বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার কোনো একক রূপ নেই৷ বাংলা মাধ্যমের সঙ্গে আছে ইংরেজি ও আরবি মাধ্যমে পড়াশোনা৷ পাঠক্রমও কোথাও এক নয়৷ ফলে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার চোহারা কেমন – তা এক কথায় বলতে গেলে অন্ধের হাতি দর্শনের মতো হবে৷
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশে প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা – সবখানেই আছে সরকারি এবং বেসকারি ব্যবস্থা৷ আছে কম খবরচ আর খরচের লেখা-পড়া৷ এমনকি এখানে দেশি সিলেবাসে যেমন পড়াশোনা করা যায়, তেমনি পড়াশোনা করা যায় বিদেশি সিলেবাসে৷
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা তিন স্তরবিশিষ্ট – প্রাথমিক স্তর, মাধ্যমিক স্তর এবং উচ্চশিক্ষা বা বিশ্ববিদ্যালয় স্তর৷ সরকারি-বেসরকারি বিদ্যালয়গুলো পরিচালিত হয় পাঁচ বছর মেয়াদি প্রাথমিক, সাত বছর মেয়াদি মাধ্যমিক – এর মধ্যে তিন বছর মেয়াদি জুনিয়র, দু'বছর মেয়াদি মাধ্যমিক এবং দু'বছর মেয়াদি উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়৷'
বাংলাদেশে তৃতীয় পর্যায়ে অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষা তিন থেকে পাঁচ বছর মেয়াদি৷ সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত ৩৬টি পাবলিক ও ৭৯টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন-এর তত্ত্বাবধানে অধিভুক্ত কলেজের মাধ্যমে এ শিক্ষা দেয়া হয়৷ শিক্ষার্থীরা শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে বাংলা বা ইংরেজির মধ্যে যে কোনোটিকে বেছে নিতে পারে৷
Mojibor Rahman - MP3-Stereo
এটা কারা নিয়ন্ত্রণ করে? এর জবাবে বলা হচ্ছে, ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয় হলো শিক্ষার জন্য রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ দপ্তর৷ এর অধীন কয়েকটি অধিদপ্তর রয়েছে৷ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের (শিক্ষা প্রকল্প ও কারিগরি প্রকল্প ) মাধ্যমে এ অধিদপ্তরসমূহের কার্যক্রম পরিচালিত হয়৷'
বাংলাদেশে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ১০টি শিক্ষা বোর্ডের অধীন৷ বোর্ডগুলো তিনটি পাবলিক পরীক্ষা পরিচালনা করে: জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষা,মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি)পরীক্ষা এবং উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি)পরীক্ষা।
উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কলেজ হিসেবে পরিচিত৷ এছাড়া রয়েছে মাদ্রাসা ও ইংরেজি মাধ্যমের স্কুল৷ এগুলো যথাক্রমে মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড এবং বিদেশি শিক্ষা বোর্ডের তালিকাভুক্ত৷ মাধ্যমিক পরবর্তী পর্যায়ে বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ স্কুল পরিচালনার জন্য কারিগরি শিক্ষা বোর্ড গঠন করা হয়েছে৷ কিন্তু কওমী মাদ্রাসাগুলো কারুর নিয়ন্ত্রণে নেই৷ তারা তাদের মতো করে পরিচালিত হয়৷
