শিল্প কারখানার উৎপাদন প্রক্রিয়ায় এখন যুক্ত হচ্ছে ডিজিটাল নেটওয়ার্কভুক্ত বিভিন্ন মেশিন৷ যা উৎপাদন প্রক্রিয়াকে আরো নিঁখুত এবং সাশ্রয়ী করছে৷ কারখানায় প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধির মাধ্যমে আরো এক শিল্প বিপ্লব কি আসন্ন?
ছবি: Weidmüller
বিজ্ঞাপন
জার্মানির অধিকাংশ কোম্পানি এখন তাদের কর্মপরিকল্পনায় কারখানায় ‘স্মার্ট ফ্যাক্টরি' বা ‘ইন্ডাস্ট্রি ৪.০' ব্যবহারের বিষয়টি বিবেচনা করছে৷ প্রচলিত শিল্প কারখানাগুলোকে আধুনিকায়নের উদ্দেশ্যে জার্মান সরকারের নেয়া প্রকল্পের নাম ‘ইন্ডাস্ট্রি ৪.০'৷ এই প্রকল্পের আওতায় শিল্প কারখানাগুলিতে নতুন প্রযুক্তির কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন মেশিন ব্যবহারের দিকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে, যেগুলো অনলাইন নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত থাকবে৷ বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছে, জার্মান সরকারের এই প্রকল্প আগামী দশ থেকে বিশ বছরের মধ্যে শিল্প খাতে চতুর্থ বিপ্লব বয়ে আনবে৷
শুধু শিল্প কারখানাগুলোতেই নয়, নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে সাধারণ মানুষের মধ্যেওছবি: Indranil Mukherjee/AFP/Getty Images
পরামর্শক সংস্থা ‘প্রাইসওয়াটারহাউস কপার্স' বা পিডাব্লিউসি-এর এক সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে, পণ্য উৎপাদন খাতের সঙ্গে সম্পৃক্ত জার্মান কোম্পানিগুলো তাদের কারখানায় ‘ইন্ডাস্ট্রি ৪.০' মডেল প্রয়োগে আগ্রহী৷ তবে বাস্তবে কার্যক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত মাত্র এক-পশ্চমাংশ কোম্পানি পণ্য উৎপাদনে হালনাগাদ প্রযুক্তি ব্যবহার করছে৷
পিডাব্লিউসি-র মিশায়েল রাশ এই বিষয়ে বলেন, ‘‘জরিপে সাড়া দেওয়া প্রায় অর্ধেক কোম্পানি তথাকথিত স্মার্ট ফ্যাক্টরি স্থাপনের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে৷'' রাশ জানান, আরেকটি মজার বিষয় হচ্ছে ‘স্মার্ট ফ্যাক্টরি' স্থাপনে এক বছরেরও কম সময় লাগে, যদিও অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান ক্রান্তিকালের সময় আরো বেশি বলে ধরে নেয়৷
স্মার্ট অর্থ হচ্ছে সংযু্ক্ত – জার্মান উৎপাদকরা প্রযুক্তির এই পরিবর্তিত ধারার সঙ্গে পরিচিত হলেও সর্বক্ষেত্রে তা এখনো বিস্তৃতি লাভ করেনি৷ জার্মানির আমব্যার্গে অবস্থিত সিমেন্সের কারখানায় গত কয়েক বছর ধরেই পণ্য উৎপাদনে ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে৷ এই বিষয়ে সিমেন্সের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য সিগফ্রিড রুসভুর্ম জানান, নেটওয়ার্কভুক্ত ডিজিটাল উৎপাদন পদ্ধতি সামগ্রিকভাবে কারখানার উৎপাদন বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে সক্ষম৷
সর্বাধুনিক ‘মা’ এবং অন্যান্য
যুক্তরাষ্ট্রের লাস ভেগাসে প্রতিবছর ‘কনজিউমার ইলেকট্রনিক্স শো’ অনুষ্ঠিত হয়৷ ভবিষ্যতের প্রযুক্তি-পণ্যের দেখা মেলে সেখানে৷ ছবিঘরে দেখুন ২০১৪ সালের মেলার আকর্ষণ৷
ছবি: Reuters
‘মা’-এর দাম ১৯৯ ডলার!
