1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

শিক্ষা ব্যবস্থার কী হাল, রাজ্যকে জানাতে হবে আদালতে

২১ জুলাই ২০২২

রাজ্যের শিক্ষার সার্বিক অবস্থা নিয়ে প্রশ্ন আদালতের। শিক্ষার সাম্প্রতিক হালহকিকত নিয়ে সরকারের কাছে রিপোর্ট চেয়েছে তারা। তিন সপ্তাহের মধ্যে রাজ্যকে রিপোর্ট পেশ করতে হবে।

Indien | SLST Hungerstreik in Kolkata
ফাইল ফটোছবি: Payel Samanta /DW

কোনো দেশের উন্নয়নের মাপকাঠিতে উল্লেখযোগ্য নির্ণায়ক শিক্ষা। ভারতে শিক্ষা নিয়ে বিশেষ কেন্দ্রীয় আইন পাশ হয়েছিল ২০০৯ সালে। শিক্ষার অধিকার আইন কার্যকর হওয়ার পর ১৩ বছর কেটে গেলেও সকলের জন্য এই অধিকার কি নিশ্চিত করা গিয়েছে? এ ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের অবস্থান কোথায়? বারবার উন্নয়নের পরিপ্রেক্ষিতে এই প্রশ্ন উঠে আসে। আদালতে একটি মামলার শুনানিতে সেই প্রশ্ন উঠে এল। রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থার নানা দিক সম্পর্কে প্রশ্ন তুলে একটি মামলা দায়ের হয়েছে আদালতে। এই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্যের কাছে জানতে চেয়েছে, স্কুলে শিক্ষক ও পড়ুয়ার অনুপাত কত? পরিকাঠামোর হালই বা কেমন? রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল এই তথ্য জানাতে তিন সপ্তাহ সময় চেয়েছেন। সময় মঞ্জুর করেছে আদালত।

রাজ্য সরকার তার তথ্য পেশ করবে। শিক্ষা মহলের একাংশ কিন্তু বারবার অভিযোগ করে চলেছে, রাজ্যে পড়াশোনার হাল মোটেই ভাল নয়। বিশেষত শিক্ষক নিয়োগ ঘিরে আইনি লড়াই চলতে থাকায় বড় সংখ্যক শূন্যপদ খালি পড়ে রয়েছে। এর ফলে পড়ুয়াপিছু শিক্ষকের অনুপাত রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। প্রতি ৩০ জন ছাত্রছাত্রীর জন্য একজন করে শিক্ষক থাকার কথা। কিন্তু রাজ্যের অধিকাংশ স্কুলে এই অনুপাত দূরের কথা, এমন উদাহরণও উঠে আসছে যেখানে গোটা বিদ্যালয় চলছে একজন শিক্ষকের ভরসায়!

আদালত গত সোমবার রাজ্যের কাছে শিক্ষার হালহকিকত সম্পর্কে বিশদ তথ্য চেয়েছে। এই সপ্তাহেই প্রকাশ্যে এসেছে একটি স্কুলের কথা। মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জের সাকার ঘাট জুনিয়র হাইস্কুল। এখানে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ৭৭২। স্কুলে মাত্র একজন শিক্ষক রয়েছেন। প্রধান শিক্ষক শামসুল হক জানিয়েছেন, বিদ্যালয়ের পঠনপাঠন বন্ধ হওয়ার উপক্রম। অস্থায়ী শিক্ষক নিয়োগ করে পরিস্থিতি সামলাতে হয়েছে।

এটা একটা নমুনা। পশ্চিমবঙ্গে এমন অনেক স্কুল রয়েছে, যা শিক্ষকের অভাবে ধুঁকছে। বিভিন্ন পর্যায়ে শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে মামলা চলায় নিয়োগ প্রক্রিয়া থমকে রয়েছে। রাজ্যের বক্তব্য, আইনি জটিলতায় নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা যাচ্ছে না।

