শিক্ষার ভুয়া সনদ ঠেকাতে বিশেষ অভিযান নাইজেরিয়া সরকারের
১৩ জানুয়ারি ২০২৪
নাইজেরিয়াতে গত ১৫ বছরে গড়ে উঠা ১০৭টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়ে তদন্ত শুরু করতে যাচ্ছে দেশটির সরকার৷ সম্প্রতি নাইজেরিয়ার এক সাংবাদিকের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশের পর দেশটিতে শিক্ষার ভুয়া সনদের বিষয়টি সামনে আসে৷ এরই পরিপ্রেক্ষিতে এমন সিদ্ধান্ত নেয় সরকার৷
উল্লেখ্য, আফ্রিকার দেশ নাইজেরিয়াতে ৪৩টি ফেডারেল বিশ্ববিদ্যালয়, ৪৮টি স্টেট বিশ্ববিদ্যালয় এবং ৭৯টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে৷
এক সপ্তাহেই ডিগ্রি সার্টিফিকেট
সম্প্রতি নাইজেরিয়ান সাংবাদিক উমর আউদু দেশটিতে ভুয়া সনদের ছড়াছড়ির বিষয়ে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন৷ তার প্রতিবেদন প্রকাশের পর মূলত টনক নড়ে সরকারের৷
ডয়চে ভেলেকে এই সাংবাদিক বলেন, ভুয়া সনদের বিষয়টি নাইজেরিয়াতে ছড়িয়ে পড়েছে৷
‘‘আপনি অনেক তরুণকে পাবেন যারা ডিগ্রি পাওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছেন৷ এমন পরিস্থিতি আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় মারাত্মক প্রভাব ফেলছে৷''
বিষয়টির তদন্ত করতে গিয়ে এই সাংবাদিক ছদ্মবেশে একটি সিন্ডিকেটের সাথে যোগাযোগ করেন৷ ওই সিন্ডিকেট তাকে ছয় সপ্তাহের মধ্যেই প্রতিবেশি দেশ বেনিন রিপাবলিকের একটি বিশ্বিবিদ্যালয়ে থেকে গণযোগাযোগের উপর একটি ব্যাচেলর ডিগ্রি যোগাড় করে দেয়৷
দেশের শিক্ষাব্যবস্থার মানদণ্ড অনুযায়ী যেখানে এই ডিগ্রিটি পেতে তিন থেকে চার বছর সময় লাগে ওই সিন্ডিকেটের সহায়তায় ছয় সপ্তাহেই ডিগ্রি সনদ পেয়ে যান উমর৷
এমনকি এই সনদ নিয়ে তরুণদের জন্য নাইজেরিয়া সরকারের ন্যাশনাল ইয়ুথ সার্ভিস ক্রপস স্কিমের আওতায় একটি বাধ্যমতামূলক কোর্সে ভর্তি হতেও তার কোনো অসুবিধা হয়নি৷
উমরের এই অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের প্রকাশের পর নড়েচড়ে বসে নাইজেরিয়া সরকার৷
এরইমধ্যে বেনিন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বেশ কয়েকটি দেশের ১৮টি বিশ্ববিদ্যালয়কে দেশটিতে নিষিদ্ধ করা হয়৷ এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সনদ গ্রহণযোগ্য হবে না বলেও সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়৷
জানা গেছে, ঘানা, কেনিয়া, উগান্ডার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ডিগ্রিও নিষিদ্ধ করতে পারে নাইজেরিয়া সরকার৷
নাইজেরিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক ইব্রাহিম শাতাম্বা বলেন, ভুয়া সনদের এমন ছড়াছড়ি দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে এবং উৎপাদনশীলতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে৷
গত কয়েক বছর ধরে কি হয়েছে, কীভাবে এই বিশ্বিদ্যালয়গুলো এমন সুবিধা নিয়েছে, এ বিষয়টিই প্রমাণ করছে যে, এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অযোগ্য গ্র্যাজুয়েট তৈরি করেছে৷
তিনি বলেন, যারা এভাবে ফাঁকি দিয়ে ডিগ্রি অর্জন করে, চাকরি জীবনে দায়িত্ব পালনের জন্য তাদের দক্ষতা এবং যোগ্যতার ঘাটতি থাকে৷
আর সাংবাদিক উমর বলছেন, এই ধরনের কার্যত্রম বন্ধ করার চেষ্টা করে সরকার সঠিক কাজ করছে৷ যদিও প্রতিবেদন প্রকাশের পর থেকে বিভিন্ন মহল থেকে তাকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে৷
তিনি বলেন, এমন কার্যক্রম চলতে দেওয়া উচিত হবে না৷ আর এভাবে (সিন্ডিকেটের মাধ্যমে) সনদ পাওয়ার বিষয়টি মূলত যারা শিক্ষাগত যোগ্যতা অর্জনের জন্য কঠোর পরিশ্রম করছেন তাদের প্রতি অবিচার করা হয়৷
সেহো সালমাউ/আরআর