ফ্রান্সের সেনস কোম্পানির ‘মাদার’ নামের এই ডিভাইসটি অনেকটা মায়ের মতোই ঘরের সবকিছুর খোঁজখবর রাখে৷ কফি শেষ হয়ে গেলো কিনা, সন্তান দাঁত ব্রাশ করেছে কিনা – এমন সব খবর রাখে মাদার৷ দাম ১৯৯ ডলার৷ এই লিংকে http://www.youtube.com/watch?v=Sw4yb0dNSbY গেলে এ সম্পর্কিত ভিডিও দেখা যাবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
স্মার্ট টুথব্রাশ
বিশ্বের প্রথম ইন্টারনেট-কানেক্টেড টুথব্রাশ ‘কোলিব্রি’৷ আপনার ব্রাশ করা কেমন হলো, ঠিকভাবে হলো কিনা, দাঁত কতখানি পরিষ্কার হলো – এ সবই জানিয়ে দেবে এই স্মার্ট টুথব্রাশ৷ এপ্রিল থেকে জুনের মধ্যে কোনো একসময় অনলাইনে এই টুথব্রাশের জন্য অর্ডার দেয়া যাবে৷ দাম সংস্করণভেদে ৯৯ থেকে ১৯৯ ডলার৷ কোলিব্রি সম্পর্কে আরও জানতে ভিজিট করুন http://www.youtube.com/watch?v=oEDMzFYqW9k৷
ছবি: Robyn Beck/AFP/Getty Images
সাইকেলের নেভিগেশন সিস্টেম
এই ডিভাইসটি সাইকেলে লাগিয়ে নিলে সেটাই আপনাকে বলে দেবে কোনো নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছতে আপনাকে কোন দিক দিয়ে যেতে হবে৷ সেখানে পৌঁছতে আপনার কত সময় লাগবে৷ আর তাতে আপনার ক্যালরি কতখানি খরচ হবে৷ শোইন কোম্পানির এই ডিভাইসটির (http://www.youtube.com/watch?v=zwlFGoI_pRI) নাম ‘সাইকেলনা৷’
ছবি: Reuters
শরীরচর্চার তথ্য
‘তাও ওয়েলশেল’ (http://www.youtube.com/watch?v=E_kTVvpVpYg) ডিভাইসটি আপনি কতখানি দৌঁড়ালেন, আপনার হৃদস্পন্দন কত, সব আপনার স্মার্টফোনে জানিয়ে দেবে৷ এছাড়া ছোট্ট এই ডিভাইসটি দিয়ে আপিন যেকোনো সময়, যে কোনো অবস্থায় ‘আইসোমেট্রিক এক্সারসাইজ’ করতে পারবেন৷ চলতি বছরের শেষ ভাগে পণ্যটি কিনতে পাওয়া যাবে৷ দাম পড়বে ৩০০ ডলারের মতো৷
ছবি: Reuters
ম্যাজিক পার্কিং
শহর এলাকায় অল্প জায়গায় গাড়ি পার্কিং-এর কাজটি অনেকের জন্য জটিল৷ বিএমডাব্লিউ-র আইথ্রি মডেলের ইলেকট্রিক গাড়িতে রয়েছে ‘পার্কিং অ্যাসিস্টেন্ট’, যেটা চালু করার পর চালক শুধু ব্রেকটা নিয়ন্ত্রণে রাখবেন, আর গাড়ি নিজে থেকেই পার্কিং-এর জায়গায় চলে যাবে৷ এই লিংকের (http://www.youtube.com/watch?v=8Vj4xLCxwhw) ভিডিওটি দেখলে ব্যাপারটা আরেকটু পরিষ্কার হওয়া যাবে৷
ছবি: Reuters
আইফোন দিয়ে রান্না নিয়ন্ত্রণ
‘স্লো কুকার’৷ যুক্তরাষ্ট্র, ক্যানাডা, অস্ট্রেলিয়া আর নিউজিল্যান্ডে যারা থাকেন তারা হয়ত এই ধরনের কুকারের (http://en.wikipedia.org/wiki/Slow_cooker) সঙ্গে পরিচিত৷ মার্কিন একটি কোম্পানি ‘ক্রোক-পট উইমো স্মার্ট স্লো কুকার’ (http://www.youtube.com/watch?v=T43NcPYMVZE) বের করেছে, যেটা আইফোনের জন্য তৈরি একটি অ্যাপ দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে৷
ছবি: Reuters
বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার ভয়?
অন্তত শৈলেন্দ্র সুমনের সেটা নেই৷ কারণ তিনি এমন একটি এলইডি-বাল্ব উদ্ভাবন করেছেন যার মধ্যে ব্যাটারি রয়েছে৷ এর ফলে বিদ্যুৎ চলে গেলেও ব্যাটারি থাকার কারণে বাতিটি চার ঘণ্টা পর্যন্ত জ্বলতে পারবে৷
ছবি: Reuters
হাই-রেজুলিউশন ফ্ল্যাটস্ক্রিন টিভি
এই টিভিগুলোর রেজুলিউশন এইচডি টিভির চেয়ে প্রায় চারগুন বেশি৷ তবে দুঃখের ব্যাপার, এ ধরণের সর্বাধুনিক টিভিতে দেখার মতো কোনো সিনেমা নেই৷
ছবি: Reuters
8 ছবি1 | 8
কারখানায় ব্যবহৃত নতুন প্রযুক্তিতে ত্রুটির পরিমাণও অনেক কম৷ রুসভুর্ম বলেন, ‘‘মেশিনে তৈরি প্রতি দশ লাখ পণ্যের মধ্যে মাত্র ১২টিতে ত্রুটি ধরা পড়ছে৷ আরেকটি বড় সুবিধা হচ্ছে, এই পদ্ধতিতে খুব দ্রুত বাজারে পণ্য সরবরাহ করা যায়৷ গতানুগতিক পদ্ধতিতে নতুন পণ্য তৈরিতে যে সময় লাগে তার অর্ধেক সময়ের মধ্যে ডিজিটাল পদ্ধতিতে পণ্য সরবরাহ সম্ভব৷''
তবে নতুন প্রযুক্তি এবং সবকিছু এক নেটওয়ার্কের নিয়ে আসার সঙ্গে ‘তথ্য সুরক্ষা'-র বিষয়টিও সম্পৃক্ত৷ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্য সম্পর্কে গোপনীয়তা বজায় রাখতে চায়৷ কিন্তু ডিজিটাল নেটওয়ার্কের থেকে তথ্য চুরির আশঙ্কা থেকে যায়৷ তাছাড়া ‘স্মার্ট ফ্যাক্টরির' সবার জন্য প্রযোজ্য মডেলও এখনো তৈরি হয়নি৷ আর জার্মানি এক্ষেত্রে বেশ এগিয়ে থাকলেও অন্যান্য দেশ এখনো পিছিয়ে রয়েছে৷