জার্মানির বার্লিনে বসবাসরত অভিভাবকদের জন্য সুখবর৷ আগস্ট মাস থেকে শিশুকে ‘ডে কেয়ার' বা ‘চাইল্ড কেয়ার' সেন্টারে পাঠানোর জন্য বাড়তি কোন টাকা গুনতে হবে না৷ জার্মানির আরো কয়েকটি রাজ্য একই পথ অনুসরণ করতে যাচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
বার্লিনের আঞ্চলিক সরকার গত সোমবার জানিয়েছে যে, আগস্ট মাস থেকে বার্লিনের অভিভাবকরা শিশুর বয়স এক বছরের কম হলেও মিউনিসিপ্যাল ডে কেয়ার সেন্টারে তাদের দেয়ার জন্য কোন ফি দিতে হবে না৷ ২০০৭ সাল থেকে বিভিন্ন বয়সসীমার শিশুদের জন্য ডে কেয়ারের ফি বাতিল করতে শুরু করে বার্লিন কর্তৃপক্ষ৷ সর্বশেষ ফি বাতিলের মাধ্যমে সব বয়সসীমার শিশুই এখন বিনা খরচায় ডে কেয়ার সেন্টার সময় কাটাতে পারবে৷
তবে ডে কেয়ার সেন্টারে শিশুদের খাবারের বিল এখনো অভিভাবকদের দিতে হবে৷ টাকার অংক অবশ্য সেটা খুব বেশি নয়৷
বার্লিনের শিক্ষা, তরুণ এবং পরিবার বিষয়ক সিনেটর সান্দ্রা শেরেস এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘বার্লিনের অনেক পরিবারের কাছে ডে কেয়ার সেন্টারে ফি দিতে হবে নাকি হবে না তা বিশেষ গুরুত্ব বহন করে৷ তাই বিনা খরচায় শিশুকে ডে কেয়ার সেন্টারে দিতে পারলে অনেক পরিবার হালকা বোধ করবেন৷''
‘‘ডে কেয়ার সেন্টারগুলো হচ্ছে শিক্ষামূলক ইন্সটিটিউশন, আর শিক্ষা অবশ্যই বিনামূল্যে হতে হবে,'' বলেন তিনি৷
জার্মানির কেন্দ্রীয় পরিবার বিষয়ক মন্ত্রী ফ্রাৎসিসকা গিফে চান জার্মানির অন্যান্য রাজ্যের ডে কেয়ার সেন্টারগুলোও ক্রমশ ফি তুলে দিক৷ এ জন্য শিশুযত্ন খাতে আগামী চার বছরে সাড়ে তিন বিলিয়ন ইউরোর মতো খরচ করার ঘোষণা দিয়েছে সরকার৷
নতুন এই আইন বার্লিনকে জার্মানির প্রথম রাজ্যে পরিনত করেছে, যেখানে মিউনিসিপ্যাল ডে কেয়ার সেন্টার পুরোপুরি ফ্রি৷ আর এর সুবিধা পাবে এক বছরের কম বয়সি ১৮,৫০০ শিশু৷
উল্লেখ্য, জার্মানির এক-তৃতীয় রাজ্যের অভিভাবকদের এখনো সন্তানকে ডে কেয়ার সেন্টারে দিতে পুরো অর্থ গুনতে হয়৷ তবে অন্যান্য রাজ্যে হয় সরকার কিছুটা ভর্তুকি দিচ্ছে অথবা বয়সভেদে ফি-র তারতম্য রয়েছে৷ শিশুর জন্য সবচেয়ে বেশি ফি দিতে স্লেশভিগ-হলস্টাইন রাজ্যে৷ সেখানে একটি পরিবারের আয়ের নয় শতাংশ শিশুর ডে কেয়ার সেন্টারের খরচ হিসেবে দিতে হয়৷
জার্মানিতে সন্তান লালনপালনে যত বিভ্রান্তি
সন্তান লালনপালন নিয়ে গোটা বিশ্বেই নানাজনের নানামত রয়েছে৷ তবে জার্মানিতে এই বিতর্কে অংশ নেয়ার আগে যে বিষয়গুলো আপনার জেনে নেয়া ভালো, তা পাবেন এখানে৷
