ইউনিসেফ-এর মতে, সংঘাতপূর্ণ এলাকার শিশুদের জন্য ২০১৭ সাল ছিল অন্যতম ভয়াবহ একটি বছর৷ মানবঢাল, আত্মঘাতী বোমা হামলাকারীসহ নানা কাজে ঐ সব এলাকার শিশুদের ব্যাপকহারে ব্যবহার করা হয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
শিশুদের রক্ষা করার ক্ষেত্রে ২০১৭ সালে যুদ্ধে লিপ্ত দলগুলো আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন করেছে বলে জানিয়েছেন ইউনিসেফ-এর এক কর্মকর্তা৷
জাতিসংঘের এই সংস্থার এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, বিশ্বের সংঘাতপূর্ণ এলাকা এবং যেখানে যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে, সেসব জায়গায় বিপুল সংখ্যক শিশুকে হত্যা করা হয়েছে৷ এদের মধ্যে অনেককে মানবঢাল হিসেবে কিংবা সরাসরি যুদ্ধে ব্যবহার করা হয়েছে৷ ইউনিসেফ-এর জরুরি কর্মসূচির পরিচালক ম্যানুয়েল ফন্টেইন বলেছেন, ‘‘বাড়ি, স্কুল এবং খেলার মাঠে শিশুরা ভয়াবহ হামলা ও সহিংসতার শিকার হয়েছে৷ যেহেতু কিছু এলাকায় বছরের পর বছর ধরে হামলা চলছে, আমরা যেন এটাকে স্বাভাবিক বলে ধরে না নেই৷ এভাবে চলতে দেয়া উচিত নয়৷''
চলছে যুদ্ধ, চলছে স্কুল
মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি দেশে চলছে দ্বন্দ্ব-সংঘাত৷ কিন্তু সেসব দেশের শিশুরা ভয়াবহ ঝুঁকির মধ্যেও স্কুলে যাওয়া অব্যাহত রেখেছে৷ পরিস্থিত যত খারাপই হোক স্কুল বন্ধ নেই তাদের৷ ছবিঘরে দেখে নিন তাদের স্কুলগুলোর অবস্থা৷
ছবি: Reuters/A. Zeyad
ধ্বংস স্তূপের মধ্যে চলছে লেখাপড়া
ইয়েমেনের বন্দর নগরী হেদেইদাহ-তে একটি স্কুলের শ্রেণিকক্ষে পড়ছে এই মেয়েরা৷ তবে স্কুলের দেয়াল বলতে কিছু নেই৷ সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের বিমান হামলায় পুরো দেয়াল ধসে পড়েছে৷ গত তিন বছর ধরে গৃহযুদ্ধের কবলে ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে দেশটি, যা শেষ হওয়ার কোনো লক্ষণ নেই৷
ছবি: Reuters/A. Zeyad
গোলাঘরে শিক্ষাদান
সিরিয়া মধ্যপ্রাচ্যের আর একটি দেশ, যেখানে গৃহযুদ্ধ শেষ হওয়ার কোনো লক্ষণ নেই৷ যুদ্ধ শুরুর পর থেকে কয়েক লাখ মানুষ দেশ ছেড়ে পালিয়েছে, মারা গেছে লাখো মানুষ৷ সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত দারা এলাকায় স্কুলের অভাবে গোলাঘরকে বেছে নেয়া হয়েছে শিশুদের শিক্ষাদানের স্থান হিসেবে৷ চেয়ার নেই, তাই পাথরের উপর বসেই চলছে শিক্ষা গ্রহণ৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Abazeed
বিধ্বস্ত স্কুল
সিরিয়ার পূর্বাঞ্চলের শহর হামোরিয়ার গৌটা গ্রামের স্কুল এটি৷ এই স্কুলটিও পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে হামলায়৷ এলাকাটি এখন ছিটমহলে পরিণত হয়েছে, যেখানকার পরিস্থিতি খুব খারাপের দিকে যাচ্ছে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন মানবাধিকার কর্মীরা৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Almohibany
