শিশুদের জন্য বাজারে আসা ‘স্মার্ট টয়' বা খেলনা হয়ত তাদের উপর নজর রাখছে, এমনটা মনে করছে ক্রেতাস্বার্থ দেখভাল করা মার্কিন ও ইউরোপীয় কয়েকটি সংস্থা৷
বিজ্ঞাপন
স্মার্ট টয়, মানে এসব খেলনা ইন্টারনেটের সঙ্গে সংযুক্ত হতে পারে৷ স্মার্টফোন অ্যাপ আর ব্লুটুথের মাধ্যমে সেগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে শিশুরা৷ একজন শিশু যখন স্মার্ট পুতুলকে কিছু জিজ্ঞেস করে তখন সেটি টেক্সটে রূপান্তরিত হয়ে যায়৷ পরে অ্যাপ ইন্টারনেটে প্রশ্নটির উত্তর খোঁজে৷ আর সেই উত্তর বের হয় পুতুলের মুখ থেকে৷
ছেলেদের খেলনা, মেয়েদের খেলনা
বাচ্চাদের খেলনা কেনার জন্য যে কোনো বড় দোকান বা সুপারস্টোরের ঠিক কোন অংশে ছেলেদের আর কোথায় মেয়েদের খেলনা পাওয়া যাবে – সেটা রঙ দেখলেই বোঝা যায়৷ কিন্তু এতে করে কি লিঙ্গবিষম্য করা হচ্ছে না?
ছবি: Screenshot Lego Shop
গোলাপি মানেই...
হ্যাঁ, ঠিক ধরেছেন৷ ছবিতে একটি সুপারস্টোরের যে অংশ দেখতে পাচ্ছেন, সেখানে গেলে বাচ্চা মেয়েদের খেলনা পাওয়া যাবে৷ চারদিকে গোলাপি রঙয়ের ছড়াছড়িই সেটা বলে দিচ্ছে৷ ছেলেদের খেলনার অংশটি হলো নীল৷ খেলনার রঙে এই ভিন্নতার কারণে অনেকদিন ধরেই লিঙ্গবৈষম্যের অভিযোগ উঠছিল৷ তারই সূত্র ধরে মার্কিন সুপারস্টোর চেন ‘টার্গেট’ সম্প্রতি এই নিয়ম পরিবর্তনের ঘোষণা দিয়েছে৷
ছবি: cc-by-Josh Puetz
রঙ আর থাকবে না
গোলাপি আর নীলের এই খেলায় আর অংশ না নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে ‘টার্গেট’৷ টুইটারে ‘গার্লস বিল্ডিং সেট্স’ শীর্ষক প্রচারণা আর এ বিষয়ে একটি পিটিশনের পর, টার্গেট বিবৃতিতে জানিয়েছে যে, তারা এখন থেকে স্টোরগুলোয় রঙ ব্যবহার করে ছেলে আর মেয়ের মধ্যে পার্থক্য করবে না৷ আগামী কয়েক মাসের মধ্যে এটি বাস্তবায়নের কথা জানিয়েছে টার্গেট৷
ছবি: AP
তবে বার্বি থাকছে...
টার্গেটের এই ঘোষণায় অবশ্য বার্বির উল্লেখ নেই৷ এর মানে, খেলনা হিসেবে ১৯৫৯ সাল থেকে মেয়ে চরিত্রের সমার্থক হয়ে ওঠা বার্বির বিক্রি বন্ধ করবে না তারা৷ বার্বির মাধ্যমে কোমলমতি মেয়ে শিশুদের মধ্যে একটি অবাস্তব নারী দেহের চিত্র তুলে ধরার সমালোচনা আছে বহুদিন ধরেই৷ অবশ্য বার্বির কিছু ইতিবাচক দিকও আছে৷ যেমন চিকিৎসক, মহাকাশবিজ্ঞানী, শিক্ষক – এ সব পেশার বার্বির মধ্য দিয়ে মেয়েদের আত্মনির্ভরতার কথা বলা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
লিঙ্গ নিরপেক্ষ বাজারজাতকরণ
এর আগে ২০১৩ সালে যুক্তরাজ্যের ‘টয়েস আর আস’ লিঙ্গ নির্ভর বাজারজাতকরণ বন্ধের ঘোষণা দিয়েছিল৷ তারও আগে ২০১২ সালে ব্রিটিশ এই সুপারস্টোর তাদের সুইডেনে প্রকাশিত বড়দিনের ক্যাটালগে লিঙ্গ নিরপেক্ষ ছবি ব্যবহার করেছিল, যেমন উপরের ছবিটি৷
ছবি: top-toy.com
শুধু খেলনা নয়, ক্যান্ডিতেও
ছবিটি ভালো করে খেয়াল করুন৷ হাইহিল জুতা, নেল পলিশের বোতল দেখতে পাচ্ছেন? অথচ এটি কিন্তু ‘হারিবো’-র ফ্যান্টাসি সিরিজের একটি ক্যান্ডির প্যাকেট, যেখানে ডাইনোসর, গাড়ি ইত্যাদির ছবি থাকা উচিত ছিল৷ কিন্তু শুধু মেয়েদের জন্য (ছবিতে দেখুন পিংক এডিশন) বলেই এই ব্যবস্থা!