যদিও শিক্ষা মহলের একাংশের মতে, দুর্নীতিমুক্ত স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা গেলে এই পরিস্থিতি তৈরি হতো না। অধিকাংশ ক্ষেত্রে চাকরিপ্রার্থীরা নিয়োগের তালিকাকে চ্যালেঞ্জ করে মামলা করছেন। সম্প্রতি রাজ্যের মন্ত্রীর কন্যা আদালতের নির্দেশে চাকরি খুইয়েছেন। তাঁকে বেতন ফেরত দিতে হয়েছে। উল্টে আদালতের নির্দেশে মামলাকারী স্কুলে নিয়োগ পেয়েছেন। এ প্রসঙ্গে শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী-শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের রাজ্য সম্পাদক কিঙ্কর অধিকারীর বক্তব্য, "দুর্নীতির গন্ধ থাকলে অপরাধীদের চিহ্নিত করে শাস্তি তো দিতেই হবে। কিন্তু যে ক্ষেত্রে মামলা নেই, সেই ক্ষেত্রে নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করতে দেরি হচ্ছে কেন? শিক্ষক না থাকলে স্কুলে পড়াশোনা করানো যাচ্ছে না। তা হলে আর ছেলেমেয়েরা স্কুলে আসবে কেন?”

কোনো স্কুলে শিক্ষক নেই, কোথাও আবার ছাত্রছাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না। পড়ুয়ার অভাব ও অন্যান্য কারণে জেলায় জেলায় স্কুল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। সূত্রের খবর, সাত হাজারের বেশি স্কুল বন্ধ হয়ে গিয়েছে গত এক দশকে। ২০১২ সালে মার্চ মাসে রাজ্যে ৭৪ হাজার ৭১৭টি প্রাথমিক স্কুল ছিল। চলতি বছরে মার্চে সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৭ হাজার ৬৯৯। এই হিসেবে রাজ্যে বন্ধ হয়েছে প্রায় ৭,০১৮টি প্রাথমিক স্কুল। সবচেয়ে বেশি স্কুল কমেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনায়। সেখানে কমেছে ১,১৮২টি প্রাথমিক স্কুল। পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রামে কমেছে ১,০৪৭টি। পূর্ব মেদিনীপুরে ৮৬৭টি বিদ্যালয় বন্ধ হয়েছে।

কিঙ্কর অধিকারী

This browser does not support the audio element.

শিক্ষা মহলের একাংশের মতে, এতে শিক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র পুরোপুরি বেসরকারিকরণের দিকে চলে যাচ্ছে। শিক্ষক কিঙ্কর বলেন, "এক কিলোমিটারের মধ্যে ছেলেমেয়েরা স্কুলে যেতে পারবে, এ কথা মাথায় রেখে উচ্চ প্রাথমিক স্কুল তৈরি হয়েছিল। কিন্তু সেই স্কুলগুলিতে পর্যাপ্ত সংখ্যায় শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী পাঠানো হয়নি। এর ফলে অভিভাবকরা বাধ্য হচ্ছেন দূরের বেসরকারি স্কুলে ছেলেমেয়েদের পাঠাতে। পড়ুয়া না থাকলে ভবিষ্যতে স্কুলও বন্ধ হয়ে যাবে।”

অনেকের চোখে এই সপ্তাহের একটি ঘটনা প্রতীকী হিসেবে দেখা দিয়েছে। হুগলি জেলার জিরাটে একটি স্কুল ভবন ভাঙনের কবলে পড়তে চলেছে। ১৯৪৯ সালে চরখয়রামারির স্কুল তৈরি হয়। তখন নদী দুই কিলোমিটার দূরে ছিল, এখন দূরত্ব কয়েক ফুটের। এই স্কুলে এখনো যথেষ্ট সংখ্যায় পড়ুয়া রয়েছে। যে কোনোদিন নদীগর্ভে হারিয়ে যাবে স্কুলটি। এই খবর সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত হওয়ার পর কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি স্বতঃপ্রণোদিত মামলা করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালতের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে। রাজ্যের গোটা শিক্ষা ব্যবস্থা এ ভাবে তলিয়ে যাক, তা কেউ চান না। অভিভাবক, পড়ুয়া, শিক্ষা জগতের আশা, শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ হবে তাড়াতাড়ি। কোভিড-উত্তর পর্বে আবার সচল-স্বাভাবিক হবে শিক্ষা ব্যবস্থা।

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