অস্থায়ী স্কুল
সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত দারা এলাকায় শিশুদের শ্রেণিকক্ষে পড়ালেখা করতে দেখা যাচ্ছে৷ অনেক দেশই চাইছে যাতে যুদ্ধের কবলে পড়ে সিরীয় শিশুদের ভবিষ্যত অন্ধকার হয়ে না যায়৷ তবে যুদ্ধের কারণে এই পাঠদান কর্মসূচি অব্যাহত রাখা বেশ কষ্টকর, কোনো কোনো ক্ষেত্রে অসম্ভব হয়ে পড়ে৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Abazeed
যুদ্ধাবস্থার মধ্যেও স্বাভাবিক জীবনে ফেরার আকুতি
সিরিয়ার রাকা প্রদেশের উত্তরে হাজিমা গ্রামের একটি স্কুলের দেয়াল এটি, বুলেটের ক্ষত বুকে নিয়ে কোনোরকমে দাঁড়িয়ে আছে৷ ২০১৪ সালে এই এলাকা দখলের সময় এলাকার স্কুলগুলো বন্ধ করে দিয়েছিল তথাকথিত ইসলামি জঙ্গি দল ‘ইসলামিক স্টেট’ বা আইএস৷ এখন এলাকাটি আইএস এর নিয়ন্ত্রণ মুক্ত৷ তাই শিশুরা এখন চাইলে স্কুলে যেতে পারে৷
ছবি: Reuters/Z. Bensemra
ধ্বংসস্তূপের মধ্যে খেলাধুলা
ব্রিটিশ সংগীত শিল্পী ইউসুফ ইসলাম, যিনি ক্যাট স্টিভেনস নামে বেশি পরিচিত, তার একটি গানের কথা ‘শিশুরা কোথায় খেলবে?’৷ আলেপ্পোর পূর্বাঞ্চলে আল-সাফলানিয়েহ এর একটি স্কুলের ধ্বংসস্তূপকে খেলার জন্য বেছে নিয়েছে এই শিশুরা৷ আমরা কেবল প্রার্থনা করতে পারি তাদের খেলার জন্য সুন্দর, নিরাপদ একটি পরিবেশের৷
ছবি: Reuters/K. Ashawi
6 ছবি1 | 6
আফ্রিকায় শিশুদের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ
রিপোর্টে বলা হয়েছে, আফ্রিকার সংঘাতপূর্ণ এলাকাগুলোতে শিশুদের সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হচ্ছে৷ ডিআর কঙ্গোতে প্রায় ১০ লাখ শিশু গত এক বছরে গৃহহীন হয়েছে বা অন্যত্র চলে গিয়েছে৷ সেখানে ৪০০টিরও বেশি স্কুলে হামলা চালানো হয়েছিল৷
নাইজেরিয়া এবং ক্যামেরুনে ইসলামি জঙ্গি গোষ্ঠী বোকো হারাম এ বছর ১৩৫ জন শিশুকে আত্মঘাতী হামলাকারী হিসেবে প্রশিক্ষণ দিয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় পাঁচগুণ বেশি৷
দক্ষিণ সুদানে ২০১৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১৯ হাজার শিশুকে জোর করে সেনাবাহিনীতে নিয়োগ দেয়া হয়েছে৷
মধ্যপ্রাচ্য সংকট
ইউনিসেফ-এর তথ্য অনুযায়ী, ইয়েমেনে ২০১৫ সালের মার্চে গৃহযুদ্ধ শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত ৫ হাজার শিশু প্রাণ হারিয়েছে৷ বর্তমানে ২০ লাখ শিশু খাদ্যের অভাবে ভয়াবহ অপুষ্টিতে ভুগছে৷
এপিবি/জেডএইচ (এপি, এএফপি, রয়টার্স)
শিশুদের জন্য আরো বিপজ্জনক হয়ে উঠছে বিশ্ব
বিশ্বের অন্তত ১৮ কোটি শিশুর ভবিষ্যৎ খুব ভয়ংকর৷ কিছু দেশ নানাবিধ সংকট থেকে বের হতে না পারলে এই শিশুরা প্রাথমিক শিক্ষা পাবে না, দারিদ্র্যে জর্জরিত হবে, সহিংসতায় মরবেও অনেকে৷ দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: picture-alliance/AA/E. Sansar
খোদ ইউনিসেফ বলছে...
