1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

শিশুকে দুধ না দেয়ায় মায়ের বিরুদ্ধে বাবার অভিযোগ

রাজীব চক্রবর্তী নতুন দিল্লি
২ মে ২০১৮

ভারতের দিল্লিতে জন্ম নেয়া এক নবজাতকের মায়ের বিরুদ্ধে তার শিশুকে মাতৃদুগ্ধ থেকে বঞ্চিত করার অভিযোগ এনেছেন শিশুটির বাবা৷ এ ব্যাপারে তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ পেয়েছে আরও কিছু নতুন তথ্য৷

ছবি: picture-alliance/dpa-Zentralbild

গতবছর ৯ ডিসেম্বর বাঁ-‌হাতে পক্ষাঘাত রোগ নিয়ে দিল্লিতে ঐ শিশুকন্যার জন্ম হয়৷ তারপর চিকিৎসকরা কিছু সতর্কতা বাতলে দেন৷ সেইসঙ্গে কিছু ওষুধ ও নিয়মিত ব্যায়াম করানোর পরামর্শ দেয়া হয়৷ শিশুটি যে রোগে আক্রান্ত তার নাম ‘‌আর্বস পালসি' - যা দুই বাহুর পক্ষাঘাত৷ ‌জন্মের সময় কিছু জটিলতার কারণে প্রধান স্নায়ুতে আঘাত লেগে এই ধরণের ব্যাধি হয়ে থাকে বলে চিকিৎসকরা জানান৷

‘অসুস্থ শিশুর চিকিৎসার নানারকম পদ্ধতি আছে, মা-‌কে ওষুধ খাইয়েই চিকিৎসা করাতে হবে, এটা বাধ্যতামূলক হতে পারে না’

This browser does not support the audio element.

শিশুটির বাবা একজন আইনজীবী৷ সম্প্রতি তিনি তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে ‌সদ্যোজাত শিশুকে ছেড়ে যাওয়ার অভিযোগ আনেন৷ অভিযোগে তিনি লিখেছেন, শিশুকন্যাটির বয়স যখন মাত্র দুমাস, তখন তাকে ছেড়ে চলে যায় তার মা৷ বহু চেষ্টা করেও তাঁ‌কে আর ফিরিয়ে আনা যায়নি বলে অভিযোগ করেন বাবা৷ স্ত্রীর কোনো খোঁজও তাঁর কাছে নেই বলে জানান তিনি৷

তারপর পুলিশ তদন্তে নেমে একে একে রহস্য উন্মোচন শুরু করেছে৷ অভিযোগ, শিশুটির যখন মাত্র দু-‌মাস বয়স তখনই তাকে ছেড়ে চলে যায় তার মা৷ এর একমাস পর দিল্লি উচ্চ আদালতে হাজির হয়ে মা অসুস্থ শিশুটিকে নিজের কাছে রাখতে অস্বীকার করেছিলেন৷ আদালতকে তিনি জানিয়েছিলেন, সদ্যোজাত সন্তানের চিকিৎসার জন্য যে ধরণের ওষুধের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, সেই ওষুধে তাঁর এলার্জি রয়েছে৷

এরপর উচ্চ আদালত মামলাটি খারিজ করে দেয়৷ কিন্তু সুবিচার চেয়ে ট্রায়াল কোর্টের আর্জি জানিয়েছেন শিশুটির আইনজীবী বাবা৷

আদালতের নির্দেশে দিল্লি পুলিশের পেশ করা এক রিপোর্ট বলছে, শিশুটির মা-‌কে কেউ জোর করে আটকে রাখেনি৷ তিনি স্বেচ্ছায় তাঁর বাবা-‌মায়ের বাড়িতে চলে গেছেন৷ পুলিশ আরও জানিয়েছে, জিজ্ঞাসাবাদে ওই মহিলা অভিযোগ করেছেন, তাঁকে তাঁর স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন মেরে ফেলার ভয় দেখিয়েছেন৷ এবং তাঁকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন৷ তিনি আরও দাবি করেছেন, শ্বশুরবাড়ির লোকেরা তাঁকে ভয় দেখিয়েছেন, পণের দাবিতে অত্যাচারের অভিযোগ দায়ের করলে তাঁকে আর সংসারে ঠাঁই দেওয়া হবে না৷

তবে পুরো বিষয়টি নিখুঁতভাবে তদন্ত করে দেখার জন্য আরও কিছুটা সময় চেয়েছে পুলিশ৷ বলা হয়েছে, শিশুটির বাবা একটি লিখিত বিবৃতি জমা দিয়েছেন৷ তাতে তিনি শিশুটির শারীরিক অবস্থার বর্ণনা দিয়েছেন, সেইসঙ্গে কন্যাশিশুটির ওপর তার মায়ের ‘‌অত্যাচার'‌-‌এর বিবরণ দিয়েছেন৷