ছবি: Getty Images/AFP/L. Ramirez
ঐতিহ্যবাহী বা অপ্রচলিত নাম
আপনি আপনার শিশুকে সবার চেয়ে আলাদা রাখতে চান, নাকি সকলের মাঝে রাখতে চান? সন্তানের নাম নির্ধারণ অনেকটা ট্যাটুর ডিজাইন পরিকল্পনা করার মতো ব্যাপার৷ তবে কেউই বোধহয় চাইবে না, নাম নিয়ে তার সন্তান ভবিষ্যতে বিপাকে পড়ুক৷ বেন এবং মিয়া জার্মানিতে বেশ পরিচিত নাম, আর গতবছর তাদের পছন্দের শীর্ষে ছিল মারি এবং এলিয়াস৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Stratenschulte
জনসমক্ষে স্তন্যপান
যদিও সব মা সন্তানকে স্তন্যপান করান না, তবে জার্মানিতে এই চর্চা বেশ প্রচলিত৷ জার্মানিতে নগ্নতা এক স্বাভাবিক ব্যাপার, ফলে জনসমক্ষে শিশুকে স্তন্যপান করানো কোনো অস্বাভাবিক বিষয় নয়৷ তবে নারীর এই অধিকার আইন দ্বারা সংরক্ষিত নয়৷ তাই কোনো দোকানদার চাইলে তাতে বাধা দিতে পারেন৷
ছবি: picture alliance/empics/N. Ansell
বড় শিশুদের স্তন্যপান করানো
এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার দায়িত্ব আপনার৷ তবে জার্মানিতে কোনো কোনো মা প্লে গ্রাউন্ডে বসে তিন বছর বয়সি শিশুকেও স্তন্যপান করান৷ এখানে বলে রাখা ভালো, এই চর্চা খুব একটা দেখা যায় না, কেননা, অভিভাবকদের সাধারণত সন্তানের বারো মাস বা ক্ষেত্রবিশেষে ১৪ মাস বয়স অবধি সরকারি ভাতা দেয়া হয়ে থাকে৷ অনেক মা তাই চান, কাজে ফেরার আগেই সন্তানকে স্তন্যপান বন্ধ করানোর৷
ছবি: Colourbox/yarruta
চাইল্ডকেয়ার
কাজে ফেরার আগে সন্তানকে চাইল্ডকেয়ারে ভর্তি করানো এক জরুরি ব্যাপার৷ আর অনেক নতুন বাবা-মা এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে বিভক্ত হয়ে পড়েন৷ কোনো কোনো অভিভাবক মনে করেন যে, চাইল্ডকেয়ার নির্ধারণের বিষয়টি শিশুর ভবিষ্যত শিক্ষা জীবনের উপর প্রভাব ফেলবে৷
ছবি: picture-alliance/ZB/P. Pleul
টিকাদান
অবিশ্বাস্য শোনালেও কোনো কোনো অভিভাবক সন্তানকে টিকাদানের বিরোধী৷ জার্মানিতে এজন্য কোনো আইনি বাধ্যবাধকতা নেই৷ আর ওইসিডি ড্যাটা বলছে, ৯৬ শতাংশ শিশুকে ছোটবেলায় টিকা দেয়া হয়৷ তবে অন্যান্য গবেষণায় দেখা গেছে, এই হার আরো কম৷ টিকাদানের বিরোধীরা বিশ্বাস করেন, এটা শুধুমাত্র তখনই কাজ করে যখন পর্যাপ্ত মানুষ তা অনুসরণ করেন৷
ছবি: Sean Gallup/Getty Images
কান্না থামানোর উপায়
গোটা বিশ্বেই এটা এক বড় ইস্যু৷ রাতেরবেলা সন্তানের কান্নায় ঘুমাতে পারেন না অনেক বাবা-মা৷ তাই সমাধান খোঁজেন তাঁরা৷ এক্ষেত্রে একটি উপায় হচ্ছে ফের্বার মেথড৷ এই মেথড বলছে, শিশুকে না থামা পর্যন্ত কাঁদতে দিন৷ একসময় সে থেমে যাবে৷ কেউ কেউ এই মেথড পছন্দ করলেও অনেকে বলেন এটা আসলে শিশুর উপর এক ধরনের নির্যাতন৷
