সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ৩১ মার্চ পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে৷ অনেক দেশই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ তবে বাংলাদেশ অনেক দিক থেকেই আলাদা, তাই শিক্ষার্থীদের বড় একটা অংশ ও তাদের অভিভাবকেরা যে নতুন সংকটে পড়বেন তাতে কোনো সন্দেহ নেই৷
বিজ্ঞাপন
বিশেষ করে ছোট-বড় সব স্কুলপড়ুয়াকে ঘরে রাখা যে কঠিন হবে সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই৷ কী আছে ঘরে? অবসর বিনোদনের কী ব্যবস্থা রয়েছে বাংলাদেশের ঘরে ঘরে? কম্পিউটারের সামনে পড়ে থাকার ব্যবস্থা? তা-ই বা কত শতাংশ স্কুলপড়ুয়ার ঘরে আছে? তাছাড়া লম্বা সময় ধরে কম্পিউটারের সামনে থাকাও তো স্বাস্থ্যের জন্য, মননের জন্য ভালো নয়৷ ক্যারম, দাবা, লুডু, বাগাডুলি, টেবিল টেনিসের মতো ঘরের ভেতরে খেলার উপযোগী খেলার সুযোগ এবং চর্চা কোনোটাই প্রায় নেই বললেই চলে৷
করোনায় করণীয়
করোনা প্রতিরোধে কী করতে হবে তা নিয়ে একটি নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট-আইইডিসিআর৷ ছবিঘরে দেখুন বিস্তারিত৷
ছবি: picture-alliance/dpa/ZUMA Wire/Cdc
বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস
আট মার্চ বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো করোনা ভাইরাস আক্রান্ত তিন রোগী শনাক্তের ঘোষণা দিয়েছে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান-আইইডিসিআর৷ ইনস্টিটিউটের পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা জানিয়েছেন, আক্রান্তদের মধ্যে দুজন সম্প্রতি ইটালি থেকে ফিরেছেন৷ পরবর্তীতে তাদের একজনের সংস্পর্শে পরিবারের আরেক সদস্য আক্রান্ত হয়েছেন৷ তাদের বয়স ২০ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে৷
ছবি: Privat
করোনা যেভাবে ছড়ায়
মোট সাতটি প্রজাতির করোনা ভাইরাস মানুষের দেহে সংক্রমিত হতে পারে৷ তার একটি ২০১৯ এন করোনা ভাইরাস৷ এই ভাইরাসটি প্রথমে প্রাণী থেকে মানুষে এবং এখন তা মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমিত হচ্ছে৷ এটি ফুসফুসে সংক্রমণ ঘটায়৷ হাঁচি, কাশি, কফ, থুথু বা আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শেও এই রোগ ছড়ায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/ZUMA Wire/Cdc
যেসব লক্ষণ দেখা যায়
শরীরে নভেল করোনা ভাইরাস প্রবেশের পর দুই থেকে ১৪ দিনের মধ্যে লক্ষণ দেখা দেয়৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রথমে জ্বর হয়৷ এছাড়াও শুকনো কাশি, গলা ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া হতে পারে৷ কারো ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, শ্বাসকষ্ট, হৃদরোগ, কিডনি সমস্যা, ক্যান্সার থাকলে দেহের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ বিকল হতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/XinHua/Xiong Qi
কী করবেন?
প্রতিরোধে ব্যক্তিগত সচেতনতাই একমাত্র উপায়৷ ঘন ঘন সাবান ও পানি দিয়ে অন্তত ২০ সেকেন্ড সময় ধরে হাত ধুতে হবে৷ অপরিষ্কার হাতে চোখ, নাক, মুখ স্পর্শ করা যাবে না৷ আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে৷ হাঁচি, কাশি দেয়ার সময় বাহু, টিস্যু বা কাপড় দিয়ে নাক-মুখ ঢেকে রাখতে হবে৷ অসুস্থ পশু-পাখির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন৷ মাছ-মাংস ভালোভাবে রান্না করে খান৷
ছবি: Reuters/R. Patrasso
চিকিৎসা কী?
