মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্রসহ নানা দেশে সোমবার পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর পালিত হচ্ছে৷ তবে বাংলাদেশে মঙ্গলবার ঈদ হতে পারে৷ ঈদে বাড়ি ফেরা এবং ছোটবেলার স্মৃতি নিয়ে অনেকেই লিখেছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে৷
বিজ্ঞাপন
আনোয়ার কামাল সামহয়্যারইন ব্লগে ঈদে নিজের ছোটবেলার কথা তুলে ধরেছেন৷ লিখেছেন, ‘‘ঈদ অর্থ পরম মমতায় মায়ের কাছে গাঁয়ে ফিরে যাওয়া৷ শেকড়ের সন্ধানে ফিকে হয়ে যাওয়া শৈশব-কৈশর উজ্জ্বল হয়ে উদ্ভাসিত হওয়া৷ সব ভেদাভেদ ভুলে সকল মুসলমান এক কাতারে শামিল হওয়া৷''
আনোয়ার লিখেছেন, ‘‘ঈদের আগের দিন সন্ধ্যা হলো সব'চে বেশি আনন্দের, সব'চে বেশি মধুর৷ কে কার আগে চাঁদ দেখলো এ নিয়ে এক প্রতিযোগিতা হয়ে যেত৷ আর তারপর সেই ঐতিহাসিক গানের মূর্ছনা- রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ৷ নানা বাড়িতে খুব ছোটবেলায় দেখেছি, হাতে বানানো সেমাই৷ তখন বাবার সাথে গ্রামের বাড়িতে ঈদ করতে যাওয়ার প্রস্তুতিটাও ছিল আমাদের কাছে ভিন্নরকমের৷ অন্যথায় এই ঈদ বারবার কিছু মানুষের জন্য আনন্দের বারতা নিয়ে আসলেও ব্যাপক জনগোষ্ঠির কাছে তা অধরাই হয়ে থাকছে৷ তবুও ঈদ সকলের কাছে আনন্দের বারতা নিয়ে আসুক৷''
‘রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ’
সত্যিই তাই, ঈদের খুশি ছড়িয়ে পড়েছে চারদিকে৷ বাংলাদেশ, ভারত, জার্মানি কি গোটা বিশ্ব৷ ঈদের আনন্দে উচ্ছ্বসিত গোটা মুসলিম সম্প্রদায়৷ তাদের উৎসবে সঙ্গী অন্য ধর্মাবলম্বীরাও৷ এই বিষয়ে আমাদের ছবিঘর৷
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP/Getty Images
ঈদ মুবারক
প্রায় এক মাস রোজা পালনের পর আসে ঈদ-উল-ফিতর৷ মুসলমানদের দুটি বাৎসরিক ঈদ উৎসবের একটি এটি৷ এই দিনটি তাই ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সবাই ভালোভাবে উদযাপনের চেষ্টা করেন৷ ঢাকায় শুক্রবার ঈদের জামাতে অংশ নেয়া এক নারীর ছবি এটি৷
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP/Getty Images
জাতীয় মসজিদে ঈদের জামাত
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার জাতীয় মসজিদে একাধিক ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়৷ ৯ই আগস্ট ঈদের দিন তোলা এই ছবিটি জাতীয় মসজিদের৷ মুসল্লিদের সুবিধার্থে অধিকাংশ ক্ষেত্রে একাধিক ঈদের জামাতের আয়োজন করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
চাঁদ দেখে দিন নির্ধারণ
সাধারণত আরব এবং পশ্চিমা দেশগুলোতে ঈদ উদযাপনের একদিন পর বাংলাদেশ, ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে ঈদ পালন করা হয়৷ এই ধর্মীয় উৎসবের দিন নির্ধারণ করা হয় চাঁদ দেখার ভিত্তিতে৷ ছবিতে ভারতের রাজধানী নতুন দিল্লির ঐতিহাসিক জামা মসজিদে ঈদের নামাজ পড়ছেন মুসলমানরা৷
ছবি: Reuters
