যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়ার বিভিন্ন চার্চের পাদ্রীদের দ্বারা শিশুদের যৌন নির্যাতনের তথ্য বেরিয়ে এসেছে৷ তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৫০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় এক হাজার শিশু যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Rourke
বিজ্ঞাপন
রাজ্যটির গ্র্যান্ড জুরির প্রতিবেদন অনুযায়ী, নির্যাতনের শিকার শিশুদের অধিকাংশই ছেলে৷ তাদের ধর্ষণ করা সহ নানা ধরণের যৌন অত্যাচার করা হয়েছে৷ নির্যাতনের শিকার হওয়া অনেক শিশুই পরবর্তীতে মানসিকভাবে বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়েছে৷ কেউ কেউ মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছে এবং এদের অনেকেই আত্মহত্যা করেছে বলে প্রতিবেদনটি জানিয়েছে৷
প্রতিবেদনটি তিনশ'র বেশি পাদ্রীর বিরুদ্ধে শিশু নির্যাতনের এ তথ্য প্রকাশ করেছে৷ কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত মাত্র দু'জন পাদ্রীকে সুনির্দিষ্টভাবে অভিযোগের আওতায় এনেছে৷ পেনসিলভানিয়া রাজ্যের অ্যাটর্নি জেনারেল জোশ শাপিরু গত মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান৷
ভুক্তভোগী, প্রত্যক্ষদর্শী ও রাজ্যটির বিভিন্ন এলাকায় অবস্থিত চার্চের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে তদন্ত প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়৷
এদিকে গ্র্যান্ড জুরি ধারণা করছেন, নির্যাতনের শিকার হওয়া শিশুর সংখ্যা কয়েক হাজার৷ এদের মধ্যে অনেক শিশু এ বিষয়ে পরবর্তীতে কোন অভিযোগ দায়ের করেনি কিংবা এ বিষয়ে কোন কথা বলতে আগ্রহী নয়, যে কারণে প্রকৃত সংখ্যা জানা যায়নি৷
Pope Francis asks Chileans for forgiveness
01:59
This browser does not support the video element.
সংবাদ সম্মেলনে শাপিরু জানান, চার্চ কর্তৃপক্ষ নির্যাতনের শিকার হওয়া এ শিশুদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়াত৷ আক্রান্ত এ শিশুদের সুরক্ষা দেয়ার পরিবর্তে তারা নিজেদের বাঁচানোর চেষ্টা করছিল বলে জানান তিনি৷
এদিকে তালিকায় নাম আসা কয়েকজন বর্তমান ও সাবেক পাদ্রী তদন্ত প্রতিবেদনটির প্রকাশ ঠেকানোর জন্য আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন৷ তাদের দাবি, তদন্ত প্রতিবেদনটি পাদ্রীদের সাংবিধানিক অধিকারকে খর্ব করা সহ তাদের সামাজিক মান মর্যাদায় আঘাত হানবে৷ তবে আদালত পাদ্রীদের এ আবেদন নাকচ করে দিয়ে বলেন ‘‘কি ঘটছে তা সকলের জানা উচিত৷''
এদিকে তদন্তে দোষী প্রমাণিত হওয়া অনেক পাদ্রী'ই আর বেঁচে নেই৷ তাছাড়া নির্যাতনের ঘটনাগুলোও অনেক আগের যে কারণে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট পাদ্রীদের বিচারের আওতায় আনা ততটা সহজ হবে না বলে মনে করছেন কর্তৃপক্ষ৷
আর আর/এসিবি(এএফপি, ডিপিএ, এপি, রয়টার্স)
যৌন হয়রানির হাত থেকে কীভাবে বাঁচাবেন শিশুকে
শিশুরা বিকৃতকাম মানুষের সহজ শিকার৷ সারল্যের সুযোগ নিয়ে সহজে ভোলানো যায় তাদের৷ অনেক সময় শিশুরা বুঝতে পারে না, চিনতে পারে না পিশাচের থাবা৷ আর বুঝলেও করতে পারে না প্রতিবাদ, প্রতিরোধ৷ শুধু একটা অস্বস্তি থেকে যায় সারাটা জীবন৷
ছবি: picture alliance/abaca
ভয়াবহ অবস্থা ভারতে
