‘‘শিক্ষা একটি মৌলিক অধিকার৷ এর ওপর নিয়ন্ত্রণ করার জন্য আমরা শিক্ষা আইন করার চেষ্টা করছি৷ এ আইন হলে এবং তা প্রয়োগ করা হলে কোচিং বাণিজ্য থাকবে না৷’’ বললেন শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এস এম ওয়াহিদুজ্জামান৷
বিজ্ঞাপন
ডয়চে ভেলেকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘আসলে সৃজনশীল প্রশ্ন করার জন্য যে পরিমাণ সময়, শ্রম ও মেধা দেওয়া লাগে, সেই পরিমাণ সময় আমাদের শিক্ষকদের হাতে অনেক সময় থাকে না৷ এ কারণেই তাঁরা ‘গাইড বই' বা নোট বই নিয়ে বা অনেকক্ষেত্রে সৃজনশীল বিষয়ে তৈরি করা প্রশ্ন নিয়ে সময় বাঁচান৷''
ডয়চে ভেলে: স্কুলে যাঁরা সৃজনশীল শিক্ষা পড়াচ্ছেন, তাঁরা কতটা যোগ্য?
এস এম ওয়াহিদুজ্জামান: আসলে যাঁরা এটা পড়াচ্ছেন, তাঁদের যতটা পরিমাণ প্রশিক্ষণ দেওয়া দরকার তা আমরা দিতে পারিনি৷ এ কথাটা ঠিক৷ কারণ প্রথমে যাঁদের তালিকা করেছি তাঁদের দুই সপ্তাহের এবং মাস্টারদের মাত্র তিন দিনের প্রশিক্ষণ দিয়েছি৷ তিন দিনের প্রশিক্ষণ আসলে ফলপ্রসূ হয় না৷ তারপরও করেছি৷ আর্থিক সংগতি বাড়লে আমরা আরো বেশি দিনের প্রশিক্ষণ দেবো তাঁদের৷ তিন দিনের প্রশিক্ষণে মূলত সৃজনশীল কী এবং কেন – সেটা বোঝানোর চেষ্টা করেছি৷ তাঁদের যোগ্যতা অবশ্য প্যাকটিসের ওপরও অনেকটা নির্ভর করে৷
সরকারি একটি গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় অর্ধেকের বেশি শিক্ষক সৃজনশীল বিষয়ে প্রশ্ন করতে পারেন না৷ তাঁরা গাইড বই দেখে প্রশ্ন করেন? এর থেকে বের হওয়ার পথ কী?
পারেন না, এটা বলা ঠিক নয়৷ আসলে সৃজনশীল প্রশ্ন করার জন্য যে পরিমাণ সময়, শ্রম ও মেধা দেওয়া প্রয়োজন, সেই পরিমাণ সময় তাঁদের হাতে অনেক সময় থাকে না৷ এ কারণেই তাঁরা গাইড বই বা নোট বই নিয়ে অথবা অনেকক্ষেত্রে সৃজনশীল বিষয়ে তৈরি করা প্রশ্ন নিয়ে সময় বাঁচান৷
Interview of Education Director S.M Wahiduzaman - MP3-Stereo
স্কুলে আইসিটি শিক্ষা বাধ্যতামূলক৷ কিন্তু সবখানে এই বিভাগের শিক্ষক নেই কেন?
আসলে আইসিটির শিক্ষক নিলে তাঁর যোগ্যতা কী হবে বা পিএসসি-র নেওয়া হলে তাঁদের যোগ্যতা কী হবে – এ বিষয়টি আসলে প্রক্রিয়াধীন৷ সরকারি কলেজের ক্ষেত্রে পিএসসিই নেওয়া হয়৷ তাঁদের যোগ্যতা কী হবে সে বিষয়ে আমাদের কাছ থেকে ধারণা নেওয়া হয়৷ আগামী ৩৬তম বিসিএস-এ আমরা এ বিষয়ে কিছু শিক্ষক পাবো৷ এছাড়া বেসরকারি পর্যায়ে শিক্ষক নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে৷ কিন্তু অনেককেই আমরা এমপিও দিতে পারছি না৷ এ কারণে অনেকেই খানিকটা হতাশ হচ্ছেন৷ আমরা চেষ্টা করছি যত দ্রুত সম্ভব এর নিষ্পত্তি করার৷
বাংলাদেশে কতগুলো স্কুলে কম্পিউটার ল্যাব আছে? যেগুলো আছে, সেগুলো কি ঠিকমতো ব্যবহার করা হচ্ছে?