ছবি: DW/C. Bleiker
স্লিম, সুন্দরী
‘অ্যামেরিকাস নেক্সট টপ মডেল’-এর মতো প্রতিযোগিতাগুলো মেয়েদের মনে করিয়ে দেয়, মডেল মানেই স্লিম ও সুন্দর হতে হবে৷ জার্মান খেলনা প্রস্তুতকারক ‘প্লেমোবিল’ মেয়ে বাচ্চাদের জন্য এই ধরণের প্রতিযোগিতা খেলার মতো খেলনা নিয়ে এসেছে৷ আজকাল ছেলে মডেল বাছাইয়ের জন্য প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকলেও ছেলে শিশুদের জন্য এমন কোনো খেলনা এখনও বাজারে আনেনি প্রেমোবিল৷
ছবি: Screenshot playmobil.de
সাত বছরের মেয়ে বাচ্চার অভিযোগের পর
৭ বছরের শিশু শার্লটে বেনজামিন একবার ‘লেগো’-র কাছে এই বলে অভিযোগ জানিয়েছিল যে, তাদের খেলনার নারী চরিত্ররা শুধু বাসায় বসে থাকে, বিচে যায় আর শপিং করে৷ এরপর লেগো ২০১৪ সালে ‘রিসার্চ ইন্সটিটিউট’ নামে একটি খেলনা বের করে যেখানে মেয়েদের বিজ্ঞানী হিসেবে উপস্থাপন করা হয়৷ বাজারের আসার কিছুদিনের মধ্যেই সেটি বিক্রি হয়ে যায়৷ এর মাধ্যমে ক্রেতাদের মনোভাবও বোঝা গেছে৷ অন্য কোম্পানিগুলো সেটি অনুসরণ করতে পারে৷
ছবি: Screenshot Lego Shop
7 ছবি1 | 7
এ সব স্মার্ট টয় নিয়ে গবেষণা করেছে ‘নরওয়েজিয়ান কনজিউমার কাউন্সিল'৷ তারা বলছে, একজন শিশু যখন পুতুলকে প্রশ্ন করে তখন সেই তথ্য গিয়ে জমা হয় যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত ‘নুয়ান্স কমিউনিকেশন্স' কোম্পানিতে, যারা ‘স্পিচ রিকগনিশন' প্রযুক্তিতে বিশেষজ্ঞ৷ নরওয়ের ঐ কাউন্সিলের গবেষণায় আরও বেরিয়ে এসেছে যে, এ সব খেলনার মাধ্যমে হয়ত কৌশলে শিশুদের কাছে বিভিন্ন পণ্য বাজারজাত করা হচ্ছে৷ ‘মাই ফ্রেন্ড কেইলা' নামের একটি স্মার্ট টয়ের উদাহরণ দিয়ে কাউন্সিল বলছে, ‘কেইলা' নামের পুতুলটি ডিজনি ফিল্মের বিশেষ ভক্ত এবং কথায় কথায় সে শিশুদের এই তথ্যটি দিয়ে থাকে৷ এভাবে হয়ত শিশুদের কাছে ডিজনির মার্কেটিং করা হচ্ছে৷
‘মাই ফ্রেন্ড কেইলা' ছাড়াও আই-কিউ, ইন্টেলিজেন্ট রোবট ও হ্যালো বার্বি নামের চারটি স্মার্ট টয়ের নির্মাতা ‘মাটেল' ও ‘জেনেসিস টয়স'-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছে ‘ইউরোপিয়ান কনজিউমার অর্গানাইজেশন' এবং ‘ইলেক্ট্রনিক প্রাইভেসি ইনফরমেশন সেন্টার'৷
ডাটা প্রটেকশন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ড. নিলস ক্রিস্টিয়ান হাগ ডয়চে ভেলেকে বলেন, এসব খেলনার অপব্যবহার হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি৷ ইন্টারনেটের সঙ্গে সংযুক্ত এসব তথ্য কোথায় যাচ্ছে, কে পাচ্ছে, কী কাজে ব্যবহৃত হতে পারে তা ক্রেতাদের সুস্পষ্টভাবে জানানোর ব্যবস্থা করতে হবে৷ এছাড়া খেলনার সঙ্গে ব্লুটুথ যুক্ত থাকায় হ্যাকারদের পক্ষে শিশুদের সঙ্গে যোগাযোগ সম্ভব হয়ে উঠতে পারে বলে জানান ক্রিস্টিয়ান হাগ৷
তাঁর এই আশঙ্কার সঙ্গে একমত ‘জার্মান এইড অর্গানাইজেশন ফর চিলড্রেন'-এর কর্মকর্তা লুইজে শ্মিড্ট৷ তিনি বলেন, স্মার্ট খেলনাগুলো শিশুদের জীবন ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলতে পারে৷ ‘‘ব্লুটুথের মাধ্যমে কোনো কিছুর সঙ্গে যুক্ত হওয়ার জন্য আপনাকে বিশেষজ্ঞ হতে হবে না৷