এন করোনা ভাইরাস নতুন হওয়ায় এর কোন টিকা বা ভ্যাকসিন এখনও আবিষ্কার হয়নি৷ চিকিৎসা লক্ষণভিত্তিক৷
ছবি: picture-alliance/dpa/XinHua/C. Min
অসুস্থ হলে করণীয়
অসুস্থ হলে ঘরে থাকতে পরামর্শ দিয়েছে আইইডিসিআর৷ তবে মারাত্মক অসুস্থ হলে নিকটস্থ সদর হাসপাতালে যেতে হবে৷ রোগীকে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে৷
ছবি: Reuters/W. Rattay
সরকারের নির্দেশনা
কেউ যদি চীন, সিঙ্গাপুর, জাপান, দক্ষিন কোরিয়া, ইতালি, ইরান এসব দেশে ভ্রমণ করে থাকেন এবং ফিরে আসার ১৪ দিনের মধ্যে যদি জ্বর-কাশি-গলা-ব্যথা-শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়, তাহলে অতি দ্রুত আইইডিসিআর-এর হটলাইন নাম্বারে যোগাযোগ করুন এবং কুয়েত-মৈত্রী সরকারি হাসপাতালের ডাক্তারের পরামর্শ নিন৷
৩১ মার্চ পর্যন্ত ঘরে কীভাবে সময় কাটাবে স্কুলের শিক্ষার্থীরা? মা-বাবা কীভাবে ঘরে রাখবেন তাদের?
প্রশ্নগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ, কারণ, করোনা থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকতে শিক্ষার্থীরা যাতে ভিড় এড়াতে পারে সে কারণেই সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার৷
স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে দুশ্চিন্তা অনেক বেশি, কারণ, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বা সেই পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অনেক বেশি সচেতনতা আশা করা যায়৷ সেই তুলনায় স্কুল, মাদ্রাসার ছোট ছোট শিক্ষার্থীদের বয়স এবং সচেতনতা স্বাভাবিক অবস্থায় অনেক কম৷
এমন নয় যে এই সমস্যাটা শুধু বাংলাদেশের৷ জার্মানিসহ ইউরোপ এবং ইউরোপের বাইরের অনেক দেশেই এখন স্কুল বন্ধ৷ এসব দেশের মধ্যে অনেকগুলোতেই ঘরে বিনোদনের ব্যবস্থাও রয়েছে৷ তারপরও কিছু শিক্ষার্থীর মাঝে করোনার কারণে পাওয়া ছুটি ঘরের বাইরে কাটানোর প্রবণতা দেখা যাচ্ছে৷
এই প্রবণতা বাস্তবিক কারণেই বাংলাদেশে যে অনেক বেশি হবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই৷
এই মুহূর্তে ঘরে ঘরে বিনোদনের ব্যবস্থা করা বা কারো পক্ষে করে দেয়া তো সম্ভব নয়৷ তাই বই পড়ায় সবাইকে উৎসাহিত করার উদ্যোগ খুব দরকার৷ শিক্ষা মন্ত্রণালয় এই সময়ে করোনা এবং বিনোদন ও শিক্ষামূলক ভিডিও প্রচারের বিশেষ উদ্যোগও নিতে পারে৷
একুশ শতকে এসেও প্রচার করা হচ্ছে, গোমূত্র খেলে শরীর শুদ্ধ হয়ে যাবে, হবে না করোনা। এমনই দাবি নিয়ে ভারতের রাজধানী দিল্লিতে আয়োজিত হল 'গোমূত্র পার্টি'। আয়োজনে অখিল ভারত হিন্দু মহাসভা।
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Qadri
গোমূত্র পার্টি
চীনে যখন করোনার প্রকোপ শুরু হয়ে ছিল, তখনই বিজেপি এবং তার শাখা সংগঠনগুলির কোনও কোনও নেতা বলেছিলেন, গোমূত্র পান করলে করোনা হবে না। ভারতে করোনা ভাইরাস প্রবেশ করার পরে সেই আশ্চর্য কাজটিই প্রকাশ্যে করে দেখাল গেরুয়া শিবির। আয়োজন হল গোমূত্র পার্টির।