২৩ হাজার ৩৩১টি বিদ্যালয়ে ল্যাব স্থাপন করেছি আমরা৷ তবে এগুলো মানসম্পন্ন হয়নি৷ কারণ স্কুল ঘরগুলোই তো বেহাল অবস্থায় আছে৷ সেখানে কীভাবে মানসম্পন্ন ব্যবস্থা নেওয়া যাবে? তবে আমরা শুরু করেছি, কারণ শুরু না করলে হবে কীভাবে? আমরা খোঁজ-খবর রাখছি, কোন স্কুলে ক'টা ল্যাব আছে, কোথায় মাল্টিমিডিয়া আছে – এ সব ব্যাপারগুলো আমরা দেখার চেষ্টা করছি৷ আইসিটি মন্ত্রণালয় থেকে শেখ রাসেল আইসিটি ল্যাব করে দেয়া হচ্ছে৷ ১৫ হাজার স্কুলে এই ল্যাব হবে৷ ইনশাল্লাহ আমরা পারবো৷
উপবৃত্তির কারণে স্কুলে ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের সংখ্যা বেশি৷ এক্ষেত্রে ছেলেদের সঙ্গে কি বৈষম্য করা হচ্ছে না?
তা ঠিক নয়৷ এমডিজিতে বলা ছিল, আমাদের ঝড়ে পড়া মেয়ের সংখ্যা হ্রাস করতে হবে৷ অর্থাৎ ছেলে-মেয়ের সংখ্যা সমান করতে হবে৷ ২০১২ সালেই আমরা এটা অর্জন করতে পেরেছি৷ প্রাথমিকে ৫১ ও মাধ্যমিকে ৫৩ শতাংশ মেয়ে এখন পড়াশোনা করছে৷ তবে এর মানে এই নয় যে, ছেলেরা এতে পিছিয়ে গেল৷ বরং মেয়েরা এগিয়ে এসেছে৷ ছেলেদেরও আমরা এগিয়ে আনার চেষ্টা করছি৷
বিশ্বের সেরা ১১টি শিক্ষা ব্যবস্থা
‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম’ প্রতিবছর ‘গ্লোবাল কম্পিটিটিভনেস রিপোর্ট’ প্রকাশ করে৷ শিক্ষা সহ ১২টি বিষয় বিবেচনায় নিয়ে দেশগুলোর তালিকা তৈরি করে সংগঠনটি৷ ছবিঘরটি শিক্ষা বিষয়ক তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি৷
ছবি: Getty Images/AFP/Simin Wang
নবম: জাপান (৫.৬)
সাহিত্য, বিজ্ঞান ও গণিত চর্চার ক্ষেত্রে ওইসিডি দেশগুলোর মধ্যে জাপানের বেশ নামডাক আছে৷ সেখানকার শিক্ষার্থীরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ে ছয় বছর৷ তারপর তিন বছর জুনিয়র হাইস্কুলে পড়ালেখা শেষ করে আরও তিনবছর হাইস্কুলে যায়৷ এরপর আসে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সময়৷
ছবি: Reuters/T. Hanai
নবম: বার্বাডোজ (৫.৬)
সরকারের বিপুল বিনিয়োগের কারণে সেদেশে স্বাক্ষরতার হার প্রায় ৯৮ শতাংশ৷ বার্বাডোজের বেশিরভাগ স্কুলই সরকারি৷
ছবি: picture alliance/robertharding/H.-P. Merten
নবম: নিউজিল্যান্ড (৫.৬)
তিন ধরনের মাধ্যমিক বিদ্যালয় আছে সেখানে৷ এর মধ্যে সরকারি স্কুলগুলোতে পড়ে প্রায় ৮৫ শতাংশ শিক্ষার্থী৷ আর সরকারিকৃত (বেসরকারিভাবে পরিচালিত) স্কুলে পড়ে ১২ শতাংশ৷ বাকি তিন শতাংশ যায় বেসরকারি স্কুলে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
অষ্টম: এস্তোনিয়া (৫.৭)
২০১৫ সালে জিডিপির প্রায় চার শতাংশ শিক্ষাখাতে ব্যয় করেছিল দেশটি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/V.Kalnina
ষষ্ঠ: আয়ারল্যান্ড (৫.৮)
দেশটির মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর বেশিরভাগই ব্যক্তিমালিকানায় পরিচালিত হলেও অর্থ দিয়ে থাকে সরকার৷ এছাড়া আছে সরকারি কারিগরী বিদ্যালয়৷
ছবি: privat
ষষ্ঠ: কাতার (৫.৮)
‘ভিশন ২০৩০’-এর আওতায় প্রাথমিক থেকে শুরু করে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত প্রতিটি পর্যায়ে শিক্ষার মান উন্নয়নে বিপুল বিনিয়োগ করছে দেশটি৷ সরকারি স্কুলগুলোতে কাতারের নাগরিকদের সন্তানরা বিনামূল্যে পড়ালেখা করতে পারে৷ আর বিদেশিরা তাঁদের সন্তানদের পাঠান বেসরকারি স্কুলে৷