এই সহজলভ্যতা ‘সাইবার গ্রুমিং' বা ‘বুলিয়িং' এর পথ খুলে দেয়'', ডয়চে ভেলেকে বলেন শ্মিড্ট৷
জার্মানিতে ‘মাই ফ্রেন্ড কেইলা' ও ‘আই-কিউ' খেলনা বিক্রি করে ‘ভিভিড' নামের একটি কোম্পানি৷ নিরাপত্তার জন্য খেলনাগুলোতে কী ধরনের ব্যবস্থা আছে সে সম্পর্কে জানতে চেয়ে করা ডয়চে ভেলের অনুরোধের জবাব দেয়নি কোম্পানিটি৷
কেট ব্রেডি/জেডএইচ
প্রযুক্তি ব্যবহারের মন্দ দিক
ইন্টারনেট, ল্যাপটপ, স্মার্টফোন, আইফোন ইত্যাদি আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের কত সুবিধাই না আমরা আজকাল ভোগ করছি৷ তবে অন্য সব কিছুর মতো এ সবেরও মন্দ দিক আছে বৈকি! গবেষকদের জানানো সেরকমই কিছু তথ্য পাবেন ছবিঘরে৷
ছবি: Cover/Getty Images
ইয়ারফোনে গান শোনা দুর্ঘটনার কারণ
প্রায়ই দেখা যায় আজকালকার তরুণরা কানে ইয়ারফোন লাগিয়েগান শুনতে শুনতে রাস্তায় চলাফেরা করছে৷ কানে ইয়ারফোন থাকায় অনেক সময় রাস্তার সতর্ক সংকেত বা গাড়ি, সাইকেলের শব্দ শুনতে পায় না তারা৷ ফলে ঘটে অ্যাক্সিডেন্ট৷ এ কথা জানান জার্মান হাসপাতালগুলোর জরুরি বা ‘এমারজেন্সি’ বিভাগের ‘ট্রমা সার্জারি’-র প্রফেসার রাইনহার্ড হফমান৷
ছবি: picture-alliance/dpa/H. Ossinger
ছবি তোলাতেই যেন বেশি আনন্দ!
যে কোনো ধরনের স্মৃতিকেই মানুষ ক্যামেরাবন্দি করে রাখতে চায়৷ বিশেষ করে, দেশ-বিদেশে ঘুরতে বা বেড়াতে গেলে তো কথাই নেই! কিন্তু ছবির প্রতি সমস্ত মনোযোগ দিতে গিয়ে পর্যটকরা এতটাই ব্যস্ত হয়ে পড়েন যে, ভ্রমণ থেকে ফিরে আসার পর ছবি তোলার জায়গাগুলোর কথা আর সেভাবে মনে করতে পারেন না৷ সাইকোলজিক্যাল সায়েন্স ম্যাগাজিন থেকে এই তথ্য জানা গেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ডিসপ্লে থেকে জীবাণু যায় শরীরে
স্মার্টফোন, ট্যাবলেট কিংবা আইফোন ছাড়া যেন আজকাল কারুর চলেই না৷ যদিও এ সবে অসংখ্য জীবাণু, ছত্রাক আর ব্যাকটেরিয়া লুকিয়ে থাকে৷ এই জীবাণু থেকেো কিন্তু আপনি অসুস্থ হতে পারেন৷ বিশেষ করে যাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল, তাদের জন্য এই ঝুঁকি আরো বেশি৷ তাই এগুলো নিয়মিত পরিস্কার রাখা জরুরি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Pedersen
ইন্টারেনেটে বই পড়া
বই হাতে নিয়ে পড়াটা যেন আজকাল উঠেই যাচ্ছে, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে৷ আসলে আজকাল যে ইন্টারনেটে মুহূর্তের মধ্যেই সব রকম তথ্য পাওয়া যায়৷ অবশ্য আরাম করে বই হাতে নিয়ে পড়ার থেকে ইন্টারনেটে পড়লে যে বেশি ক্লান্ত বোধ হয়, তা অনেকেই হয়ত স্বীকার করবেন৷ আর এ কথাটিই প্রমাণ করেছেন জার্মানির ট্যুবিঙ্গেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা৷
ছবি: AndreyPS - Fotolia.com
কফি মেশিনে জীবাণু!
আজকাল নানা ধরনের কফি মেশিন পাওয়া যায় আর খুব সহজেই নানা স্বাদের কফি তৈরি করা যায়৷ একেক মেশিনের একেকটি বোতামে টিপ দিলে ভিন্ন ভিন্ন স্বাদের কফি বেরিয়ে আসে৷ দেখলেই অবাক লাগে, তাই না? কিন্তু সেই মেশিনই নিয়মিত পরিষ্কার না রাখলে রয়েছে জীবাণুর ভয়৷ তাই সাবধান!