1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

শিক্ষা আইন হলে কোচিং বন্ধ হবে

সমীর কুমার দে ঢাকা
১৪ মার্চ ২০১৭

‘‘শিক্ষা একটি মৌলিক অধিকার৷ এর ওপর নিয়ন্ত্রণ করার জন্য আমরা শিক্ষা আইন করার চেষ্টা করছি৷ এ আইন হলে এবং তা প্রয়োগ করা হলে কোচিং বাণিজ্য থাকবে না৷’’ বললেন শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এস এম ওয়াহিদুজ্জামান৷

Bangladesch S M Wahiduzzaman
ছবি: Privat

ডয়চে ভেলেকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘আসলে সৃজনশীল প্রশ্ন করার জন্য যে পরিমাণ সময়, শ্রম ও মেধা দেওয়া লাগে, সেই পরিমাণ সময় আমাদের শিক্ষকদের হাতে অনেক সময় থাকে না৷ এ কারণেই তাঁরা ‘গাইড বই' বা নোট বই নিয়ে বা অনেকক্ষেত্রে সৃজনশীল বিষয়ে তৈরি করা প্রশ্ন নিয়ে সময় বাঁচান৷''

ডয়চে ভেলে: স্কুলে যাঁরা সৃজনশীল শিক্ষা পড়াচ্ছেন, তাঁরা কতটা যোগ্য?

এস এম ওয়াহিদুজ্জামান: আসলে যাঁরা এটা পড়াচ্ছেন, তাঁদের যতটা পরিমাণ প্রশিক্ষণ দেওয়া দরকার তা আমরা দিতে পারিনি৷ এ কথাটা ঠিক৷ কারণ প্রথমে যাঁদের তালিকা করেছি তাঁদের দুই সপ্তাহের এবং মাস্টারদের মাত্র তিন দিনের প্রশিক্ষণ দিয়েছি৷ তিন দিনের প্রশিক্ষণ আসলে ফলপ্রসূ হয় না৷ তারপরও করেছি৷ আর্থিক সংগতি বাড়লে আমরা আরো বেশি দিনের প্রশিক্ষণ দেবো তাঁদের৷ তিন দিনের প্রশিক্ষণে মূলত সৃজনশীল কী এবং কেন – সেটা বোঝানোর চেষ্টা করেছি৷ তাঁদের যোগ্যতা অবশ্য প্যাকটিসের ওপরও অনেকটা নির্ভর করে৷

সরকারি একটি গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় অর্ধেকের বেশি শিক্ষক সৃজনশীল বিষয়ে প্রশ্ন করতে পারেন না৷ তাঁরা গাইড বই দেখে প্রশ্ন করেন? এর থেকে বের হওয়ার পথ কী?

পারেন না, এটা বলা ঠিক নয়৷ আসলে সৃজনশীল প্রশ্ন করার জন্য যে পরিমাণ সময়, শ্রম ও মেধা দেওয়া প্রয়োজন, সেই পরিমাণ সময় তাঁদের হাতে অনেক সময় থাকে না৷ এ কারণেই তাঁরা গাইড বই বা নোট বই নিয়ে অথবা অনেকক্ষেত্রে সৃজনশীল বিষয়ে তৈরি করা প্রশ্ন নিয়ে সময় বাঁচান৷

Interview of Education Director S.M Wahiduzaman - MP3-Stereo

This browser does not support the audio element.

স্কুলে আইসিটি শিক্ষা বাধ্যতামূলক৷ কিন্তু সবখানে এই বিভাগের শিক্ষক নেই কেন?

আসলে আইসিটির শিক্ষক নিলে তাঁর যোগ্যতা কী হবে বা পিএসসি-র নেওয়া হলে তাঁদের যোগ্যতা কী হবে – এ বিষয়টি আসলে প্রক্রিয়াধীন৷ সরকারি কলেজের ক্ষেত্রে পিএসসিই নেওয়া হয়৷ তাঁদের যোগ্যতা কী হবে সে বিষয়ে আমাদের কাছ থেকে ধারণা নেওয়া হয়৷ আগামী ৩৬তম বিসিএস-এ আমরা এ বিষয়ে কিছু শিক্ষক পাবো৷ এছাড়া বেসরকারি পর্যায়ে শিক্ষক নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে৷ কিন্তু অনেককেই আমরা এমপিও দিতে পারছি না৷ এ কারণে অনেকেই খানিকটা হতাশ হচ্ছেন৷ আমরা চেষ্টা করছি যত দ্রুত সম্ভব এর নিষ্পত্তি করার৷

বাংলাদেশে কতগুলো স্কুলে কম্পিউটার ল্যাব আছে? যেগুলো আছে, সেগুলো কি ঠিকমতো ব্যবহার করা হচ্ছে?

