মার্কিন কংগ্রেসে পাশ হলো নতুন বিল। শিনজিয়াং প্রদেশের কোনো জিনিস অ্যামেরিকায় রপ্তানি করা যাবে না। মানবাধিকারের স্বার্থে এই বিল, দাবি কংগ্রেসের।
বিজ্ঞাপন
চীনে উইগুর মুসলিমদের বিরুদ্ধে অত্যাচার চলছে, এই অভিযোগ অনেক দিনের। সাম্প্রতিক কালে এই নিয়ে চীনকে একাধিকবার সরাসরি সতর্ক করেছে অ্যামেরিকা। এবার সেই বিষয়টিকে সামনে রেখেই শিনজিয়াং প্রদেশে তৈরি হওয়া সমস্ত জিনিসের উপর নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করা হলো। শিনজিয়াং প্রদেশেই উইগুর মুসলিমদের ক্যাম্প তৈরি করে রাখা হয়েছে।
বুধবার মার্কিন কংগ্রেসে ৪২৮-১ ভোটে পাস হয়েছে বিলটি। বিলের নাম উইগুর ফোর্সড লেবার প্রিভেনশন অ্যাক্ট। বিলে বলা হয়েছে, শিনজিয়াং প্রদেশে তৈরি কোনো সংস্থার কোনো জিনিস অ্যামেরিকায় রপ্তানি বা বিক্রি করা যাবে না। যদি কোনো সংস্থা বিক্রি করতে চায়, তাহলে তাকে প্রমাণ করতে হবে যে তারা ফোর্সড লেবার ব্যবহার করেনি।
মুসলিমদের শিবির যেভাবে চালায় চীন
চীনের শিনজিয়াং রাজ্যে মুসলমানদের ‘পুনরায় শিক্ষিত’ করতে অনেকগুলো ক্যাম্প পরিচালনা করা হয়৷ এই প্রশিক্ষণ ‘ঐচ্ছিক’ বলে দাবি করে সরকার৷ কিন্তু প্রকাশিত নথি বলছে অন্য কথা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/AP Photo/File
নির্দেশনা
চীনের শিনজিয়াং রাজ্যের বিভিন্ন ক্যাম্পে প্রায় দশ লাখ মুসলমান বন্দি রয়েছেন৷ এসব ক্যাম্প কীভাবে পরিচালিত হবে, সে বিষয়ে ২০১৭ সালে একটি নির্দেশনা দিয়েছিল কর্তৃপক্ষ৷ রবিবার ১৭টি গণমাধ্যমে একযোগে সেটি প্রকাশিত হয়েছে৷ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র ‘ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অফ ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস’ আইসিআইজে-কে এই নির্দেশনাটি দিয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/AP Photo/File
স্বেচ্ছায় নয়, বাধ্য করা হয়
চীন সরকারের দাবি, এসব ক্যাম্পে মুসলমানরা স্বেচ্ছায় প্রশিক্ষণ নিতে যান৷ কিন্তু প্রকাশিত নির্দেশনা বলছে, ক্যাম্পে বন্দিদের প্রথমে আদর্শ ও আচরণগত প্রশিক্ষণ দেয়ার মাধ্যমে তাঁদের মনোজগতে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করা হয়৷ এরপর অন্য জায়গায় তাঁদের জন্য কারিগরি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Z. Shuai
নিরাপত্তা ব্যবস্থা
বন্দিদের কেউ যেন পালাতে না পারেন সেজন্য ২৪ ঘণ্টাই তাঁদের নজরে রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে ক্যাম্প কর্মীদের৷ এমনকি টয়লেটে যাওয়ার সময়ও তাঁদের নজরে রাখতে বলা হয়েছে৷ এছাড়া নিরাপত্তা টাওয়ার নির্মাণ, ডাবল-লক দরজা, অ্যালার্ম ও প্রবেশ দরজাসহ সব জায়গায় ভিডিও নজরদারির ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/G. Baker
বন্ধুত্ব করা নিষেধ
বন্দিদের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তোলার ব্যাপারে ক্যাম্পের কর্মীদের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে৷ এছাড়া গোপনীয়তা রক্ষার স্বার্থে কর্মীরা মোবাইল ফোন কিংবা ক্যামেরা নিয়ে ক্যাম্পে ঢুকতে পারেন না৷
ছবি: Reuters/T. Peter
ক্যাম্পের বাসিন্দা যাঁরা
মূলত উইগুর মুসলমান৷ এছাড়া কাজাখসহ অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মুসলমানদেরও এসব ক্যাম্পে রাখা হয়েছে৷ ছবিতে একটি শ্রেণিকক্ষ দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
শুরুর কথা
বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে প্রায় বিদ্রোহী হয়ে ওঠেন উইগুর সম্প্রদায়ের মানুষ৷ ২০০৯ সালে শিনজিয়াং-এর রাজধানী উরুমকিতে বিক্ষোভে প্রায় ২০০ জন প্রাণ হারিয়েছিলেন৷ এরপর ২০১৪ সালে উইগুর বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ছুরি হামলায় ২৯ জন নিহত হন৷ এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে মুসলমানদের জন্য ক্যাম্প চালু করে চীন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
অস্বীকার
প্রকাশিত নথির তথ্য ঠিক নয় বলে দাবি করেছেন চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গেং শুয়াং৷ সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে চীনের লড়াইকে কলঙ্কিত করার চেষ্টা করায় গণমাধ্যমের সমালোচনা করেন তিনি৷
ছবি: Reuters/T. Peter
7 ছবি1 | 7
উইগুরে তুলো চাষ হয়। বিশ্বের বহু বড় বড় সংস্থা সেই তুলো কিনে শিনজিয়াংয়ে তাদের জিনিস তৈরি করে। এবার সেই সব জিনিস অ্যামেরিকায় বিক্রি করা যাবে না। কংগ্রেসে পাস হওয়া বিলটি এবার সেনেটে যাবে। সেখানে পাস হলে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সই প্রয়োজন। তারপরেই বিলটি আইনে পরিণত হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বিলটির আইন হওয়া এখন কেবল সময়ের অপেক্ষা।
সমস্যার সূত্রপাত
শিনজিয়াং প্রদেশে উইগুর মুসলিমদের বসবাস। অভিযোগ, সেখানে ক্যাম্প তৈরি করে তাদের আটকে রাখা হয়। তাদের উপর অমানবিক অত্যাচার চালানো হয়। জোর করে তাদের দিয়ে কাজ করানো হয়। অ্যামেরিকা চীনের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগও এনেছে। অ্যামেরিকা সরকারি ভাবে ওই ক্যাম্পকে কনসেনট্রেশন ক্যাম্পের সঙ্গে তুলনা করেছে। যদিও চীন তা মানতে নারাজ। তাদের বক্তব্য, উইগুরদের জন্য স্কুল তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। ক্যাম্পের স্কুলে তারা যায়। তাদের উপর কোনোরকম অত্যাচার হয় না।
বহু সংস্থার সমস্যা
অ্যামেরিকার নতুন আইনের ফলে বহু বড় বড় সংস্থা সমস্যায় পড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ, বড় বড় ব্র্যান্ডের জিনিস শিনজিয়াং প্রদেশে তৈরি হয়। কর্মী এবং কাঁচা মালের সুবিধার জন্যই সেখানে কারখানা তৈরি হয়েছে। কিন্তু অ্যামেরিকা সে জিনিস না নিলে তাদের বিকল্প ভাবতে হবে।