ছবি: imago/imagebroker
পঞ্চম: নেদারল্যান্ডস (৫.৯)
২০১৩ সালে ইউনিসেফ-এর এক প্রতিবেদন বলছে, নেদারল্যান্ডসের শিশুরা সবচেয়ে বেশি সুখি জীবন কাটায়৷ মাধ্যমিক পর্যায়ের আগে স্কুলে শিশুদের কোনো বাড়ির কাজ দেয়া হয় না৷ তাছাড়া লেখাপড়া করতে শিশুদের উপর বেশি চাপ প্রয়োগ করা হয় না৷
ছবি: AFP/Getty Images/C. van der Veen
চতুর্থ: সিঙ্গাপুর (৬.১)
বিজ্ঞান, রিডিং ও গণিত বিষয়ে বিভিন্ন দেশের ১৫ বছর বয়সি শিক্ষার্থীদের মান যাচাইয়ের পদ্ধতি হচ্ছে ‘পিসা’৷ এই তালিকায় সিঙ্গাপুরের শিক্ষার্থীরা সবসময় ভালো করে থাকে৷ তবে সে দেশে শিক্ষার্থীদের বেশ চাপে রাখা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
দ্বিতীয়: বেলজিয়াম (৬.২)
মাধ্যমিক পর্যায়ে চার ধরনের স্কুল আছে – সাধারণ স্কুল, কারিগরি শিক্ষা বিষয়ক স্কুল, বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ ও আর্ট স্কুল৷ ছবিতে স্কুলের শিক্ষার্থীদের আঁকা ছবি দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: DW/T. Schulz
দ্বিতীয়: সুইজারল্যান্ড (৬.২)
প্রাথমিক পর্যায়ের পর শিশুদের দক্ষতা অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের স্কুলে পাঠানো হয়৷ অঞ্চলভেদে জার্মান, ফ্রেঞ্চ ও ইটালীয় ভাষায় শিক্ষা দেয়া হয়৷
ছবি: Imago
প্রথম: ফিনল্যান্ড (৬.৭)
বিশ্বের সেরা শিক্ষা ব্যবস্থার এই দেশে শিক্ষার্থীদের খুব বেশি হোমওয়ার্ক করতে হয় না৷ ১৬ বছর বয়সে গিয়ে মাত্র একটি বাধ্যতামূলক পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়৷ আরও জানতে উপরের (+) চিহ্নে ক্লিক করুন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Wennström
11 ছবি1 | 11
ভালো স্কুলগুলোতে একটি শ্রেণিতে ৮০ থেকে ১০০ জন শিক্ষার্থী ক্লাস করে৷ ফলে শিক্ষার্থীরা ক্লাসে সঠিক শিক্ষা পাচ্ছে না৷ এতে করেই তারা কি কোচিংয়ে আগ্রহী হচ্ছে?
আসলে আমাদের জনসংখ্যা অনেক বেশি৷ অল্প ভুখণ্ডের মধ্যে জনসংখ্যার ঘনত্ব অনেক বেশি বাংলাদেশে৷ আমাদের স্কুল-কলেজের সংখ্যাও বেশি৷ তাই এগুলো আমরা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি৷ তারপরও কোথাও কোথাও আমাদের দুর্বলতা দেখা দিচ্ছে৷ এগুলো আমাদের ‘নলেজে' আছে৷ এ সব দুর্বলতা আমরা কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করছি৷ তাছাড়া ‘কোচিং সেন্টার' নিয়ম করে বা আইন করে বন্ধ করা যাবে না৷ অভিভাবকমণ্ডলীর মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে৷ যাঁরা কোচিং সেন্টার চালাচ্ছেন, তাঁরা তো এটাকে বাণিজ্য হিসেবে দেখছেন৷ আমরা সরকারের পক্ষ থেকে বলছি যে, শিক্ষা প্রতিটি মানুষের মৌলিক অধিকার৷ তাই এর ওপর নিয়ন্ত্রণ আনার জন্য আমরা শিক্ষা আইন করার চেষ্টা করছি৷ আইনটা হলে এবং তার প্রয়োগ হলে এত ‘কোচিং সেন্টার' থাকবে না৷
সরকার বিনামূল্যে বই দিচ্ছে, কিন্তু স্কুলগুলোর চাপে শিক্ষার্থীরা নোট-গাইড বই কিনতে বাধ্য হচ্ছে৷ এক্ষেত্রে অভিভাবকদের সন্তানের জন্য নোট বই কিনতেই দুই থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হচ্ছে৷ তাহলে বিনামূল্যে বই দিয়ে কী লাভ?
