শিল্প এবং গণতন্ত্রে
১৮ অক্টোবর ২০১৩শিল্পী হামফ্রে মালেকা চান, তাঁর স্বদেশ দক্ষিণ আফ্রিকায় অবশেষে একটা পরিবর্তন হোক৷ ‘আপার্টহাইড' তথা বর্ণবৈষম্য ইতিহাসে পরিণত হলেও মানুষের চিন্তাভাবনায় তা আজও জড়িয়ে আছে৷ মালেকা সমালোচনা করে বলেন, ‘‘আমরা বলি আমাদের দেশ আজ ঐক্যবদ্ধ৷ কিন্তু মনের গভীরে এখনও আমাদের বিভেদটা রয়ে গেছে৷ কালো ও সাদা৷''
শিল্পীরা রাজনৈতিক মানুষও
মালেকা নিজেকে শুধু একজন শিল্পী বলে মনে করেন না৷ মনে করেন একজন রাজনৈতিক মানুষও৷ তাঁর শিল্পকর্মের মাধ্যমে আফ্রিকার সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে চান তিনি৷ চান আরো গণতন্ত্র, সমানাধিকার ও কম দুর্নীতি৷ ২৮ বয়স্ক হামফ্রে মালেকা নৃত্য নিয়ে পড়াশোনা করেছেন৷ কন্টেম্পোরারি ডান্স থিয়েটার অ্যান্ড কোরিয়োগ্রাফ-এর সদস্য তিনি
মালেকার মতো শিল্পীরা আফ্রিকায় রাজনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনতে কিংবা প্রভাব বিস্তার করতে পারবেন কিনা, সে সম্পর্কে প্রফেসর ভল্ফগাং শ্নাইডার গবেষণা করছেন৷ এই বছরের শুরুর দিক থেকে তিনি হিল্ডেসহাইম ইউনিভার্সিটিতে অবস্থিত ইউনেস্কো ইন্সটিটিউটের ‘সামাজিক উন্নয়নে শিল্প ও সংস্কৃতি' বিষয়ক বিভাগে দায়িত্ব পালন করছেন৷ শ্নাইডার মনে করেন, শিল্প শুধু সুন্দরই নয় সামাজিক পরিবর্তনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে৷
এটা লক্ষ্য করা যায় আরব বসন্তেও
এই বিষয়টি লক্ষ্য করা যায় আরব বসন্ত বলে খ্যাত আরব বিশ্বের গণ বিপ্লবেও৷ ‘‘টিউনিশিয়া ও মিশরে জনগণ শিল্প ও সংস্কৃতির মাধ্যমেও তাদের প্রতিবাদ প্রকাশ করেছে৷ যেমন প্ল্যাকার্ড, গ্রাফিটি, সংগীত ও থিয়েটারের মাধ্যমে৷'' বলেন প্রফেসর শ্নাইডার৷ আফ্রিকার শিল্পীদের কথা যাতে শোনা হয় সেজন্য রাজনৈতিক পরিকাঠামো প্রয়োজন৷ গবেষণার ফলাফল থেকে এক্ষেত্রে কিছু পরামর্শ রাখতে চান তিনি
প্রফেসর শ্নাইডার মনে করেন, এজন্য জার্মান সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে কিছুটা রদবদল করা প্রয়োজন৷ সেখানে বিদেশি সংস্কৃতিনীতি সম্পৃক্ত করা যেতে পারে৷ এতে জার্মান ও বিদেশি সংস্কৃতি প্রকল্পের মধ্যে সমন্বয় করা যেতে পারে৷
হিল্ডেসহাইম ইউনিভার্সিটির উদ্যোগ
আফ্রিকার সংস্কৃতি ও শিল্পের প্রভাব ভালভাবে জানার জন্য হিল্ডেসহাইম ইউনিভার্সিটির পক্ষ থেকে আফ্রিকায় যোগাযোগ করা হচ্ছে৷ অন্যদিকে জার্মানিতে কালচারাল পলিসি ইন্সটিটিউট নানা ধরনের আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করছে ৷ যেমন অংশ নিয়েছে হানোফারের এক থিয়েটার উত্সবে৷ ভল্ফগাং শ্নাইডার ও অন্যান্য সাংস্কৃতিক সংস্থার সাথে হামফ্রে মালেকাও সমাজে থিয়েটারের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করেছেন সেখানে৷
আফ্রিকান কোরিয়োগ্রাফার মালেকা দক্ষিণ আফ্রিকায় তাঁর একটি অনুষ্ঠান, ‘হাউস প্রজেক্ট' সম্পর্কে বর্ণনা করেন৷ এই প্রকল্পে মালেকা ও তাঁর সহশিল্পীরা একদিকে জোহানেসবুর্গের কৃষ্ণাঙ্গদের বসতি টাউনশিপে অন্যদিকে শেতাঙ্গদের বসতিতেও অনুষ্ঠান করেছেন৷ দর্শকরা অনুষ্ঠানের দুই জায়াগাতে গিয়েই অনুষ্ঠান উপভোগ করেছেন৷ ভাবের আদান প্রদান করেছেন৷৷
‘‘আমরা শেতাঙ্গ ও কৃষ্ণাঙ্গদের একই ট্যাক্সিতে করে আনা নেওয়া করেছিলাম বলে নিশ্চিত হয়েছিলাম যে, তারা পরস্পরের সঙ্গে কথাবার্তা বলছেন একবারে সাধারণ বিষয় নিয়ে৷ কে বস, কে কর্মচারি এসব নিয়ে নয়৷'' বলেন হামফ্রে মালেকা৷
২৮ বছর বয়সি এই শিল্পীর কাছে শিল্প অবশ্যই রাজনীতি৷ আর শিল্পের কাজ হলো রাজনীতিকে চ্যালেঞ্জ করা, প্রশ্ন করা৷ ‘‘শিল্প একা সবকিছু বদলাতে পারে না৷ কিন্তু আমরা যা কিছু করছি, তা তো গণ্য হচ্ছে৷'' দৃঢ়তার সাথে জানান হামফ্রে মালেকা৷