শিশুদের স্মার্টফোন ব্যবহার কমাতে ব্রাজিলে অভিভাবকদের উদ্যোগ
৫ আগস্ট ২০২৫
১৪ বছরের কমবয়সি শিশুদেরকে স্মার্টফোন থেকে দূরে রাখতে একত্রে কাজ করছেন ব্রাজিলের অভিভাবকরা৷ এক্ষেত্রে তারা কাউকেই বাদ রাখতে চান না৷ তবে এক গবেষণা বলছে স্মার্টফোন শিশুদের জন্য উপকারীও হতে পারে৷
শিশুদেরকে সহজে মোবাইল ফোন দিতে চান না বিশ্বের অনেক দেশের অভিভাবকরা৷ ব্রাজিলে এমন এক উদ্যোগের নাম ‘ডিসকানেক্ট মুভমেন্ট'৷ তারা ১৪ বছরের কম বয়সিদের মোবাইল না দেয়ার পক্ষে৷
ডিসকানেক্ট মুভমেন্টের সহ-প্রতিষ্ঠাতা মারিয়েনা উচশোয়া বলেন, ‘‘আমরা মনে করি, শিশুদেরকে শুধুমাত্র তখনই স্মার্টফোন দেয়া উচিত যখন তারা সেটা পরিচালনায় সক্ষম৷ এসংক্রান্ত ঝুঁকি মোকাবিলার এটাই সবচেয়ে ভালো পন্থা৷''
উদ্যোগটি বড় গোষ্ঠী বা পুরো স্কুলকে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করে৷ এক্ষেত্রে তাদের সম্মত হতে হয় যে ১৪ বছর বয়সের আগে ডিজিটাল প্রযুক্তি শিশুদের দেয়া যাবে না৷
অভিভাবকদের দ্বিধা
শিশুদের আবার বঞ্চিতও করতে চান না কিছু অভিভাবক৷ অষ্টম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর মা প্যাট্রিসিয়া ব্রমবার্গ বলেন, ‘‘আপনি যদি স্মার্টফোন, বিশেষ করে হোয়াটসঅ্যাপ নিষিদ্ধ করেন যা যোগাযোগে ব্যবহৃত হয়, তাহলে কিছু শিশু পার্টির মতো ইভেন্টের দাওয়াত নাও পেতে পারে৷''
ফ্লোরিডায় এক গবেষণায় দেখা গেছে, ১১ থেকে ১৩ বছর বয়সি ৮০% শিশুর স্মার্টফোন রয়েছে৷ যাদের ফোন নেই তাদের জন্য ব্যাপারটা সুবিধার নয়৷
সাউথ ফ্লোরিডা ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক জাস্টিন ডি. মার্টিন বলেন, ‘‘ফোন না থাকা শিশুরাও প্রান্তিকীকরণ, সাইবার বুলিং বা অন্য কোনো দুর্ব্যবহারের শিকার হতে পারে৷''
স্মার্টফোনের ইতিবাচক দিক
গবেষণায় স্মার্টফোনের ইতিবাচক দিকও উঠে এসেছে৷ জাস্টিন ডি. মার্টিন জানান, ‘‘স্মার্টফোন থাকা শিশুরা আমাদের মূল্যায়নে আসলে সবক্ষেত্রেই ভালো করেছে৷ তারা প্রতি সপ্তাহে বন্ধুদের সঙ্গেও বেশি আড্ডা দেয়৷ অনলাইনেও বন্ধুদের সঙ্গে বেশি সময় কাটায়৷''
সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাব
স্মার্টফোনের সঙ্গে সম্পৃক্ত অন্যতম ইস্যু সোশ্যাল মিডিয়া৷ ডেনিশ এক গবেষণায় দেখা গেছে, নয় থেকে ১৪ বছর বয়সিরা প্রতিদিন গড়ে তিন ঘণ্টা টিকটক এবং ইউটিউবে কাটায়৷
সাউথ ফ্লরিডা ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক জাস্টিন ডি. মার্টিন মনে করেন, ‘‘সমস্যাটা হয়ত ফোন নয়, ফোন ব্যবহার করে শিশুরা কী করছে সেটা৷''
শিশুরা অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে ও নিজেদেরকে সৃজনশীলভাবে উপস্থাপনে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে৷ কিন্তু মানসিক স্বাস্থ্যের উপর সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাব কী?
গবেষণার মিশ্র ফলাফল
বিভিন্ন গবেষণায় মিশ্র ফলাফল পাওয়া গেছে৷ কেউ কেউ বিষন্নতার সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ার সরাসরি সংযোগ দেখছেন৷ অন্যদের বক্তব্য, সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের ধরনের উপর অনেক কিছু নির্ভর করে৷
জাস্টিন ডি. মার্টিন বলেন, ‘‘আমার দেখেছি, সোশ্যাল মিডিয়ার মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার বিষন্নতা এবং ব্যাকুলতার সঙ্গে সম্পর্কিত৷ কিন্তু এটা শুধু শিশুদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য৷ বিশেষ করে যখন তারা তাদের প্রিয় অ্যাপ দিনে ছয় ঘণ্টার বেশি ব্যবহার করে৷''
ইটিং ডিসঅর্ডার বা অস্বাস্থ্যকর সৌন্দর্যের মাপকাঠি অনুসরণে সোশ্যাল মিডিয়া প্রভাবিত করতে পারে৷ অ্যাপে কিছু পোস্ট করলে অন্যরা মন্তব্য করতে উৎসাহিত হয়৷ বিভিন্ন মন্তব্যও শিশুদের উপর প্রভাব ফেলে৷
সাউথ ফ্লোরিডা ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক জাস্টিন ডি. মার্টিন জানান, ‘‘সোশ্যাল মিডিয়ায় পাবলিকলি পোস্ট করা শিশুদের মধ্যে হতাশা, উৎকণ্ঠা, রাগী ভাব এবং সহজেই মেজাজ হারানোসহ আত্মসম্মান হ্রাসের ঘটনা ঘটে৷''
নেতিবাচক মন্তব্য বা উপেক্ষিত হওয়া থেকে এধরনের প্রতিক্রিয়া হতে পারে৷