শিখ হত্যা তদন্ত: সহযোগিতায় ভারতকে আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের
২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র "আন্তর্জাতিক স্তরে দমন-পীড়নের" ঘটনাগুলো "অত্যন্ত বেশি গুরুত্ব দিয়ে" দেখে৷
বিজ্ঞাপন
তিনি এ প্রসঙ্গে "জবাবদিহিতা" নিশ্চিত করতে চান বলেও উল্লেখ করেন।
এক শিখ ক্যানাডিয়ান নাগরিককে হত্যার তদন্তে ক্যানাডাকে সহযোগিতা করতে শুক্রবার ভারতের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
মার্কিন বিবৃতিটি এমন সময় দেয়া হয়েছে, যখন ভারত-ক্যানাডা সম্পর্কে শীতলতা তৈরি হয়েছে৷ নয়াদিল্লি ক্যানাডিয়ানদের জন্য ভিসা পরিষেবা স্থগিত করেছে৷ অন্যদিকে, অটোয়া একজন ভারতীয় কূটনীতিককে বহিষ্কার করেছে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন শুক্রবার জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দেন। নিউইয়র্কের অধিবেশনে তিনি এ তদন্তে ভারতকে সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন৷ তার কথায়, ‘‘আমরা জবাবদিহিতার বিষয়টি দেখতে চাই। তদন্তের গতিপথ যেন ঠিকমতো চলে আর ফলপ্রসূ হয়৷ আমরা আশা করব যে আমাদের ভারতীয় বন্ধুরাও সেই তদন্তে সহযোগিতা করবে।’’
অভিযোগের বিশদ বিবরণ না দিয়ে, ব্লিংকেন বলেন, ‘‘আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দমনপীড়নের ঘটনাগুলো অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন তারা৷’’
ব্লিংকেন বলেছেন যে ক্যানাডা সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ আলোচনা চলছে।
ট্রুডো সাংবাদিকদের বলেন, "সোমবার ভারতের বিরুদ্ধে যে বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগের কথা বলেছিলামচ, ক্যানাডা তা জানিয়েছে। আমরা অনেক সপ্তাহ আগে ভারতের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলেছি।"
ভারতের জড়িত থাকার অভিযোগ
ক্যানাডিয়ান নাগরিক হরদীপ সিং নিজ্জার হত্যার বিষয়টি এখন আন্তর্জাতিক রাজনীতির আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে। সোমবার ক্যানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো অভিযোগ করেন, নিজ্জার হত্যায় ভারত সরকারের ভূমিকা রয়েছে।
হরদীপ সিং নিজ্জার ভারতে খালিস্তান প্রতিষ্ঠার পক্ষে ছিলেন বলে অভিযোগ করেছে ভারত৷ ২০২০ সালে তাকে ভারতবিরোধী কার্যকলাপে যুক্ত থাকার অভিযোগে ‘সন্ত্রাসবাদী' আখ্যা দেয় ভারত৷ নরেন্দ্র মোদী সরকার তাকে নিজেদের অধীনে চেয়েছিল। নিজ্জার বিচ্ছিন্নতাবাদী খালিস্তান আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন৷ এই আন্দোলনের মূল দাবি, শিখদের জন্য স্বাধীন আবাসভূমি তৈরি করতে হবে।
সোমবার ক্যানাডার সকল অভিযোগ খারিজ করে পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে ক্যানাডার এক কূটনীতিককে দেশে ফেরত পাঠানোর ঘোষণা দেয় ভারত৷ গত কয়েক বছর ধরে ভারত-ক্যানাডা কূটনৈতিক সম্পর্ক কিছুটা টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল৷ বর্তমান ঘটনাবলী সেই পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলছে।
আরকেসি/এডিকে (এএফপি, রয়টার্স)
ভারত-ক্যানাডা সম্পর্কে উত্তেজনা বাড়ানো খালিস্তান আন্দোলনের আদ্যোপান্ত
ক্যানাডায় এক শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাকে হত্যায় ভারতের এজেন্টদের জড়িত থাকার ‘বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ’ রয়েছে বলে সোমবার মন্তব্য করেন ক্যানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো৷ এরপর থেকে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে৷
ছবি: Darryl Dyck/The Canadian Press/ZUMA press/picture alliance
খালিস্তান আন্দোলন কী?