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড প্রাথমিক, নিম্ন মাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যবই উন্নয়ন, অনুমোদন এবং ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নিয়োজিত৷ এছাড়াও ‘অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো'-র তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশে অনেক অলাভজনক সংগঠন রয়েছে, যারা সামাজিক সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য অনানুষ্ঠানিক ও আধা-আনুষ্ঠানিক শিক্ষাদান কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে৷
বিশ্বের সেরা ১১টি শিক্ষা ব্যবস্থা
‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম’ প্রতিবছর ‘গ্লোবাল কম্পিটিটিভনেস রিপোর্ট’ প্রকাশ করে৷ শিক্ষা সহ ১২টি বিষয় বিবেচনায় নিয়ে দেশগুলোর তালিকা তৈরি করে সংগঠনটি৷ ছবিঘরটি শিক্ষা বিষয়ক তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি৷
ছবি: Getty Images/AFP/Simin Wang
নবম: জাপান (৫.৬)
সাহিত্য, বিজ্ঞান ও গণিত চর্চার ক্ষেত্রে ওইসিডি দেশগুলোর মধ্যে জাপানের বেশ নামডাক আছে৷ সেখানকার শিক্ষার্থীরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ে ছয় বছর৷ তারপর তিন বছর জুনিয়র হাইস্কুলে পড়ালেখা শেষ করে আরও তিনবছর হাইস্কুলে যায়৷ এরপর আসে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সময়৷
ছবি: Reuters/T. Hanai
নবম: বার্বাডোজ (৫.৬)
সরকারের বিপুল বিনিয়োগের কারণে সেদেশে স্বাক্ষরতার হার প্রায় ৯৮ শতাংশ৷ বার্বাডোজের বেশিরভাগ স্কুলই সরকারি৷
ছবি: picture alliance/robertharding/H.-P. Merten
নবম: নিউজিল্যান্ড (৫.৬)
তিন ধরনের মাধ্যমিক বিদ্যালয় আছে সেখানে৷ এর মধ্যে সরকারি স্কুলগুলোতে পড়ে প্রায় ৮৫ শতাংশ শিক্ষার্থী৷ আর সরকারিকৃত (বেসরকারিভাবে পরিচালিত) স্কুলে পড়ে ১২ শতাংশ৷ বাকি তিন শতাংশ যায় বেসরকারি স্কুলে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
অষ্টম: এস্তোনিয়া (৫.৭)
২০১৫ সালে জিডিপির প্রায় চার শতাংশ শিক্ষাখাতে ব্যয় করেছিল দেশটি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/V.Kalnina
ষষ্ঠ: আয়ারল্যান্ড (৫.৮)
দেশটির মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর বেশিরভাগই ব্যক্তিমালিকানায় পরিচালিত হলেও অর্থ দিয়ে থাকে সরকার৷ এছাড়া আছে সরকারি কারিগরী বিদ্যালয়৷
ছবি: privat
ষষ্ঠ: কাতার (৫.৮)
‘ভিশন ২০৩০’-এর আওতায় প্রাথমিক থেকে শুরু করে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত প্রতিটি পর্যায়ে শিক্ষার মান উন্নয়নে বিপুল বিনিয়োগ করছে দেশটি৷ সরকারি স্কুলগুলোতে কাতারের নাগরিকদের সন্তানরা বিনামূল্যে পড়ালেখা করতে পারে৷ আর বিদেশিরা তাঁদের সন্তানদের পাঠান বেসরকারি স্কুলে৷
ছবি: imago/imagebroker
পঞ্চম: নেদারল্যান্ডস (৫.৯)
২০১৩ সালে ইউনিসেফ-এর এক প্রতিবেদন বলছে, নেদারল্যান্ডসের শিশুরা সবচেয়ে বেশি সুখি জীবন কাটায়৷ মাধ্যমিক পর্যায়ের আগে স্কুলে শিশুদের কোনো বাড়ির কাজ দেয়া হয় না৷ তাছাড়া লেখাপড়া করতে শিশুদের উপর বেশি চাপ প্রয়োগ করা হয় না৷
ছবি: AFP/Getty Images/C. van der Veen
চতুর্থ: সিঙ্গাপুর (৬.১)
বিজ্ঞান, রিডিং ও গণিত বিষয়ে বিভিন্ন দেশের ১৫ বছর বয়সি শিক্ষার্থীদের মান যাচাইয়ের পদ্ধতি হচ্ছে ‘পিসা’৷ এই তালিকায় সিঙ্গাপুরের শিক্ষার্থীরা সবসময় ভালো করে থাকে৷ তবে সে দেশে শিক্ষার্থীদের বেশ চাপে রাখা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
দ্বিতীয়: বেলজিয়াম (৬.২)