এর সুফল যাতে ছাত্র-ছাত্রীরা না পায়, তার জন্য একটি মহল আছে৷ এঁরাই এই সব ‘কোচিং সেন্টার' চালাচ্ছেন৷ আমরা যদি ঠিকভাবে কাজ করি তাহলে এঁদের মোকাবেলা করে আমরা এগিয়ে যেতে পারবো৷
স্কুলগুলোতে দলীয় লোকদের নিয়োগ দেওয়া হয় বলে অভিযোগ আছে৷ এটা থেকে বের হওয়ার উপায় কী?
এখন আমরা এনটিআরসিএ-র মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ দিচ্ছি৷ তাই এ ধরনের অভিযোগ অনেক কমে গেছে৷ তবে কোথাও কোথাও অভিযোগ ছিল, এখনও আছে৷ এনটিআরসিএ-র মাধ্যমে যাঁদের নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, তাঁদের মধ্যে রাজনীতি বা আঞ্চলিকতার প্রভাব অনেক কমে যাচ্ছে৷ আগামীতে আমরা প্রধান শিক্ষক বা সহকারী শিক্ষক হিসেবে যাঁদের ম্যানিজিং কমিটি নিয়োগ দিচ্ছে, তাঁ আমরা এনটিআরসিএ-র মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা করব৷ তাহলে এই প্রক্রিয়া আরো স্বচ্ছ হবে, ভালো হবে৷
আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷
দেশে দেশে, ক্লাসে ক্লাসে
স্কুলের ক্লাসরুম বলতে সব কিছু বোঝায়৷ এক কথায়, ছাত্রছাত্রীরা যেখানে বসে পড়াশুনো করে, শিক্ষক-শিক্ষিকারা তাদের দেখাশুনো করেন, সেটাই হলো ক্লাসরুম৷
ছবি: Reuters/I. Alvarado
আফগানিস্তান: প্রগতি
মহাজেরা আর্মানি উত্তর আফগানিস্তানের জালালবাদের কাছে একটি মেয়েদের ক্লাসের শিক্ষিকা৷ ২০০১ সালে তালেবান জঙ্গিরা বিতাড়িত হওয়ার আগে এই অঞ্চলে মেয়েদের স্কুলে যাওয়াই বারণ ছিল৷ আজ মেয়েদের প্রায় তিন-চতুর্থাংশ নিয়মিতভাবে স্কুলে যায়৷
ছবি: Reuters/Parwiz
জাপান: ডিসিপ্লিন
টোকিও-র তাকিনাগাওয়া প্রাইমারি স্কুলের পড়ুয়ারা দুপুরে খেতে বসেছে৷ জাপানের শিক্ষা ব্যবস্থা বিশ্বসেরাদের মধ্যে গণ্য৷ পিসা-র জরিপে জাপান নিয়মিতভাবে প্রথম দশটি দেশের মধ্যে পড়ে৷ অবশ্য বলা হয় যে, স্কুলে ভালো করার জন্য ছেলে-মেয়েদের ওপর বড় বেশি চাপ দেওয়া হয়ে থাকে৷
ছবি: Reuters/T. Hanai
ব্রাজিল: ভাসন্ত স্কুল
মানাউস-এর ‘দ্বিতীয় সাও জোসে’ স্কুলটি বস্তুত নদীবক্ষে৷ তা-ও আবার যে কোনো নদী নয়: খোদ অ্যামাজোন! অবশ্য ব্রাজিলেও সরকারি স্কুলগুলোর বিশেষ সুনাম নেই৷ ওদিকে বেসরকারি স্কুলগুলোর মান ভালো হলেও, তাদের ফি বেশি৷
ছবি: Reuters/B. Kelly
যুক্তরাষ্ট্র: সমৃদ্ধির দেশে অসাম্য
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শিল্পোন্নত দেশগুলির মধ্যে প্রথম সারিতে৷ অথচ এখানকার শিক্ষাব্যবস্থায় ধনি-দরিদ্রের ফারাক আছে, বলে অভিযোগ৷ শ্বেতাঙ্গ ছেলে-মেয়েরা কৃষ্ণাঙ্গ কিংবা ল্যাটিন অ্যামেরিকান ছেলে-মেয়েদের চেয়ে ভালো ফলাফল করে থাকে৷ চিকাগোর এই প্রাইমারি স্কুলটিতে অবশ্য এখনও ফলাফল নিয়ে কারো মাথাব্যথা নেই৷