গান দেয় পূর্ণতা
পৃথিবীর বাংলা ভাষাভাষী অঞ্চল, বিশেষ করে বাংলাদেশে ঈদের একটি গান অত্যন্ত জনপ্রিয়৷ ঈদের আগের রাত থেকে টেলিভিশন, রেডিও থেকে শুরু করে রাস্তার পাশের দোকান, মার্কেট সর্বত্র বাজতে শুরু করে, ‘‘...রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ৷’’ এই একটি গানই ঈদ-উল-ফিতরের জানান দিতে যথেষ্ট৷ ছবিতে কলকাতার ঈদ জামাতে অংশ নেওয়া মুসলিম নারীদের দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/AP
কবি নজরুলের কালজয়ী গান
উইকিপিডিয়ায় প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ‘‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ মুসলমানদের অন্যতম ধর্মীয় ও আনন্দের উৎসব ঈদ-উল-ফিতর নিয়ে বাঙালি কবি কাজী নজরুল ইসলাম রচিত কালজয়ী গান৷ বাঙালি মুসলমানের ঈদ উৎসবের আবশ্যকীয় অংশ৷ কবির শিষ্য শিল্পী আব্বাস উদ্দিন আহমদ-এর অনুরোধে ১৯৩১ সালে কবি নজরুল এই গান রচনা ও সুরারোপ করেন৷’’
ছবি: Noah Seelam/AFP/Getty Images
সবার বাড়িতেই দাওয়াত
ঈদের দিন প্রতিবেশীর বাড়িতে বেড়াতে যেতে প্রয়োজন হয় না কোন দাওয়াতের৷ আধুনিক শহুরে জীবনে প্রতিবেশীদের মধ্যে তেমন সখ্যতা না থাকলেও ছোট শহর, মফস্বল আর গ্রামে ঈদের জামাতের পরই প্রতিবেশীদের বাড়িতে বেড়াতে যান ছেলে, বুড়ো সবাই৷ কারো বাড়িতে ঈদের পায়েস, কারো বাড়িতে মাংস-পরোটা কিংবা পোলাও – ঈদের দুপুরটা এভাবেই কেটে যায়৷ ছবিতে কলকাতায় ঈদের জামাত শেষে মিষ্টি কিনছেন মুসল্লিরা৷
ছবি: picture-alliance/AP
দিনের বেলা বিক্রি নয়
ঈদ-উল-ফিতর এর আগের একমাস বাংলাদেশে দিনের বেলায় প্রকাশ্যে খাবার বিক্রি একরকম বন্ধই থাকে৷ রাস্তার পাশের খাবার হোটেলগুলো ঢেকে দেওয়া হয় কালো পর্দায়৷ তবে সূর্যাস্তের খানিক আগে থেকে শুরু হয় খাবার বিক্রি৷ ঢাকায় তোলা এই ছবির মতোই ইফতারির পসরা সাজিয়ে রাস্তার পাশে বসেন অসংখ্য দোকানি৷ বিক্রিও হয় প্রচুর৷ ঈদের দিন থেকে পরের এগারো মাস আর এই বাণিজ্য দেখা যায়না৷
ছবি: dapd
লম্বা প্রস্তুতি
রমজানের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে মূলত ঈদের প্রস্তুতি শুরু হয়৷ নতুন পোশাক কেনার জন্য মার্কেটে ভিড় করেন মুসলমানরা৷ এ সময় দোকানগুলোতে দেখা দেয় উপচে পড়া ভিড়৷ আফগানিস্তানসহ অনেক দেশে দোকানিরা ঈদ উপলক্ষ্যে বিভিন্ন বিশেষ অফার দিয়ে থাকেন৷ মিষ্টি এবং শুকনো ফল ঈদ উপহার হিসেবে আফগানিস্তানে বেশ জনপ্রিয়৷
ছবি: DW/I. Spezalai
যানবাহনে ভিড়
রমজানের শেষ সপ্তাহে যানবাহনেও সৃষ্টি হয় ব্যাপক ভিড়৷ এ সময় পরিবার, পরিজনের সঙ্গে ঈদ করতে শিকড়ের টানে ঢাকা ছাড়েন অনেক মানুষ৷ ঈদের ছুটিও বেশ লম্বা হয়৷ (ফাইল ফটো)
ছবি: dapd
পরিবারের সঙ্গে প্রার্থনা
জার্মানিতে ঈদের সকালে সাধারণত পুরো পরিবারই মসজিদে চলে যান৷ অধিকাংশ মসজিদে নারীর নামাজ আদায়ের জন্য আলাদা ব্যবস্থা রয়েছে৷ আর নামাজের পর সবাই মিলে মসজিদেই ঈদের খাবার খান৷ এরপর বাংলাদেশসহ অন্য অনেক দেশের মতো জার্মানিতেও কবরে পরিদর্শনে যান অনেক মুসলমান৷ ঈদের দিন পরিবারের মৃত সদস্যের কবর জিয়ারত করেন তারা৷
ছবি: Barbara Sax/AFP/Getty Images
উৎসব একই, নাম অনেক
জার্মানিতে ঈদ মূলত ‘বায়রাম’ অথবা ‘সুকারফেস্ট’ নামে পরিচিত৷ বায়রাম শব্দটি এসেছে তুরস্ক থেকে, এর অর্থ ছুটি৷ আর সুকারফেস্ট-এর বাংলা অর্থ হচ্ছে মিষ্টি উৎসব৷ তবে মুসলমানদের অন্যতম এই ধর্মীয় উৎসবটি বাংলাদেশ, ভারতসহ আন্তর্জাতিকভাবে ঈদ-উল-ফিতর হিসেবেই পরিচিত৷
ছবি: MUSTAFA OZER/AFP/Getty Images
11 ছবি1 | 11
একই ব্লগে রনী মুরাদ ঈদে বাড়ি ফেরার অনুভূতি জানিয়ে লিখেছেন, ‘‘স্বজনদের সাথে ঈদ করার জন্য সবাই বাড়ি ফিরছে৷ চোখে মুখে খেলা করছে অন্যরকম দ্যুতি!'' তিনি ভাবছেন, কী সেই অমোঘ টান যার জন্য মানুষ শত কষ্ট স্বীকার করে ঘরে ফিরছে? ‘‘বাসে, লঞ্চে, ট্রেনে কোথাও পা ফেলবার উপায় নেই, তবুও কারো মাঝে এতটুকু বিরক্তি নেই৷ সবাই নিজে এবং চেনা অচেনা অন্যদের সাথে নিয়ে ফিরছে আপনার নিবাসে৷''
মুরাদ লিখেছেন, ‘‘যে শহরের সাথে ২০০০ সালের পর আমার তেমন কোনো যোগাযোগ নেই, পুরনো বন্ধুরাও সবাই এখন দেশ-মহাদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অথচ সেই ধূলিমাখা শহরটি ঘুমজড়ানো চোখে আমাকে কত সহজে আপন করে নিলো! মেনে নিলাম আজ থেকে বহু বছর পরেও আমাকে যদি এখানকার কেউ না চিনতেও পারে তবু আমার সন্তানকে নিয়ে আমি সেখানে যাব আর সুগন্ধা নদীর তীরে দাঁড়িয়ে বলবো এই সেই জায়গা যেখানে তোমার বাবা থাকতো!''
শাহ আজিজ লিখেছেন ঢাকা শহরের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে৷ তিনি লিখেছেন, ‘‘এরকম অনেক দফাই পেয়েছি তবে এবার আগেভাগে বাস মালিকদের স্বপ্ন গুড়িয়ে, ট্রেন, লঞ্চ সবকিছুতে হুড়োহুড়ি ছাড়াই লোকেরা বাড়িতে যাচ্ছে৷ বৃহস্পতিবার রাতে সবচেয়ে বেশি লোক বাড়িতে গেছে৷ গ্যাসে টান পড়ছে না, বিদ্যুৎ তার জেনেটিক হ্যাবিট বজায় রেখে এটটুস যাচ্ছে আর বুঝিয়ে দিচ্ছে হতভাগা বাংলাতেই আছিস৷ আগামী রবিবার পর্যন্ত ঢাকা তার পুরাতন রূপ ফিরে পাচ্ছে না৷ নির্মল নিঃশ্বাস নিয়ে, তাজা ফুলের সৌরভে বলে উঠুন - এখন যৌবন যার ঢাকায় থাকার সময় তার৷''
মোঃ মাকসুদুর রহমান একই ব্লগে লিখেছেন, ‘‘সারা বিশ্বের মুসলিমরা যখন তাদের পবিত্র মাস পালন করছে ঠিক সেই সময় গত ৮ জুলাই ইসরায়েলি বাহিনী প্যালেস্টাইনের পশ্চিম তীর গাজায় নির্বিচারে সাধারণ নাগরিকদের উপরে হামলা শুরু করে৷ বলতে গেলে ইসরায়েলি বাহিনী গাজা নগরীকে এক অর্থে মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়েছে৷ আসুন আমাদের এবারের ঈদের আনন্দ প্যালেস্টাইনি নিহত শিশু ও নারী, আহত মা ও ভয়ার্ত ছোট্ট শিশুর প্রতি ভালবাসা দেখিয়ে পরিহার করি৷ এর মাধ্যমে আমরা একটি পিছিয়ে পড়া দেশের নাগরিক হিসেবে উন্নত বিশ্বের প্রতি আমাদের অহিংস প্রতিবাদ জানাই৷''