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Qadri
বাবা চক্রপানি মহারাজ
স্বঘোষিত এই বাবাজির ধর্মীয় গোষ্ঠীর নাম অখিল ভারত হিন্দু মহাসভা। কেন্দ্রীয় শাসক দল বিজেপির সঙ্গে তাঁর ভালই ঘনিষ্ঠতা। এর আগেও বিতর্কিত মন্তব্য করে খবরের শিরোনামে এসেছেন তিনি। কেরালায় বন্যায় সময় বলেছিলেন, যাঁরা গোমাংস খান, তাঁদের ত্রাণ দেওয়া উচিত নয়।
ছবি: AFP/J. Andrabi
গোমূত্র ভক্ত
সেই চক্রপানি বাবাই এ বার দিল্লিতে গোমূত্র পার্টির আয়োজন করেছিলেন। যেখানে প্রায় ২০০ জন যোগ দিয়েছিলেন। গোমূত্র, গোবর, দুধ, ঘি দিয়ে তৈরি হয়েছিল পানীয়। ভক্তরা খেলেনও তা ঢকঢক করে। এতেই না কি প্রতিহত হবে করোনা।
ছবি: Reuters/D. Siddiqui
বিজেপির লাইনেই বাবাজি
চক্রপানি মহারাজ প্রথম নন, এর আগে গোমূত্র খেয়ে করোনা প্রতিহত করার কথা বলেছিলেন আসামের বিজেপি নেত্রী সুমন হরিপ্রিয়। উত্তরপ্রদেশ থেকে জেতা বিজেপির বিতর্কিত সাংসদ প্রজ্ঞা ঠাকুর বলেছিলেন গোমূত্র খেলে ক্যান্সারও আটকানো যায়।
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Qadri
কারা গেলেন পার্টিতে
শনিবার চক্রপানি মহারাজের গোমূত্র পার্টিতে অংশ নিয়েছিলেন প্রায় ২০০ জন। তাঁদের অধিকাংশই মহারাজের ভক্ত। বহু গরিব মানুষ নিছক অন্ধবিশ্বাস থেকে হাজির হয়েছিলেন সেখানে।
ছবি: Reuters/D. Siddiqui
মাথায় হাত চিকিৎসকদের
গোমূত্র পার্টির কথা শুনে মাথায় হাত চিকিৎসকদের। তাঁদের বক্তব্য, স্বঘোষিত বাবাজিরা বলছেন গোমূত্র খেলে শরীরের ইমিউনিটি বৃদ্ধি পাবে। অর্থাৎ, রোগের সঙ্গে লড়াই করার ক্ষমতা বাড়বে শরীরে। কিন্তু বাস্তব ঠিক তার বিপরীত। গোমূত্র এবং গরুর গোবর খেলে শরীর আরও খারাপ হতে পারে।
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Qadri
হতে পারে যক্ষ্মা
দিল্লির এক চিকিৎসকের বক্তব্য, কিছুদিন আগে উত্তরাখণ্ডে গোমূত্র খেয়েছিলেন এক ব্যক্তি। প্রবল শরীর খারাপ নিয়ে কিছুদিন আগে তিনি এসেছিলেন চিকিৎসকের কাছে। তাঁর গোটা শরীরে যক্ষ্মা ছড়িয়ে গিয়েছে।
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Qadri
কে বোঝে কার কথা
এক দিকে চিকিৎসকরা যখন বিজ্ঞানের কথা বলছেন, তখন হিন্দুত্ববাদী রাজনৈতিক দলের মদতে স্বঘোষিত বাবাজিরা দিকে দিকে গোমূত্র পার্টির আয়োজন করে বেড়াচ্ছেন। প্রশাসনও তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
ছবি: AFP/J. Andrabi
গ্রেফতার করা হোক
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রাক্তন আমলার বক্তব্য, চাইলে এই বাবাজিদের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া যায়। কিন্তু সরকারের সদিচ্ছার অভাবে সে কাজ হচ্ছে না।