নরওয়ে সরকার সোমবার পুরো চেহারা ঢেকে রাখা হয় এমন মুসলিম পোশাক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিষিদ্ধের লক্ষ্যে একটি বিল প্রস্তাব করেছে৷ নার্সারি থেকে বিশ্ববিদ্যালয় অবধি সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে এটা প্রযোজ্য হবে৷
বিজ্ঞাপন
নরওয়ের ক্ষমতাসীন রক্ষণশীল এবং অভিবাসনবিরোধী দলগুলোর জোট সরকার গতবছরই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিকাব, বোরকা, মুখ ঢাকা টুপি এবং মুখোশ নিষিদ্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল৷ তারা মনে করে, ক্লাসরুমে শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকের মধ্যে যোগাযোগে বিঘ্ন ঘটায় এ ধরণের পোশাক৷
দেশটির শিক্ষা এবং গবেষণা বিষয়ক মন্ত্রী এ বিষয়ে বলেন, ‘‘মুখ ঢেকে রাখে এমন পোশাক আমরা নার্সারি, স্কুল বা বিশ্ববিদ্যালয়ে চাই না৷ এই পোশাক ভালো যোগাযোগের পথ রুদ্ধ করে, যা শিক্ষার্থীদের ভালো শিক্ষা দেয়ার পথে এক অন্তরায়৷’’
মুসলিম নারীরা যেসব উপায়ে ‘পর্দা’ করে
হিজাব, বোরকা বা নিকাবের মতো নারীদের জন্য বিভিন্ন ইসলামি পোশাক নিয়ে ইউরোপে এখন তুমুল বিতর্ক চলছে৷ কোনো কোনো দেশ এ সব পোশাক নিষিদ্ধের পক্ষে৷ মুসলমান নারীদের শরীর ঢাকার পোশাকগুলি কী কী – চলুন জেনে নেই৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
হিজাব
দেশ এবং সংস্কৃতিভেদে অনেক মুসলমান নারী হিজাব পরিধান করেন৷ মূলত মাথা, চুল এবং গলা এবং ঘাড়ের খোলা অংশ ঢাকা হয় এই পোশাক দিয়ে৷ বিভিন্ন ডিজাইনের এবং রঙের হিজাব পাওয়া যায় যেগুলো পরলে চেহারা পুরোটাই দেখা যায়৷
ছবি: Getty Images/AFP/Seyllou
নিকাব
নিকাব পরলে নারীর পুরো শরীর ঢেকে যায়, শুধু চোখ দু’টো খোলা থাকে৷ সাধারণত পুরোপুরি রক্ষণশীল মুসলমান নারীরা নিকাব পরেন৷ নিকাব মূলত কালো রঙের হলেও অন্যান্য রঙের নিকাবও ইদানীং দেখা যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Roessler
দোপাট্টা
দক্ষিণ এশিয়ার মুসলিম নারীদের মধ্যে জনপ্রিয় দোপাট্টা বা ওড়না৷ নিকাব বা বোরকার মতো না হলেও এই পোশাকেও নারীর শরীর অনেকটা ঢাকা থাকে৷ তবে চুলের কিছুটা, চেহারা এবং গলা দেখা যায়৷ দক্ষিণ এশিয়ায় অন্যান্য ধর্মের মেয়েরাও দোপাট্টা পরেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/S.Jaiswal
আল-আমিরা
মূলত দুই টুকরো কাপড় দিয়ে আল-আমিরা তৈরি করা হয়৷ একটি টুকরো দিয়ে চুল পুরোপুরি ঢেকে দেয়া হয় আর অন্য টুকরোটা হিজাবের মতো জড়িয়ে দেয়া হয়৷ কম বয়সি মুসলিম নারীদের মধ্যে এই আল-আমিরা বেশ জনপ্রিয়৷
শায়লা
শায়লা হচ্ছে লম্বা, চারকোনা এক ধরনের স্কার্ফ, যা গল্ফ অঞ্চলের মুসলিম নারীদের মধ্যে জনপ্রিয়৷ এটি সাধারণত কালো রঙের হয় এবং কাঁধের কাছে পিন দিয়ে আটকাতে হয় এটিকে৷ তবে হিজাবের মতো সবকিছু ঢেকে রাখে না শায়লা৷
ছবি: Getty Images/AFP/A.Rochman
এশার্প
অনেকটা হিজাবের মতো হলেই এসার্প তৈরি হয় সিল্ক দিয়ে এবং বেশ উজ্জ্বল রঙের হয়৷ মূলত তুরস্কের মুসলিম নারীরা এটা পরিধান করেন৷ এটি বিভিন্ন রং এবং ডিজাইনে পাওয়া যায়৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Altan
কেরুডুং আর টুডুং
