কিছু শর্ত শিথিল করে বাংলাদেশে বাড়ানো হয়েছে করোনা ‘বিধিনিষেধ’ এর মেয়াদ৷ এবার চলবে দূরপাল্লার গণপরিবহন, উন্মুক্ত থাকবে হোটেল রেস্তোরাঁও৷ তবে একে বিধিনিষেধ বলতে নারাজ বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ৷
বিজ্ঞাপন
এবার লকডাউন বাড়ানোর সাথে আরো কয়েকটি ঘোষণা এসেছে৷ স্বাস্থ্যবিধি মেনে ট্রেন, দূরপাল্লার বাস ও লঞ্চ চলবে৷ হোটেল, রোস্তারাঁ, খাবারের দোকানে বসে স্বাস্থ্যবিধি মেনে খাওয়া যাবে৷ যানবাহনে অর্ধেক আসন খালি থাকবে৷ ভাড়া দিতে হবে শতকরা ৬০ ভাগ বেশি৷ সোমবার থেকে এসব নিয়ম কার্যকর হচ্ছে৷
এর আগে লকডাউনে গণপরিবহন আর ট্রেন ছাড়া সবকিছু খোলা ছিলো৷ স্বাস্থ্যবিধি আর মাস্ক পরার জন্য বলা হলেও তা তেমন কার্যকর হয়নি৷ সরকার মাস্ক পরাতে আইন প্রয়োগের কথাও চিন্তা করছে৷ বন্ধ থাকছে শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান৷
বাংলাদেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়ার পর গত ৫ এপ্রিল থেকে ‘কঠার লকডাউন’ শুরু হয়৷ কিন্তু তিনদিনের মাথায় তা ঢিলেঢালা হয়ে যায়৷ পুলিশের ‘মুভমেন্ট পাস’ নিয়েও চলাচলের কথা বলে হলেও পরের দিকেও তাও শিথিল হয়ে পড়ে৷ এরপর ধারাবাহিকভাবে বিধিনিষেধের সময়সীমা বাড়ে সঙ্গে একে একে সব খুলেও দেয়া হয়৷ ঈদের সময় ফেরিঘাটে বিজিবি মোতায়েন করেও বাড়িমুখো মানুষের ঢল থামানো যায়নি৷ ঈদের পরও তারা এসেছেন একইভাবে৷
ডা. নজরুল ইসলাম
এর আগে গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হলে ২৬ মার্চ থেকে টানা ৬৬ দিন সব কিছু বন্ধ ছিলো৷ আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয় ১৮ মার্চ থেকে৷
বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত করোনায় মারা গেছেন ১২ হাজার ৩৭৬ জন৷ আর করোনায় আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন সাত লাখ ৮৯ হাজার ৮০ জন৷ রবিবার ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ২৮ জন৷ করোনা শনাক্ত হয়েছে এক হাজার ৩৫৪ জনের৷
ভাইরোলজিস্ট ও করোনা সংক্রান্ত জাতীয় টেকনিক্যাল কমিটির সদস্য এবং বিএসএমইউ'র সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম মনে করেন, ‘‘দূরপাল্লার বাস এবং ট্রেন চলাচল শুরুর চাপ ছিলো৷ তাই সরকার কৌশলে বিষয়টি সহজ করে দিয়েছে৷ বিধিনিষেধের সময়ও বাড়িয়েছে আবার স্বাস্থ্যবিধি মেনে সব কিছু খোলারও অনুমতি দিয়েছে৷ সরকার একটা কৌশল অবলম্বন করেছে৷ আসলে তো সব কিছু তো খুলেই গেছে৷''
তিনি বলেন, ‘‘ঈদের সময় স্বাস্থ্যবিধি না মানার যে ব্যাপক প্রবণতা দেখা গেছে তার প্রভাব দেখতে আমাদের আরো কয়েকদিন অপেক্ষা করতে হবে৷ কারণ কেউ সংক্রমিত হলে তা প্রকাশ পেতে কমপক্ষে ১৪ দিন সময় লাগে৷ তাই আগামী ২৬-২৭ তারিখে তা বোঝা যাবে৷’’
ডা. জাহিদুর রহমান
তার মতে, ‘‘বাংলাদেশের আর্থ সামাজিক প্রেক্ষাপটে পুরোপুরি লকডাউন সম্ভব নয়৷ তাই আমরা সরকারকে শুরু থেকে স্বাস্থ্যবিধির ওপর জোর দিতে বলেছিলাম৷ বিশেষ করে মাস্ক পড়ার ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে বলেছি৷ কিন্তু সেটা হয়নি৷ এখনো বলছি সবাইকে মাস্ক পরাতে হবে৷ স্বাস্থ্যবিধি মানাতে হবে৷ এর কোনো বিকল্প নাই৷’’
সোহারাওয়ার্দী হাসপাতালের ভাইরোলজিস্ট ডা. জাহিদুর রহমান বলেন, ‘‘এখন যা হচ্ছে তা বোঝা কঠিন৷ সবকিছুই তো খুলে দেয়া হচ্ছে৷ তাহলে বিধিনিষেধ কোথায়? আমরা শুরু থেকেই এই অব্যস্থাপনা দেখে আসছি৷ সেটা নিয়ে এখন বলতে বলতে ক্লান্ত৷ আর বলতে ইচ্ছা করে না৷’’
তার মতে, ‘‘যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় করোনা সংক্রমণ কিছুটা কমেছে৷ এখন খুলে দেয়া হয়েছে৷ কিছু দিন পর এর ফলাফল বোঝা যাবে৷’’
এদিকে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘‘করোনা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেই আমরা নতুন নির্দেশনা দিয়েছি৷ সংক্রমণ বাড়লে আমাদের সিদ্ধান্তও পরিবর্তন হবে৷’’এদিকে ভারতে শনাক্ত হওয়া করোনার নতুন ধরনে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে নয়জন শনাক্ত হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর৷ সন্দেহভাজন আরও কয়েকজনের নমুনা জিনগত পরীক্ষা করা হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে৷
তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের পাহাড়ি এলাকায় টিকা দিতে গেলে স্বাস্থ্যকর্মীদের জানতে হয় পাহাড় চড়ার নানা কৌশলও, জানান ডা. জেইনেপ এরাল্প। তিনি বলেন, “মানুষ এসব অঞ্চলে অনেক কাছাকাছি বাস করে, ফলে সংক্রমণ সেখানে তাড়াতাড়ি ছড়ায়। আর মানুষ হাসপাতালে যেতে কিছুটা অনিচ্ছুক বলেই আমরা তাদের কাছে যাই।”
ছবি: Bulent Kilic/AFP
ঘন তুষার পেরিয়ে
আল্পস পর্বতমালার একটি অঞ্চল ইটালির পশ্চিমাঞ্চলের মাইরা উপত্যকায় রয়েছে এখন ঘন তুষারের আস্তরণ। এই অঞ্চলের বেশির ভাগ বয়স্ক বাসিন্দারা নিকটবর্তী টিকাদান কেন্দ্রে যেতে পারেন না। ফ্রান্স-ইটালি সীমান্তের কাছের এই অঞ্চলে আশি বছরের বেশি বয়সিদের করোনা টিকা দিতে তাদের বাড়ি যাচ্ছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা।
ছবি: Marco Bertorello/AFP
অ্যামেরিকার সবচেয়ে উত্তরের অঞ্চলে
ছবিতে একজন নার্সকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কার ছোট শহর ইগলের দিকে যেতে দেখা যাচ্ছে। সাথে রয়েছে একটি মাত্র টিকার বোতল, যা দিয়ে সম্পন্ন হবে স্থানীয় একশজন বাসিন্দাকে টিকা দেবার কাজ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ম বলছে, প্রত্যন্ত অঞ্চলে থাকার কারণে যদি বাসিন্দারা নিকটতম টিকাদান কেন্দ্রে যেতে না পারেন, সেক্ষেত্রে প্রয়োজনে আকাশপথেও পৌঁছে যাবেন স্বাস্থ্যকর্মীরা, তা সেখানের জনসংখ্যা যত কমই হোক না কেন।
ছবি: Nathan Howard/REUTERS
কিন্তু সবাই টিকা নিতে ইচ্ছুক নন
বিশ্বের বেশ কিছু অংশ থেকেই শোনা যাচ্ছে টিকা-ভীতির কথা। টিকার বদলে সংক্রমণ ঠেকাতে জড়িবুটি, তুকতাক বা ধর্মীয় গুরুদের ওপর ভরসা করছেন বেশ কিছু মানুষ। কলম্বিয়ার মিসাক গোষ্ঠীর অনেকের মধ্যে টিকা-ভীতি কমাতে স্বাস্থ্যকর্মী আনসেলমো তুনুবালা ঘুরে ঘুরে স্থানীয় ভাষায় টিকার সুফলের কথা বলেন ও টিকাও দেন।
ছবি: Luis Robayo/AFP
দীর্ঘ যাত্রার পর
মধ্য মেক্সিকোর নুয়েভা কোলোনিয়া অঞ্চলের একটি প্রত্যন্ত গ্রামের টিকাদান কেন্দ্রে পৌঁছাতেও ভিহারিকা গোষ্ঠীর সদস্যদের অন্তত চারঘন্টার পথ হেঁটে আসতে হয়। এই গোষ্ঠীকে অনেকে চেনেন হুইছল নামে।
ছবি: Ulises Ruiz/AFP/Getty Images
নৌকায় টিকা যেখানে
ব্রাজিলের রিও নেগ্রো নদীর পাশ ধরেই বাস নোসা সেনহরা দো লিভ্রামেন্তো গোষ্ঠীর। তাদের কাছে টিকা পৌঁছানোর একমাত্র ভরসা নৌকা। স্থানীয় বাসিন্দা ওলগা পিমেন্তেল তার নৌকায় চেপে টিকাদান কর্মীদের নৌকার পাশে যান। এক নৌকা থেকে আরেক নৌকায় টিকাদানের দৃশ্যই দেখা যাচ্ছে ছবিতে। ৭২ বছর বয়েসি ওলগার বক্তব্য, “আমার কোনো ব্যাথাই লাগেনি! জয় ব্রাজিলের গণ স্বাস্থ্য পরিষেবার জয়!”
ছবি: Michael Dantas/AFP
মোমের আলোয় টিকাদান
দীর্ঘদিন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট বলসোনারো করোনা টিকাদানের বিপক্ষে থাকলেও, বর্তমানে চলছে টিকাদানের কাজ। সর্ব প্রথম, টিকা দেওয়া হয় বিভিন্ন আদিবাসী ও সংখ্যালঘু নৃগোষ্ঠীদের। রাইমুন্দা নোনাটা এমনই এক গোষ্ঠীর সদস্য, যাদের অঞ্চলে বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। ফলে তার টিকাদান হলো মোমের আলোতেই।
ছবি: Tarso Sarraf/AFP
টিকা নিয়ে ঘরে ফেরা
উগান্ডার সরকার চেষ্টা করছে দেশটির বিভিন্ন কোণে টিকা পৌঁছাতে। ছবিতে দেখা যাচ্ছে টিকা নেবার পর, উগান্ডার বুনিয়োন্যি লেকের বোয়ামা দ্বীপের এক বাসিন্দা ও তার মেয়েকে নৌকায় চেপে ঘরে ফিরতে।
ছবি: Patrick Onen/AP Photo/picture alliance
জলপথে, কিন্তু নৌকায় নয়
জিম্বাবোয়ের জারি অঞ্চলে টিকা দিতে যাওয়ার সময় স্বাস্থ্যকর্মীদের গাড়ি চালিয়ে যেতে হয় বন্যাগ্রস্ত রাস্তা দিয়ে। আফ্রিকার স্বাস্থ্য সংস্থা ‘আফ্রিকা সিডিসি’ জানাচ্ছে যে, সেই দেশের এক শতাংশেরও কম মানুষের টিকাকরণ সম্পূর্ণ হয়েছে। সবার আগেটিকা পেয়েছে স্বাস্থ্যকর্মীরা।
ছবি: Tafadzwa Ufumeli/Getty Images
জাপানে যেমন
ঝাঁ চকচকে শহর শুধু নয়, জাপানের জনসংখ্যার একটি বড় অংশ বাস করে দূরদুরান্তের গ্রামেও। ছবিতে দেখা যাচ্ছে মাত্র কয়েকশ বাসিন্দার গ্রাম কিটাআইকি’র দৃশ্য। সেখানে যাদের পক্ষে শহরে গিয়ে টিকা নেওয়া সম্ভব নয়, তাদের বাড়িতে খোদ ডাক্তার এসেই টিকা দিয়ে যাচ্ছেন।
ছবি: Kazuhiro Nogi/AFP
টিকা পাহারা যেখানে
ইন্দোনেশিয়ায় করোনা টিকা দেবার কাজ শুরু হয় জানুয়ারি মাসে। বান্দা আচে থেকে নৌকায় স্বাস্থ্যকর্মীরা টিকা নিয়ে পৌঁছেছেন বহু দূরের দ্বীপে। এই টিকাকে এতটাই দামী মনে করা হচ্ছে যে, প্রতি দলের সাথে থাকছে নিরাপত্তারক্ষীও।
ছবি: Chaideer Mahyuddin/AFP
টিকা নিতে গিয়ে সংক্রমণের আশঙ্কা
গত কয়েক সপ্তাহে করোনা সংক্রমণের ঢেউ নাড়িয়ে দিয়েছে ভারতকে। মার্চ মাসের মাঝামাঝি, ব্রহ্মপুত্র নদীর পাশে বাহাকাজারি গ্রামে পৌঁছায় একটি টিকাদান দল, বেশ কিছু স্থানীয় নারীকে টিকা দিতে। ছবিতে দেখা যাচ্ছে সেই গ্রামে টিকাদানের নিবন্ধন প্রক্রিয়ার দৃশ্য, যেখানে কারো মুখে নেই মাস্ক, শারীরিক দূরত্বও বজায় রাখছেন না কেউ।