২৩ হাজার ৩৩১টি বিদ্যালয়ে ল্যাব স্থাপন করেছি আমরা৷ তবে এগুলো মানসম্পন্ন হয়নি৷ কারণ স্কুল ঘরগুলোই তো বেহাল অবস্থায় আছে৷ সেখানে কীভাবে মানসম্পন্ন ব্যবস্থা নেওয়া যাবে? তবে আমরা শুরু করেছি, কারণ শুরু না করলে হবে কীভাবে? আমরা খোঁজ-খবর রাখছি, কোন স্কুলে ক'টা ল্যাব আছে, কোথায় মাল্টিমিডিয়া আছে – এ সব ব্যাপারগুলো আমরা দেখার চেষ্টা করছি৷ আইসিটি মন্ত্রণালয় থেকে শেখ রাসেল আইসিটি ল্যাব করে দেয়া হচ্ছে৷ ১৫ হাজার স্কুলে এই ল্যাব হবে৷ ইনশাল্লাহ আমরা পারবো৷

উপবৃত্তির কারণে স্কুলে ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের সংখ্যা বেশি৷ এক্ষেত্রে ছেলেদের সঙ্গে কি বৈষম্য করা হচ্ছে না? 

তা ঠিক নয়৷ এমডিজিতে বলা ছিল, আমাদের ঝড়ে পড়া মেয়ের সংখ্যা হ্রাস করতে হবে৷ অর্থাৎ ছেলে-মেয়ের সংখ্যা সমান করতে হবে৷ ২০১২ সালেই আমরা এটা অর্জন করতে পেরেছি৷ প্রাথমিকে ৫১ ও মাধ্যমিকে ৫৩ শতাংশ মেয়ে এখন পড়াশোনা করছে৷ তবে এর মানে এই নয় যে, ছেলেরা এতে পিছিয়ে গেল৷ বরং মেয়েরা এগিয়ে এসেছে৷ ছেলেদেরও আমরা এগিয়ে আনার চেষ্টা করছি৷

ভালো স্কুলগুলোতে একটি শ্রেণিতে ৮০ থেকে ১০০ জন শিক্ষার্থী ক্লাস করে৷ ফলে শিক্ষার্থীরা ক্লাসে সঠিক শিক্ষা পাচ্ছে না৷ এতে করেই তারা কি কোচিংয়ে আগ্রহী হচ্ছে?

আসলে আমাদের জনসংখ্যা অনেক বেশি৷ অল্প ভুখণ্ডের মধ্যে জনসংখ্যার ঘনত্ব অনেক বেশি বাংলাদেশে৷ আমাদের স্কুল-কলেজের সংখ্যাও বেশি৷ তাই এগুলো আমরা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি৷ তারপরও কোথাও কোথাও আমাদের দুর্বলতা দেখা দিচ্ছে৷ এগুলো আমাদের ‘নলেজে' আছে৷ এ সব দুর্বলতা আমরা কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করছি৷ তাছাড়া ‘কোচিং সেন্টার' নিয়ম করে বা আইন করে বন্ধ করা যাবে না৷ অভিভাবকমণ্ডলীর মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে৷ যাঁরা কোচিং সেন্টার চালাচ্ছেন, তাঁরা তো এটাকে বাণিজ্য হিসেবে দেখছেন৷ আমরা সরকারের পক্ষ থেকে বলছি যে, শিক্ষা প্রতিটি মানুষের মৌলিক অধিকার৷ তাই এর ওপর নিয়ন্ত্রণ আনার জন্য আমরা শিক্ষা আইন করার চেষ্টা করছি৷ আইনটা হলে এবং তার প্রয়োগ হলে এত ‘কোচিং সেন্টার' থাকবে না৷

সরকার বিনামূল্যে বই দিচ্ছে, কিন্তু স্কুলগুলোর চাপে শিক্ষার্থীরা নোট-গাইড বই কিনতে বাধ্য হচ্ছে৷ এক্ষেত্রে অভিভাবকদের সন্তানের জন্য নোট বই কিনতেই দুই থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হচ্ছে৷ তাহলে বিনামূল্যে বই দিয়ে কী লাভ?  

এর সুফল যাতে ছাত্র-ছাত্রীরা না পায়, তার জন্য একটি মহল আছে৷ এঁরাই এই সব ‘কোচিং সেন্টার' চালাচ্ছেন৷ আমরা যদি ঠিকভাবে কাজ করি তাহলে এঁদের মোকাবেলা করে আমরা এগিয়ে যেতে পারবো৷

স্কুলগুলোতে দলীয় লোকদের নিয়োগ দেওয়া হয় বলে অভিযোগ আছে৷ এটা থেকে বের হওয়ার উপায় কী? 

এখন আমরা এনটিআরসিএ-র মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ দিচ্ছি৷ তাই এ ধরনের অভিযোগ অনেক কমে গেছে৷ তবে কোথাও কোথাও অভিযোগ ছিল, এখনও আছে৷ এনটিআরসিএ-র মাধ্যমে যাঁদের নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, তাঁদের মধ্যে রাজনীতি বা আঞ্চলিকতার প্রভাব অনেক কমে যাচ্ছে৷ আগামীতে আমরা প্রধান শিক্ষক বা সহকারী শিক্ষক হিসেবে যাঁদের ম্যানিজিং কমিটি নিয়োগ দিচ্ছে, তাঁ আমরা এনটিআরসিএ-র মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা করব৷ তাহলে এই প্রক্রিয়া আরো স্বচ্ছ হবে, ভালো হবে৷

আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