ইন্দোনেশিয়ার আধুনিক মেয়েরা আজকাল যে হিজাব ব্যবহার করছে, তার নাম কেরুডুং৷ আর প্রতিবেশী দেশ মালয়েশিয়ায় নারীদের মধ্যে জনপ্রিয় টুডুং৷ এই দু’টি অনেকটা চাদরের মতো হলেও, একটি অংশে সুন্দর প্যার্টার্ন থাকে এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে থাকে বিভিন্ন রঙের শেডও৷ হিজাবের মতো টুডুং বা কেরুডুং-ও চুল, গলা এবং কাঁধ পুরোপুরি ঢেকে ফেলে৷
ছবি: Getty Images/AFP/S.Khan
চাদর
ইরানের মেয়েদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় চাদর৷ বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় সাধারণত সে দেশের নারীরা চাদর পরে নেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/B. Mehri
বোরকা
মুসলিম নারীরা সারা চেহারা এবং সারা শরীর পুরোপুরি ঢেকে ফেলে বোরকা পরিধান করেন৷ ক্ষেত্রবিশেষে বোরকার চোখের অংশে জাল দেয়া থাকে, যাতে তারা দেখতে পারেন৷ কালো ছাড়াও বিভিন্ন রংঙের বোরকা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Arshad Arbab
জিলবুবস
সারা শরীর ঢেকে রেখেও নারীর স্তন এবং পশ্চাতদেশের আকার ফুটিয়ে তোলা যায় এই পোশাকে৷ এ জন্যই একে জিলবুবস বলা হয়৷ ইন্দোনেশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই পোশাকের ব্যবহার দেখা যায়৷ তবে এই পোশাক নিয়ে বিতর্ক রয়েছে৷ দ্রষ্টব্য: মুসলিম নারীদের পোশাক সংক্রান্ত বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ছবিঘরটি তৈরি করা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Indahono
10 ছবি1 | 10
প্রস্তাবিত এই আইনের ফলে যাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন, তাঁদের সঙ্গে আগামী কয়েকমাস আলোচনা করবে নরওয়ের কর্তৃপক্ষ৷ সেদেশের পত্রিকায় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, আগামী বছরের বসন্তে বিলটি অনুমোদিত হতে পারে৷ প্রায় সব রাজনৈতিক দলের এই নিষেধাজ্ঞায় সমর্থন রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে৷
প্রসঙ্গত, নরওয়ের স্থানীয় কর্তৃপক্ষ চাইলে এক্ষুনি স্কুলে নিকাব নিষিদ্ধ করতে পারে, তবে সে দেশের জাতীয় স্তরে এখনো এই বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো নীতিমালা নেই৷ তাছাড়া নিকাব নিষিদ্ধের আইন কেউ অমান্য করলে তার কী শাস্তি হবে তা-ও প্রস্তাবিত বিলে উল্লেখ করা হয়নি৷
নরওয়েতে নিকাব পরার চল তেমন একটা না থাকলেও মাঝেমাঝেই এই বিষয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক সৃষ্টি হয়৷ দ্য ইসলামিক কাউন্সিল নামক মুসলমানদের প্রতিনিধিত্বকারী একটি সংগঠন নিকাব পরেন এমন একজনকে নিয়োগ করলে সেটি নিয়ে চলতি বছরের শুরুতে উত্তপ্ত বিতর্ক শুরু হয়৷ নরডিক দেশটিতে আগামী সেপ্টেম্বরে নির্বাচন৷
নিকাব নিষিদ্ধ প্রসঙ্গে সে দেশের অভিবাসী এবং একীভূতকরণ অন্তর্বর্তী মন্ত্রী পার স্যান্ডবার্গ এই বিষয়ে বলেন, ‘‘নিকাব এবং বোরকার মতো মুখ ঢেকে রাখে এমন পোশাকের কোনো স্থান নরওয়ের স্কুলে নেই৷ একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারাটা একটি মৌলিক আবশ্যকতা৷’’
এআই/এসিবি (এএফপি, রয়টার্স)
প্রিয় পাঠক, আপনি কিছু বলতে চাইলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে...