শিল্পী সমিতির নির্বাচনের নিপুণ-জায়েদ যুদ্ধ এখনো চলছে
৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২এই নির্বাচনে ইলিয়াস কাঞ্চন-নিপুণ আক্তার প্যানেলের ১০ জন নির্বাচিত হয়েছেন৷ কিন্তু হেরে গেছেন নিপুণ৷ আর মিশা সওদাগর- জায়েদ খান প্যানেলের ১১ জন নির্বাচিত হয়েছেন৷ ইলিয়াস কাঞ্চন সভাপতি এবং জায়েদ খান সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন৷ জায়েদ টানা তৃতীয়বারের সত সাধারণ সম্পাদক হলেন৷ কিন্তু এটা মেনে নিতে নারাজ নিপুণ৷ মোটা দাগে তার অভিযোগ তার জয় কেড়ে নেয়া হয়েছে৷
নির্বাচনী প্রচারের সময়ই বাকযুদ্ধ এবং অভিযোগ ও পাল্টা অভিযোগে এফডিসি ছাড়িয়ে এই নির্বাচন সারাদেশের মানুষের নজর কাড়ে৷ বিশেষ করে ১৮৪ জনের ভোটাধিকার বাতিল ছিলো আলোচনায়৷ তা আদালত পর্যন্ত গড়ালেও শেষ পর্যন্ত তার ভোট দিতে পারেননি৷ দুস্থ শিল্পীদের নিয়ে নায়ক রিয়াজের কান্না এবং সমালোচনা ছিলো দেখার মত৷ জায়েদ খানের বিয়ে না করাও নির্বাচনী প্রচারে উপভোগ্য হয়ে ওঠে৷ আর সমিতির সদস্য না হয়েও আলোচনায় ছিলেন হিরো আলম৷
নির্বাচনের দিন নিপুণ জায়েদ খানের বিরুদ্ধে টাকা দিয়ে ভোট কেনার অভিযোগ করেন৷ অভিযোগ করেন অচরণ বিধি লঙ্ঘনের৷ আর নির্বাচনের পর সংবাদ সম্মেলনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার পীরজাদা হারুনের বিরুদ্ধে ''চুমো উপহার’’ চাওয়ারও অভিযোগ তোলেন৷
বুধবার রাতে তিনি ডয়চে ভেলেকে জানান, সমিতি যেহেতু সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধিত তাই মন্ত্রী বরারবর তিনি লিখিত অভিযোগ করেছেন জায়েদ খান ও কার্যকরী সদস্য চুন্নুর বিরুদ্ধে৷ তিনি বলেন,''আমি আমার অভিযোগের পক্ষে ভিডিও, মোবাইল ও ফেসবুক চ্যাটের স্কিন শট দিয়েছি৷ আরো অনেক প্রমাণ আছে৷’’
অবশ্য তিনি পীরজাদা হারুনের বিরুদ্ধে কোনো লিখিত অভিযোগ করেননি৷ কেন করেননি জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন৷ বলেন, ''এখন আমার অভিযোগের বিষয় এটা নয়৷ যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে করেছি৷’’
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় অভিযোগ খতিয়ে দেখার জন্য নির্বাচনী আপিল বোর্ডকে অনুরোধ করেছে৷ এই বোর্ডের প্রধান চলচিত্র পরিচলাক সোহানুর রহমান সোহান৷
নিপুণের অভিযোগের ব্যাপারে জায়েদ খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ''নির্বাচনে হেরে গেলে সবাই এইরকম অভিযোগ করে৷ নিপুণও তাই করছেন৷ তিনি টাকা দেয়ার যে অভিযোগ করছেন তা তার প্রমাণ করা উচিত৷ আসলে সে কিছুটা মানসিক সমস্যায় পড়েছে৷ সংবাদ সম্মেলনে চ্যাটের যে স্কিন শট দেখিয়েছে তা তৈরি করা৷ ফরেনসিক করা হলে তার প্রমাণ মিলবে৷ নিপুণের আবেদনে ভোট তো আবার গণনা করা হয়েছে তার উপস্থিতিতে ৷ তাতেও সে হেরেছে৷ কিন্তু সে অভিযোগ করেছিলো তার ১৪টি ভোট ইচ্ছে নষ্ট করা হয়েছে৷’’