ভারতের জাতীয় ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশের অর্ধেকেরও বেশি বাচ্চা যৌন নিগ্রহের শিকার৷ তবে সবচেয়ে ভয়ংকর সত্য হলো, নাবালিকা বা শিশুর ওপর যৌন হেনস্থার ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটছে পরিবারের মধ্যে, পরিবারেরই কোনো মানসিক বিকারগ্রস্ত সদস্যের হাতে৷ তাই সে সব ঘটনা পুলিশের কাছে পৌঁছাচ্ছে না, হচ্ছে না কোনো ডাইরি অথবা মামলা৷
ছবি: Fotolia/Gina Sanders
হারিয়ে যাচ্ছে শৈশব
এভাবে প্রতিদিন বিকৃত যৌন নির্যাতনে হারিয়ে যাচ্ছে অগুন্তি শৈশব৷ অনেকক্ষেত্রেই শিশুরা বুঝে উঠতে পারছে না, বলে উঠতে পারছে না তাদের অমানবিক সেই সব অভিজ্ঞতার কথা৷ তাই শিশুদের প্রতি যৌনাসক্ত, বিকৃত মানুষগুলো থেকে যাচ্ছে লোকচক্ষুর আড়ালে৷ সমাজবিদরা বলছেন, এ জন্য আগাম সতর্কতার দায়িত্ব নিতে হবে অভিভাবক এবং স্কুলের৷ শিশুকে দিতে হবে তার প্রাপ্য শৈশব৷
ছবি: Fotolia/Kitty
যেভাবে বোঝাবেন বাচ্চাদের
সহজ ভাষায় খেলা বা গল্পচ্ছলে শিশুদের এ বিষয়ে একটা ধারণা গড়ে তোলা যেত পারে৷ বাচ্চাদের বলতে হবে যে, তাদের শরীরটা শুধুমাত্র তাদের৷ অর্থাৎ কেউ যেন তাদের ‘গোপন’ জায়গায় হাত না দেয়৷ তাই কোনো আত্মীয় বা পরিচিত ব্যক্তির আচরণ অস্বস্তিকর ঠেকলে, কেউ তাদের জোর ঘরে কোনো ঘরে নিয়ে গেলে, খেলার ছলে চুমু দিলে বা শরীরের কোথাও হাত দিলে – তা যেন মা-বাবাকে জানায় তারা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
চিনিয়ে দিন যৌনাঙ্গ
অনেক বাবা-মা নিজ সন্তানের সঙ্গে যৌনাঙ্গ নিয়ে কথা বলতে কুণ্ঠা বোধ করেন৷ কিন্তু এই লজ্জা কাটিয়ে উঠতে হবে এবং খুব ছোটবেলাতেই ছবি এঁকে অথবা গল্পে-গানে বাচ্চাকে তার শরীরের অন্য সব অঙ্গের মতো যৌনাঙ্গ, লিঙ্গ ইত্যাদি চিনিয়ে দিতে হবে৷ এমনটা করলে কেউ যদি তাদের সঙ্গে পিশাচের মতো ব্যবহার করে, তাহলে শিশুরা সহজেই বলতে পারবে কে, কখন, কোথায় হাত দিয়েছিল৷
ছবি: DW/S.Rahman
শিশুর কথা শুনুন, তার পক্ষ নিন
শিশু যাতে আপনাকে বিশ্বাস করতে পারে, বন্ধুর মতো সবকিছু খুলে বলতে পারে – সেটা নিশ্চিত করুন৷ আপনার বাচ্চা যদি পরিবারের কাউকে বা আপনার কোনো বন্ধুকে হঠাৎ করে এড়িয়ে যেতে শুরু করে অথবা আপনাকে খুলে বলে বিকৃত সেই মানুষের কৃতকর্মের কথা, তবে সময় নষ্ট না করে শিশুটির পক্ষ নিন আর তিরস্কার করে বাড়ি থেকে বার করে দিন ঐ ‘অসুস্থ’ লোকটাকে৷
ছবি: Fotolia/pegbes
স্কুলেরও দায়িত্ব আছে
বাচ্চারা দিনের অনেকটা সময় স্কুলে কাটায়৷ তাই যৌন শিক্ষার ক্ষেত্রে স্কুলের একটা বড় দায়িত্ব থেকে যায়৷ তবে স্কুলের মধ্যে, বিদ্যালয় চত্বরেও ঘটতে পারে শিশু নির্যাতনের ঘটনা৷ তাই স্কুল থেকে ফেরার পর বাচ্চা যদি অতিরিক্ত চুপচাপ থাকে, একা একা সময় কাটায় বা পড়াশোনা করতে না চায়, তাহলে ওর সঙ্গে কথা বলুন৷ জানতে চান কী হয়েছে, প্রয়োজনে স্কুল কর্তৃপক্ষকেও জানান৷
ছবি: picture-alliance/blickwinkel
ছেলে-মেয়ে সমান!
আমাদের সমাজে ছোট থেকেই মেয়েদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়৷ মেয়ে হলেই হাতে একটা পুতুল আর ছেলে হলে ধরিয়ে দেয়া হয় বল বা খেলনার পিস্তল৷ ছেলের পাতে যখন তুলে দেয়া হয় মাছের বড় টুকরোটা, তখন মেয়েটির হয়ত এক গ্লাস দুধও জোটে না৷ এ বৈষম্য বন্ধ করুন৷ বাবা-মায়ের চোখে ছেলে-মেয়ে সমান – সেভাবেই বড় করুন তাদের৷ তা না হলে নারীর ক্ষমতায়ন হবে কীভাবে? কীভাবে কমবে শিশু নির্যাতন?