মাধ্যমিক পর্যায়ে চার ধরনের স্কুল আছে – সাধারণ স্কুল, কারিগরি শিক্ষা বিষয়ক স্কুল, বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ ও আর্ট স্কুল৷ ছবিতে স্কুলের শিক্ষার্থীদের আঁকা ছবি দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: DW/T. Schulz
দ্বিতীয়: সুইজারল্যান্ড (৬.২)
প্রাথমিক পর্যায়ের পর শিশুদের দক্ষতা অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের স্কুলে পাঠানো হয়৷ অঞ্চলভেদে জার্মান, ফ্রেঞ্চ ও ইটালীয় ভাষায় শিক্ষা দেয়া হয়৷
ছবি: Imago
প্রথম: ফিনল্যান্ড (৬.৭)
বিশ্বের সেরা শিক্ষা ব্যবস্থার এই দেশে শিক্ষার্থীদের খুব বেশি হোমওয়ার্ক করতে হয় না৷ ১৬ বছর বয়সে গিয়ে মাত্র একটি বাধ্যতামূলক পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়৷ আরও জানতে উপরের (+) চিহ্নে ক্লিক করুন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Wennström
11 ছবি1 | 11
বাংলাদেশে সরকারি এবং বেসরকারি মিলিয়ে মোট প্রাথমিক বিদ্যালয় ৮২,৯৮২টি, মাধ্যমিক ৫৩,৫৮৯টি, নিম্ম মাধ্যমিক ৩,৪৪৯৪টি, মাদ্রাসা ৯,০১০৫টি এবং কলেজ ২,৩০০টি৷ এর বাইরে আছে মেডিক্যাল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিশেষায়িত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান৷
সরকার ২০০৩ সাল থেকে সীমিত পর্যয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রদের বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ কার্যক্রম প্রবর্তন করে৷ ২০১৩ সালে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের সকল ছাত্র-ছাত্রীকে এই কর্মসূচীর আওতায় আনা হয়৷ এখন নতুন শিক্ষা বৎসর শুরুর আগেই ৩ কোটি পাঠ্যপুস্তক শিক্ষার্থীর হাতে বিনামূল্যে পৌঁছে দেয়া হয়৷
তবে এই পাঠ্যপুস্তক নিয়ে এবার বিতর্ক তৈরি হয়েছে৷ নানা ধরনের ভুল আর মৌলবাদী গোষ্ঠীর চাপে পাঠ্যপুস্তক থেকে অনেক প্রগতিশীল লেখকের লেখা বাদ দেয়া হয়েছে৷
প্রথম শ্রেণির বাংলা পাঠ্য বইয়ে অক্ষরজ্ঞান সূচিতে পাঠ ১২-তে ‘ও' অক্ষর চেনানোর উপকরণ হিসেবে ‘ওড়নাকে' ব্যবহার করা হয়েছে৷ শুনি ও বলি পাঠে ‘ও' অক্ষর চেনাতে ওড়না পরা একটি কন্যাশিশুর ছবি দিয়ে লেখা হয়েছে – ‘ওড়না চাই'৷
প্রথম শ্রেণির বাংলা বইয়ের লেখা ও ছবিতে ‘ছাগল গাছে উঠে আম খাচ্ছে' বোঝাতে চেয়েছেন লেখক৷ বাংলা পাঠ্যবইটির ১১ পাতায় অ-তে অজ (ছাগল) বোঝাতে গিয়ে ছাগলের ছবি জুড়ে দেয়া হয়েছে৷ ছাগলের গাছে উঠে আম খাওয়ার মতো অসম্ভব বিষয় শিখতে হবে শিশুদের৷
তৃতীয় শ্রেণির বাংলা বইয়ে কুসুমকুমারী দাশের আদর্শ ছেলে কবিতা বিকৃত করা হয়েছে৷ ‘আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে' না লিখে লেখা হয়েছে ‘আমাদের দেশে সেই ছেলে কবে হবে?' এছাড়া ‘মানুষ হইতে হবে' – এই তার পণ না লিখে ‘মানুষ হতেই হবে' – এই তার পণ লেখা হয়েছে৷ ‘হাতে প্রাণে খাট সবে শক্তি কর দান'৷ এই লাইনে ‘খাট' শব্দটিকে বিকৃত করে লেখা হয়েছে ‘খাটো'৷
পড়ালেখার জন্য জীবনের ঝুঁকি নেয় ওরা
চীনের ১৫ জন শিশুর কয়েকটি ছবি সারা বিশ্বের নজর কেড়েছে৷ পাহাড়ের ওপরে তাদের বাড়ি৷ স্কুল শেষে বাড়ি ফিরতে মইয়ে চড়ে ৮০০ মিটার ওপরে উঠতে হয় তাদের৷ শিশুদের এমন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্কুল থেকে ফেরার দৃশ্য দেখে অবাক না হয়ে পারা যায়!
