ক্যামেরা দিয়ে যে সব চরিত্রের ছবি তোলেন, তারা হল শিল্পীর নিজের হাতে রং করা খুদে সব পুতুল৷ সেই পুতুলগুলোকে আবার সাজানো হয় পথঘাটের নানা ছোটবড় জিনিসের সঙ্গে৷
বিজ্ঞাপন
লন্ডনের অ্যান্ডিপা গ্যালারিতে স্লিনকাচু-র নতুন সৃষ্টিগুলো দেখানো হচ্ছে৷ ড্যামিয়েন হার্স্ট বা ব্যানস্কি-র মতো স্বনামধন্য আধুনিক শিল্পী-চিত্রকরদের কাজও এই গ্যালারিতে প্রদর্শিত হয়েছে৷ ঠিক সে ভাবেই অ্যান্ডিপা গ্যালারি লন্ডনে এবং অন্যত্র স্লিনকাচু-র সর্বাধুনিক শিল্পকর্ম প্রদর্শন করে থাকে৷ আর্টের বাজারে স্লিনকাচু-র তোলা ফটোগুলির দাম কয়েক হাজার ইউরো হতে পারে৷ অ্যান্ডিপা গ্যালারি-র পরিচালক আকোরিস অ্যান্ডিপা বলেন, ‘‘স্লিনকাচু-র কাজের কোনো একটা বিশেষ নাম দেওয়া চলে না – অংশত তা খুবই একক এবং অনন্য বলে; দ্বিতীয়ত, তাতে এতো ধরনের কাজ এসে পড়েছে বলে, যেমন ফটোগ্রাফি, ইনস্টলেশন, মিনিয়েচারিজম, স্ট্রিট আর্ট, আর্বান আর্ট – সব মিলিয়ে তার কোনো সংজ্ঞা দেওয়া সত্যিই শক্ত৷''
পরিত্যক্ত পুতুল
স্লিনকাচু তাঁর ছবিগুলি সৃষ্টি করেন মডেল রেলওয়ে-র মানুষজনের ছোট ছোট পুতুলগুলোকে বাস্তব জগতের নানা ফেলে দেওয়া জিনিসপত্রের সঙ্গে সাজিয়ে৷ পুতুলগুলোকে অনেক সময় নিজেই রং করে নেন স্লিনকাচু৷ তাঁর খুদে মানুষদের কোথায় সাজাবেন, তার খোঁজে ঘণ্টার পর ঘণ্টা হাঁটেন এই শিল্পী৷ তারপর ঠিক জায়গাটি খুঁজে পেলে, সেখানে পুতুলগুলোকে সাজিয়ে, তার ছবি তোলেন স্লিনকাচু৷ তারপর পুতুলগুলোকে সেখানেই ফেলে রেখে চলে যান৷
বিখ্যাতরা ছোটবেলায় যেমন আঁকতেন
আজ তাঁরা বিখ্যাত৷ কিন্তু ছোটবেলায় কেমন আঁকতেন তাঁরা? তাঁদের সেসময়কার কাজেকর্মে কি বোঝা গিয়েছিল যে, তাঁদের ভবিষ্যত উজ্জ্বল৷ ছবিঘরে এই বিষয়টাই জানার চেষ্টা করা হয়েছে৷
ছবি: Courtesy: Jonathan Meese . Com.m Copyright VG Bild-Kunst, Bonn
ইয়োনাথান মেসে
ছয় বছর বয়সে এই ছবিটি এঁকেছিলেন জার্মান শিল্পী ইয়োনাথান মেসে৷ এখন তাঁর বয়স ৪৪৷ শিশু অবস্থায় যিনি ললিপপ আর লণ্ঠনের ছবি এঁকেছিলেন, তিনি পরবর্তীতে বিতর্কের জন্ম দেন৷ মেসের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তাঁর শিল্পকর্মে নাৎসি প্রতীকের উপস্থিতি ছিল৷ এজন্য তাঁকে আদালতেরও মুখোমুখি হতে হয়৷ অবশ্য পরে সেটা খারিজ হয়ে যায়৷
ছবি: Courtesy: Jonathan Meese . Com.m Copyright VG Bild-Kunst, Bonn
কাটিয়া স্ট্রুনৎস
জার্মানির কাটিয়া স্ট্রুনৎস ১২ বছর বয়সে আঁকা এই ছবিতে জঙ্গলের চিত্র তুলে ধরেছেন৷ একপাশে হাতির পিঠে টারজান আর অন্যপাশে বাঘকে দেখা যাচ্ছে৷ এর মধ্যে গাছগুলোতে তিনি বেশ রংয়ের ব্যবহার করেছেন৷ অবশ্য স্ট্রুনৎসের এখনকার তৈরি ভাস্কর্যগুলোতে রংয়ের ব্যবহার কমে এসেছে৷
ছবি: Courtesy Katja Strunz
টাল আর
যুদ্ধের সময় জন্ম নেয়ার কারণেই হয়ত শিল্পী টাল আর-এর ছোটবেলায় আঁকা এই ছবিতে সশস্ত্র মানুষ, ট্যাংক আর যুদ্ধজাহাজের উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে৷ বর্তমানে তিনি জার্মানির একটি আর্ট অ্যাকাডেমিতে শিক্ষক হিসেবে কাজ করছেন৷
ছবি: Courtesy: TAL R / Copyright Paradis
আক্সেল গাইস
বর্তমানে জার্মানির অন্যতম নামকরা শিল্পী আক্সেল গাইস৷ মাত্র ছয় বছর বয়সে আঁকা তাঁর এই ছবিটি ভালো করে দেখুন৷ কুকুরের চুল কাটছেন একজন নাপিত৷ আর ওদিকে আয়নায় কুকুরের মুখটা দেখা যাচ্ছে৷ মনে আছেতো, ছবিটা কিন্তু এঁকেছেন ছয় বছরের একটা ছেলে!