‌বিশিষ্ট মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ অলোক পাত্র মনে করছেন, এর পেছনে রয়েছে দাম্পত্য কলহ৷ স্বামী-‌স্ত্রীর বৈবাহিক সম্পর্কে শীতলতার কারণে এই জটিলতা তৈরি হয়েছে৷ কেউ কাউকে ‘‌জমি'‌ ছাড়তে চাইছেন না৷ তাই শিশুটিকে আইনি-‌লড়াইয়ে টেনে আনা হয়েছে৷ শিশুকন্যাটি আদৌ স্বামী-‌স্ত্রী উভয়ের সম্মতিতে জন্ম নিয়েছে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন তিনি৷

‘পুরুষের কাছেতো নারীরা কোনোদিন সুরক্ষিত ছিল না, আমাদের আইন প্রণেতারা যেন আরেকটু সচেতন হন’

This browser does not support the audio element.

ডাঃ পাত্র ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ‘‌‘‌যে কোনও ধরণের অসুস্থ শিশুর চিকিৎসার নানারকম পদ্ধতি আছে৷ মা-‌কে ওষুধ খাইয়েই শিশুর চিকিৎসা করাতে হবে, এটা বাধ্যতামূলক হতে পারে না৷ তাছাড়া উল্টোদিকে, মা-‌যে দাবি করছেন, বিশেষ ওষুধে অ্যালার্জির কারণে তিনি ওষুধ খেতে পারবেন না, এটাও অনিবার্য নয়৷ সবকিছুরই বিকল্প পথ আছে৷ ঘটনা যতদূর জানা গেছে, তাতে মনে হচ্ছে, শিশুটিকে মাঝখানে রেখে আসলে তার বাবা-‌মা আইনি লড়াই চালাচ্ছেন৷ এটা কাম্য নয়৷ শিশুটির অধিকার অবশ্যই লঙ্ঘিত হচ্ছে৷ এটা দুর্ভাগ্যজনক৷ সমাজের পক্ষে লজ্জাজনকও বটে৷'‌'

এদিকে, পুরো ঘটনাটি সংবাদপত্র পড়ে জেনেছেন গৃহবধূ এবং একজন মা মিতালী পোদ্দার৷ নারী হিসেবে লজ্জা প্রকাশের পাশাপাশি সামাজিক অধঃপতন নিয়ে দুশ্চিন্তা প্রকাশ করেছেন তিনি৷ সেইসঙ্গে শিশুদের অধিকার রক্ষায় সব মহলের অবিলম্বে এগিয়ে আসা উচিত বলে মনে করছেন তিনি৷ তাঁর কথায়, ‘‘শিশুরা ভারতে বিপন্ন৷ জন্মের আগেই শিশুকন্যাদের মেরে ফেলার ঘটনা কারও অজানা নয়৷ জন্মের পর বড় হতে না হতেই কামদুনি থেকে কাঠুয়া এবং নির্ভয়াদের মতো ঘটনা ঘটে৷ কিন্তু ‘‌মা'‌ শব্দটা নিয়ে এতদিন সন্দেহ ছিল না৷ এখন তা-‌ও হল৷ কোনও মা সন্তানকে মেরে ফেলছেন৷ কেউ সন্তান বিক্রি করে দিচ্ছেন৷ কেউ আবার অসুস্থ সন্তানের দায়-দায়িত্ব ঝেড়ে ফেলে নিজের সুখের জন্য তাকে অস্বীকার করছেন৷ এর থেকে লজ্জার আর কি-‌ইবা হতে পারে?‌''‌

দিল্লির এই ঘটনা গোটা সমাজের চোখে আঙুল দিয়ে যে সমস্যার কথা দেখিয়েছে তার সমাধানে কী করা উচিত, তা-‌ও বলছেন মিতালী৷ তাঁর মতে, ‘‘‌‌পুরুষের কাছেতো নারীরা কোনোদিন সুরক্ষিত ছিল না৷ এখন এই সমস্যার সমাধানে শুধু উঁচু মহলের দিকে আঙুল তুললেই হবে না৷ আমাদের আইন, আইন প্রণেতারা যেন আরেকটু সচেতন হন৷ এই ধরণের নিম্নমানের ঘটনা বন্ধ করতে সকলকে সচেষ্ট হতেই হবে৷ শিশুদের সুস্থভাবে বেঁচে থাকার অধিকার রক্ষা করতে হবে আমাদের সকলকে৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