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Jie/VCG
চীন এবং শিক্ষা
বিজ্ঞান-প্রযুক্তিতে, খেলাধুলায়, অর্থনীতিতে বলতে গেলে সবদিকেই দ্রুত উন্নতির পথ ধরে এগিয়ে চলেছে চীন৷ ইউনেস্কোর সর্বশেষ হিসেব অনুযায়ী, চীনে শিক্ষার বর্তমান হার ৯৬ দশমিক ৪ শতাংশ৷ জ্ঞান-বিজ্ঞানে চীনের খ্যাতি অবশ্য প্রাচীন কাল থেকেই৷
ছবি: Getty Images/AFP
অগ্রগতির বিপরীতে
চীনে মত প্রকাশের স্বাধীনতা নেই৷ তাই কমিউনিস্ট শাসিত দেশটির প্রসঙ্গে দ্রুত উন্নতির বিষয়টির পাশাপাশিই সংবাদমাধ্যমের ওপর সরকারের অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণের বিষয়টিও আলোচনায় আসে৷
ছবি: Reuters
শিশুমুখগুলো চমকে দিলো...
হ্যাঁ, সেই চীনের গণমাধ্যমেই এসেছে ১৫টি শিশুর এমন এক কিছু ছবি যা দেখে শুধু চীন নয়, বলতে গেলে বিশ্বের প্রায় সব দেশের মানুষই বিস্ময়ে হতবাক৷ ছবিতে দেখা যায়, ৬ থেকে ১৫ বছর বয়সি ১৫টি শিশু খাড়া পাহাড়ের গায়ে মই বেয়ে বেয়ে ৮০০ মিটার ওপরের ছোট্ট এক গ্রামে ফিরছে৷ পশ্চিম চীনের সিচুয়ান প্রদেশের পাহাড়ের ওপরের সেই গ্রামটির নাম আতুলির৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Imaginechina Tao ge
কৃষকদের ঠকাতে....
৭২টি পরিবার রয়েছে ওই গ্রামে৷ সবাই কৃষিজীবী৷ বাঁশের মই বেয়ে বেয়ে তো আর ফসল নিয়ে নামা সম্ভব নয়৷ আর লোহার মই বা ভালো রাস্তা করার আর্থিক সংগতিও গ্রামবাসীর নেই৷ ভালো রাস্তা হলে চাষিরা ফসল নিয়ে দূরের বাজারে গিয়ে ভালো দামে সেই ফসল বিক্রি করতে পারে ভেবে ফড়িয়ারাও এতদিন সেখানে রাস্তা তৈরি হতে দেয়নি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Jie/VCG
এবার হয়তো রাস্তা হবে
চীনের এক ইংরেজি দৈনিকে কয়েকদিন আগেই প্রকাশিত হয় আতুলির গ্রামের শিশুদের মই বেয়ে বেয়ে ৮০০ মিটার ওপরের বাড়ির দিকে যাত্রা করার দৃশ্য৷ গ্রামের আশেপাশে কোনো স্কুল নেই৷ তাই শিশুদের দূরের কোনো স্কুলে যেতে হয়৷ সেই স্কুলের হস্টেল থেোকে সপ্তাহে দু’দিন বাড়ি আসা যায়৷ সেদিন স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথেই অসম সাহসী শিশুরা ক্যামেরাবন্দি হয়৷ তাদের ছবি প্রকাশিত হওয়ার পর সরকার রাস্তা নির্মাণে আগ্রহ দেখিয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Jie/VCG
5 ছবি1 | 5
এছাড়া চতুর্থ শ্রেণির ‘বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়' বইয়ের ৭৮ পাতায় ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ লেখায় মুক্তিযুদ্ধ শব্দটি কখনো ‘মুক্তিযুদ্ধ' আবার কখনো ‘মুকতিযুদ্ধ'৷ ‘বঙ্গবন্ধু' বানানটি ভেঙে ঙ-গ আলাদা আলাদা করে লেখা৷