১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তানের স্বাধীনতার আলোচনার সময় শিখেরা তাদের জন্য একটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের চেষ্টা করেছিলেন৷ এরপর থেকে পাঞ্জাব এলাকাটি এখন দুই দেশের মধ্যে বিভক্ত৷ শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীরা পাঞ্জাবে তাদের মাতৃভূমি ‘খালিস্তান’ (পবিত্র ভূমি) প্রতিষ্ঠা করতে চান৷ এই দাবিতে গত শতকের ৭০ ও ৮০র দশকে ভারতের পাঞ্জাবে প্রায় এক দশকের বেশি সময় ধরে অচলাবস্থা বিরাজ করেছিল৷
ছবি: Darryl Dyck/The Canadian Press/ZUMA press/picture alliance
শিখ ধর্ম
১৫ শতকের শেষদিকে পাঞ্জাবে শিখ ধর্ম প্রতিষ্ঠিত হয়৷ বিশ্বে শিখ ধর্মের অনুসারীর সংখ্যা প্রায় আড়াই কোটি৷ ভারতের জনসংখ্যার মাত্র দুই শতাংশ শিখ৷
ছবি: Narinder Nanu/AFP/Getty Images
ইন্দিরা গান্ধীকে হত্যা
খালিস্তান আন্দোলনকে নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে দেখে ভারত৷ ১৯৮৪ সালে ভারতের তখনকার প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী শিখদের সবচেয়ে পবিত্র তীর্থস্থান স্বর্ণমন্দির থেকে সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা জার্নাইল সিং ভিন্দ্রানওয়ালে ও তার সমর্থকদের সরাতে সেনাবাহিনী পাঠিয়েছিলেন৷ এর কয়েকমাস পর নিজ নিরাপত্তাকর্মীদের হাতে নিহত হন ইন্দিরা গান্ধী৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বিমান হামলা
১৯৮৫ সালে ক্যানাডা থেকে ভারতে রওয়ানা হওয়া এয়ার ইন্ডিয়ার একটি বিমানে বোমা হামলার জন্য শিখ জঙ্গিদের দায়ী করা হয়৷ বিমানের ৩২৯ আরোহীর সবাই নিহত হয়েছিলেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Durand
সামরিক অভিযান
১৯৮৬ ও ১৯৮৮ সালে সামরিক অভিযান চালিয়ে পাঞ্জাব থেকে শিখ জঙ্গিদের সরিয়ে দেয় ভারত৷
ছবি: picture-alliance/AP Images/Sondeep
সমর্থন কেমন?
বর্তমানে ভারতে খালিস্তান আন্দোলনের প্রতি সামান্য সমর্থনই দেখা যায়৷ তবে পাঞ্জাবের পরে সবচেয়ে বেশি শিখের আবাস ক্যানাডা, এবং যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রে এই আন্দোলনের পক্ষে এখনও কিছুটা সমর্থন দেখা যায়৷
ছবি: AP
ভারত কেন এখন আবার চিন্তিত?
এপ্রিলে ভারত অমৃতপাল সিং নামে এক শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীকে গ্রেপ্তার করে, যিনি নতুন করে খালিস্তান প্রতিষ্ঠার দাবি তুলেছিলেন বলে অভিযোগ৷ এছাড়া ক্যানাডায় এক প্যারেডে ইন্দিরা গান্ধী হত্যার বিষয়টি তুলে ধরা হয়৷ এটি হতে দেওয়ায় সেই সময় ক্যানাডার সমালোচনা করেছিল ভারত৷ এদিকে, ক্যানাডা, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ায় ভারতীয় দূতাবাসের সামনে শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিয়মিত বিক্ষোভের ঘটনায়ও চিন্তিত ভারত৷
ছবি: Narinder Nanu/AFP via Getty Images
ভারত-ক্যানাডা সম্পর্কে প্রভাব
ক্যানাডায় নিযুক্ত ভারতের কূটনীতিকেরা ‘শিখ সন্ত্রাসবাদ’ নিয়ন্ত্রণে অটোয়ার ব্যর্থতার কথা বেশ কয়েকবার বলেছেন৷ এ মাসে জিটোয়েন্টি সম্মেলনের সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদী ক্যানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গে বৈঠকের সময় ক্যানাডায় শিখদের বিক্ষোভ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন৷ এরপর ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা স্থগিত করে ক্যানাডা৷