বলছি ট্যাবলেট কম্পিউটারের কথা৷ হালের এই প্রযুক্তি পণ্যটির ব্যবহার এতই সহজ যে, তিন বছরের একটা শিশুও সেটাতে ভিডিও দেখতে বা গেম খেলতে পারে৷ তাই চিন্তিত অনেক শিশু বিশেষজ্ঞ৷
বিজ্ঞাপন
মাত্র বছর তিনেক হলো ট্যাবলেট কম্পিউটারের আগমন হয়েছে৷ তাই এটা শিশুদের জন্য উপকারী নাকি ক্ষতিকর, সে ব্যাপারে এখনো উল্লেখযোগ্য গবেষণা হয়নি৷ শিশু বিশেষজ্ঞদের মতামতেও দেখা যাচ্ছে ভিন্নতা৷ একই কথা প্রযোজ্য বাবা-মা'র দৃষ্টিভঙ্গীর ক্ষেত্রেও৷
বিশেষজ্ঞরা যা বলেন
একদল বিশেষজ্ঞ মনে করেন টিভি দেখে বা ট্যাবলেটে ভিডিও দেখে বাচ্চাদের শিক্ষাগত বা অন্য কোনো উপকার হয়েছে, এমন প্রমাণ পাওয়া যায়নি৷ বরং টিভি ও ট্যাবের ব্যবহার মেধা বিকাশে সহায়ক এমন বিষয় অনুশীলনের সময়টা কমিয়ে দেয়৷
এই বিশেষজ্ঞরা এটাও মনে করিয়ে দিয়েছেন যে, যারা একটু বড় শিশু তাদের ক্ষেত্রে, বেশি সময় ধরে স্ক্রিনে কিছু দেখা, তাদের মানবীয় ব্যবহার ও সামাজিক আচরণের উন্নয়নে দেরি করিয়ে দেয়৷
যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটল শিশু হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. দিমিত্রি ক্রিসটাকিস বলেন, শিশুদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো বাবা-মার সঙ্গে বেশি সময় কাটানো৷ ট্যাবলেট ব্যবহার যেন সেই পরিমাণটা কমিয়ে না দেয়, সেদিকে নজর রাখতে মা-বাবাকে পরামর্শ দিয়েছেন তিনি৷
ডা. ক্রিসটাকিস মনে করেন শিশুরা দিনে এক ঘণ্টা সময় টিভি বা ট্যাবলেটে কিছু দেখতে পারে, এর বেশি নয়৷ অবশ্য ‘অ্যামেরিকান অ্যাকাডেমি অফ পেডিয়াট্রিকস' এর মতে, সময়টা ঘণ্টা দুই হতে পারে, কিন্তু এর বেশি কখনোই নয়৷
নিউইয়র্কের আরেক চিকিৎসক ডা. রাহিল ব্রিগস মনে করেন, বেশি সময় ধরে টিভি দেখা বা ট্যাবলেট ব্যবহার ভাষা শিক্ষার গতি কমিয়ে দিতে পারে৷
এবার ট্যাবলেটের উপকারিতা সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ মতামত জানবো আমরা৷ যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াটারবুরি কানেকটিকাটের পোস্ট ইউনিভার্সিটির জিল বুবান বলেন, স্কুলে যাওয়ার আগে একটা শিশু যত বেশি প্রযুক্তি সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করবে তত ভাল৷ এক্ষেত্রে তিনি ট্যাব কম্পিউটারের জন্য তৈরি শিক্ষা বিষয়ক অ্যাপ, বিশেষ করে যেগুলো ইন্টারঅ্যাকটিভ, সেগুলো ব্যবহারের উপর গুরুত্ব দিয়েছেন৷ এগুলো শিশুদের জন্য উপকারি হতে পারে বলে মনে করেন তিনি৷ তবে, তারপরও শিশুরা যেন বেশি সময় ধরে ট্যাব ব্যবহার না করে সেটাও মনে করিয়ে দিয়েছেন তিনি৷
বিভিন্ন দেশের শিশুদের লেখা শেখার কৌশল
বিভিন্ন দেশে শিশুদের শেখার ধরণ ভিন্ন ভিন্ন৷ জার্মানিতে এই হেমন্তেই শিশুদের লেখা শেখার একটি নতুন নিয়ম চালু হয়েছে৷ কোন দেশের শিশুদের কীভাবে লেখায় হাতে-খড়ি হয়, চলুন সে বিষয়ে জানা যাক৷
ছবি: picture-alliance/dpa
চীন: যত তাড়াতাড়ি লেখা শেখা যায়, তত ভালো
চীনে তিন বছর বয়স হলে বাচ্চাদের কিন্ডারগার্টেনে পাঠানো হয় অক্ষরজ্ঞান শেখার জন্য৷ তবে শিশুরা ঠিকমতো লেখা শিখতে শুরু করে ছয় বছর বয়সে৷ পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত বাচ্চাদের দশ হাজার অক্ষর শিখে ফেলতে হয়, যা বেশ কঠিন৷ পরে যা শিখতে হয় তার তেমন কোনো নির্ধারিত নিয়ম নেই৷
ছবি: picture-alliance/dpa
জাপান: স্কুল ফাইনাল শেষ হওয়া পর্যন্ত