অষ্টম শ্রেণির ‘আনন্দপাঠ' বইটির সাতটি গল্পের সবগুলোই বিদেশি লেখকদের গল্প-উপন্যাস অবলম্বনে লেখা বা সেগুলির ভাষাগত রূপান্তর করা হয়েছে৷ গল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে – আরব্য উপন্যাস অবলম্বনে ‘কিশোর কাজী', মার্ক টোয়েনের ‘রাজকুমার ও ভিখারির ছেলে', ড্যানিয়েল ডিফোর ‘রবিনসন ক্রুশো', ফরাসি উপন্যাসিক মহাকবি আবুল কাশেম ফেরদৌসীর ‘সোহরাব রোস্তম', উইলিয়াম শেকসপিয়ারের ‘মার্চেন্ট অফ ভেনিস', ওয়াশিংটন আরবি রচিত গল্প অবলম্বনে ‘রিপভ্যান উইংকল' এবং লেভ তলস্তয়ের ‘সাড়ে তিন হাত জমি'৷ এটা নিয়ে সমালোচনা করেছেন অনেকেই৷ আবার হুমায়ূন আজাদসহ অনেক লেখকের লেখা বাদ দেয়া হয়েছে৷ বাদ দেয়া হয়েছে কয়েকজন ‘হিন্দু লেখক'-এর লেখাও৷ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার না লিখে লেখা হয়েছে বাংলাদেশ সরকার৷
বাংলাদেশে একটি সার্বজনীন শিক্ষানীতির দাবি আছে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই৷ ২০১৬ সালে শিক্ষানীতির একটি খসড়াও শিক্ষামন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়৷ খসড়ায় শিক্ষার চারটি স্তর রাখা হয়েছে – প্রাক-প্রাথমিক (৪ থেকে ৬ বছর), প্রাথমিক (প্রাক-প্রাথমিক থেকে অষ্টম), মাধ্যমিক (নবম থেকে দ্বাদশ) এবং উচ্চশিক্ষা (দ্বাদশ শ্রেণি থেকে স্নাতক ও তদুর্ধ) স্তরের মধ্যে প্রাক-প্রাথমিকসহ প্রাথমিক শিক্ষা অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক এবং এই শিক্ষা শিশুর অধিকার হিসেবে গণ্য হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে৷
ইংরেজি মাধ্যমসহ সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের বেতন ও অন্যান্য ফি সরকারের অনুমোদন ছাড়া নির্ধারণ করা যাবে না৷ আইন লঙ্ঘন করলে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা বা এক বছরের কারাদণ্ড বা উভয়দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে আইনে৷ ইংরেজি মাধ্যমের প্রতিষ্ঠান হলেও বাংলা ও বাংলাদেশ স্টাডিজ বিষয় পড়ানো হবে বাধ্যতামূলক৷ এই খসড়ায় কোচিং সেন্টারের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের কথা বলা হয়েছে৷
Rasheda K Chowdhury - MP3-Stereo
শিক্ষাবিদ রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, ‘‘সংবিধান সবার জন্য শিক্ষা এবং সমশিক্ষার কথা বলেছে৷ কিন্তু আমরা শিক্ষাক্ষেত্রে নানা ধরনের বৈষম্য দেখি৷ শিক্ষার ব্যাপক বাণিজ্যিকীকরণ লক্ষ্যণীয়৷ অবকাঠামো, আর্থিক এবং বিষয়গত বৈষম্য শিক্ষাকে সার্বজনীন করতে পারিনি৷''
তিনি বলেন, ‘‘তাই আমরা শিক্ষা আইনের দাবি করে আসছি৷ শিক্ষা সবার জন্য এবং সার্বজনীন করতে হলে শিক্ষা আইন জরুরি৷ ভারতেও শিক্ষা অধিকার আইন আছে৷ বাংলাদেশের কওমী মাদ্রাসায় কী পড়ানো হয় তা কেউ জানে না৷ এটা তো হতে পারে না৷''