সম্প্রতি জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ এক প্রতিবেদনের মাধ্যমে এ সব আশঙ্কার কথা জানিয়েছে৷ দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা, প্রাথমিক শিক্ষার সুযোগ এবং সহিংসতা থেকে দূরে থাকার পরিবেশ আছে কিনা – মূলত এই তিনটি বিষয় বিশ্লেষণ করেই প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে ইউনিসেফ৷
ছবি: picture-alliance/AA/E. Sansar
শতকরা ১২ জন শিশুর সামনেই বিপদ
সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে এ মুহূর্তে মোট ২২০ কোটি শিশু রয়েছে৷ ইউনিসেফ-এর প্রতিবেদন বলছে, এই ২২০ কোটির মধ্যে শতকরা ১২ জন শিশুরই বাকি জীবন ভালো কাটার সম্ভাবনা ক্ষীণ৷ বলা হয়েছে, ২০ বছর আগের পূর্বসূরিদের চেয়েও তাদের জীবন উন্নয়নের সম্ভাবনা কম৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/M. Moskwa
বিপদে ৩৭টি দেশের শিশু
প্রতিবেদনে বিশ্বের ৩৭টি দেশের শিশুদের নিয়ে বেশি শঙ্কা প্রকাশ করেছে ইউনিসেফ৷ শঙ্কা প্রকাশের কারণ, এই দেশগুলোতে অর্থনীতি, প্রাথমিক শিক্ষা এবং নাগরিক নিরাপত্তা – এই তিনটির মধ্যে অন্তত একটি ক্ষেত্রে খুব বেশি অবনতি লক্ষ্য করা গেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Y. Arhab
মূল কারণ
রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, সংঘাত, অর্থনৈতিক সংকট এবং অপশাসন – মূলত এ সব কারণেই দেখা দিচ্ছে সংকট এবং পরিণামে শিশুরাও ভুগছে৷
ছবি: picture-alliance/ZUMA Wire/M. Juarez Lugo
যে দেশের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ
ইউনিসেফ-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় আছে দক্ষিণ সুদানের শিশুরা৷ ২০১১ সালে স্বাধীনতা অর্জন করা বিশ্বের নবতম দেশটিতে অর্থনৈতিক দুরবস্থা, নাগরিক নিরাপত্তার অভাব এবং সন্ত্রাস – তিনটিই বিদ্যমান৷ দেশটির অন্তত ২০ লাখ মানুষ এখন ক্ষুধাপীড়িত৷
ছবি: Getty Images/AFP/S. Al-Obeidi
যুদ্ধের কারণে শিশুমৃত্যু বাড়ছে
সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক, ইরাক, লিবিয়া, দক্ষিণ সুদান, সিরিয়া, ইউক্রেন এবং ইয়েমেনে সহিংসতার কারণে ১৯ বছরের কম বয়সিদের মৃত্যুর হার বেড়েছে৷
ছবি: STEPHANE DE SAKUTIN/AFP/Getty Images
বাড়ছে দারিদ্র্য
দিনে মাত্র ১ দশমিক ৯ ডলার বা ৮৫ ইউরো সেন্ট ব্যয় করে জীবন নির্বাহ করতে হয় এমন মানুষের সংখ্যা বেড়েছে ১৪টি দেশে৷ জাতিসংঘ বলছে, বিশ্বের ২২০ কোটি শিশুর মধ্যে শতকরা ১৯ ভাগই দারিদ্র্যসীমার অনেক নীচে বাস করছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/R.Schmidt
কমছে শিক্ষালাভের সুযোগ
ইউনিসেফ-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, সিরিয়া, বলিভিয়া, জর্ডান এবং তাঞ্জানিয়াসহ ২১টি দেশে প্রাথমিক শিক্ষার হার কমেছে৷