ছবি: CC/Roxeteer
ঘুম পাড়ানোর ভিন্ন পন্থা
যাঁরা শিশুকে ঘুম পাড়ানোর প্রশিক্ষণের বিপক্ষে, তাঁরা সম্ভবত ‘অ্যাটাচমেন্ট প্যারেন্টিংয়ে’ বিশ্বাসী৷ কোনো কোনো অভিভাবক সন্তানের পাশে ঘুমাতে বা সন্তানের সঙ্গে একসাথে ঘুমাতে যান৷ তবে এই বিষয়টিও বিতর্কিত, কেননা, এতে করে শিশুর একা ঘুমানোর প্রবণতা কমে যায়৷
ছবি: imago/imagebroker
ডিসপোজেবল বা কাপড়ের ডায়পার অথবা ডায়পারমুক্ত
ডায়াপার আরেকটি বৈশ্বিক আলোচনার বিষয়৷ সহজভাবে ব্যবহারোপযোগী অনেক ডায়াপার বাজারে আছে৷ এবং এখনো অনেক অভিভাবক পুনর্ব্যবহারযোগ্য কাপড়ের ডায়াপার ব্যবহার করেন৷ কিন্তু এগুলো পরিষ্কার করা সহজ কাজ নয়৷ আর যাঁরা ঝামেলা ফ্রি থাকতে চান, তাঁরা ব্যবহার করেন ডিসপোজেবল ডায়াপার৷ কোনো কোনো অভিভাবক আবার কোনোরকম ডায়াপার ছাড়াই সন্তান পালন করেন৷ তবে এটা এখনো বিরল৷
ছবি: picture alliance/dpa Themendienst
ঘরে তৈরি খাবার বা বোতলে ভরা খাবার
অবশ্যই কিছু অভিভাবক আছেন, যাঁরা নিজহাতে তৈরি খাবার শিশুকে খাওয়াতে ভালোবাসেন৷ তবে সবাই এমন নয়৷ আর জার্মানিতে অরগ্যানিক শিশু-খাবার বেশ সহজলভ্য৷ এর মধ্যে কোনটা ভালো, সেটা বিবেচনার দায়িত্ব আপনার৷
ছবি: Fotolia/victoria p
টিভি এবং ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস
শিশুদের জন্য অসাধারণ কিছু অ্যাপস এবং টেলিভিশন প্রোগ্রাম রয়েছে৷ আর অনেক এক বছর বয়সি শিশুই তাদের নানা-নানির চেয়ে ভালো মোবাইল ব্যবহার করতে পারে৷ যদিও শিশুদের ডিজিটাল ডিভাইস দেয়ার ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে, তবে বাস্তবতা হচ্ছে অনেক অভিভাবক সন্তানদের মোবাইল বা টিভির সামনে রাখতে পছন্দ করেন না৷ আবার সন্তানরা যখন সেসব নিয়ে ব্যস্ত থাকে, তখন সেই সময়টুকু এক ধরনের ছুটি হিসেবে উপভোগ করেন তারা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
চিনি
জার্মান অভিভাবকদের মধ্যে এক ধরনের প্রতিযোগিতা রয়েছে৷ সেটা হচ্ছে, কার সন্তান কতদিন অবধি মিষ্টি কিছু না খেয়ে বড় হয়েছে৷ জার্মানিতে গ্রীষ্মে শিশুদের আইসক্রিম খাওয়া স্বাভাবিক ব্যাপার৷ তাই যেসব অভিভাবক শিশুদের তা থেকে বিরত রাখতে পারেন, তাদের বাহবা দেয়া যেতেই পারে৷ তবে দেখা যায় যে, দ্বিতীয় সন্তানের মিষ্টি অল্পবয়সেই জোটে, কেননা ততদিনে অভিভাবকরা সন্তান লালনপালনের নিয়মনীতির ক্ষেত্রে শিথিল হয়ে যান৷