তিনি আরো বলেন, ‘‘শিক্ষার মান নিশ্চিত করতে প্রয়োজন কমিশন৷ কারুর চাপে বা আগ্রহে পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন নয়, পাঠ্যপুস্তক প্রঁয়ন হবে শিক্ষানীতির আলোকে৷''
বাংলাদেশে প্রাথমিক শিক্ষাই আছে ১০ ধরনের৷ সুধু তাই নয়, একই শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রাথমিকে কেউ পড়ছে দেশের কথা, কেউ লন্ডন-অ্যামেরিকার কথা৷ আবার কেউ বা পড়ছে আরব দেশের মরুভূমির কথা৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক মো, মজিবুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন,‘‘সংবিধানে সবার জন্য একই মানের শিক্ষার কথা বলা হয়েছে৷ কিন্তু শিক্ষার শুরুতেই নানা শ্রেণির নানা ধরন৷ ফলে এই শিক্ষা দেশের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ঐক্যবোধ গড়ে তোলে না৷ এক ধরনের বিচ্ছিন্নতা তৈরি করে৷''
তাঁর কথায়, ‘‘আবার এটাও ঠিক যে প্রত্যেকের অধিকার আছে তার পছন্দের শিক্ষা নেয়ার৷ কিন্তু এর মানে এই নয় যে, নানারকম শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে বিভেদ সৃষ্টি করা৷ শিক্ষা সমাজে যদি শ্রেণি পার্থক্যের সৃষ্টি করে, তা ভালো শিক্ষা হতে পারে না৷''
আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷
দেশে দেশে, ক্লাসে ক্লাসে
স্কুলের ক্লাসরুম বলতে সব কিছু বোঝায়৷ এক কথায়, ছাত্রছাত্রীরা যেখানে বসে পড়াশুনো করে, শিক্ষক-শিক্ষিকারা তাদের দেখাশুনো করেন, সেটাই হলো ক্লাসরুম৷
ছবি: Reuters/I. Alvarado
আফগানিস্তান: প্রগতি
মহাজেরা আর্মানি উত্তর আফগানিস্তানের জালালবাদের কাছে একটি মেয়েদের ক্লাসের শিক্ষিকা৷ ২০০১ সালে তালেবান জঙ্গিরা বিতাড়িত হওয়ার আগে এই অঞ্চলে মেয়েদের স্কুলে যাওয়াই বারণ ছিল৷ আজ মেয়েদের প্রায় তিন-চতুর্থাংশ নিয়মিতভাবে স্কুলে যায়৷
ছবি: Reuters/Parwiz
জাপান: ডিসিপ্লিন
টোকিও-র তাকিনাগাওয়া প্রাইমারি স্কুলের পড়ুয়ারা দুপুরে খেতে বসেছে৷ জাপানের শিক্ষা ব্যবস্থা বিশ্বসেরাদের মধ্যে গণ্য৷ পিসা-র জরিপে জাপান নিয়মিতভাবে প্রথম দশটি দেশের মধ্যে পড়ে৷ অবশ্য বলা হয় যে, স্কুলে ভালো করার জন্য ছেলে-মেয়েদের ওপর বড় বেশি চাপ দেওয়া হয়ে থাকে৷
ছবি: Reuters/T. Hanai
ব্রাজিল: ভাসন্ত স্কুল
মানাউস-এর ‘দ্বিতীয় সাও জোসে’ স্কুলটি বস্তুত নদীবক্ষে৷ তা-ও আবার যে কোনো নদী নয়: খোদ অ্যামাজোন! অবশ্য ব্রাজিলেও সরকারি স্কুলগুলোর বিশেষ সুনাম নেই৷ ওদিকে বেসরকারি স্কুলগুলোর মান ভালো হলেও, তাদের ফি বেশি৷
ছবি: Reuters/B. Kelly
যুক্তরাষ্ট্র: সমৃদ্ধির দেশে অসাম্য
