1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

শিক্ষার মানে নিচের সারিতে বিশ্বভারতী!

পায়েল সামন্ত কলকাতা
১৮ জুন ২০২০

সাধারণ মানুষের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের প্রথম সারির একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে ধারণা ভালো নয়৷ কবিগুরুর বিশ্বভারতীর অবস্থান অনেক নীচে৷ এমনটাই উঠে এসেছে সর্বভারতীয় ব়্যাংকিংয়ে৷

ছবি: DW/P. Samanta

পশ্চিমবঙ্গের বিপুল সংখ্যক মানুষ কর্মসংস্থান খুঁজে নিতে অন্য রাজ্যে যান৷ দিল্লি, মুম্বই থেকে গুজরাত কিংবা কেরল, তামিলনাড়ুতে ছড়িয়ে পড়েছেন তাঁরা৷ বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান থেকে ছোটখাটো কাজে ভিনরাজ্যে নিজেদের কর্মসংস্থান খুঁজে নিয়েছেন বাঙালিরা৷ একইভাবে অন্য রাজ্যের মানুষ পশ্চিমবঙ্গে এসে জীবিকা নির্বাহ করছেন৷ পশ্চিমবঙ্গে শিল্পের বিকাশ মহারাষ্ট্র ও গুজরাটের মতো না হওয়ায় পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান তৈরি হয়নি, এমনটা অনেকের মত৷ মেধা বা জ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রে কিন্তু বাংলার শিক্ষা মহলের স্থান সর্বভারতীয় স্তরে বেশ মর্যাদার, এমনটাই মনে করা হয়৷ যদিও এই ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে এই কেন্দ্রীয় সমীক্ষা৷
মানের বিচারে দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবস্থান কোথায়, তার ব়্যাংকিং তৈরি করে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ব়্যাংকিং ফ্রেমওয়ার্ক (এনআইআরএফ)৷ বিভিন্ন মাপকাঠিতে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে বিচার করা হয়৷ এর মধ্যে একটি, সাধারণ মানুষ প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে কী ধারণা পোষণ করেন৷ অনেক সময় ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় উঠে আসে, এই প্রতিষ্ঠান ভালো বা ওই প্রতিষ্ঠান তত ভালো নয়৷ এই মনোভাবকে একটা মাপকাঠিতে ফেলে ব়্যাংকিংয়ের চেহারা দিয়েছে এনআইআরএফ৷ এটাকে বলা হচ্ছে ‘পারসেপশন’ অর্থাৎ জনমানসে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি কেমন, তার প্রতিফলন ঘটেছে ব়্যাংকিংয়ে৷

রবীন্দ্রনাথ বিশ্বভারতীকে বিজ্ঞানচর্চার কেন্দ্র হিসেবে গড়তে চেয়েছিলেন, কিন্তু সেটা নাচ-গান শেখার কেন্দ্র হয়ে গেছে: সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়

This browser does not support the audio element.

এই সমীক্ষায় কলকাতার বিভিন্ন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আইআইটি খড়গপুর, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় সম্মানজনক জায়গায় রয়েছে৷ কিন্তু, পশ্চিমবঙ্গের অনেক প্রতিষ্ঠান ন্যূনতম নম্বর পায়নি৷ এর মধ্যে রয়েছে কবিগুরুর বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় যা এই ব়্যাংকিং অনুযায়ী সাধারণ মানুষের চোখে শিক্ষালাভের উপযুক্ত প্রতিষ্ঠান নয় বলে চিহ্নিত হয়েছে৷ পশ্চিমবঙ্গের দুর্গাপুর এনআইটি এই মাপকাঠিতে একশোর মধ্যে পেয়েছে ৯.১৫৷ শিবপুরের আইআইইএসটি বা পূর্বতন বেসু আগের থেকে উন্নতি করলেও এখনো ভালো জায়গায় নেই৷ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিশ্বভারতী, যেখানে আজও আশ্রমিক বিদ্যালয় চলে, প্রতিযোগিতার ইঁদুর দৌড়ের বাইরে জ্ঞান অর্জনের জন্য পাঠদান করা হয়, সেই প্রতিষ্ঠান পেয়েছে মাত্র ১০.৪২ নম্বর৷ অপেক্ষাকৃত ভালো জায়গায় রয়েছে বর্ধমান ও কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়৷ তাদের প্রাপ্ত নম্বর ১৯-এর বেশি৷ এই তালিকায় ভালো স্থানে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের প্রতিষ্ঠান আইআইটি খড়গপুর (৮২.২১), যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় (৫৯), কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় (৪২.৮৪)৷

গোটা দেশ হোয়াইট কলার লেবার উৎপাদনের ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে: বিশ্বজিৎ রায়

This browser does not support the audio element.

বিশ্বভারতী এই ব়্যাংকিংয়ে এত নীচে কেন? অধ্যাপক সঞ্জয় মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘রবীন্দ্রনাথ বিশ্বভারতীকে বিজ্ঞানচর্চার কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন৷ কিন্তু, সেটা নাচ-গান শেখার কেন্দ্র হয়ে রয়ে গিয়েছে৷ শান্তিনিকেতন বলতে হয়ে দাঁড়িয়েছে পঁচিশে বৈশাখ, বাইশে শ্রাবণ ও অন্যান্য সমারোহ৷ বিশ্বভারতী তার বিদ্যাচর্চার আধুনিকীকরণ করেনি, তাই পিছিয়ে গিয়েছে৷’’ তাঁর মতে, বাঙালি রবীন্দ্রনাথকে যথাযথভাবে অনুধাবন করতে পারেনি৷ বলেন, ‘‘বাঙালির রবীন্দ্র-ব্যাখ্যায় গলদ রয়েছে৷ তিনি শুধু নৃত্যনাট্য-গীতিনাট্যের রচয়িতা ছিলেন না, ছিলেন এক সর্বত্রগামী বুদ্ধিজীবী৷ এখানে বাংলা সাহিত্য, সংস্কৃত যতটা গুরুত্ব দিয়ে পড়ানো হয়, পদার্থবিদ্যা, রসায়নও পড়ানো উচিত৷’’

ঔপনিবেশিক আমলে পশ্চিমবঙ্গে শিক্ষার মান যে জায়গায় ছিল, এখন তা নেই৷ একথা মেনে নিচ্ছেন বাংলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত শিক্ষকরা৷ এই পরিস্থিতিতেও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকার প্রশংসা করেন বিশ্বভারতীর শিক্ষক বিশ্বজিৎ রায়৷ তিনি প্রশ্ন তোলেন জাতীয় শিক্ষানীতি নিয়ে৷ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘শিক্ষাক্ষেত্র অধিকাংশ ক্ষেত্রে জীবিকামুখী হয়ে উঠেছে৷ এটা কেন্দ্রীয় শিক্ষানীতির ত্রুটি, একটা সময় বুঝতে পারা যাবে৷ এতে গোটা শিক্ষা ব্যবস্থার অবনতি ঘটছে৷ একজন গণিতজ্ঞের তুলনায় প্রযুক্তিবিদের গুরুত্ব বেশি চাকরির কারণে৷ এখনকার ছেলেমেয়ো কতটা পড়তে চায়, কতটা চাকরির জন্য শিখতে চায়, এই ভেদটা স্পষ্ট হয়ে উঠছে৷ গোটা দেশ হোয়াইট কলার লেবার উৎপাদনের ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