ক্লাস ওয়ান শেষ হওয়া মানেই কিন্তু লেখা শেখা শেষ নয় জাপানে৷ সেখানে ক্লাস নাইন পর্যন্ত সিলেবাসেই থাকে নির্ধারিত কিছু অক্ষর শেখার নিয়মকানুন৷ জাপানে লিখতে পারার জন্য একজনকে মোটামুটি ২১০০ অক্ষর জানতে হবে৷ জাপানে লেখা জানার জন্য নিয়মিত অনুশীলন করতে হয়, তা না হলে কোনো না কোনো অক্ষর খুব সহজেই ভুলে যেতে পারে যে কেউ৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মিশর: একটি ‘নতুন’ ভাষা
মিশরের বাচ্চাদের লেখা শেখার সাথে সাথে একটি নতুন ভাষাও শিখতে হয়৷ কারণ সেখানে বেশ কয়েকটি আঞ্চলিক ভাষা রয়েছে৷ যার ফলে, সেখান থেকে শুদ্ধ আরবি ভাষাকে আলাদা করা বেশ অসুবিধা৷ এছাড়া, সেখানকার কোনো স্কুলে ক্লাসে প্রতি ৮০ জন করে ছাত্র থাকে৷ ফলত লেখাপড়ার মান নীচু হয়৷ এর জন্য অনেক ছাত্র কখনোই ঠিকমতো লিখতে বা পড়তে পারে না৷
ছবি: Fotolia/Ivan Montero
মরক্কো: শুধু আরবি ভাষা নয়
বেশি দিন আগের কথা নয়, যখন মরক্কোর স্কুলে বাচ্চারা শুধু আরবি ভাষা শিখতো৷ তবে ২০০৪ সাল থেকে এর পরিবর্তন হয়েছে৷ তখন থেকেই ক্লাস ওয়ানের বাচ্চাদেরও হিব্রু ভাষার পাশাপাশি তামাসিখট ভাষাও শিখতে হয়৷ গ্রামাঞ্চলে অক্ষরজ্ঞান নেই এবং শুধু হিব্রু ভাষায় কথা বলে, এ রকম মানুষের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে৷ ২০১১ সাল থেকে তামাসিখট ভাষাকে সেখানকার স্বীকৃত ভাষা হিসেবে সংবিধানের অন্তর্ভুক্ত করা হয়৷
ছবি: picture alliance/Ronald Wittek
পোল্যান্ড: শূন্য থেকে শুরু
পোল্যান্ডে স্কুল শুরু হয় ক্লাস ওয়ান থেকে নয়, শূন্য থেকে৷ স্কুলে যাবার আগেই প্রতিটি শিশুর শূন্য ক্লাসে বা কিন্ডারগার্টেনে যাওয়া বাধ্যতামূলক এবং তখন খেলার ছলে বাচ্চাদের অক্ষরজ্ঞান দেওয়া হয়৷ অবশ্য ঠিকমতো লেখা শেখা শুরু হয় ক্লাস ওয়ান থেকেই৷ তবে কোনো কোনো অক্ষর খুব ভালো করে শিখতে বা মনে রাখতে হয়, কারণ সেগুলোর উচ্চারণ প্রায় একই রকম৷ এক্ষেত্রে বাংলার ‘ন’ এবং ‘ণ’ অক্ষরের সাথে তুলনা করা যেতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/PAP
সার্বিয়া: ভাষা এক, লেখা দু’রকম
সার্বীয় ভাষা সিরিলিক এবং ল্যাটিন অক্ষরে লেখা হয়, তাই বাচ্চাদের ছোটবেলা থেকেই একসাথে দু’রকম লেখা শিখতে হয়৷ ক্লাস ওয়ানে শিখতে হয় সিরিলিক অক্ষর, তারপর ল্যাটিন৷ কয়েক বছর পর ছাত্ররা নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিতে পারে তারা কোন ভাষাকে প্রাধান্য দিতে চায়৷
ছবি: DW/D. Gruhonjic
জার্মানি: শুনে শেখা
২০ বছর আগে থেকেই এই সিস্টেম বা মাধ্যমে বহু স্কুলে লেখা শেখানো হয়ে থাকে৷ শেখার সুবিধার জন্য বোর্ডে একটি জানালার ছবির পাশে শুধু ‘জ’ বা ঘড়ির পাশে ‘ঘ’ লেখা হয়৷ বাকিটা শিখতে হয় শুনে শুনে৷ সমালোচকদের অভিযোগ, এভাবে অনেক বাচ্চার পক্ষেই ঠিকমতো লেখা শেখা সম্ভব নয়৷ তবে এই নিয়মে পড়া শেখার ব্যাপারে কিন্তু তাড়াতাড়ি সাফল্য এসেছে৷
কোহেন বলেন, মার্কের নিজেরই একটা আইপ্যাড আছে, যেটা শিক্ষা বিষয়ক অ্যাপ দিয়ে ভর্তি৷ আর মার্কের ছোট বোন, যার বয়স এখনো এক হয়নি – নিজের আইপ্যাড না থাকায় তাকে (বোনকে) এখনই হতাশ দেখায়!
আরেক বাবা সমারফেল্ড জানান, তাঁদের কোনো আইপ্যাড নেই৷ এবং তাঁদের পাঁচ বছরের ছেলের বয়স তিন হওয়ার আগে তাকে টিভিও দেখতে দিতেন না৷ এখন অবশ্য ছেলেকে মাঝেমধ্যে আইফোনে অ্যাপ ব্যবহার করতে দেন৷ ছেলেও সেটা খুব পছন্দ করে বলে জানান সমারফেল্ড৷