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শিল্পোন্নত দেশগুলির মধ্যে প্রথম সারিতে৷ অথচ এখানকার শিক্ষাব্যবস্থায় ধনি-দরিদ্রের ফারাক আছে, বলে অভিযোগ৷ শ্বেতাঙ্গ ছেলে-মেয়েরা কৃষ্ণাঙ্গ কিংবা ল্যাটিন অ্যামেরিকান ছেলে-মেয়েদের চেয়ে ভালো ফলাফল করে থাকে৷ চিকাগোর এই প্রাইমারি স্কুলটিতে অবশ্য এখনও ফলাফল নিয়ে কারো মাথাব্যথা নেই৷
ছবি: Reuters/J. Young
ভিয়েতনাম: অন্ধকারে দেহ আলো
আলো নেই, বই নেই, তা সত্ত্বেও ভিয়েতনামে এই তৃতীয় শ্রেণির পড়ুয়ারা পড়া করে চলেছে৷ মনে রাখতে হবে: বিশ্বব্যাপী পিসা জরিপে কিন্তু ভিয়েতনাম জার্মানির চেয়ে ভালো ফলাফল করেছে৷
ছবি: Reuters/Kham
ব্রিটেন: পরিপাটি
ইংল্যান্ডে স্কুলের ইউনিফর্ম চালু হয়েছে বহু যুগ আগে৷ মিডলসেক্স-এর ‘হ্যারো’ স্কুলে হ্যাট পর্যন্ত পরতে হয়৷ মজার কথা, সুদীর্ঘ ঐতিহ্যবাহী এই স্কুলটিতে কিন্তু ইউনিফর্ম সংক্রান্ত কোনো লিখিত নিয়মাবলী নেই৷
ছবি: Reuters/S. Plunkett
পাকিস্তান: পথে বসে
অথবা পার্কে বসে পড়াশোনা৷ লক্ষণীয় যে, মেয়েরা আর ছেলেরা একসঙ্গে বসেই পড়াশোনা করছে, পাকিস্তানের সর্বত্র যেটা সম্ভব নয়৷
ছবি: Reuters/C. Firouz
মরক্কো: বেগুনি রঙের ক্লাসরুম
রাবাত-এর উদাইয়া প্রাইমারি স্কুলের ক্লাসরুমটি সুন্দর করে রং করা৷ মুশকিল এই যে, গোড়ায় ৯২ শতাংশ ছেলে-মেয়ে স্কুলে গেলেও, পনেরোয় পা দেবার আগেই তাদের অর্ধেক স্কুল ছেড়ে দেয়৷ ১৫ বছরের কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে প্রায় ৩০ শতাংশ লিখতে-পড়তে জানে না৷
ছবি: Reuters/Y. Boudlal
কেনিয়া: বস্তির স্কুল
কেনিয়ায় ২০০৩ সাল থেকে প্রাইমারি স্কুলে যেতে ফি লাগে না৷ তবে শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ বিশেষ বাড়ানো হয়নি৷ ক্লাসে ছাত্রসংখ্যা বেশি৷ নাইরোবির দক্ষিণে কিবেরা বস্তি এলাকার এই স্কুলটিতে বেঞ্চের চেয়ে পড়ুয়া বেশি৷
ছবি: Reuters/N. Khamis
মালয়েশিয়া: সুখি ছাত্রছাত্রী
পিসা জরিপে মালয়েশিয়ার ছাত্রছাত্রীরা বলেছে, তারা সুখি৷ নুরুল ইমান মাদ্রাসার পড়ুয়াদের ক্ষেত্রেও তা প্রযোজ্য৷
ছবি: Reuters/O. Harris
ইউক্রেন: নানা ভাষা
ইউক্রেনে ছেলে-মেয়েরা ক্লাস ওয়ান থেকেই যে কোনো একটা বিদেশি ভাষা শিখতে শুরু করে৷ কিয়েভ-এর এই লাইসিয়াম বা হাই স্কুলটিতে পঞ্চম শ্রেণি থেকে একটি দ্বিতীয় বিদেশি ভাষা শিখতে হয়৷ ছাত্রছাত্রীদের অনেকে ইউক্রেনীয় ও রুশ ভাষা ছাড়া ইংরেজি, ফরাসি অথবা জার্মান বলতে পারে৷
ছবি: Reuters/G. Garanich
চিলি: পড়ার কি কোনো শেষ আছে?
সান্তিয়াগোর ‘লাউরা ভিকুনা’ সান্ধ্য স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের বয়স হয়েছে বটে, তবুও তারা এককালে যে স্কুলের পড়া শেষ করতে পারেননি – সম্ভবত আর্থিক সামর্থ্য ছিল না বলে – আজ সেটাই সমাপ্ত করতে বদ্ধপরিকর৷