তিনি আরো বলেন,'' মিথ্যা অভিযোগ করার কারণে আমি তার বিরুদ্ধে মামলা করতাম৷ কিন্তু সবার অনুরোধে তা করিনি৷ কারণ আমি নির্বাচিত হওয়ার পর এখন সবার প্রতিনিধি৷’’
বিনোদন সাংবাদিক নিপু বড়ুয়া বলেন, শুরু থেকেই এই নির্বাচনে ব্যাপক কাদা ছোড়াছুড়ি হয়৷ আর নির্বাচনের দিন পরিচালক প্রযোজক সমিতির কাউকে এফডিসিতে ঢুকতে দেয়া হয়নি৷ সাংবাদিকদের হাতে গোনা কয়েকজন ঢোকার অনুমতি পান৷ আচরণবিধি লঙ্ঘনও দেখা গেছে৷ কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি৷
নির্বাচনের আগে তুমুল উত্তেজনার কারণে ৪২৮ জন ভোটারের নির্বাচনে পুলিশ ছিলো দেড় হাজার৷ আর নির্বাচন কাভার করার জন্য আবেদন করেছিলেন এক হাজার দুইশর মত সাংবাদিক৷
নির্বাচনের দিন এফডিসিতে ঢুকতে না পেরে প্রযোজক ও পরিচালক সমিতিসহ ১৮টি সংগঠন প্রধান নির্বাচন কমিশনার পীরজাদা হারুনকে এফডিসিতে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে৷
নব নির্বাচিত সভাপতি ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ''নির্বাচন শান্তিপূর্ণ পরিবেশে হয়েছে৷ কাদা ছোঁড়াছুঁড়ির মত মতো কোনা ঘটনা ঘটেনি৷’’
নিপুণের অভিযোযোগের ব্যাপারে তিনি বলেন,''নির্বাচনের দিন সে অভিযোগ করেছিলো তবে তখন আমি সেগুলোকে আমলে নেইনি৷ পরে সংবাদ সম্মেলন করে সে কিছু ডকুমেন্ট উপস্থাপন করেছে৷ যাদের এগুলো দেখার দায়িত্ব তারা এখন সেগুলো দেখবেন আশা করি৷ কেউ যেন ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত না হন৷’’
তিনি জানান,''নিপুণের যে ১৪টি ভোট নষ্ট হয়েছে তা আবার পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে৷ আমি সেখানে ছিলাম৷ ভোটগুলো নষ্ট হিসেবে বিবেচনা করা ঠিকই আছে৷ তবে নষ্ট না হলে নিপুণ জিতে যেত৷ আমি শিল্পীদের মধ্যে সৌহার্দ্য ফিরিয়ে আনার সর্বাত্মক চেষ্টা করব৷ চেষ্টা করবো চলচিত্রের ভালো দিন ফিরিয়ে আনার৷ এজন্য এরইমধ্যে কাজ শুরু করেছি৷ যোগাযোগ শুরু করেছি৷’’
এই নির্বাচনে হিরো আলম বাড়তি মাত্রা যোগ করেন৷ তিনি ভোটার হতে না পেরে হতাশ হয়ে পড়েছে৷ হতাশ হয়েছেন শেষ পর্যন্ত তিনি চূড়ান্তভাবে হতাশ হয়ে বাংলাদেশ ছেড়ে কোলকাতা গিয়ে সিনেমা বানানোর ঘোষণা দিয়েছেন৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন,''আপনিই বলেন আমি কি শিল্পী না? আমাকে এত তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করা হলো কেন? তারা যেহেতু আমাকে চায় না তাই দেশে আর সিনেমা বানাবো না৷ কোলকাতা গিয়ে বানাবো৷’’