ছবি: Courtesy Axel Geis
উভে হেনেকেন
ছবিটি যখন এঁকেছিলেন তখন উভে হেনেকেনের বয়স আট৷ তিনি হতে চেয়েছিলেন নৃতত্ববিদ৷ কিন্তু খেয়াল করে দেখুন ছবির এই মেয়েটির দুই কান থেকে গাছ বের হচ্ছে, অর্থাৎ তিনি যে ফ্যান্টাসি পছন্দ করেন এটা তার প্রমাণ৷ হেনেকেনের এখনকার ছবিগুলোতেও সেই ফ্যান্টাসি জগৎ আর রূপকথারই পরিচয় পাওয়া যায়৷
ছবি: Courtesy Uwe Henneken and Galerie Giselal Capitain, Cologne
নোর্বার্ট বিস্কি
সাবেক পূর্ব জার্মানিতে জন্ম নিয়েছিলেন বলেই হয়ত সাত লবছর বয়সে আঁকা এই ছবিতে সামরিক বাহিনীর সদস্যদের দেখা যাচ্ছে৷ বর্তমানে বিস্কি ‘ফ্রেস্কো’ (ভেজা প্লাস্টারে জল রংয়ের ব্যবহার) আঁকেন, যেগুলোতে কিশোরদের জীবনের গল্প ফুটে ওঠে৷
ছবি: VG Bild-Kunst, Bonn, Courtesy Norbert Bisky
ফিয়া লেভান্ডোভস্কি
গ্রিম ভাইদের জনপ্রিয় রূপকথাগুলোর অন্যতম ‘লিটল রেড রাইডিং হুড’৷ মাত্র চার বছর বয়সে সেটা তুলে ধরার চেষ্টা করেছিলেন ফিয়া লেভান্ডোভস্কি৷ বর্তমানে জার্মানির বিভিন্ন স্থানে তাঁর ভাস্কর্য দেখতে পাওয়া যায়৷
ছবি: Courtesy Via Lewandowsky, Copyright VG Bild-Kunst, Bonn 2014
7 ছবি1 | 7
পথচারীরা অনেক সময় খেয়ালই করেন না, ঠিক কীসের ছবি তুলছেন এই শিল্পী৷ পরে চোখে পড়লে বলেন: ‘‘দেখতে দারুণ লাগে, কেননা ও গুলো এতো ছোট আর অসাধারণ৷ কিন্তু কেউ দেখিয়ে না দিলে, আমি হয়তো ও গুলোকে খেয়ালই করতাম না৷''
আবার কেউ বলেন: ‘‘আমার ঐ স্কেটবোর্ডারদের আর তাদের গল্পটাকে খুব ভালো লেগেছে – যেভাবে একজন একটি ফেলে দেওয়া কমলালেবুর খোসার ওপর স্কেটবোর্ড করছে আর অন্যজন দাঁড়িয়ে রয়েছে৷''
নিজের সৃষ্ট পুতুলগুলোকে এ ভাবে ফেলে রেখে চলে যাওয়ার পিছনেও একটা চিন্তা রয়েছে৷ স্লিনকাচু বলেন, ‘‘অনেক ক্ষেত্রে আমি পুতুলগুলোকে দিয়ে মানুষজনের হারানো, পরিত্যক্ত, একাকিত্বের ভাবটাকে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করি; শেষমেষ পুতুলগুলোকে নিজেই ফেলে রেখে চলে যাই... কেননা আমিই তো তাদের এই অনুভূতির কারণ৷ আমার ছবিগুলোর উপজীব্যই তো তাই৷''