ছবি: Reuters/J. Young
ভিয়েতনাম: অন্ধকারে দেহ আলো
আলো নেই, বই নেই, তা সত্ত্বেও ভিয়েতনামে এই তৃতীয় শ্রেণির পড়ুয়ারা পড়া করে চলেছে৷ মনে রাখতে হবে: বিশ্বব্যাপী পিসা জরিপে কিন্তু ভিয়েতনাম জার্মানির চেয়ে ভালো ফলাফল করেছে৷
ছবি: Reuters/Kham
ব্রিটেন: পরিপাটি
ইংল্যান্ডে স্কুলের ইউনিফর্ম চালু হয়েছে বহু যুগ আগে৷ মিডলসেক্স-এর ‘হ্যারো’ স্কুলে হ্যাট পর্যন্ত পরতে হয়৷ মজার কথা, সুদীর্ঘ ঐতিহ্যবাহী এই স্কুলটিতে কিন্তু ইউনিফর্ম সংক্রান্ত কোনো লিখিত নিয়মাবলী নেই৷
ছবি: Reuters/S. Plunkett
পাকিস্তান: পথে বসে
অথবা পার্কে বসে পড়াশোনা৷ লক্ষণীয় যে, মেয়েরা আর ছেলেরা একসঙ্গে বসেই পড়াশোনা করছে, পাকিস্তানের সর্বত্র যেটা সম্ভব নয়৷
ছবি: Reuters/C. Firouz
মরক্কো: বেগুনি রঙের ক্লাসরুম
রাবাত-এর উদাইয়া প্রাইমারি স্কুলের ক্লাসরুমটি সুন্দর করে রং করা৷ মুশকিল এই যে, গোড়ায় ৯২ শতাংশ ছেলে-মেয়ে স্কুলে গেলেও, পনেরোয় পা দেবার আগেই তাদের অর্ধেক স্কুল ছেড়ে দেয়৷ ১৫ বছরের কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে প্রায় ৩০ শতাংশ লিখতে-পড়তে জানে না৷
ছবি: Reuters/Y. Boudlal
কেনিয়া: বস্তির স্কুল
কেনিয়ায় ২০০৩ সাল থেকে প্রাইমারি স্কুলে যেতে ফি লাগে না৷ তবে শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ বিশেষ বাড়ানো হয়নি৷ ক্লাসে ছাত্রসংখ্যা বেশি৷ নাইরোবির দক্ষিণে কিবেরা বস্তি এলাকার এই স্কুলটিতে বেঞ্চের চেয়ে পড়ুয়া বেশি৷
ছবি: Reuters/N. Khamis
মালয়েশিয়া: সুখি ছাত্রছাত্রী
পিসা জরিপে মালয়েশিয়ার ছাত্রছাত্রীরা বলেছে, তারা সুখি৷ নুরুল ইমান মাদ্রাসার পড়ুয়াদের ক্ষেত্রেও তা প্রযোজ্য৷
ছবি: Reuters/O. Harris
ইউক্রেন: নানা ভাষা
ইউক্রেনে ছেলে-মেয়েরা ক্লাস ওয়ান থেকেই যে কোনো একটা বিদেশি ভাষা শিখতে শুরু করে৷ কিয়েভ-এর এই লাইসিয়াম বা হাই স্কুলটিতে পঞ্চম শ্রেণি থেকে একটি দ্বিতীয় বিদেশি ভাষা শিখতে হয়৷ ছাত্রছাত্রীদের অনেকে ইউক্রেনীয় ও রুশ ভাষা ছাড়া ইংরেজি, ফরাসি অথবা জার্মান বলতে পারে৷
ছবি: Reuters/G. Garanich
চিলি: পড়ার কি কোনো শেষ আছে?
সান্তিয়াগোর ‘লাউরা ভিকুনা’ সান্ধ্য স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের বয়স হয়েছে বটে, তবুও তারা এককালে যে স্কুলের পড়া শেষ করতে পারেননি – সম্ভবত আর্থিক সামর্থ্য ছিল না বলে – আজ সেটাই সমাপ্ত করতে বদ্ধপরিকর৷