্রিয়ায় অসঙ্গতি, সরকারের গৃহীত শিক্ষানীতির মূল সুরকে উপেক্ষা করে পঞ্চম-অষ্টম শ্রেণিতে পাবলিক পরীক্ষা প্রচলন ও তা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আলাদা প্রাথমিক শিক্ষা বোর্ড স্থাপনের তুঘলকি প্রচেষ্টা, কিংবা শিক্ষার্থীদের গিনিপিগ বানিয়ে কখনো সৃজনশীল কখনো একমুখি শিক্ষা চালুর প্রচেষ্টা- একেবারে অ্যাকাডেমিক ক্ষেত্রেও শিক্ষার্থীবান্ধব ইস্যুর অভাব নেই৷ অভাব নেই সাধারণ মানুষের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ইস্যুরও, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সহিংসতা, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের নামে লুট-পাট, কত ইস্যু!
কিন্তু এসব নিয়ে কোনো পক্ষের কোনো মাথাব্যথা নেই; কেবল কদিন পর পর নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের মতো তাৎক্ষণিক সাড়া জাগানো ইস্যু নিয়ে জমে উঠছে আন্দোলন, তাতে পক্ষ-বিপক্ষ নিয়ে রাস্তায় নেমে নতুন জনদুর্ভোগের কারণ সৃষ্টি করছে শিক্ষার্থীরা৷ পরিবহণ সেক্টরের মালিক-শ্রমিকদের সংগঠনগুলোর মতোই জনদুর্ভোগকে পুঁজি করে দাবি আদায়ের কৌশল গ্রহণ করছে তারা৷ ফলে সরকার সমর্থকরাও সুযোগ পাচ্ছে আন্দোলনের ভিন্ন ব্যাখ্যা হাজির করার; দমন-নিপীড়নের কূটকৌশল গ্রহণ করার পাশাপাশি তারা চালাচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ-মাধ্যমে প্রচারণার সাইবার-যুদ্ধ৷ দেখে-শুনে মনে হতেই পারে, শিক্ষার সুযোগ পেয়ে নিজেদের আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার পথের অভিযাত্রী শিক্ষার্থীরা আজ তাদের পূর্বসুরীদের গৌরবোজ্জ্বল অতীতকে যথাযথভাবে অনুসরণ করতে পারছে না; তাদের ভুল পথে পরিচালনা করতে সক্ষম হচ্ছে কেউ কেউ৷ নেপথ্যের এই খেলায় নাটাইটা শেষ পর্যন্ত অন্যদের হাতে থাকছে বলেই অনেক আশার আলো দেখিয়েও শেষ পর্যন্ত নিভে যাচ্ছে সম্ভাবনাময় আন্দোলনগুলো; হয়ে উঠতে পারছে না পথের দিশারী৷